প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর : বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। ১৩২৬ বঙ্গান্দে তাঁর প্রথম কবিতা মুক্তি প্রকাশিত হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে “বিজলী’ পত্রিকায় “বিদ্রোহী” কবিতা প্রকাশিত হলে সমগ্র বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। “বিদ্রোহী” কবি নজরুলের প্রতিবাদের হাতিয়ার ছিল তার গান ও কবিতা ।
কবি তার লেখায় কেবল ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, সমস্ত অন্যায় অবিচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। নজরুলের কবিতা ও গান চিরকাল বাঙালিকে উদ্দীপিত করে। তর কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে- অগ্নিবীণা”, “বিষের বাঁশি”, “সাম্যবাদী”, “সর্বহারা”, “ফণীমনসা”।
প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশের উত্তর
১. “আসছে এবার অনাগত” – ‘অনাগত’ বলতে বোঝানো হয়েছে-
ক. কালবৈশাখীকে
খ. পৌর্তুগিজ দস্যুদের
গ. জাঠ-কালাপাহাড়কে
ঘ. ভয়ংকরকে
২. “রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়।” [শূন্যস্থান পূরণ করো ]
ক. দ্বাদশ
খ. ত্রয়োদশ
গ. একাদশ
ঘ. পঞ্চদশ
৩. “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল’ – কে আগল ভাঙে?
ক. বিশ্বজননী
খ. দেশের সাধারণ মানুষ।
গ. জাতীয়তাবাদী
ঘ. প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল শিব
৪. “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু চাদের করৃ’ ‘চাদের হাসির অর্থ-
ক. ঝড়বৃষ্টি থেমে গেছে
খ. নতুন সৃষ্টির সুখ
গ. অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে
ঘ. অন্ধকার দূর হয়েছে
৫. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটির কবি হলেন-
ক. কাজী নজরুল ইসলাম
খ. অক্ষয়কুমার বড়াল
গ. অতুলপ্রসাদ সেন
ঘ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৬. “সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে/কপোলতলে!’ – কপোল’ শব্দের অর্থ
ক. গ-দেশ বা গাল
খ. গলা
গ. চিবুক
ঘ. কপাল
৭. কবি কাজি নজরুল ইসলাম যে দেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃত
ক. ভারত
খ. বাংলাদেশ
গ. নেপাল
ঘ. শ্রীলঙ্কা
৮. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!’ – তোরা’ বলতে বোঝানো হয়েছে-
ক. ভারতীয় নারীদের
খ. ভারতীয় পুরষদের
গ. কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ভারতীয়দের
ঘ. ভারতীয় শিক্ষিত পণ্ডিতদের
৯. ‘হেসা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল-
ক. কুকুরের ডাক
খ. সোরুর ডাক
গ. হাতির ডাক
ঘ. ঘোড়ার ডাক
১০. “সর্বনাশী জ্বালামুখী – তার চামর দুলায়।” [ শূন্যস্থান পূরণ করো ]
ক. আগ্নেয়গিরি
খ. ধূমকেতু
গ. দাবানল
ঘ. কৃপাণ
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নের উত্তর
১. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ – পঙক্তিটিতে কাদের জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’-এর প্রশ্নোক্ত পঙক্তিটিতে পরাধীন দেশের নাগরিকদের জয়ধ্বনি করার কথা বলা। হয়েছে।
২. “ওই নূতনের কেতন ওড়ে” নূতনের কেতন ওড়ার সংবাদটি কে বহন করে আনে?
উত্তর: ‘নূতনের কেতন ওড়ার সংবাদটি কালবৈশাখীর ঝড় বহন করে আনে।
৩. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ – পঙক্তিটিতে কার জয়ধ্বনির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’-এ ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবার। জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে।
৪. ধূমকেতু তার চামর দুলায়।’ – প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ধূমকেতুকে কী কী বিশ্লেষণে ভূষিত করা হয়েছে?
