প্রেগন্যান্সির অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে পিরিয়ড মিস হওয়া। পিরিয়ড না হওয়া গর্ভধারণের অন্যতম লক্ষণ তবে একমাত্র লক্ষণ নয়। পিরিয়ড এক মাস পর পর হয়ে থাকে। অনিয়মিত পিরিয়ড এর ক্ষেত্রে আরও দেরিতে বা আগেই পিরিয়ড হয়ে থাকে। পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন যে আপনি প্রেগন্যান্ট কি না।
প্রেগন্যান্ট হওয়ার প্রথম সপ্তাহে প্রেগন্যান্সির কোন ধরনের লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় না। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু হতে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যে লক্ষণগুলোর সাহায্য বুঝতে পারবেন যে আপনি প্রেগন্যান্ট।
উক্ত লক্ষণগুলো সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে সেজন্য উক্ত লক্ষণগুলো দেখলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।
প্রেগন্যান্সির লক্ষণ
প্রেগন্যান্সির অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে পিরিয়ড মিস হওয়া। পিরিয়ড মিস হওয়া ছাড়াও প্রেগন্যান্সির অন্য লক্ষণগুলো হচ্ছে: মাথা ঘুরানো, বমি বমি লাগা, ক্লান্তি অনুভব করা, প্রখর ঘ্রাণশক্তি ও মুখে অদ্ভুত স্বাদ পাওয়া।
প্রেগন্যান্সির প্রথম মাসের লক্ষণ ও অন্যান্য মাসের লক্ষণ গুলোর সাথে অনেকটা তফাৎ থাকে। প্রথম মাসে লক্ষণগুলো সামান্য আকারে প্রকাশ পায়। পরে লক্ষণগুলো আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। চলুন প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো জেনে আসি।
১. স্তনে পরিবর্তন আসা
স্তন ভারী হওয়া, ফুলে যাওয়া ও স্তনে ব্যথা হওয়া প্রেগন্যান্সির অন্যতম লক্ষণ। প্রেগন্যান্সির ১ম হতে ২য় সপ্তাহের মধ্যে উক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যদি হঠাৎ করে এই লক্ষণগুলো দেখে থাকেন তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়ে নিন।
২. বমিভাব লাগা ও বমি হওয়া
প্রেগন্যান্সির পর, প্রথম পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে ৮০% শতাংশ মহিলার বমি হয়ে থাকে। আর বাকি মহিলাদের এক কিংবা দু মাস পরে বমি শুরু হয়। এই বমি দিনের যেকোনো সময়ে হতে পারে। তবে, বেশীরভাগ মহিলাদের সকালে বমি হয়ে থাকে।
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গা গোলানো ও বমি হয়ে থাকে। হঠাৎ করে যদি বমি বমি ভাব লাগে, বমি হয় বা সকালে গা গোলায় তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়ে নিন। বমি ভাব লাগা প্রেগন্যান্সির অন্যতম একটি লক্ষণ।
৩. প্রেগন্যান্সির লক্ষণ ঘন ঘন প্রসাব হওয়া
প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন শরীরে স্বাভাবিক এর চেয়ে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যার কারণে কিডনি অধিক পরিমাণ তরল নিঃসৃত করে। যা সাধারণত প্রসাব আকারে বেরিয়ে আসে। অধিক পরিমাণ তরল নিঃসৃত হওয়ার কারণে প্রসাবের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ঘন ঘন প্রসাব হয়।
প্রেগন্যান্সি ছাড়াও অন্য কারণে ঘন ঘন প্রসাব হতে পারে। তাই এই লক্ষণ দেখে থাকলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। নয়তো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।।
৪. শারীরিক ক্লান্তি ও অলসতা লাগা
প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রথম দিকের লক্ষণ হচ্ছে অল্প শারীরিক পরিশ্রম করলেই অনেক বেশী ক্লান্তি চলে আসা। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে ক্লান্তি, অলসতা ও অস্বস্তিবোধ হয়। প্রেগন্যান্সির সময় শরীরে হরমোনে বৃদ্ধির ফলে এমনটা হয়ে থাকে।
যদি হঠাৎ করে অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে যান কিংবা পরিশ্রম না করা সত্বেও ক্লান্তি লাগে তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।
৫. মুড সুইং বা মনের পরিবর্তন
প্রেগন্যান্সি থাকাকালীন শরীরে হরমোন বৃদ্ধির ফলে নানা রকমের পরিবর্তন দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুড সুইং হওয়া। হঠাৎ করে কান্না পাওয়া, হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, কখনও উত্তেজিত হয়ে পড়া বা কখনো আনন্দিত হওয়া মুড সুইং এর লক্ষণ।
প্রায়ই মহিলাদের প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন মুড সুইং এর প্রবলেম দেখা দেয়।
৬. প্রেগন্যান্সির লক্ষণ ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হওয়া
