ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম। ইসলামে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার কথা বলেছে। দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের ফজিলত অনেক বেশী। অনেকে আছেন যারা ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম জানেন না। আজকে আমরা ফজরের নামাজ কীভাবে পড়বেন, কখন পড়বেন ও ফজরের নামাজ নিয়ে আরও কিছু অজানা বিষয় জানবো।
ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম
দৈনিক নামাজ পাঁচবার আদায় করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। যতক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান আছে ততক্ষণ পর্যন্ত নামাজ ছাড়া যাবে না। এমনকি মৃত্যুশয্যায় স্বাভাবিক জ্ঞান থাকা অবস্থায়ও নামাজ বাদ দেওয়ার কোনও বিধান নেই।
মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করলো সে অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। এবং যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করলো সে সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করলো। সেই ব্যাক্তি সেই দিনের পুরোটা আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।
ফজরের নামাজের সময়
ফজরের নামাজের সময় শুরু হয় সুবহে সাদিকের শুরু হওয়ার পর থেকে। ফজরের নামাজের সময় শেষ হয় সূর্যোদয় উঠার সাথে সাথে। উক্ত সময়ের মধ্যে ফজরের নামাজ আদায় করে নিতে হবে। সুবহে সাদিকের আগে ফজরের নামাজ পড়লে সে নামাজ হবে না। সূর্যোদয়ের পরে ফজরের নামাজ পড়লে সে নামাজ কাজা হিসেবে হবে গণ্য হবে।
ফজরের নামাজ কয়ভাগে বিভক্ত
ফজরের নামাজ চার রাকআত। এই চার রাকাত নামাজ, সুন্নত ও ফরজের মধ্যে বিভক্ত হয়েছে। ফজরের নামাজে দুই রাকআত সুন্নত এবং দুই রাকআত ফরজ। আজকের আর্টিকেলে ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম ও ফজরের নামাজে ফরজ ও সুন্নত কীভাবে আদায় করবেন দুটো বিষয়েই বলা হয়েছে।
ফজর নামাজে সুন্নত/ফরজ কোনটা আগে পড়বেন
ফজরের নামাজে সুন্নতের দুই রাকআত আগে পড়তে হয়। তারপর ফরজ পড়তে হয়। মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে যদি দেখেন ইতিমধ্যে জামাত শুরু হয়ে গিয়েছে তাহলে জামাতের সহিত ফজর নামাজ পড়ার পরে দুই রাকআত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হবে।
যদি জামাত শুরু হতে যথেষ্ট সময় থেকে থাকে তাহলে আগে দুই রাকআত সুন্নত নামাজ পড়ার পরে জামাতের সহিত ফরজ নামাজ পড়তে হবে।
ফজরের দুই রাকআত সুন্নত পড়ার নিয়ম
অন্যান্য সকল নামাজের মতো ফজরের নামাজ পড়ার জন্যও অজু করে পাক পবিত্র হয়ে নামাজ পড়ার স্থানে দাড়াতে হবে। অতঃপর নামাজ পড়ার নিয়ম অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে নামাজ পড়তে হবে। ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত নামাজ কীভাবে আদায় করবেন এখন আমরা সেটি জানবো।
ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম | প্রথম রাকআত সুন্নত নামাজ
ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় এই দুই রাকআত সুন্নত নামাজ আদায় করার মধ্যে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। তাই চলুন আগে জেনে নিবো প্রথম রাকআত নামাজ যেভাবে আদায় করবেন। মহিলাদের নামাজ পড়ার নিয়মের কিছু ভিন্নতা আছে। যেমন- হাত বাধা, সিজদা দেওয়া ও আরও কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা থেকে থাকে। যার জন্য মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম গুলো দেখে আসতে পারেন।
নিয়ত: প্রথমে নিয়ত করে নিতে হবে। নিয়ত মুখে বলা বাধ্যতামূলক নয়। মনে মনে “নামাজ পড়বো” এই নিয়ত করে দাঁড়ালেই হবে। অতঃপর তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানোর পরে, ডান হাত বাম হাতের উপরে বেধে নাভির নিচে রাখতে হবে। নিয়ত করা হলে গেলে সানা পড়তে হবে।
সানা: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতপূর্ণ, তোমার মর্যাদা অনেক উপরে, আর তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই।
সানা পড়া শেষ হয়ে গেলে “আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম, তারপর বিসমিল্লাহ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পড়ে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে।
সুরা ফাতিহা: বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম। আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন। আররহমা-নির রাহি-ম। মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন। ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম। সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন।
