ফাগুন মাস কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাক হানাদাররা এদেশে অতর্কিতে আক্রমণ করে। আমাদের দেশে ফাল্গুন মাস মার্চ এবং ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি অবস্থিত। ১৯৫২ সালের, ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি বাহিনী ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করে। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে এভাবে অগণিত মানুষকে হত্যা করে তারা। কবির কাছে তাই পাক হানাদাররা দস্যুর মতো। তাদের এদেশে আগমন দস্যুর আগমনস্বরূপ।
ফাগুন মাস কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ফাগুন মাসকে দুঃখী বলার কারণ কী?
উত্তর: ফাগুন মাসকে দুঃখী বলার কারণ হলো—এ মাসে বাংলার বুক রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল।
ভাষা আন্দোলন হয়েছিল ফাল্গুন মাসে। ফাল্গুন মাস বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধের বীজকে জেগে উঠতে দেখেছিল, দেখেছিল অনেক সাহসী ছেলের লাশ। এ মাসে খালি হয়েছিল স্নেহময়ী মায়ের বুক। বোনেরা হারিয়েছিল আদরের ভাই। এ কারণেই ফাল্গুনকে দুঃখী মাস বলা হয়।
২. ফাগুন মাসে বোনদের কেঁদে ওঠার কারণ দর্শাও।
উত্তর: ফাগুন মাসে বোনদের কেঁদে ওঠার কারণ হলো, এ মাসে তারা ভাইদেরকে হারিয়েছে।
মহান ভাষা আন্দোলন হয়েছিল ফাগুন মাসে। এ মাসে ভাষার জন্য শত্রুর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে অনেক বোনের ভাইরা। প্রকৃতিগতভাবে ভাইয়েরা বোনদের আদরের স্থান। বোনের হৃদয়ে ভাইয়ের জন্য মাতৃরূপী ভালোবাসা সঞ্চিত থাকে। ফাগুন মাসে বোনেরা কেঁদে ওঠে ভাই হারানোর শোকে। প্রিয়জন হারানোর বেদনা হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে যার প্রতিফলন দেখা যায় চোখের পানিতে। তাই ফাগুন মাসে বোনেরা কাঁদে।
৩. ‘ফুল ফোটালো রক্ত থোকা থোকা।’—বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ‘ফুল ফোটালো রক্ত থোকা থোকা।’—লাইনটি দ্বারা শহিদদের রক্তধারাকে বোঝানো হয়েছে। কারণ ফাগুন মাসে বাংলার বুকে অনেক রক্ত ঝরেছিল।
বাংলার সাহসী সন্তানরা বাংলাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। ফাগুন মাসে বাংলার বুকে শত্রু আগমন করেছিল। বাংলার খোকারা সেসব শত্রুকে বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিহত করেছিল। আলোচ্য লাইন দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।
৪. ‘দস্যু আসে রথে’ ‘দস্যু’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘দস্যু আসে রথে’—চরণে দস্যু বলতে পাক হানাদারদের বোঝানো হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাক হানাদাররা এদেশে অতর্কিতে আক্রমণ করে। আমাদের দেশে ফাল্গুন মাস মার্চ এবং ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি অবস্থিত। ১৯৫২ সালের, ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি বাহিনী ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করে। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে এভাবে অগণিত মানুষকে হত্যা করে তারা। কবির কাছে তাই পাক হানাদাররা দস্যুর মতো। তাদের এদেশে আগমন দস্যুর আগমনস্বরূপ।
৫. ফাল্গুনকে ‘দস্যি মাস’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: ফাল্গুন মাসের দুরন্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটিকে দস্যি মাস বলা হয়েছে।
ফাল্গুন মাস বাংলার সৌন্দর্য প্রকাশের মাস। এ মাসে ফাল্গুন হয়ে ওঠে দুরন্ত। শক্ত ডাল থেকে মাথা ঠেলে বের হয় সবুজ পাতা। বাংলার মাঠে-বনে সবুজের আগুন জ্বালিয়ে দেয় ফাল্গুন। এ সময় বনের সব গাছই সবুজের সমারোহে ভরপুর হয়ে ওঠে। ফাল্গুন মাসের এ দুরন্ত বৈশিষ্ট্যের জন্যই ফাল্গুন যেন আমাদের ভাষা শহিদদের মতো দস্যি হয়ে ওঠে।
৬. ফাল্গুন মাসে বনে কেন গোলাপ কাঁদে?