প্রেগন্যান্সির শুরুর দিকে পিরিয়ড ছাড়াও ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হয়ে থাকে। পিরিয়ড ছাড়াও ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং, ক্র্যাম্পস ও স্পটিং হওয়া প্রেগন্যান্সির লক্ষণ। যদি উক্ত লক্ষণগুলো দেখে থাকেন তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিতে হবে।
৭. ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
প্রেগন্যান্সির সময় শরীরে হরমোন বৃদ্ধির ফলে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ এর সমস্যায় অনেকে পড়েন। তবে এটি ইনফেকশনের কারণেও হতে পারে। প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে এই সমস্যায় অনেক মহিলায় ভুগে থাকেন। এমনটি হলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত।
৮. প্রেগন্যান্সির লক্ষণ খাবারে অনীহা ও গন্ধ লাগা
প্রেগন্যান্সি থাকাকালীন খাবারে অনীহা হওয়া ও গন্ধ লাগা স্বাভাবিক একটি বিষয়। প্রেগন্যান্সির প্রথম মাসে এই ধরনের সমস্যাগুলো বেশী হয়ে থাকে। যদি খাবারে অনীহা ও গন্ধ লেগে থাকে তাহলে টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। নয়তো ডাক্তার দেখানো উচিত।
৯. মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা
প্রেগন্যান্ট মহিলাদের মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা স্বাভাবিক একটি বিষয়। প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে মহিলাদের মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। প্রায়ই মহিলাদের এই সমস্যা দেখা দেয়। এই ধরনের সমস্যা হলে স্বাস্থ্য ক্লিনিকে গিয়ে কিংবা নিজে টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।
১০. শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকা
শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াও প্রেগন্যান্সির একটি লক্ষণ। আবহাওয়া গরম থাকলে কিংবা উক্ত মহিলা ব্যায়াম করলে শরীরের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে বেশী বেশী পানি পান করতে হবে।
১১. প্রেগন্যান্সির লক্ষণ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হওয়া
প্রেগন্যান্সির পর বেশীরভাগ মহিলাদের খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন: পছন্দের খাবার খেতে ইচ্ছে করবে না, অপছন্দের খাবার খেতে ইচ্ছে করবে, হঠাৎ করে কোন কিছু খাবার ইচ্ছে হবে, দিন বা রাত যেকোনো সময় খাবারের ইচ্ছে হবে।
প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন সব মহিলাদের রুচির পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই হঠাৎ করে যদি এই ধরনের পরিবর্তন দেখতে পান তাহলে প্রেগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক।
প্রায়ই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তরসমূহ
১. গর্ভবতী হওয়ার কত দিন পর বোঝা যায়?
গর্ভবতী হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বোঝা যায় মহিলা প্রেগন্যান্ট কি না। গর্ভবতী থাকাকালীন ২য় সপ্তাহের শুরুতে ৮০% মহিলার বমি হয়, বিশেষ করে সকালে। ৭/১৪ দিনের মধ্যে স্তন ফুলে যাওয়া, স্তনে ব্যথা হওয়া ও ভারী হওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে।
২. গর্ভাবস্থার লক্ষণ কতদিন পর দেখা যায়
গর্ভবতী হওয়ার ২য় সপ্তাহের শুরুতে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। ৪র্থ সপ্তাহের মধ্যে সকল লক্ষণ সম্পূর্ণভাবে ফুটে উঠে। উক্ত লক্ষণগুলো হতে পারে- মাথা ঘোরা, রুচির পরিবর্তন, বমি বমি ভাব লাগা, স্তনে ব্যথা ও ভারী লাগা।
৩. সহবাসের করার কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে?
বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, সহবাসের ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে গর্ভধারণ হয়ে থাকে। একটি শুক্রাণু গর্ভে যাওয়ার পর ৫ দিন পর্যন্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এই সময়ের মধ্যে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু মিলিত হলে মহিলা গর্ভবতী হয়ে থাকেন।
শেষ কথা
যদি আপনি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো দেখে থাকেন তাহলে টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি প্রেগন্যান্ট কি না। যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকেন তাহলে প্রথম সপ্তাহ হতে সন্তান জন্মদানের আগ পর্যন্ত প্রেগন্যান্সি মায়ের খাবার তালিকা ও প্রেগন্যান্সি মায়ের সতর্কতা গুলো মেনে চলা উচিত। সবশেষে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।
Discussion about this post