প্রাণ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : এই সুন্দর পৃথিবী মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ-ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, এই জগতের মায়া ত্যাগ করে অন্য কিছুর জন্য কবি তাই মৃত্যুকরণ করতে চান না। তিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টিতে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেছেন।
পৃথিবীর নয় নারীর সুখ-দুঃখ বিরহ যদি ঠিকভাবে তার সৃষ্টিতে ঠাঁই পায়, তবেই তিনি অমর হবেন। এ কারণে মানব জীবনের বৈচিত্র্যকে ভালোবেসে কবি পৃথিবীতে অমর আলয় রচনা করতে চান।
প্রাণ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রুময়—কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: পৃথিবীতে মানবজীবনের বৈচিত্র্য তুলে ধরতেই আলোচ্য কথাটি বলেছেন প্রাণ কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানে নেই নিরবচ্ছিন্ন সুখ বা দুঃখ। বরং সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিরহ-মিলনের মিশেলেই জীবন বয়ে চলে। মানবজীবনের এই উত্থান-পতনের বিশেষ দিকটিই প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।
২. ‘তোমাদেরি মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই’—কবি এ কথা বলেছেন কেন?
উত্তর: মানুষের মনে অমরত্বের আসন লাভের আকাক্সক্ষা থেকে কবি আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
ধরার আকর্ষণীয় জীবন ছেড়ে কবি মৃত্যুর স্বাদ নিতে চান না। কিন্তু বাস্তবতাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কবি জানেন, পৃথিবীতে কেউ চিরকাল বেঁচে থাকে না। তাই দেহের মৃত্যু ঘটলেও কবি চান তাঁর স্মৃতি বেঁচে থাকুক মানুষের মাঝে। ভালোবেসে মানুষ তাঁকে তাদের মনের কোন ঠাঁই দিক।
৩. ‘মানুষের সুখে দুঃখে গাাঁথিয়া সংগীত’ —চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: মানুষের আনন্দ-বিরহ নিয়ে রচিত সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে কবি ধরার বুকে অমর হতে চান-আলোচ্য চরণে এটিই প্রকাশ পেয়েছে।
‘প্রাণ’ কবিতার কবির লক্ষ্য পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ। আর সেটি সম্ভব সৎ ও শুভকর্মের মাধ্যমেই। কবি জানেন এই পৃথিবীর জীবন মূলত মানুষের নিত্যদিনের হাসি-কান্না, অনন্দ-বেদনার সমষ্টি। তাই তাঁর সৃষ্টিকর্মে সেগুুলো যথাযথভাবে ঠাঁই পেলেই তা মানুষের মনজয়ী হয়ে উঠবে। এ কারণেই কবি মানবের অনুভূতিগুলোকে তাঁর রচনার উপজীব্য করার কথা বলেছেন।
৪. এ পৃথিবীতে কবি অমর আলয় রচনা করতে চান কেন?
উত্তর: ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে চান না বলে অমর আলয় রচনা করতে চান।
এই সুন্দর পৃথিবী মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ-ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, এই জগতের মায়া ত্যাগ করে অন্য কিছুর জন্য কবি তাই মৃত্যুকরণ করতে চান না। তিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টিতে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেছেন।
পৃথিবীর নয় নারীর সুখ-দুঃখ বিরহ যদি ঠিকভাবে তার সৃষ্টিতে ঠাঁই পায়, তবেই তিনি অমর হবেন। এ কারণে মানব জীবনের বৈচিত্র্যকে ভালোবেসে কবি পৃথিবীতে অমর আলয় রচনা করতে চান।
৫. কবি নব নব সংগীতের কুসুম ফোটান কেন?
