প্রার্থী সুকান্ত ভট্টাচার্য : ‘প্রার্থী’ কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। আমাদের এই পৃথিবীতে শক্তির মূল উৎস সূর্য। সূর্য যে তাপ বিকিরণ করে তার সাহায্যেই ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষ জীবনধারণ করে।
প্রচণ্ড শীতে সূর্যের এই উত্তাপের জন্য সারারাত অপেক্ষা করে বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন শীতার্ত মানুষ। কবি সমাজের নিচুতলার মানুষের প্রতি গভীর মমতা থেকে সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন।
অবহেলিত ও বঞ্চিত শিশুর প্রতি তাঁর অসীম মমতা। কবি এই শিশুদের কল্যাণে সূর্যের অবদান থেকে প্রেরণা নিতে চান। তিনি এমন সমাজ গড়তে চান, যেখানে বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষের জীবন থেকে সব দুঃখ চিরতরে ঘুচে যাবে।
প্রার্থী সুকান্ত ভট্টাচার্য
সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই সন্তান অল্প বয়সেই শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
বামপন্থি-বিপ্লবী কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বঞ্চনাকাতর মানুষের জীবন-যন্ত্রণার চিত্র যেমন তাঁর কবিতায় অঙ্কিত হয়েছে তেমনি প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের সুরও উচ্চারিত হয়েছে। তিনি সেকালের দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। আমৃত্যু তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর কবিতায় মানবমুক্তির জয়গান বলিষ্ঠভাবে উচ্চারিত হয়েছে। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থে’র নাম: ‘ছাড়পত্র’, ‘ঘুম নেই’, ‘পূর্বাভাস’, ‘অভিযান’, ‘হরতাল’ ও ‘গীতিগুচ্ছ’। সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র একুশ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
প্রার্থী কবিতার শুরু এখানে
হে সূর্য! শীতের সূর্য!
হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়
আমরা থাকি,
যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ
ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
হে সূর্য, তুমি তো জানো,
আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!
সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে,
এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!
সকালের এক টুকরো রোদ্দুর-
এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামি।
ঘর ছেড়ে আমরা এদিক-ওদিকে যাই—
এক টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায়।
হে সূর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও,
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
হে সূর্য!
তুমি আমাদের উত্তাপ দিও—
শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড,
তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে
একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই
এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হব!
তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা,
তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারব
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী।
প্রার্থী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
১. নাদিম সাহেব দামি গাড়ি হাঁকিয়ে অফিসে যাবার পথে রাস্তার সিগন্যালে অপেক্ষা করছিলেন। জীর্ণ-শীর্ণ এক ভিক্ষুক তাঁর গাড়ির জানালার পাশে ভিক্ষার থালা বাড়িয়ে দিলে তিনি জানালার কালো গ্লাস তুলে দেন। আর ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ভিক্ষুকে দেশটা ভরে গেছে। কথা শুনে ড্রাইভার মহসীন বলে- স্যার, গরিব মানুষ, কী করবে বলেন? এই ভিক্ষার আয় রোজগার দিয়েই তো ওরা সংসার চালায়।
ক. ‘প্রার্থী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. কবি সূর্যকে জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণ ‘প্রার্থী’ কবিতার কোন ভাবের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? বর্ণনা করো।
ঘ. ড্রাইভার মহসীনের অভিব্যক্তিতে ‘প্রার্থী’ কবিতার মূল চেতনা প্রকাশ পেলেও কবি সুকান্তের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নি- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো।
২. ‘দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি বলে এক বাবু সাব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি ক’রে কী জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?’
ক. ‘হিমশীতল’ অর্থ কী?
খ. আমাদের গরম কাপড়ের অভাব কীভাবে দূর হতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
গ. কবিতাংশের প্রথম তিনচরণে ‘প্রার্থী’ কবিতার যে দিকটির সাথে বৈসাদৃশ্য রয়েছে তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ চরণের বক্তব্যে ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবির অভিমতের প্রতিফলন ঘটেছে কী? যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো।
◉ আরও দেখুন: অষ্টম শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বই থেকে প্রার্থী সুকান্ত ভট্টাচার্য কবিতাটি আলোচনা করা হয়েছে। এই বইয়ের যে সৃজনশীল প্রশ্নগুলো রয়েছে, তার উত্তরও তোমরা কোর্সটিকায় পেয়ে যাবে। সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধানের জন্য উপরের ‘সৃজনশীল সমাধান’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post