ফুলের বিবাহ গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে বাঙালি সমাজজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বিবাহপ্রথার নিপুণ বিবরণ উঠে এসেছে। গল্পের একাংশে বিবাহযাত্রার আড়ম্বরপূর্ণ বিবরণ উঠে এসেছে।
বিবাহযাত্রায় উচ্চিঙ্গড়া পোকা নহবৎ বা সানাই বাজাচ্ছিল। যদিও সানাইয়ের বায়না নিয়েছিল মৌমাছি। বিবাহযাত্রা ছিল গোধূলিলগ্নে। কিন্তু মৌমাছি রাতে চোখে দেখতে পায় না। তাই সে বরযাত্রীদের সঙ্গে যেতে পারেনি।
ফুলের বিবাহ গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ক্ষুদ্র বৃক্ষটি কেন বিরক্ত হয়েছিল?
উত্তর: ক্ষুদ্র বৃক্ষটি বিরক্ত হয়েছিল কারণ ভ্রমর ঘটকালির কাজে নগদ অর্থ বা মধু আগাম চাওয়ার মতো কথাবার্তা বলছিল। এছাড়া, ভ্রমর কন্যার গুণের পরিবর্তে নিজের লাভের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছিল, যা ক্ষুদ্র বৃক্ষের কাছে অযথা সময় নষ্টের মতো মনে হয়েছিল। এজন্য সে বিরক্ত হয়ে সরাসরি বরের বিষয়ে জানতে চায়।
২. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘ফুলের বিবাহ’ কেন রচনা করেছেন?
উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভবিষ্যৎ বর-কন্যাদের জন্য ‘ফুলের বিবাহ’ রচনা করেছেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বৈশাখ মাসের একদিন নসী বাবুর ফুলবাগানে বসে কল্পনায় নিমজ্জিত হন। কল্পনায় তিনি একটি মল্লিকা ফুলের বিবাহ দেখতে পান। সেই বিবাহের রীতিনীতি, প্রথা সকল কিছুই বাঙালি গার্হস্থ্য-জীবনের অনুরূপ। তিনি বিয়ের জন্য সুপাত্রের সন্ধান, ঘটকালি, পণপ্রথা, বিবাহযাত্রা, বিয়েবাড়ির অবস্থা, মেয়েলি আচার-অনুষ্ঠান সর্বোপরি বাঙালি সমাজের বিয়ের সমস্ত রীতিনীতি মল্লিকা ফুলের বিয়েকে কেন্দ্র করে হাস্যরসাত্মকভাবে তুলে ধরেছেন। বিয়ে বাঙালি সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রথা। বাঙালি সমাজের এই রীতি সম্পর্কে সকলকে জানানোর জন্য ‘ভবিষ্যৎ বরকন্যাদিগের শিক্ষার্থে’ ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পটি রচনা করেছেন।
৩. ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে কন্যার পিতার অবস্থা সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে কন্যার পিতা কন্যাভারগ্রস্ত হওয়ায় চিন্তিত।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে বিবাহের পাত্রী মল্লিকা। সে এখন কলি, আজকালের মধ্যেই ফুটবে। মল্লিকা ফুলের পিতা বড়োলোক নয়, ক্ষুদ্র বৃক্ষ। তাছাড়া অনেকগুলো কন্যার দায়ভারগ্রস্ত সে মল্লিকা ফুলের জন্য সুপাত্র খুঁজছে। কিন্তু কন্যার জন্য বর পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় ভ্রমররাজ ঘটকালি শুরু করে। মল্লিকাকে দেখে অপ্রাসঙ্গিক নানা কথা বলে। কিন্তু বরের প্রসঙ্গে বলে না। সে ঘটকালির পারিশ্রমিক দাবি করে বসলে কন্যার পিতা ক্ষুদ্র বৃক্ষ’ বিরক্ত হয়ে ওঠে। কন্যার বিয়ে নিয়ে সে আসলে চিন্তিত।
৪. মল্লিকা ফুলের বিয়ের জন্য বর পাওয়া যাচ্ছিল না কেন?
