প্রবাস বন্ধু গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর : প্রয়োজনের অধিক খাবার পরিবেশনের পরও আরও আছে আবদুর রহমানের আশ্বাসের কারণে লেখক মন্তব্যটি করেছিলেন। লেখক খেতে বসে কখাবারের প্রাচুর্য দেখে অবাক হন। প্রচুর মাংস, বিশালাকার কাবাব, বড় থালায় কোফতা পোলাও, আস্ত মুরগির রোস্ট দেখে লেখক থ হয়ে যান।
লেখককে চুপ করে থাকতে দেখে আবদুর রহমান বলে, আরও খাবার আছে। লেখকের এটার জন্য যা খাবার সামনে ছিল, তা-ই অনেক বেশি। কিন্তু আবদুর রহমানের আশ্বাসে লেখক সম্পূর্ণ খাবারের পরিমাণ চিন্তা করে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তার নিজের অবস্থা বোঝাতে ব্যঞ্জনার্থে লেখক মন্তব্যটি করেছিলেন।
প্রবাস বন্ধু গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. ‘প্রবাস বন্ধু’ প্রবন্ধে আবদুর রহমানকে ‘নরদানব’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: ‘প্রবাস বন্ধু’ ভ্রমণকাহিনিতে আবদুর রহমানকে ‘নরদানব’ বলা হয়েছে তার শারীরিক গঠনের জন্য। আবদুর রহমানের উচ্চতা ছয় ফুট চার ইঞ্চি। দুই হাত হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে। তার পায়ে সাইজ ডিঙি নৌকার মতো। কাঁধ এত চওড়া যে লেখকের মনে হয় সে বাদশা আবদুর রহমান হলে গোটা আফগানিস্তানের ভার বইতে পারত। এ কান ও কান জোড়া মুখ। এবড়ো-থেবড়ো নাক-কপাল নেই। তার এমন শারীরিক গঠনের জন্য লেখকের মনে হয় সে মানুষ নয়, কোনো বিশালদেহী ভয়ংকর জন্তু। এ কারণেই তাকে ‘নরদানব’ বলা হয়।
২. “তোমার বপুটার সঙ্গে আমার তনুটা মিলিয়ে দেখো দিকিনি”—বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: “তোমার বপুটার সঙ্গে আমার তনুটা মিলিয়ে দেখো দিকিনি”—বলতে লেখক আবদুর রহমানের বিশাল শরীর ও সেই অনুযায়ী খাবারের চাহিদার সঙ্গে নিজের তুলনা করেছেন। আবদুর রহমান প্রথমবার লেখকের জন্য প্রচুর রান্না করে। লেখক তার পরিমাণ দেখে অবাক হলেও উচ্চবাচ্য করেননি। বাঙালিদের তুলনায় তিনি সেদিন একটু বেশিই খেয়েছিলেন। তবুও আবদুর রহমানের দুঃখ রয়ে গিয়েছিল। তারই কথার পরিপ্রেক্ষিতে লেখক বলেন, আবদুর রহমান বিশাল শরীরের অধিকারী। তার খাবারের চাহিদাও তেমনই হবে। কিন্তু সাধারণ বাঙালি লেখক সেই তুলনায় অতি ক্ষুদ্র। তাই আবদুর রহমানের অভিযোগের বিপরীতে লেখক উভয়ের মধ্যে তুলনা করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
৩. “অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর”—মন্তব্যটি লেখক কেন করেছিলেন?