উত্তর: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘ধূমকেতু’কে ‘সর্বনাশী’ ও ‘জ্বালামুখী’ বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে।
৫. “আসছে নবীন!”-নবীনের আসার উদ্দেশ্যটি লেখাে।
উত্তর: পরাধীন ভারতবর্ষের জীবনহারা, প্রাণহীন, জড়, অসুন্দরকে বিনাশ করতেই নবীনের সুভাগমন, এ কথাটিই ফুটে উঠেছে কাজী নজুরল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায়।
৬. “সপ্ত মহাসিন্ধু দোলেকপোলতলে।’ – কার কপোলতলে সপ্ত মহাসিন্ধু দুলে ওঠে?
উত্তর: পঙক্তিটিতে ভাঙনের দেবতা দেবাদিদেব মহাদেবের একফোটা চোখের জলে। তারই গালে সাতসমুদ্র দুলে ওঠার কথা বলা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নের উত্তর
১. ‘দিগম্বরের জটায় হাসি শিশু চাদের কর’ – প্রসঙ্গটি উল্লেখের কারণ লেখ।
উত্তর : প্রসঙ্গ : দিগম্বর অর্থাৎ মহাদেব নটরাজ মূর্তিতে ধ্বংসের তা-ব সৃষ্টি করেন। কিন্তু তা আসলে সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য। দিগম্বরের দ্বিতীয় নেত্রের ওপরে থাকে চাদ যা সব হারানোরূপে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করে। স্বাধীনতা ও সমাজ রূপান্তরের স্বপ্ন দেখা কবি এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন কারণ বিপ্লবের পথে ধ্বংস অনিবার্য হলেও তা আসলে সুন্দরের অভিষেককে নিশ্চিত করে।
২. ‘সর্বনাশী জ্বালাময়ী ধূমকেতু তার চামর দুলায়’ – কোন প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে লেখ।
উত্তর : প্রসঙ্গ : সংগ্রামের পথ কখনো ফুলে ঢাকা নয়। স্বাধীনতার জন্য মানুষের যে সংগ্রাম তার পথ তৈরি হয় মৃত্যু আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে। যে কারণে কবি তার কল্পনার রুদ্ররুপী কালীর কথা স্মরণ করেছেন। মহাদেবী কালী যেমন সব কিছুকে ধ্বংস করে নতুন করে সৃষ্টি করেন। সে রকমই নতুন প্রলয়ের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের পৃথিবী সৃষ্টি হবে। এখানে কবি সে কথায় বলেছেন।
রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর
১. প্রয়োল্লাস কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তর : মূল বক্তব্য : বাংলা সাহিত্যের কবি নজরুল ইসলামের আবির্ভাব ধুমকেতুর মতো অপ্রত্যাশিত আকস্মিক। তিনি ঝড়ের বেগে রীতিমতো প্রলয় সৃষ্টি করে পরাধীন জাতির মুক্তির স্বপ্নকে আলোকিত করে।
কবি নজরুল প্রলয়োল্লাস নামাঙ্কিত কবিতার সুচনাতে কালবৈশাখী ঝড়কে আহ্বান করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন প্রচণ্ড গতিতে যেমন করে কালবৈশাখী সবকিছু ভেঙ্গে চুরে দেয় তেমন করে নটরাজ শিব সবকিছু ভেঙে আবার নতুন জগৎ তৈরি করবেন। পুরাণের নটরাজ শিবের রুদ্র মূর্তিকে কবি প্রলয়োল্লাস কবিতায় বিশেষ তাৎপর্যে ব্যবহার করেছেন। কবি হিসাবে নজরুল বিদ্রোহী।
তার দুর্দান্ত বিদ্রোহে সমাজের সমস্ত অবিচার অত্যাচার অনাচার দুরিভুত হয়েছিল। তিনি সেকেলে সংস্কার, প্রাচীন চিন্তাধারা যেমন বদলাতে চেয়েছিলেন, তেমন ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশে বদ্ধ মানুষের দুর্দশা থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি বলেছেন- অনাগত মহাকাল এমনভাবে এগিয়ে আসবে যার ফলে সিন্ধু পারে সিংহদ্বারের আগল যাবে ভেঙে। মৃত্যু গহন অন্ধকারে এক সময় জ্বলে উঠবে বজ্ৰশিখার মশাল।
