প্রার্থনা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : প্রার্থনা কবিতাটি কবির অশ্রুমালা কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। কবি এ কবিতায় স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে শ্রষ্টার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানিয়েছেন। কবি ভক্তি বা প্রশংসা করতে না জেনেও কেবল চোখের জলে নিজেকে নিবেদন করেন।
বিপদে, আপদে, সুখে, শান্তিতে সব সময় তিনি বিধাতার কাছ থেকে শক্তি কামনা করেন। গাছে গাছে পাখি, বনে বনে ফুল সবই বিধাতাকে স্মরণ করে। তাঁর অফুরন্ত দয়ায় জগতের সব কিছু চলছে। তার কাছেই সকলে সাহায্য প্রার্থনা করে। তার অপার করুণা লাভ করেই বিশ্ব সংসারের প্রতিটি জীব ও উদ্ভিদ প্রাণধারণ করে আছে।
তার দয়া ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। সুখে-দুখে, শয়নে-স্বপনে তিনি আমাদের একমাত্র ভরসা। আমরা রিক্ত হস্তে পরম ভক্তি তরে তীর কাছে প্রার্থনা জানাই : হে প্রভু, আমাদের দেহে ও হৃদয়ে শক্তি দাও। আমরা যেন তোমার আরাধনায় নিজেকে নিবেদন করতে পারি।
প্রার্থনা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নম্রশিরে সুখের দিনে
তোমারি মুখ লইব চিনে,
দুখের রাতে নিখিল ধরা
যেদিন করে বঞ্চনা
তোমারে যেন না করি সংশয়।
ক. স্তুতি কথার অর্থ কী?
খ. ‘তোমার দুয়ারে আজি রিক্ত করে’—বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘প্রার্থনা’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার একটি বিশেষ দিককে নির্দেশ করলেও সমগ্রভাব প্রকাশে সক্ষম নয়—যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. স্তুতি কথার অর্থ প্রশংসা।
খ. ‘তোমার দুয়ারে আজি রিক্ত করে’—এই উক্তিতে কবি নিজের দুঃখ, হতাশা এবং আত্মসমর্পণ প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
এখানে কবি শূন্য হাতে, অর্থাৎ কোনো কিছুই নিয়ে নয়, শুধুমাত্র তার দুঃখ, কষ্ট এবং কপালে যা কিছু জুটেছে, সেই অবস্থা নিয়ে স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করছেন। কবির কাছে কোনো ধন-সম্পত্তি বা শক্তি নেই যা দিয়ে সে স্রষ্টাকে প্রশংসা করতে পারে, তবুও সে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে খোদার কাছে সমর্পণ করেছে। সৃষ্টিকর্তার মহিমায় মগ্ন হয়ে কবি তার অস্তিত্বকে সঁপে দিয়েছে, এবং তার অশ্রুজল দিয়ে এই আত্মসমর্পণ ঘটাচ্ছে। অর্থাৎ, কবি কোনো মান-অভিমান ছাড়াই, নিঃস্ব অবস্থায়, স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য নিজের সমস্ত দুঃখ ও যন্ত্রণা উজাড় করে দিয়েছে।
গ. ‘প্রার্থনা’ কবিতায় বিপদ-আপদ, সুখ-শান্তি—সব পরিস্থিতিতেই সৃষ্টিকর্তার কাছে শক্তি প্রার্থনা করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে, যা উদ্দীপকের সাথে একেবারে সাদৃশ্যপূর্ণ। সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় গুণ হলো তাঁর দয়াময়তা। এই দয়া ও ভালোবাসার কারণে, যখন আমরা স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি, তখন আমাদের মনোবাসনা বা চাওয়া পূর্ণ হয়। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে এবং আনন্দের মুহূর্তে ও প্রাচুর্যের দিনেও স্রষ্টাকে ভুলে না যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি, দুঃখ, বিপদ, অভাব বা প্রয়োজনের সময় স্রষ্টাকে স্মরণ করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিক তেমনি, ‘প্রার্থনা’ কবিতায় বিপদে, সুখে, শান্তিতে সবসময় স্রষ্টার কাছ থেকে শক্তি কামনা করা হয়েছে, কারণ সৃষ্টিকর্তাই আমাদের জীবনের একমাত্র ভরসা, সুখ-দুঃখ বা শয়ন-স্বপন—যে অবস্থাতেই থাকি না কেন। এভাবে, আমরা দেখতে পাই যে