ফিলস্তিনের চিঠি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : এটি পত্রের ভাষায় রচিত একটি অনুবাদমূলক গল্প। এতে ইসরায়েলের আক্রমণে বিপর্যন্ত ফিলিস্তিনের মর্মান্তিক চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। বন্ধু মুস্তাফাকে সম্বোধন করে লেখা এই চিঠিতে দেখা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন ছেড়ে সুন্দর ও সুখী জীবনের প্রত্যাশায় মুস্তাফা প্রথমে কুয়েত ও পরে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যায়। চিঠির লেখককেও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমন্ত্রণ জানায় মুস্তাফা। অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর বিপন্ন ফিলিস্তিন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পত্রলেখক।
কিন্তু করুণ এক অভিজ্ঞতা তাকে আমূল বদলে দেয়। সে ফিলিস্তিন ছাড়ার পূর্বে নিজের মা-ভাবির সঙ্গে দেখা করতে এসে জানতে পারে, তার নিহত ভাইয়ের মেয়ে নাদিয়া বোমার আক্রমণে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লেখক তাকে দেখতে যায়। নাদিয়ার মনকে প্রফুল্ল করার জন্য বলে, তার চাওয়া অনেকগুলো লাল সালোয়ার সে নিয়ে এসেছে। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরলেই নাদিয়া সেগুলো দেখতে পাবে। একথা শুনে নাদিয়ার চোখ ভিজে যায়। সাদা চাদর তুলে দেখায়, তার দুই পা কেটে ফেলা হয়েছে। এই দৃশ্য লেখকের মনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, ফিলিস্তিন ছেড়ে সে কোথাও যাবে না। বন্ধুকেও আহ্বান করে দেশে ফিরে আসার।
ফিলস্তিনের চিঠি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—১: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. লেখক কেন মনে করেন যে, মুস্তাফা ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল? আলোচনা কর।
খ. লেখকের কাছে কোন বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন তিনি নাদিয়াকে হাসপাতালে দেখতে যান? বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. লেখক মনে করেন যে, মুস্তাফা ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং দায়বদ্ধতা পালানোতে নয়, দেশের জন্য সংগ্রামে রয়েছে। মুস্তাফা ফিলিস্তিনের দুঃখ-কষ্ট থেকে পালিয়ে একটি উন্নত জীবন গড়ার জন্য ক্যালিফোর্নিয়া চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু লেখক তাকে বোঝান, যে পরিস্থিতি সে ছেড়ে চলে যাচ্ছে, সেই দেশের প্রতি তার দায়িত্ব ও সম্পর্ককে অস্বীকার করা হবে। লেখক জানতেন, মুস্তাফা এমন একটি পৃথিবীতে যেতে চায় যেখানে যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং সংগ্রাম নেই, তবে সেখানে গিয়ে সে প্রকৃত শান্তি বা পরিপূর্ণতা পাবে না, কারণ জীবনের অর্থ শুধুমাত্র সুখে নয়, নিজের দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব পালন করেই পাওয়া যায়।
ফিলিস্তিনের মাটির সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে নিজের জীবন গড়ে তোলা, লেখকের মতে, এভাবে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সমাধান হতে পারে না। লেখক মনে করেন, ফিলিস্তিনের প্রতি তার দেশের দায়িত্ব এবং জনগণের পাশে দাঁড়ানোই তাকে প্রকৃত শান্তি এনে দেবে, যা ক্যালিফোর্নিয়ার মাটি তাকে কখনোই দিতে পারবে না।
এছাড়া, লেখক মুস্তাফাকে ফিলিস্তিনের পেছনে থাকা সত্যিকার সংগ্রাম, পরাজয় ও বেদনার সম্মুখীন হওয়ার জন্য আহ্বান করেন, যাতে সে তার নিজের জীবনকে শুধু নিজের স্বার্থে না, বরং তার দেশের এবং জনগণের জন্য নিবেদিত করতে পারে।
