প্রবাসী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং স্বাধীনতা অর্জনে প্রবাসী সরকারের ভূমিকা বাঙালি জাতির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় ও অনন্য অসাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশ ও বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রবাসী সরকার অধিক গুরুত্বের দাবিদার। অন্যভাবে বলা যায়, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দিকনির্দেশনা ছাড়া এত অল্প সময়ের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভবপর ছিল না।
প্রবাসী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক
১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি তখন বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক নির্দেশনামূলক ভাষণের আলোকে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও দমননীতির বিরুদ্ধে।
তার নির্দেশনা অনুসারে ১০ এপ্রিল ভারতের (আগরতলায়) মক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। এ সরকারই ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন এবং ‘মুজিবনগর সরকার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধকালীন সময়ে এ জন্য সরকারের মন্ত্রিবর্গকে ভারতের কলকাতায় অবস্থান করে দাপ্তরিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে হয়। তাই এটির নামকরণ করা হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকারের ভূমিকা
আমাদের স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশের যৌক্তিক অধিকার রক্ষার জন্য প্রবাসী সরকার গঠন করা অপরিহার্য ছিল। এই সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যৌক্তিকতার প্রশ্নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কীটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা, বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরের কর্তৃক স্থাপন করা, মুক্তিযোদ্ধাদের তদারকি করা এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, দেশের ভিতরে এবং বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং পশ্চিমাদের অপপ্রচার প্রতিহত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর পাড়ায় পাড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হলেও মুজিবনগর সরকারই প্রথমে মুক্তিবাহিনীকে বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র এবং কলকাতা ও আগরতলা ট্রেজারি থেকে টাকা-পয়সা এনে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্যক যুদ্ধে সকল প্রকার সহযোগিতা করেছে।
প্রবাসী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক
প্রবাসী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ভারত সরকার বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখে। ভয় সরকারের সম্মতিতে যৌথ বাহিনী গঠন করা হয়। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বাঙালীদের অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করে ভারত সরকার। যৌথ বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৯৩ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
উপসংহার
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকারের সম্মুখ নেতৃত্বে বাংলাদেশ কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জন করে। আর এই অর্জনে সমানভাবে অবদান রাখে ভারত সরকার। মূলত দুই দেশের সরকারের যৌথ সহযোগিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
আরো দেখো: ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে প্রবাসী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যকার সম্পর্কসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post