ভেবেচিন্তে উল্লিখিত উদ্দীপক এবং ‘প্রার্থনা’ কবিতার মধ্যে ভাবগত দিক থেকে একটি গঠনমূলক সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকটি শুধুমাত্র ‘প্রার্থনা’ কবিতার এক বিশেষ দিককে, অর্থাৎ স্রষ্টাকে যেকোনো অবস্থাতেই স্মরণ করার গুরুত্বকে নির্দেশ করেছে, তবে এটি সমগ্রভাব তুলে ধরেনি। স্রষ্টার দেখানো পথই মানব জাতির কল্যাণ বয়ে আনে, এবং জীবন যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তবে স্রষ্টার আরাধনা হয় এবং সত্যের সন্ধান পাওয়া যায়। উদ্দীপকে ভক্তির সঙ্গে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় স্রষ্টাকে স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে, আর একইভাবে বিপদ, দুঃখ বা কঠিন পরিস্থিতি আসলেও স্রষ্টার প্রতি আস্থা রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেছেন। কবি ভক্তি বা প্রশংসা করতে না জানলেও, সে কেবল চোখের অশ্রু দিয়ে নিজেকে নিবেদন করেছেন, কারণ স্রষ্টার অফুরন্ত দয়াতেই সমস্ত জগত পরিচালিত হয়। স্রষ্টার কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য তিনি শূন্য হাতে, পরম ভক্তিতে প্রার্থনা করেছেন, যাতে স্রষ্টা তার দেহ ও হৃদয়ে শক্তি দান করেন। এভাবে বলা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার সবকিছুই ধারণ করতে পারেনি, বরং এটি কবিতার এক নির্দিষ্ট দিককেই প্রতিফলিত করেছে।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সামান্য কারণে হাফিজ তার চাকরি হারালেন। বেকার হয়ে তিনি পথে পথে ঘুরতে লাগলেন। মনে মনে তিনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। তবুও তার চাকরির ব্যবস্থা হলো না। তিনি প্রভুর ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। কয়েক দিন পরে হাফিজ শুনল তার আগের অফিসে দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদি তিনি অফিসে থাকতেন তবে দুর্ঘটনায় তার মারাত্মক ক্ষতি হতো। তিনি বিপদে পড়তেন। যেটা চাকরি হারানোর থেকেও ভয়াবহ। হাফিজ মনে মনে প্রভুকে ধন্যবাদ দিলেন। তার মনের ক্ষোভ দূর হলো।
ক. মহাশ্মশান কবি কায়কোবাদের কী ধরনের রচনা?
খ. “তব নামে অশেষ মঙ্গল”- কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের হাফিজের ক্ষোভ দূর হওয়া, ‘প্রার্থনা’ কবিতায় প্রকাশিত কবি কায়কোবাদের অনুভবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ—ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সুখ-দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, ক্ষোভ-বিষাদ যাই আসুক না কেন, ঈশ্বর প্রেম মানুষকে মুক্তি দেয়”—উক্তিটি উদ্দীপক ও প্রার্থনা কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘মহাশ্মশান’ কবি কায়কোবাদ রচিত মহাকাব্য।
খ. ‘তব নামে অশেষ মঙ্গল’ -কথাটিতে স্রষ্টার নাম স্মরণের মাধ্যমে অশেষ কল্যাণ লাভের কথা বলা হয়েছে।
স্রষ্টাকে স্মরণ করার মধ্যেই মানুষের সীমাহীন মঙ্গল নিহিত। স্রষ্টার নাম স্মরণের মধ্য দিয়েই মানুষ আত্মিক পবিত্রতা লাভ করে। তার দুঃখ কষ্ট দূর হয়। কারণ সে তার অভাব অভিযোগের কথা স্রষ্টার কাছেই নিবেদন করে।
গ. মানুষ সর্বাবস্থায় সৃষ্টিকর্তার দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যেই বেঁচে থাকে। সেদিক দিয়ে উদ্দীপকের হাফিজের ক্ষোভ দূর হওয়া ‘প্রার্থনা’ কবিতায় প্রকাশিত কবি কায়কোবাদের অনুভবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি কায়কোবাদ মানবজীবনের গভীরতম সত্যকে তুলে ধরেছেন। মহান সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত দয়ায় জগতের সবকিছু চলছে। তাঁর কাছেই সকলে সাহায্য প্রার্থনা করে। বিপদে-আপদে, সুখে-শান্তিতে সব সময় তিনি বিধাতার কাছ থেকে শান্তি কামনা করেন। সুখে-দুখে, শয়নে-স্বপনে তিনি আমাদের একমাত্র ভরসা।
