প্রেগন্যান্ট হলে প্রথম মাসে প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো অল্প আকারে প্রকাশ পায়। যদি দেখেন যে, কোন মাসে পিরিয়ড হয়নি এবং প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাচ্ছে তাহলে প্রেগন্যান্সি নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে।
আজকাল গর্ভধারণ পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে কিংবা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাসায় বসেই প্রেগন্যান্সি কিট এর সাহায্য প্রেগন্যান্সি এর পরীক্ষা করা সম্ভব।
যত তাড়াতাড়ি প্রেগন্যান্সি নিয়ে নিশ্চিত হবেন তত তাড়াতাড়ি প্রেগন্যান্সি থাকাকালীন সর্তকতা ও নির্দেশনা গুলো মেনে চলতে শুরু করবেন। যা বাচ্চা ও মায়ের জন্য খুবই ভালো। দ্রত ও কম সময়ে পরীক্ষা করার জন্য প্রেগন্যান্সি কিট’ই উত্তম উপায়।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট
প্রেগন্যান্সি এর পরীক্ষা করানোর জন্য সহজ একটি উপায় হচ্ছে প্রেগন্যান্সি কিট। গর্ভধারণ করলে শরীরে এইচসিজি নামে এক ধরনের হরমোন উৎপন্ন হয়। প্রস্রাবে এই হরমোনের উপস্থিতি দেখা যায়। প্রেগন্যান্সি কিট এর মাধ্যমে প্রস্রাবে উক্ত হরমোনের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া গেলে তাকে পজিটিভ রেজাল্ট বলা হয়। এর অর্থ আপনি গর্ভধারণ করেছেন।
প্রেগন্যান্সি কিট এর সাহায্য হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রথম দিকে এই হরমোনের পরিমাণ অনেক কম থাকে। যার কারণে গর্ভধারণ করা সত্বেও রেজাল্ট নেগেটিভ আসতে পারে।
কখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন
ঘরে বসে গর্ভধারণ এর পরীক্ষা করানোর সহজ উপায় হচ্ছে প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করা। আমরা আজকে প্রেগন্যান্সি কিট এর সাহায্য গর্ভধারণ পরীক্ষা কীভাবে করবেন তা জানাবো। কিট এর সাহায্য গর্ভধারণ নিশ্চিত হলে আলট্রাসাউন্ড ও অন্যান্য পরীক্ষাগুলোও করিয়ে নিতে হবে।
প্রেগন্যান্ট হওয়ার ১ম সপ্তাহে শরীরে এইচসিজি হরমোনের পরিমাণ কম থাকলেও ২য় সপ্তাহ শুরু হওয়ার সাথে সাথে শরীরে এই হরমোনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। কোন রকম জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া সহবাস করলে এবং সহবাসের ১ম কিংবা ২য় সপ্তাহ যাওয়ার পর যদি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো দেখতে পান তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। এর আগে করলে গর্ভধারণ সত্বেও রেজাল্ট নেগেটিভ আসতে পাারে।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট পরীক্ষা করার নিয়ম
গর্ভধারণ পরীক্ষা করার উত্তম সময় হচ্ছে সকালবেলা। কেননা এসময় প্রস্রাবে এইচসিজি হরমোনের পরিমাণ বেশী থাকে। চাইলে যে কোন সময় এবং একাধিকবার এই পরীক্ষা করা যায়।
প্রেগন্যান্সি কিটে দু’ধরনের অংশ থাকে। প্রথম অংশে প্রস্রাবের স্যাম্পল দেওয়া হয়, অন্য অংশে রেজাল্ট দেখায়। প্রথমে সকালের কিছুটা প্রস্রাব নিয়ে প্রেগন্যান্সি এর নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। প্রেগন্যান্সি কিট এর নির্দেশনায় চিহ্নিত করে দেওয়া থাকবে কোথায় প্রস্রাব রাখতে হবে।
প্রস্রাব রাখা হয়ে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে রেজাল্ট দেখাবে।
প্রেগন্যান্সি কিট এর রেজাল্ট দেখার নিয়ম
প্রেগন্যান্সি কিটের মধ্যখানে দু’টি লম্বা কাঠি বা বক্স থাকে। প্রস্রাবের স্যাম্পল দেওয়া পরে যদি দেখেন যে একটি কাঠিতে রঙিন রেখা উঠে এসেছে তাহলে রেজাল্ট নেগেটিভ অর্থাৎ, আপনি গর্ভবতী নন।
যদি দু’টি কাঠিতে রঙিন রেখা উঠে তাহলে আপনি গর্ভবতী। যদি রঙিন রেখা দেখা না যায় তাহলে প্রস্রাবের স্যাম্পল নিয়ে আবার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তবে তা আবার নতুন কিটে।