উত্তর: পাত্রের দোষ-গুণ বাছাই করতে গিয়ে মল্লিকা ফুলের জন্য বর পাওয়া যাচ্ছিল না।
উদ্যানের রাজা স্থলপদ্ম নির্দোষ পাত্র হলেও তার ঘর বড়ো উঁচু, শ্রেণিবিভক্ত সমাজে স্থলপদ্ম নিচু জাতের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে না। জবা ফুল বিয়েতে রাজি থাকলেও সে বড়ো রাগী। তাই কন্যার পিতা এ সম্বন্ধ থেকে পিছিয়ে আসেন। গন্ধরাজও পাত্র ভালো, তবে তার বড়ো দেমাক। এভাবে দোষ-গুণ বাছাই করতে গিয়ে মল্লিকা ফুলের জন্য বর পাওয়া যাচ্ছিল না।
৫. ‘ফর্দ দিবেন, কড়ায় গন্ডায় বুঝাইয়া দিবে’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটি কন্যার পিতার বরপক্ষের চাহিদা পূরণের সক্ষমতা বোঝাতে করা হয়েছে।
কথাসাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে ফুলের বিবাহের রূপকে বাঙালি সমাজের বিয়ের রীতিনীতি প্রথা তুলে ধরা হয়েছে। মল্লিকা ফুলের জন্য যখন পাত্র পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ভ্রমর ঘটক হয়ে হাজির হয়। মল্লিকাকে দেখে ভ্রমরের পছন্দ হয়। এক পর্যায়ে ভ্রমর ঘটক জানতে চায় ঘরে মধু কত? কন্যার পিতা ক্ষুদ্র বৃক্ষ জানায়— ফর্দ দিলেই কড়ায় গ-ায় বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যেহেতু ফুলের বিয়ের রূপকে বাঙালি সমাজের বিবাহপ্রথা তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না এখানে বিয়ের পণ নিয়ে কথা হচ্ছে। অর্থাৎ পাত্রপক্ষের চাহিদামতো সব দিতে কন্যার পিতা প্রস্তুত।
৬. ‘বর অতি সুপাত্র।’—বরকে অতি সুপাত্র বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটি বর গ্রহণযোগ্য বা উপযুক্ত বোঝাতে করা হয়েছে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে মল্লিকা ফুলের বিবাহ। তার জন্য ভ্রমররাজ পাত্র খুঁজে বের করেছে। ঘটক ভ্রমররাজের মতে বর অতি সুপাত্র। তার অনেক গুণ। বর হচ্ছে গোলাপ। গোলাপ বংশ বড়ো কুলীন। গোলাপের গৌরব অধিক। কারণ তারা বাঞ্ছামালির সন্তান, তার স্বহস্তরোপিত। এসব গুণের কারণে গোলাপকে অতি সুপাত্র বলা হয়েছে।
৭. ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে মৌমাছি বরযাত্রীর সঙ্গে যেতে পারেনি কেন?
উত্তর: মৌমাছি রাতে চোখে দেখতে পায় না বলে বরযাত্রীদের সঙ্গে যেতে পারেনি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে বাঙালি সমাজজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বিবাহপ্রথার নিপুণ বিবরণ উঠে এসেছে। গল্পের একাংশে বিবাহযাত্রার আড়ম্বরপূর্ণ বিবরণ উঠে এসেছে। বিবাহযাত্রায় উচ্চিঙ্গড়া পোকা নহবৎ বা সানাই বাজাচ্ছিল। যদিও সানাইয়ের বায়না নিয়েছিল মৌমাছি। বিবাহযাত্রা ছিল গোধূলিলগ্নে। কিন্তু মৌমাছি রাতে চোখে দেখতে পায় না। তাই সে বরযাত্রীদের সঙ্গে যেতে পারেনি।
৮. রাজকুমার স্থলপদ্ম কেন বিবাহে আসতে পারেনি?
উত্তর: সূর্য ডুবে গেলে রাজকুমার স্থলপদ্ম অসুস্থ হয়ে পড়ে তাই বিবাহে আসতে পারেনি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে বাঙালি বিবাহের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে ফুলের বিবাহের রূপকে। গল্পে আড়ম্বরপূর্ণ বিবাহযাত্রার বর্ণনা এসেছে। বিবাহের পাত্র গোলাপ গোধূলিলগ্নে বিবাহযাত্রার উদযোগ করল। অনেকেই বরযাত্রীর সঙ্গে চলল। কিন্তু রাজকুমার স্থলপদ্ম সূর্য ডুবে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাই বিবাহে আসতে পারেনি।
৯. ‘কোন বিবাহে না এরূপ বরযাত্রী জোটে, আর কোন বিবাহে না তাহারা হুল ফুটাইয়া বিবাদ বাধায়?’ বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে বাঙালি সমাজের বিবাহের প্রথা তুলে ধরা হয়েছে।
বাঙালি বিয়েবাড়িতে একশ্রেণির লোক থাকেই, যাদের মূল কাজ হচ্ছে বিয়েতে ঝামেলা বাধানো। চাটুকারিতা বা মোসাহেবি করে বিয়েতে এরা গ-গোল পাকায়। ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে এ কাজ করেছে পিপড়ার দল, যারা হুল ফুটিয়ে বিয়েতে বিবাদ বাধায়।
১০. ‘দেখিলাম, সেই মালায় আমার বর কন্যা রহিয়াছে’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে লেখক তাঁর কল্পনায় সৃষ্ট বিবাহের বর ও কন্যাকে বাস্তবে অর্থাৎ নসী বাবুর মেয়ের হাতের মালায় দেখার বিষয়টি বুঝিয়েছেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে যে বিবাহের বিবরণ দিয়েছেন, সেটি তাঁর কল্পনায় সৃষ্টি। সে বিবাহের বর ছিল গোলাপ আর কন্যা ছিল মল্লিকা। নসী বাবুর মেয়ের ডাকে লেখকের ঘোর ভেঙে যায়। তিনি দেখতে পান নসী বাবুর মেয়ে কুসুমলতা বাস্তবিকই মালা গেঁথেছে। সে মালায় গোলাপ-মল্লিকাও আছে। অর্থাৎ তিনি তাঁর কল্পনার সাথে বাস্তবের একটি যোগসূত্র খুঁজে পান।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে ফুলের বিবাহ গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post