অন্যান্য নামাজের মতো ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম এ সুরা ফাতিহা পড়া শেষ হয়ে গেলে আস্তে আমিন বলতে হবে। সুরা ফাতিহা পড়ার পরে অন্য একটি সূরা কমপক্ষে তিন আয়াত পরিমাণ যেন হয় এমন সুরা পাঠ করতে হবে। অতঃপর “আল্লাহু আকবার” বলে রুকুতে যেতে হবে।
রুকু: রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরতে হবে। রুকুতে থাকাকালীন কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ু পড়তে হবে। পাঁচবার কিংবা ৭ বারও পড়া যেতে পারে। এবার রুকু থেকে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা মাথা উঠিয়ে সোজা দাড়াতে হবে। সোজা দাঁড়ানো হয়ে গেলে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলতে হবে। রুকু শেষ হলে “আল্লাহু আকবার” সিজদা দিতে হবে।
সিজদা: সিজদায় গিয়ে প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাত এবং সবশেষে কপাল মাটিতে রাখতে হবে। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখতে হবে। সিজদায় কমপক্ষে তিনবার, পাঁচবার কিংবা সাতবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়তে হবে।
প্রথম সিজদা হয়ে গেলে উঠে বসতে হবে। সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসতে হবে।
বসা হয়ে গেলে এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে দ্বিতীয় সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদায়ও কমপক্ষে তিনবার, পাঁচবার কিংবা সাতবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়তে হবে। অতঃপর “আল্লাহু আকবার” বলে উঠে দাড়াতে হবে। এভাবে ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম রাকআত নামাজ শেষ হলো।
ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম | দ্বিতীয় রাকআত সুন্নত নামাজ
দ্বিতীয় রাকআতে হাত উঠাতে হবে না, ছানাও পড়তে হবে না। প্রথম রাকাআত নামাজ শেষে দাড়ানোর পরে ডান হাত বাম হাতের উপরে রেখে স্থিরভাবে দাড়াতে হবে। দাড়ানো হলে ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা মিলিয়ে পড়তে হবে। তারপর প্রথম রাকআত এরমতো রুকু সিজদা করে দ্বিতীয় সিজদা দেওয়ার পরে শেষ বৈঠকে বসতে হবে।
শেষ বৈঠক: দ্বিতীয় সিজদা দেওয়ার পরে ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে দিয়ে বাম পায়ের উপর বসতে হবে। তখন হাত থাকবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। বসা হয়ে গেলে তাশাহহুদ পড়তে হবে।
তাশাহহুদ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাতু। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যু হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
তাশাহহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আঙুল উঁচু করে ইশারা করতে হবে। তাশাহহুদ পড়া হয়ে গেলে দরুদ শরিফ পাঠ পড়তে হবে।
দরুদ শরিফ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
অন্যান্য ফরজ ও সুন্নত নামাজের মতো ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম প্রায়ই একই। অন্যান্য নামাজে যেমন দরুদ শরিফ পড়া হয়ে গেলে দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে হবে। এখানেও সেভাবে করতে হবে।
দোয়ায়ে মাসুরা: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওলা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
এরপর প্রথমে ডানে এবং তারপরে বাঁয়ে মাথা ফেরাতে হবে। দুইদিকেই মাথা ফেরানোর সময় ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে মাথা ফেরাতে তথা সালাম ফেরাতে হবে। সালাম ফেরানোর সময় পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করতে হবে।
এরই মধ্যে দিয়ে ফজরের দুই রাকআত সুন্নত নামাজ আদায় করার কাজ শেষ হলো।
ফজরের দুই রাকআত ফরজ নামাজ যেভাবে আদায় করবেন
ফজরের দুই রাকআত সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম ও দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ম প্রায়ই একই। ফরজ কিংবা সুন্নত নামাজ যদি দুইয়ের অধিক তিন বা চার রাকআত হয়ে থাকে তাহলে নিয়ম ভিন্ন হয়ে থাকে। তিন কিংবা চার রাকআত নামাজ কীভাবে পড়তে হয় জানতে চাইলে দেখে আসতে পারেন নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম ও ফজরের নামাজ কখন, কীভাবে আদায় করবেন সেগুলো সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানো হয়েছে। ইসলামের কিছু ইবাদতে শারীরিক অসুস্থতা কিংবা অন্য কোন সমস্যার কারণে কাফফারা কিংবা অন্যভাবে সেগুলো পূরণ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, নামাজ এমন একটি ইবাদত, জ্ঞান থাকা পর্যন্ত নামাজ ছাড় দেওয়া যাবে না।
তাই উক্ত নিয়মানুযায়ী নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন। প্রথমে হয়তো প্রবলেম হলেও হতে পারে। তবে, চেষ্টা না করলে শ্রীঘ্রয়ই নিয়মগুলো ভুলে যাবেন।
আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে যেতে চাইলে এখান থেকে যেতে পারেন কোর্সটিকা।
Discussion about this post