প্রথম একটি কাঠি রঙিন হওয়ার আধা ঘণ্টা পরে অন্য কাঠিটি রঙিন হলে পরীক্ষাটি অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তখন আবার পরীক্ষা করে নিতে হবে।
প্রেগন্যান্সি কিট এর ফলাফল কতটুকু গ্রহণযোগ্য
প্রেগন্যান্সি কিট এর ফলাফল ভুল হয়েছে এমন খুব কমই হয়। ৯৯ শতাংশ সময় প্রেগন্যান্সি কিট ভালো ফল দেয়। তবে, মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রেগন্যান্সি কিট, সন্তান হওয়ার ৪ মাসের মধ্যে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানো, কোন কারণে শরীরে এইচসিজি হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে প্রেগন্যান্সি কিট এর ফলাফল ভুল আসতে পারে।
রেজাল্ট নেগেটিভ হওয়া সত্বেও মাসিক হচ্ছে না কেন
মাসিকের সময় হওয়া সত্বেও এখনো মাসিক হয়নি আবার প্রেগন্যান্সি কিটে রেজাল্টও নেগেটিভ। তাহলে সমস্যা কোথায়। অনিয়মিত মাসিক হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তাই এক সপ্তাহ অপেক্ষা করুন এবং আবার গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন। তারপরেও যদি রেজাল্ট নেগেটিভ আসে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
প্রায়ই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর
প্রেগন্যান্সি নিয়ে অনেকের অনেক ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে। চলুন তেমনই কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর জেনে আসি।
১. মাসিক বন্ধ হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?
মাসিকের তারিখ মিস হওয়ার সাথে সাথে গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন। রেজাল্ট নেগেটিভ আসলে ১০/১৪ দিন অপেক্ষা করে আবার পরীক্ষা করুন। এবারও রেজাল্ট নেগেটিভ পেলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
২. প্রেগন্যান্ট হলে কত দিনের মধ্যে বোঝা যায়?
গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই গর্ভধারণের লক্ষণগুলো দেখতে পাওয়া যায়। যত সময় গড়াতে থাকে লক্ষণগুলো ততই প্রকাশ পায়। গর্ভধারণের ১ম ও ২য় সপ্তাহের লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ৮০ শতাংশ মহিলার বমি বমি ভাব কিংবা বমি হয়ে থাকে। উক্ত লক্ষণ ছাড়াও স্তনে ব্যথা ও স্তন ফোলার মতো সমস্যা হয়ে থাকে।
৩. রেজাল্ট পজিটিভ হওয়ার আগে কি গর্ভাবস্থার লক্ষণ দেখা দিতে পারে?
হ্যাঁ গর্ভাবস্থার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম লক্ষণগুলো হচ্ছে স্তনে ব্যথা, স্তন ফুলে যাওয়া, রুচির পরিবর্তন, বমি বমি ভাব হওয়া ও বমি হওয়া।
৪. মিলনের কত দিন পর গর্ভধারণ এর পরীক্ষা করতে হয়?
কিছু কোম্পানি এক ধরনের প্রেগন্যান্সি কিট বের করেছে যে কিটগুলো দিয়ে ২য় সপ্তাহের মধ্যে গর্ভধারণ পরীক্ষা করা সম্ভব। আবার কিছু কিট রয়েছে যে কিটগুলো গর্ভধারণের ৩য় সপ্তাহ হতে কার্যকর। তাই মিলনের অন্তত ১৪ দিন পরে পরীক্ষা করা যেতে পারে। রেজাল্ট নেগেটিভ আসলে ২১ দিন পরে আবার টেস্ট করতে হবে।
৫. প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা কি শুধু সকাল বেলায় করা যায়?
প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা যে কোন সময় করা যায়। সকালে প্রস্রাবে হরমোনের মাত্রা বেশী থাকায় অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা সকালে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে বলে। তাই চেষ্টা করা উচিত সকালে প্রেগন্যন্সি পরীক্ষা করানো।
শেষ কথা
প্রেগন্যান্সি কিট এর সাহায্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট করালে ভুল খুব কমই হয়ে থাকে। এর খরচও খুবই সামান্য এবং ঘরে বসে খুব সহজেই করা যায়। যদি পিরিয়ড মিস যায় তাহলে গর্ভধারণ টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। অনেক সময়, অনেক কারণে ভুল রেজাল্ট দেখায় তার জন্য কিছুদিন পর আবার টেস্ট করতে হবে। সবশেষে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে।
Discussion about this post