উত্তর: নিজের সৃষ্টিকর্মের রূপ-রস-গন্ধ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কবি নব নব সংগীতের কুসুম ফোটান।
কবি মানুষের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কীর্তি গড়ে চলেন। তাঁর সৃষ্টিকর্মের মূলভিত্তি হলো মানুষের বিচিত্র অনুভব-অনুভূতি, ভাব-ভাবনা ও কর্মকাণ্ড। কবি চান মানুষ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর সৃষ্টিকর্মের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। ‘প্রাণ’ কবিতায় কবির সৃষ্টিকর্মকেই ‘সংগীতের কুসুম বলে’ অভিহিত করা হয়েছে। মানুষের কাছে নিজের সৃষ্টিকে প্রাণময় করে তোলার জন্য কবি নব নব সংগীতের কুসুম ফোটান।
৬. ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে’—চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ‘প্রাণ’ কবিতায় আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে কবি মনের অমরত্ব লাভের প্রত্যাশা প্রকাশিত হয়েছে।
এই পৃথিবী সুন্দর ও আকর্ষণীয়। মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ ভালোবাসায় এটি পরিপূর্ণ। এই সবকিছুর প্রতি কবি গভীর টান অনুভব করেন। তিনি জগতের মায়া ত্যাগ করে অন্য কিছুর আহ্বানে সাড়া দিতে চান না। পৃথিবীর বুকে তিনি অমর হতে চান। চরণটির মাধ্যমে কবির মর্ত্যপ্রীতির বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।
৭. ‘প্রাণ’ কবিতার কবি মানুষের মনজয়ী রচনা সৃজন করতে চান কেন?
উত্তর: মানুষের মনে স্থায়ী আসন লাভ করার জন্য প্রাণ কবিতার কবি মানুষের মনজয়ী রচনা সৃজন করতে চান।
প্রাণ কবিতার কবির সৃষ্টিকর্মের প্রেরণা মানুষের আবেগ-অনুভূতি। তাঁর সমস্ত সৃষ্টির মূল লক্ষ্যও মানুষ। তাঁর মতে ও পৃথিবীর নরনারীর সুখ-দুঃখ-বিরহের আখ্যান তাঁর সৃষ্টিতে ঠিকভাবে ঠাঁই পেলে তবেই তিনি মানুষের মাঝে অমর হতে পারবেন। এ কারণেই তিনি এমন রচনা সৃজন করতে চান, যা সকলের কাছে সমাদৃত হবে।
৮. ‘ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়।’—চরণটির মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবির তাঁর সৃষ্টিকর্মের প্রতি যথার্থ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে।
‘প্রাণ’ কবিতার কবির লক্ষ্য মানুষের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে ঠাঁই লাভ করা। তাই মানুষের জন্য তিনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সৃষ্টির অবতারণা করেন। কবিতায় তাঁর সৃষ্টিকর্মের সাধনাকে তিনি তুলনা করেছেন সংগীতের ফুল ফোটানোর সঙ্গে। সে ফুলগুলোকে সবাই যেন ভালোবেসে গ্রহণ করে-এটিই কবির প্রার্থনা। আর যদি ফুল শুকিয়ে যায়, অর্থাৎ সকলের মন জয় করার উপযোগী না হয় তবে সে ফুল তথা সৃষ্টিকর্মকে বর্জনের কথা বলেছেন কবি।
৯. ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটিতে কবিমনের অমরত্বের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত হয়েছে।
মানুষ মরণশীল, জীবনের এই চিরন্তন পরিণতিকে অগ্রাহ্য করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্যম্ভাবী এই পরিণাম জেনেও মানুষ এই পৃথিবীর রূপ-রস-গল্পে আকৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। মানুষের অমরত্বের চিরন্তন আকাক্সক্ষা ব্যক্ত হয়েছে আলোচ্য পঙক্তিটিতে।
১০. ‘মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’—কবি কীভাবে মানবের মাঝে বেঁচে থাকতে চান? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: কবি মানবের মাঝে বাঁচতে চান তাঁর সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে।
কবি বিশ্বাস করেন, ভালো কাজের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা যায়। যদি তিনি মানুষের সুখ-দুঃখ-বিরহ তার সৃষ্টিতে ঠাঁই দিতে পারেন, তবে তিনি অমর হবেন। তাই বলা যায়, সৃজনশীল সৎ ও শুভকর্মের মধ্য দিয়ে কবি মানবের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে প্রাণ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post