খ. লেখক যখন নাদিয়াকে হাসপাতালে দেখতে যান, তখন তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন যে, তার দেশের দুর্দশা এবং সংগ্রামের সঙ্গে তার নিজেকে সংযুক্ত করার এক গভীর দায়িত্ব রয়েছে। নাদিয়া, একজন তরুণী, তার জীবনকে বাঁচানোর জন্য এক অপরিহার্য ত্যাগ স্বীকার করেছে। তার পা কেটে ফেলা হয়েছে, কারণ সে তার ছোট ভাইবোনদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখেছিল। নাদিয়া তার পরিবারের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছে, তা লেখককে একটি বড় শিক্ষার মুখোমুখি করে।
নাদিয়ার অবস্থা লেখকের সামনে ফিলিস্তিনের যুদ্ধের বাস্তবতা তুলে ধরে। তিনি উপলব্ধি করেন যে, তার দেশ শুধু যুদ্ধের কবলে পড়েনি, এখানে মানুষের জীবনকে অল্পে হারাতে হচ্ছে এবং একে অপরের জন্য ত্যাগ করতে হচ্ছে। লেখককে এই দৃশ্য দেখিয়ে দেয় যে, ফিলিস্তিনে জীবন কাটানোর মানে শুধু দারিদ্র্য, নির্যাতন এবং সহানুভূতির অভাব নয়; এর সঙ্গে রয়েছে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ, একে অপরের জন্য ত্যাগের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
এখানে লেখক বুঝতে পারেন, যে দেশের মানুষের জন্য কিছু করা না গিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে নিজের জীবন গড়তে চাওয়া কতটা আত্মকেন্দ্রিক এবং নিষ্ক্রিয়। নাদিয়ার পা কাটা হওয়ার ঘটনা তার কাছে একটি সজাগতা নিয়ে আসেÑযে ত্যাগ, যে সংগ্রাম, যে জাতির পাশে দাঁড়ানো, সেই সবই তাকে ফিরিয়ে আনে তার দেশ, তার জনগণের পাশে।
নাদিয়ার পা কাটা যাওয়ার পর, লেখক অনুভব করেন যে, তার দেশের জন্য তার কর্তব্যটা স্পষ্ট হয়েছে। সে ক্যালিফোর্নিয়া চলে না গিয়ে, দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সংগ্রামের অংশ হবে। নাদিয়ার অবস্থা দেখিয়ে লেখক বুঝতে পারেন, এই দেশের যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্যেও জীবনের প্রকৃত অর্থ ও মূল্য নিহিত রয়েছে, এবং তিনি আর নিজের জীবনকে পালিয়ে একা কাটাতে চান না। এই উপলব্ধি তাকে আরও দৃঢ়ভাবে তার দেশের প্রতি দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তাকে দেশের সংগ্রামের অংশ হতে অনুপ্রাণিত করে।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—২: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. ‘ফিলিস্তিনের চিঠি’ গল্পে নাদিয়ার পা কাটার ঘটনা লেখকের জীবনে কী প্রভাব ফেলেছিল? ব্যাখ্যা কর।
খ. লেখকের ‘নিজেকে মুক্ত করতে হবে’ ধারণাটির প্রতি নাদিয়ার পা কাটার ঘটনা কীভাবে প্রভাবিত করে? বিশ্লেষণ কর।
২ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. নাদিয়ার পা কাটার ঘটনা লেখকের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসে। যখন লেখক নাদিয়াকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে, তখন সে জানায় যে, সে তার ছোট ভাইবোনদের রক্ষা করতে গিয়ে তার পা কেটেছে। এ ঘটনা লেখককে গভীরভাবে আলোড়িত করে এবং তার মনের মধ্যে এক ধরনের কাঁপন সৃষ্টি করে। এই দৃশ্য তাকে বুঝিয়ে দেয় যে, ফিলিস্তিনে মানুষের জীবন শুধু যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং দুর্দশায় আটকে নেই, বরং এই সংগ্রামে তাদের আত্মত্যাগ, সাহস এবং মানবিকতা রয়েছে।
লেখক অনুভব করেন যে, নাদিয়া তার জীবন, তার শরীর এবং তার পা দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার মধ্যে প্রকৃত শান্তি এবং সংগ্রামের মর্ম নিহিত রয়েছে। এই ঘটনা লেখককে তার নিজের দেশ, তার নিজের জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি পুনরায় ভাবতে বাধ্য করে।