উত্তর: ভাষা শহিদদের স্মরণে হাওয়ায় হাওয়ায় দীর্ঘশ্বাস ছড়ায়
ফাল্গুন মাসে ভাষা আন্দোলনে গিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা শহিদ হওয়ায় ফাল্গুন মাস এলে বনে গোলাপ কাঁদে।
ফাল্গুন মাসে প্রকৃতির সবুজ পাতা ঘিরে ফুটে ওঠে নানা গোলাপ। আর এ ফাল্গুন মাসেই ভাষা আন্দোলনে অজস্র বাংলার সন্তান শহিদ হন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাস এলে শহিদদের স্বজনেরা বেদনা ও দুঃখে আপ্লুত হয়ে ওঠে। ফাল্গুন মাসে ভাষা শহিদদের মৃত্যুর স্মৃতি মনে করে বনে গোলাপ কাঁদে।
৭. ফাগুন মাসে কেন দুঃখী গোলাপ ফোটে? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: বাংলাদেশের ইতিহাসে ফাগুন মাস এমন একটি মাস, যখন ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়। বাংলা ভাষার দাবিতে অসংখ্য দামাল ছেলে তাঁদের প্রাণ বিসর্জন দেয়। আর তাঁদের স্মরণেই প্রতিবছর ফাগুনে দুঃখী গোলাপ ফোটে। মূলত চরণটি দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, বসন্তের আগমন এবং প্রকৃতির সতেজতার মধ্যেও দেশের হৃদয়ে বয়ে চলে দুঃখের একটি গভীর ছায়া। গোলাপের সৌন্দর্য এবং তার সাথে যুক্ত কষ্টের এই দ্বৈততা কবি চরণটির মাধ্যমে একদম স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।
৮. ‘ফাগুন মাসে সবুজ আগুন জ্বলে’—‘সবুজের’ আগুন বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন তা বর্ণনা কর।
উত্তর: কবি ‘ফাগুন মাসে সবুজ আগুন জ্বলে’ দিয়ে প্রকৃতির সতেজতা এবং শক্তির প্রতীক তুলে ধরেছেন। ‘সবুজ’ এখানে প্রকৃতির নবজীবন, গাছপালার শস্যপূর্ণতা এবং ঋতুর পরিবর্তনকে বোঝায়, যা ফাগুন মাসে দৃশ্যমান হয়। অপরদিকে, ‘আগুন’ তীব্রতা, উত্তেজনা, ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম এবং বিপ্লবের প্রতীক, যা ফাগুনের মধ্যে অন্তর্নিহিত। কবি এই দুটি উপাদানকে একত্রিত করে প্রকৃতির নতুন জীবনের সঙ্গে মানুষের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। ‘সবুজ আগুন’ দিয়ে কবি প্রকৃতির সতেজতা এবং মানবিক সংগ্রামের শক্তির মিশ্রণ বোঝাতে চেয়েছেন।
৯. ফাল্গুনকে কবি দস্যি মাস বলেছেন কেন?
উত্তর: ফাল্গুন মাস ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতি বহন করে বলে কবি এই মাসকে দস্যি মাস বলেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ফাল্গুন মাস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি একই সূত্রে গাঁথা। এ মাসেই বাংলা ভাষায় সংগ্রামে ঢাকার রাজপথ বাংলার সাহসী সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। তাই কবি ফাল্গুন মাসকে দস্যি মাস বা দুরন্ত মাস বলেছেন।
১০. ফাগুন মাসে প্রকৃতি কেমন সাজে সজ্জিত হয়?
উত্তর: ফাগুন মাসে প্রকৃতি নব ও রঙিন সাজে সজ্জিত হয়।
ফাগুন মাস খুব দস্যি মাস। এ মাসে প্রকৃতিতে আসে নতুনের জাগরণ। নতুন পাতা শক্ত কা- ও পাথরের বাধা ভেদ করে প্রকৃতির বুকে বেরিয়ে আসে। পাথরের বুকেও যেন সবুজ জায়গা করে নেয়। বনের যেদিকে তাকানো যায় চারদিকে সবুজের সমারোহে মুগ্ধ হতে হয়। ফাগুন মাসে বন ফুলে ফুলে সেজে ওঠে। চারদিকে সবুজের সাজ সাজ রব দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন সবুজ রঙে সেজেছে।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের চারুপাঠ বাংলা বই থেকে ফাগুন মাস কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ১০টি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post