উত্তর: প্রয়োজনের অধিক খাবার পরিবেশনের পরও আরও আছে—আবদুর রহমানের আশ্বাসের কারণে লেখক মন্তব্যটি করেছিলেন। লেখক খেতে বসে কখাবারের প্রাচুর্য দেখে অবাক হন। প্রচুর মাংস, বিশালাকার কাবাব, বড় থালায় কোফতা পোলাও, আস্ত মুরগির রোস্ট দেখে লেখক থ হয়ে যান। লেখককে চুপ করে থাকতে দেখে আবদুর রহমান বলে, আরও খাবার আছে। লেখকের এটার জন্য যা খাবার সামনে ছিল, তা-ই অনেক বেশি। কিন্তু আবদুর রহমানের আশ্বাসে লেখক সম্পূর্ণ খাবারের পরিমাণ চিন্তা করে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তার নিজের অবস্থা বোঝাতে ব্যঞ্জনার্থে লেখক মন্তব্যটি করেছিলেন।
৪. ‘জিরার সাহেব কাজের লোক’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘জিরার সাহেবকে কাজের লোক’ বলতে মূলত অকর্মণ্যই বোঝানো হয়েছে। অধ্যক্ষ জিরার জাতিতে ফরাসি। ফরাসিরা জাতি হিসেবে শৌখিন। এরা রান্নাবান্না, গল্প করে দিন কাটাতে পছন্দ করে। জিরার সাহেবও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি সারাদিন আফগানিস্তানের বিভিন্ন মন্ত্রীর দপ্তরে ঘুরে বেড়িয়ে, ঝগড়া করে তথা আড্ডা দিয়ে বেড়ান। কাবুল শহরে একেই কাজ বলে। তাই অধ্যক্ষ জিরারের এই বিশেষ ধরনের কাজের জন্য তাকে কাজের লোক বলে আখ্যায়িত করেছেন লেখক।
৫. লেখকের মতে আবদুর রহমানের চেহারা কেন আফগান রিলিফ ম্যাপসদৃশ?
উত্তর: লেখকের মতে, আফগানিস্তানের অতি শীতল আবহাওয়াই আবদুর রহমানের রিলিফ ম্যাপসদৃশ চেহারার জন্য দায়ী। আবদুর রহমানের মুখের চামড়া চিরে ফেড়ে গেছে শীতে-গ্রীষ্মে। রিলিফ দেওয়ার ম্যাপে বিভিন্ন চিহ্নিত স্থান যেমন উঁচু-নিচু দেখায়, আবহাওয়ার কারণে আবদুর রহমানের চেহারাও তেমন অবস্থা ধারণ করেছে। আবদুর রহমান সাধারণ এক আফগান। তার দৃষ্টিতে এই চেহারাই সঠিক। কিন্তু বাঙালি লেখকের অভ্যস্ত দৃষ্টিসীমার বাইরে তার চেহারার বর্ণনা কিছুটা কৌতুকের সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে।
৬. “আপনার সব কাজ করে দেবে- জুতো বুরুশ থেকে খুনখারাবি”—বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: “আপনার সব কাজ করে দেবে- জুতো বুরুশ থেকে খুন-খারাবি।” কথাটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, আবদুর রহমান লেখকের সব কাজ করে দেবে; কারণ সে সব কাজ করতে পারে।
‘প্রবাস বন্ধু’ ভ্রমণকাহিনির লেখক কাবুলে গিয়ে গৃহকর্মী হিসেবে আবদুর রহমানকে পান। অধ্যক্ষ জিরার লেখকের সঙ্গে আবদুর রহমানের পরিচয় করিয়ে দেন। আবদুর রহমানের কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন। যে, আবদুর রহমান শুধু গৃহকর্মী নয়, কাবুলে লেখকের যখন যে ধরনের প্রয়োজন হবে সে তা পূরণ করতে পারবে। মূলত আবদুর রহমানের কর্মদক্ষতার দিকটি প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে ফুটে উঠেছে।
৭. রিলিফ ম্যাপের চেহারা বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: রিলিফ ম্যাপের চেহারা বলতে লেখক আবদুর রহমানের শরীরের ত্বক শীত-গ্রীষ্মের রুক্ষতায় চিরে ফেঁড়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করেছেন।
লেখক আফগানিস্তানে গেলে আবদুর রহমান নামক এক কাজের লোক ঠিক করা হয়। আবদুর রহমানের গায়ের রং ফর্সা। তবে শীতে গ্রীষ্মে চামড়া চিরে ফেঁড়ে যায়। তার ফর্সা শরীরের চিরে ফেঁড়ে যাওয়া চামড়া আফগানিস্তানের বরফাচ্ছন্ন অসমতল পাহাড় ভূমির মতো মনে হয়। তাই লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
৮. আবদুর রহমান তার গোঁফ কামিয়ে ফেলার কথা বলেছিলেন কেন?
