প্রত্যুপকার গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : আলী ইবনে আব্বাস বহুবছর পূর্বে দামেস্কে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে জীবনের ভয়ে এক ব্যক্তির গৃহে আশ্রয় নেন। আশ্রয়দাতা ‘ব্যক্তি তাকে বিনা শর্তে এক মাস নিজ গৃহে আশ্রয় দেন। অবশেষে উপহার-উপঢৌকনসহ তাকে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। আজ সেই ব্যক্তি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তারই গৃহে বন্দিত্ব গ্রহণ করেছেন। যখন আলী ইবনে আব্বাস সে কথা জানতে পারেন, তখন ঐ ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে চাইলে আলী ইবনে আব্বাসের পরবর্তী বিপদের কথা ভেবে তিনি তা মেনে নেননি।
প্রত্যুপকার গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. খলিফা মামুন কিছুক্ষণ মৌন হয়ে ছিলেন কেন?
উত্তর: খলিফা মামুন আলী ইবনে আব্বাসের বিবরণ শুনে এবং বন্দির দয়া, ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচরণের কথা জেনে এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হন। তিনি উপলব্ধি করেন, বন্দির মতো মহান ব্যক্তির ওপর মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁর প্রাণদ- আদেশ করা একটি ভুল হতে চলেছিল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে তিনি কিছুক্ষণ মৌন ছিলেন এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
২. খলিফা মামুনের পরিচয় দাও।
উত্তর: সপ্তম আব্বাসীয় খলিফার নাম আল মামুন। তিনি খলিফা হারুনর রশীদের দ্বিতীয় পুত্র।
খলিফা আল মামুনের পূর্ণনাম আবুল আব্বাস আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি ৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিজেকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও দর্শনের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চায় উৎসাহ দিতেন। তাঁর আমলে বাগদাদ শিল্পকলা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রাণকেন্দ্র ছিল। তিনি ‘বায়তুল হিকমা’ নামে সাহিত্য-শিল্প একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর আমলে প্রজারা অত্যন্ত সুখী ছিল। ইতিহাসে তিনি আল মামুন নামে অধিক পরিচিত।
৩. বাগদাদের পরিচয় দাও।
উত্তর: বাগদাদ একটি ঐতিহাসিক শহর। এটি বর্তমানে ইরাকের রাজধানী।
ঐতিহাসিক নগরী বাগদাদ আব্বাসীয় খলিফা মনসুর ৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন। এটি তাইগ্রিস নদীর তীরে এবং ইউফ্রেতিস নদীর পঁচিশ মাইল উত্তরে অবস্থিত। খলিফা হারুনর রশীদের সময় এ নগরটি ছিল মুসলিম সভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরী।
৪. ‘দামেস্কের এক ব্যক্তি এক সময় আমার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি করেছেন আলী ইবনে আব্বাস। দামেস্কের এক ব্যক্তির মহত্ত্বকে স্মরণ করে তিনি এ উক্তিটি করেন।
বহুবছর পূর্বে দামেস্কের শাসনকর্তা পদচ্যুত হলে ঐ পদে যিনি অধিষ্ঠিত হন, তার অতিথি হয়ে আলী ইবনে আব্বাস সেখানে যাত্রা করেন। কিন্তু যাত্রাপথে পরাজিত শাসনকর্তা তাদের ওপর আক্রমণ করলে তিনি পলায়ন করে ঐ স্থানের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন। দামেস্কের ঐ ব্যক্তি বিনা শর্তে তার প্রাণ রক্ষা করেন এবং দীর্ঘ এক মাস তাকে নিজ গৃহে আশ্রয় দেন। অবশেষে আসার সময় তাকে অনেক উপহার-উপঢৌকনসহ বিদায় দেন। ঐ ব্যক্তির সহযোগিতা ছাড়া আলী ইবনে আব্বাসের পক্ষে কোনোভাবেই জীবন নিয়ে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। তাই তিনি শ্রদ্ধাভরে ঐ ব্যক্তিকে স্মরণ করে আলোচ্য উক্তিটি করেন।
৫. হস্তপদবন্ধ ব্যক্তিকে ‘ন্যায়পরায়ণ ও সদ্বিবেচক’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: খলিফা আল মামুনের সেই বন্দি ব্যক্তি ছিল দামেস্কে আলী ইবনে আব্বাসকে আশ্রয়দাতা ব্যক্তি।
আলী ইবনে আব্বাস বহুবছর পূর্বে দামেস্কে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে জীবনের ভয়ে এক ব্যক্তির গৃহে আশ্রয় নেন। আশ্রয়দাতা ‘ব্যক্তি তাকে বিনা শর্তে এক মাস নিজ গৃহে আশ্রয় দেন। অবশেষে উপহার-উপঢৌকনসহ তাকে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। আজ সেই ব্যক্তি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তারই গৃহে বন্দিত্ব গ্রহণ করেছেন। যখন আলী ইবনে আব্বাস সে কথা জানতে পারেন, তখন ঐ ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে চাইলে আলী ইবনে আব্বাসের পরবর্তী বিপদের কথা ভেবে তিনি তা মেনে নেননি। এসব বৃত্তান্ত খলিফাকে বলার সময় আলী ইবনে আব্বাস বলেন— ঐ ব্যক্তিকে ছেড়ে দিলে আমি অবধারিত বিপদে পড়ব ভেবে সে সুযোগ পেয়েও তা গ্রহণ করেনি। তাছাড়া যে ব্যক্তি এমন দয়াশীল, পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ ও সদ্বিবেচক, সে কখনো দুরাচার হতে পারে না।
প্রত্যুপকার গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
৬. ‘তাহা হইলে মৃত্যুকালে আমার কোনো ক্ষোভ থাকে না’—আলী ইবনে আব্বাস কেন এ কথা বলেছেন?
