নবজাতকের জন্মের পরে অনেক মা বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় খুঁজতে থাকেন। কারণ, কারো কারো ক্ষেত্রে বুকে যতটুকু দুধ উৎপন্ন হয়, তা নবজাতকের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয় না। তবে শুধু আপনিই না, বাংলাদেশে এমন আরো অনেক নারীই আছেন যারা সন্তান জন্মদানের পরে এ সমস্যার সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
দুধ যেহেতু একটি নবজাতকের খাবার এবং পুষ্টি গ্রহণের একমাত্র উৎস, তাই নতুন মা তাদের সন্তানের স্বাস্থ্য ও আরাম সম্পর্কে চিন্তিত হন। আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায় একজন প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করতে চলেছে।
বিভিন্ন কারণে একজন নতুন মায়ের বুকে দুধের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। আর এ জন্য প্রসব পরবর্তী সময়ে খাদ্যতালিকা গ্রহণে পুষ্টিবিদের নেওয়া জরুরি। এর ফলে আপনার বুকের দুধ বাড়াতে পারে এমন খাদ্যের সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়গুলির সামঞ্জস্য রেখে তালিকা প্রস্তুত করতে পারেন।
নবজাতক শিশুকে দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
যদি আপনার সন্তান স্তনবৃন্তটি মুখে ধরে রাখতে না পারে বা সেটি ভুল অবস্থানে থাকে তবে তাকে দুধ পান করানো কঠিন হয়ে পরবে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে দুধ খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কিছু শরীরবৃত্তীয় সমস্যার কারণে বাচ্চাকে সঠিকভাবে খাওয়ানো ব্যহত হতে পারে।
তবে বুকে পর্যাপ্ত দুধ উৎপন্ন হওয়ার জন্য স্তন সম্পূর্ণ খালি হওয়া অতীব জরুরী। এক্ষেত্রে যদি আপনার বাচ্চা খেয়ে সম্পূর্ণ খালি করতে না পারে, তাহলে আপনার নিজ থেকে দুধ বের করে দেওয়া উচিত। চলুন জেনে নেই, নবজাতক শিশুকে কিভাবে দুধ খাওয়াবেন।
- প্রথমেই বাচ্চাকে খাওয়ার জন্য একটি রুটিন নির্ধারণ করুন। আপনার এবং আপনার শিশুর সুবিধামতো দুই থেকে তিন দিন সময় দিয়ে খাওয়ার সময় তৈরি করুন।
- শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধই দিন এবং অন্য যে কোনো ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন।
- ঘন ঘন খাওয়ান, যাতে করে স্তন খালি করে ফেলা যায়। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা অন্তর আপনার সন্তানকে খাওয়ান।
- খাওয়ানোর সময় দুটি স্তনই ব্যবহার করুন। এক পাশেরটি খাওয়া হলে অন্যটি এগিয়ে দিন।
- দুধ খাওয়ানোর বোতল বা ফিডার এড়িয়ে চলুন এবং প্রাকৃতিকভাবে তার মুখে স্তন প্রবেশ করিয়ে খাওয়া সম্পন্ন করুন।
প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় কি?
বৈজ্ঞানিক কোন গবেষণায় প্রমাণিত না হলেও নিচে বর্ণিত খাবারগুলো প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। আপনি যদি একজন নবজাতকের মা হয়ে থাকেন, তাহলে এই খাবারগুলো অবশ্যই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত।
১. রসুন
রসুন হৃদরোগের প্রতিকার ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দারুণ প্রচলিত। রসুনে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ, যা একে অনেকটা ওষুধের মতোই তৈরি করেছে, যার দরুন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে রসুন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এটি বুকের দুধের স্বাদ এবং গন্ধকে প্রভাবিত করতে পারে তাই এটি সীমিত ও সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে।
২. মেথির বীজ
মেথি সারাবিশ্বে বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে এবং এটি বেশ কার্যকরী একটি প্রক্রিয়া। মেথি মূলত রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য গৃহিণীরা ব্যবহার করে থাকেন। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি আপনার
ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
মেথির বীজে থাকা ওমেগা -3 ফ্যাট যা আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিটা–ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম এবং লৌহ সমৃদ্ধ খাদ্য হিসাবে আপনি মেথি পাতাও ব্যবহার করতে পারেন।
৩. সবুজ শাকসবজি
লাউশাক, পুঁইশাক এবং পালংশাকের মতো বিভিন্ন সবুজ শাকসবজি দেহে লৌহ, ক্যালসিয়াম এবং ফোলেটের মত খনিজ তৈরি করে। এ ধরনের শাকে প্রচুর ভিটামিন থাকে এবং বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত এক প্রকার সবুজ শাকসবজি থাকা উচিত।
৪. জিরা
বুকের দুধ বৃদ্ধিতে জিরা অসামান্য ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এটি খাবার হজমে সহায়তা করে এবং এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটফাঁপা রোগ দূরে রাখে। জিরা ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার।
৫. গাজর
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গাজর আপনার বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এবং দুধের মান বাড়াবে। গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি। কমলা রঙের এ সবজিতে ভিটামিনের পাশাপাশি রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
শুধু শিশু জন্মের পরেই না, গর্ভাবস্থায়ও গাজর খাওয়া যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় গাজরের রস পান খুবই উপকারী। এতে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হয় না। যেসব মা শিশুকে দুধপান করান, তাদের নিয়মিত গাজরের রস পান করা উচিত।
গাজর বিশ্বের সর্বত্রই পাওয়া যায় এবং এটি বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য সেরা খাবারগুলির মধ্যে একটি। গাজর দিয়ে সালাদ তৈরি করে খেতে পারেন অথবা কাঁচা অবস্থায়ও খেতে পারেন। এছাড়াও আপনি চাইলে প্রতিদিন সকাল উঠে নাস্তার সাথে এক গ্লাস গাজরের রস পান করতে পারেন।
৬. কাজুবাদাম
কাজু বাদামে আছে ভিটামিন কে, যা হাড়ের জন্য উপকারী। দুধের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আপনি কাঁচা কাজুবাদাম খেতে পারেন। কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে শরীরে খনিজের চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে লুটেন ও জিয়াক্সাথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা চোখকে আলোক রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
প্রসূতি মায়েদের জন্য কাজুবাদাম সবচেয়ে ভাল খাবার বলে মনে করা হয় এবং বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা মায়েদের পরিচর্যার জন্য কাজুবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৭. দুধ
গরুর খাটি দুধে রয়েছে ফোলিক এসিড, ক্যালসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা কেবল বুকের দুধের উৎপাদনেই সহায়তা করে তা নয়, এর সাথে দুধকে আপনার শিশুর জন্য সুষমভাবে পুষ্টিকর করে তোলে। বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে দিনের মধ্যে দুবার এক গ্লাস করে দুধ পান করা উচিত।
শেষ কথা
প্রথমাবস্থায় বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি খুব একটা সহজ নয়। এটি একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। তাই আপনি হয়তো সাথে সাথেই ফলাফল পাবেন না। তবে নিয়ম মেনে প্রতিদিন নিজের প্রতি যত্ন নিন এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন। শিশুর সাথে সাথে আপনাকেও পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে।
শুধু খাদ্যতালিকার পরিবর্তনই নয়, বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা করে শারীরিক হালকা ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যা মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। পাশাপাশি মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। প্রতিমাসে অন্তত এতবার ডাক্তারের কাছে যান এবং আপনার সর্বশেষ অবস্থা তাকে খুলে বলুন।
Discussion about this post