উত্তর: আবদুর রহমান তার গোঁফ কামিয়ে ফেলার কথা বলেছিলেন শীতকালে পানশিরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঘুরে এসে লেখকের পক্ষে অনেক বেশি খাবার গ্রহণের যৌক্তিকতা বোঝাতে।
‘প্রবাস বন্ধু’ ভ্রমণকাহিনিতে কাবুলে লেখকের কাজ-কর্ম করে দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ জিরার সাহেব উত্তর-আফগানিস্তানের বাসিন্দা আবদুর রহমানকে নিয়োগ দেন। তিনি লেখকের জন্য প্রথমবার যতটা খাবারের আয়োজন করেছিলেন, লেখক ততটা খেতে পরেননি। তখন কাবুলের খারাপ আবহাওয়ার সঙ্গে আবদুর রহমান তার জন্মস্থান ‘পানশির’-এর আবহাওয়া ও পরিবেশের তুলনামূলক বর্ণনা দেন। তার মতে শীতকালে পানশিরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকলে মানুষের ক্ষুধা বেশি হয়, যা কাবুলের পরিবেশে নেই।
পানশিরে রাতে বরফ পড়া, সকালে সূর্য ওঠা, ধুলো-বালু-ময়লাহীন নির্মল পরিবেশে ঠান্ডা হাওয়া যেন ধারালো ছুরির মতো। বুক ভরে নির্মল বাতাস নেওয়া এবং ছেড়ে দেওয়ার সময় ভিতরের ময়লা, রোগ-জীবাণু সব পরিষ্কার হয়ে চলে যাওয়ার কথা বলেন আবদুর রহমান। পানশিরের পরিবেশে খাদ্য গ্রহণের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তখন সকাল বেলা বাইরে থেকে ফিরে এসে লেখকের পক্ষে একটা আস্ত দুম্বা খেয়ে ফেলা সম্ভব। আর যদি লেখক তা খেতে না পারেন তাহলে আবদুর রহমান নিজের গোঁফ কামিয়ে ফেলবেন।
৯. “আমাকে থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবদুর রহমান, তাড়াতাড়ি এগিয়ে অভয়বাণী দিল-রান্নাঘরে আরো আছে”—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: শুধু নিজের জন্য লেখক ছয়জনের খাবার টেবিলে দেখে বিস্ময়ে থ হয়ে গেলেও আবদুর রহমান মনে করেছে অল্প খাবার দেখে লেখক মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন।
লেখক একা মানুষ। আবদুর রহমান একা একজন মানুষের জন্য ছয়জনের খাবার রান্না করে। এত খাবার খাওয়া একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় দেখে লেখক থ হয়ে দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু আবদুর রহমান মনে করে টেবিলে খাবার কম পরিবেশন করা হয়েছে দেখে লেখক মনঃক্ষুণœ হয়েছেন। তাই সে লেখককে এ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে রান্নাঘরে আরও খাবার আছে বলে অভয়বাণী দিয়েছে।
১০. আবদুর রহমানকে ‘সকল কাজের কাজি’ বলা হয়েছে কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আবদুর রহমান জুতো বুরুশ থেকে শুরু করে সব কাজ করতে পারে বলে তাকে ‘সকল কাজের কাজি’ বলা হয়েছে।
কাবুলে লেখকের কাজে সহায়তা করার জন্য আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাকে লেখকের সাথে আলাপ করিয়ে দেওয়ার সময় জিরার সাহেব লেখককে বলেন, ‘এর নাম আবদুর রহমান, আপনার সব কাজ করে দেবে—জুতো বুরুশ থেকে খুনখারাবি।’ তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং কথা বলে লেখকও আশ্বস্ত হলেন যে, সে ভীমসেনের মতো রান্না করবে এবং বিপদে-আপদে উদ্ধার করবে। কিন্তু কখনো যদি সে বিগড়ে যায়—সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ দেখেও তাকে মনে হয়েছে—‘সকল কাজের কাজি’।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে প্রবাস বন্ধু গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post