উত্তর: আলী ইবনে আব্বাস উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তাহা হইলে মৃত্যুকালে আমার কোনো ক্ষোভ থাকে না’।
আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাসের পদচ্যুত শাসনকর্তার হাত থেকে বাঁচতে নগরের এক সম্ভ্রান্ত লোকের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি তাকে সম্মানের সাথে আশ্রয় দেন এবং নিরাপদে প্রস্থানের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি উপকারীর আর সাক্ষাৎ পাননি। যার ফলে তার মনের মধ্যে উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনো উপায় খুঁজে পাননি। তাই মৃত্যুর আগে উপকারী লোকটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তিনি বন্দির নিকট গভীর আক্ষেপ প্রকাশ করে উপরিউক্ত উক্তিটি করেছেন।
৭. আলী ইবনে আব্বাসের কাছে ডেমাস্কাস নগরী পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় স্থান কেন?
উত্তর: আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাস নগরীর এক সম্ভ্রান্তÍ ব্যক্তির আশ্রয়লাভ করে জীবন রক্ষা করার কারণে ডেমাস্কাসকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
খলিফা মামুনের আস্থাভাজন আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাস নগরীর পদচ্যুত শাসনকর্তার রোষানলে পড়ে জীবন বাঁচানোর জন্য নগরীর এক সম্ভ্রান্ত লোকের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। লোকটি আলী ইবনে আব্বাসকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। আলী ইবনে আব্বাস তার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যান। ডেমাস্কাস নগরীর এ স্মৃতি তিনি কখনো ভুলতে পারেননি। এজন্য তিনি ডেমাস্কাসকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
৮. ‘এজন্য আমার ওপর খলিফার মর্মান্তিক ক্রোধ ও দ্বেষ জন্মিবে’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘আলী ইবনে আব্বাস’ দামেস্কের বন্দি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে দিলে খলিফা মামুন তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন—আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে তাই-ই প্রকাশ পেয়েছে।
বাগদাদের খলিফা মামুনের সময় দামেস্কের জনৈক শাসনকর্তা পদচ্যুত হলে তিনি বহুসংখ্যক সৈন্য নিয়ে নতুন শাসনকর্তা ও আলী ইবনে আব্বাসের ওপর হামলা চালান। আলী ইবনে আব্বাস স্থানীয় একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করলে ঐ ব্যক্তি তাকে নিরাপদ আশ্রয় দেন। পরবর্তীকালে আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা খলিফা মামুনের সৈন্যদল কর্তৃক বন্দি হলে খলিফার নির্দেশে তাকে আলী ইবনে আব্বাসের গৃহে অন্তরিন রাখার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বন্দির পরিচয় জানতে পেরে উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য বন্দিকে নিঃস্বার্থে মুক্তি দিতে চান। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করেন, এজন্য খলিফা মামুন তার ওপর ক্রুদ্ধ ও বিরাগভাজন হবেন।
৯. ‘জগদীশ্বরের শুভদৃষ্টি থাকুক’—একথা কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: দামেস্কের অধিবাসী এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এক সময় আলী ইবনে আব্বাসের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন, তাই আলী ইবনে আব্বাস বলেন, ঐ অঞ্চলের ওপর জগদীশ্বরের শুভদৃষ্টি থাকুক।
আলী ইবনে আব্বাসের গৃহে বন্দি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি যখন পরিচয় দিল যে, তিনি দামেস্কের অধিবাসী। ঐ নগরের যে অংশে বৃহৎ মসজিদ, সেখানে তার বাস। আলী ইবনে আব্বাস বললেন, দামেস্কের যে অংশে আপনার বাস, তার ওপর জগদীশ্বরের শুভদৃষ্টি থাকুক। ঐ অঞ্চলের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি তথা বন্দি ব্যক্তিই এক সময় আলী ইবনে আব্বাসকে আশ্রয় দিয়ে তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন।
১০. গল্পের বন্দি কীভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘প্রত্যুপ্রকার’ গল্পের বন্দি গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আলী ইবনে আব্বাসের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছিলেন।
খলিফা আল মামুনের সময়কালে দামেস্কের এক পদচ্যুত শাসনকর্তা আলী ইবনে আব্বাসের ওপর আক্রমণ চালালে তিনি জনৈক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেন। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত সম্ভ্রান্ত লোকটি বিনা বাক্যে তাঁকে আশ্রয় দেন। পরবর্তীতে আশ্রয়দাতা লোকটি খলিফা মামুনের সৈন্যদলের হাতে বন্দি হলে লোকটিকে আলী ইবনে আব্বাস শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে দেন। তাই বলা যায়, ‘প্রত্যুপ্রকার’ গল্পের বন্দি মূলত আলী ইবনে আব্বাসের দ্বারাই তার বন্দিত্বের শিকল থেকে মুক্তি পান।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে প্রত্যুপকার গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post