উদ্দীপকের হাফিজ চাকরি হারিয়ে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেও কোনো চাকরির ব্যবস্থা হয়নি। প্রভুর প্রতি তিনি অসন্তুষ্ট হলেন। আগের অফিসে দুর্ঘটনা ঘটার পর বুঝতে পারলেন সেখানে থাকলে তার কী ভয়াবহ ক্ষতিই না হতো। হাফিজ মনে মনে প্রভুকে ধন্যবাদ দিলেন। ‘প্রার্থনা’ কবিতায় সৃষ্টিকর্তার দয়া ও অনুগ্রহের দিকটি উদ্দীপকের হাফিজের ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই উদ্দীপকের হাফিজের ক্ষোভ দূর হওয়া ‘প্রার্থনা’ কবিতায় প্রকাশিত কবি কায়কোবাদের অনুভবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. “সুখ-দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, ক্ষোভ-বিষাদ যাই আসুক না কেন- ঈশ্বর প্রেম মানুষকে মুক্তি দেয়”—এ উক্তিটি যথার্থ।
‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি বিপদে, আপদে, সুখে শান্তিতে সব সময় তিনি বিধাতার কাছ থেকে শান্তি কামনা করেন। গাছে গাছে পাখি, বনে বনে ফুল সবই বিধাতাকে স্মরণ করে। তাঁর অফুরন্ত দয়ায় জগতের সবকিছু চলছে। তাঁর কাছে সকলেই সাহায্য প্রার্থনা করে। তাঁর অপার করুণা লাভ করেই বিশ্ব সংসারের প্রতিটি জীব ও উদ্ভিদ প্রাণ ধারণ করে আছে।সুখে-দুখে, শয়নে-স্বপনে তিনিই আমাদের একমাত্র ভরসা।
উদ্দীপকেও হাফিজ চাকরি হারিয়ে পথে পথে ঘুরতে থাকেন এবং স্রষ্টাকে ডাকেন। কিন্তু তার কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রভুর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। কিছুদিন পরে জানতে পারলেন অফিসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেখানে চাকরি করলে হাফিজের মারাত্মক ক্ষতি হতো। যেটা তার চাকরি হারানোর চেয়েও ভয়াবহ। হাফিজ পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পেরে প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করেন।
‘প্রার্থনা’ কবিতা ও উদ্দীপকের আলোচনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, ক্ষোভ-বিষাদ যাই আসুক না কেন—ঈশ্বর প্রেম আমাদের মুক্তি দেয়।
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রহিম মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে দেখল, ইমাম সাহেব মুনাজাত করছেন। তিনি মোনাজাতে আল্লাহ্র কাছে বিনয়ের সাথে সবার জন্য ক্ষমা চাচ্ছেন। সবার জানা- অজানা অপরাধের জন্য ক্ষমা চাচ্ছেন এবং বলছেন—প্রভু তুমি অন্তর্যামী, আমাদের অন্তরের কালিমা দূর কর।
ক. ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
খ. ‘বিভো, দেহ হৃদে বল’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের ইমাম সাহেবের মুনাজাতের সাথে প্রার্থনা কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘প্রভু তুমি অন্তর্যামী, আমাদের অন্তরের কালিমা দূর কর।’—কথাটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পাহাড় সমুদ্র রাত্রি
সবই গড়েছেন তিনি।
সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে
স্মরণে রাখি আমরা তারে।
ক. কবি কায়কোবাদের গ্রামের নাম কী?
খ. ‘ভুলিনি তোমারে এক পল’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে ‘প্রার্থনা’ কবিতার ভাবার্থের মিল আছে কি?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “স্মরণে রাখি আমরা তারে”- কথাটির সাথে ‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি কায়কোবাদের একাগ্র হৃদয়ে স্মরিলে তোমারে নিভে শোকানল”—কথাটি কীভাবে সম্পর্কিত বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে প্রার্থনা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post