নাদিয়ার পা কাটার ঘটনা লেখককে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়, যে সে যে “নিজেকে মুক্ত করতে হবে” বলে যে ধারণা নিয়ে চলছিল, সেটি আসলে ভুল ছিল। পালিয়ে গিয়ে নিজের জীবন গড়ার মধ্যেই মুক্তি নেই। প্রকৃত মুক্তি আসে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের সংগ্রামে অংশ নিয়ে। এর মাধ্যমে লেখক উপলব্ধি করেন যে, তার “মুক্তি” আসলে পালানোর মধ্য দিয়ে নয়, বরং দেশের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা এবং সংগ্রামের অংশ হওয়ার মধ্যে নিহিত।
খ. লেখকের ‘নিজেকে মুক্ত করতে হবে’ ধারণাটি ছিল একটি মানসিক অবস্থা, যা তার ব্যক্তিগত সংগ্রাম এবং দুঃখের বিরুদ্ধে পালানোর ইচ্ছা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। তিনি ভাবতেন যে, ফিলিস্তিনের সংঘাত এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে তাকে ক্যালিফোর্নিয়া চলে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে নতুন জীবন গড়ে তিনি নিজেকে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করবেন। তাঁর মনে হচ্ছিল যে, দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেলে, তিনি নিজের হতাশা, পরাজয় এবং সংগ্রামের দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। কিন্তু নাদিয়ার পা কাটার ঘটনা এই ধারণাটির মধ্যে একটি গভীর প্রশ্নবোধক চিহ্ন চিহ্নিত করে।
নাদিয়া তার পা হারিয়েছে, যখন সে তার ভাইবোনদের রক্ষা করতে গিয়ে তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি ত্যাগ করেছে। সে নিজের জীবনকে বাঁচানোর চেয়ে অন্যদের জীবন বাঁচাতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, যা তাকে একজন ত্যাগী এবং সাহসী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। এই ঘটনা লেখককে মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃত মুক্তি আসলে কোনো জায়গায় পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে নয়, বরং দেশের মানুষের সঙ্গে থাকতে এবং তাদের সংগ্রামের অংশ হতে। নাদিয়ার পা কাটার ঘটনা লেখকের জীবনের দৃষ্টিকোণকে পরিবর্তন করে।
লেখক বুঝতে পারেন, পালিয়ে গিয়ে নতুন জীবনের সন্ধানে যাওয়ার মধ্যে কোন মুক্তি নেই। প্রকৃত মুক্তি আসে যখন আপনি নিজের জাতি, আপনার দেশের মানুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ এবং সংগ্রাম সহ্য করেন এবং তার মধ্যে একটি শক্তিশালী মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে, যেভাবে নাদিয়া তার শরীরের অংশ ত্যাগ করেছে নিজের পরিবারের জন্য, সেভাবে তাকে নিজের দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তাই, তাঁর “মুক্তি” ধারণাটি পরিবর্তিত হয়ে যায়; পালিয়ে গিয়ে নিজেকে মুক্ত করার পরিবর্তে, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করা এবং তার সংগ্রামে অংশ নেওয়াই হবে তার প্রকৃত মুক্তি।
নাদিয়ার পা কাটার ঘটনাটি লেখকের মধ্যে এক গভীর পরিবর্তন নিয়ে আসে, যার মাধ্যমে তিনি উপলব্ধি করেন যে, জীবন শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, বরং আপনি যেখানকার সদস্য, সেখানকার মানুষের জন্য আপনাকে কাজ করতে হবে। পালিয়ে গিয়ে নিজেকে নিরাপদে রাখা আসলে এক ধরনের আত্মকেন্দ্রিকতা, কিন্তু নিজের দেশের মানুষের সাথে একত্রিত হয়ে তাদের জীবনের সংগ্রামকে বুঝে নেওয়াই আসল মুক্তি এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে ফিলস্তিনের চিঠি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post