আর তেখন সমস্ত অশুভ শক্তি দূর হয়ে যাবে। নজরুল মনে করেন সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতুর মতো সহসা আবির্ভূত হয়ে রক্ত কৃপাণ হাতে অট্টহাসিতে মুখর করে শত্রুর রুক্ষ বিদীর্ণ করবেন। তার অট্টহাসিতে কম্পিত হবে। আসুরিক শক্তি তিনি এই পুরাণ কল্পনার পাশাপাশি শিল্পের রুদ্রমূর্তিকে বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন।
অর্থাৎ একইসঙ্গে শিবকালী এই শক্তিকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে কবি এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে—অন্ধকারার বন্ধ কুপে এবার আশার আলো পৌঁছে যাবে আর তখন অসুন্দর, অত্যাচারী রাজশক্তি ধীরে ধীরে লুপ্ত হবে। জেগে উঠবে চিরসুন্দর। সেই সুন্দরকে কবি বরণ করে নিতে বলেছেন। প্রলয়োল্লাস কবিতায় প্রলয়ের মধ্যে সৃষ্টি উল্লাস দেখেছেন কবি। তাই এই কবিতা হয়ে উঠেছে ধ্বংসের শেষে সৃষ্টির উদ্ভুত এক আনন্দের প্রতিচ্ছবি।
২. বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর’ – ভয়ংকর বলতে কাকে বোঝানো। হয়েছে? তার সম্পর্কে আর কোন বিশেষণ ব্যবহার হয়েছে? তার এমন রূপে। আগমণের কারণ কবিতা অবলম্বনে লেখ।
উত্তর : ভয়ংকর : কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রলয়োল্লাস কবিতা সংগৃহিত আলোচ্য অংশে ভয়ংকর বলতে বোঝানো হয়েছে ভয় সৃষ্টিকারী প্রলয়ংকর শক্তিতে। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় তথা অচল আয়তনে বিভীষিকাময়রুপ নিয়ে যার আগমন যার দর্শনে ভাসমান মানব হৃদয় বেদনায় মুহ্যমান হয়ে পড়ে আতঙ্কিত হয়ে ওেঠ অনাগত বিপদের সম্ভাবনা এখানে সেই রূপ সত্তাকে ভয়ংকর বলে অভিহিত করা। হয়েছে।
ভয়ংকরের বিশেষণ : ভয়ংকরকে কবি অন্য যে বিশেষণে অভিহিত করেছেন তা হল প্রলয় নেশার নৃত্যপাগল অর্থাৎ এখানে ভয়ংকর রূপে বিদ্রোহী কবি মহাদেবের চ-রূপকে চিহ্নিত করেছেন।
আগমনের কারণ : প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় আমরা অভ্যস্থ হয়ে পড়ি। একী। প্রবাহমান ধারায় আমরা প্রবাহিত হতে থাকি। নতুনকে আমরা তখন সহজে বহন করতে চায় না। ইংরেজ শাসনে বন্দি আমাদের ভারতমাতা। শৃঙ্খলাবদ্ধ একশো কোটি সন্তান তারা পরাধীনতার অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। অজ্ঞানতার অন্ধকারে তারা নিমজ্জিত। এই অন্ধকারকে ছিন্ন করে স্বাধীনতার রূপ আলোকে উদ্ভাসিত করতে আসছে ভয়ংকর যাকে কবি মহাদেব বলে অভিহিত করেছেন।
মহাকালের রূপ নিয়ে তার আগমন কাল প্রবাহে পুরাতনকে ধ্বংস করে বজ্রের শিখার মতো আলোক বর্তিকা নিয়ে তার আগমন। তিনি আমাদের হৃদয়ের অন্ধকার রূপ অজ্ঞানতা দূর করে জ্ঞান রূপ আলোক ধারায় প্রবাহিত করে দেবে। তাই যিনি আমাদের পরাধীনতার প্রসার অন্ধকার দূর করতে স্বাধীনতার আলোকে দীপ্ত পথে নিয়ে যাবে তাকে ভয়ংকর রূপে কবি মনে করেছেন।
আরো দেখো: মাধ্যমিক বাংলা সম্পূর্ণ সাজেশন উত্তরসহ
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। এছাড়াও মাধ্যমিক অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post