আপনি কি একজন বক্সার (বক্সার) বা মুষ্টিযোদ্ধা হতে চান? বক্সার হওয়ার উপায় জানা থাকলে আপনিও হতে পারবেন একজন সফল বক্সার। আপনি যদি একজন বক্সার হতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে এই পোষ্ট টি আপনার জন্য। আশা করি পোষ্টটি পড়ে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
একজন মুষ্টিযোদ্ধা হতে হলে আপনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শক্তি। আপনার শরীর এ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি না থাকে তাহলে আপনি কোন ভাবে একজন সফল মুষ্টিযোদ্ধা হতে পারবেন না। আর এই শক্তি আপনি পাবেন কোথা থেকে? একমাত্র বিভিন্ন প্রকার খাবার থেকে।
সব প্রকার খাবার থেকে শক্তি পাবেন ঠিকই। কিন্তু কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনাকে মুষ্টিযোদ্ধা হিসাবে গড়ে তুলবে তো নাই বরং আপনার পথ কঠিন করে তুলবে। সেইজন্য আপনার জেনে নেওয়া উচিত একজন মুষ্টিযোদ্ধার কি কি খাবার খাওয়া উচিত।
নিজে কে একজন সঠিক মুষ্টিযোদ্ধা হিসাবে তৈরি করতে হলে সবার আগে আপনাকে আপনার খাদ্যাভ্যাস সঠিক ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। কারণ একমাত্র সঠিক খাদ্য পারে আপনার শরীরে পরিমাণ মতো শক্তি প্রদান করতে। আপনার শরীর এ সঠিকভাবে শক্তি সঞ্চিত না থাকলে আপনি কিছুতে আপনার প্রতিপক্ষকে যুদ্ধে হারাতে পারবেন না।
বক্সার হওয়ার উপায়
আপনি যদি একজন ভালো বক্সার হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে দুইটা কথা মনে রাখতে হবে। সেগুলো হলো:
- অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার আগে আপনাকে খেতে বসতে হবে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ এর আগে আপনার খাবার ছেড়ে উঠে যেতে হবে। এতে করে আপনার শরীর সঠিক ভাবে গড়ে উঠবে।
- অনুশীলনের প্রতি ৩০ মিনিট পর পর আপনাকে হালকা জলখাবার স্বরূপ কিছু খাবার গ্রহণ করতে হবে।
কারণ অনুশীলনে সময় আপনার শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালারি বের হয়ে যায়। আপনি যদি কিছু সময় পর পর হালকা কিছু খাবার গ্রহণ না করেন, তাহলে আপনি শরীর এ আর আগের মতো বল পাবেন না। একটা সময় দেখে যাবে আপনি আর অনুশীলন করতে পারছেন না।
আপনি হালকা জল খাবার স্বরূপ ৩০ মিনিট পর পর প্রোটিন সেক, কলা, দই,সম্পূর্ণ সিদ্ধ ডিম, বাদাম, বা শিমের সালাদ খেতে পারেন। তাহলে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি ফিরে আসবে।
বক্সার হতে চাইলে কি খাবেন?
সঠিক খাদ্য গ্রহণ বক্সার হওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে একটি। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি, পানি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। কারণ এইসব জাতীয় খাবার একদিকে আপনার শরীর এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে তেমনি আপনাকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে। প্রতিটি খাবারের কিছু কিছু উদাহরণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
কার্বোহাইড্রেট
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার আপনার শরীরে শক্তি প্রদান করবে। যার ফলে আপনি খুব দ্রুত শক্তিশালী হতে পারবেন। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারে মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, দই, ফল ইত্যাদি।
পানি
পানি আপনার ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন ব্যায়াম বিশেষ করে গরমকালে ব্যায়াম করার ফলে আপনার শরীর এ ডিহাইড্রেশনের শিকার হতে পারে। কিন্তু পরিমাণ মতো পানি পান করলে আপনি অতি সহজ এ এই ডিহাইড্রেশনর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারবেন।
প্রোটিন
আপনি প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে আপনার শরীর এর পেশী সঠিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে।শুধু তাই নয় শরীরে যে কোন ধরনের আঘাতের ক্ষতি অতি সহজ এ পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করবে। যা একজন মুষ্টিযোদ্ধার জন্য অতি প্রয়োজনীয়।
মাছ, মাংস, ডিম এবং দুধ প্রোটিন জাতীয় খাবারের উৎস। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি শরীর গঠনের জন্য এইসব গ্রহণ করছেন। সুতরাং এ সব খাদ্য অতিক্ত গ্রহণ করলে শরীরের চর্বি বাড়ার সম্ভবনা তৈরি হবে।
চর্বি
চর্বি আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। চর্বিকে শক্তির দ্বিতীয় উৎস বলা হয় এবং সঠিক স্বাস্থ্য তৈরি করার জন্য এর অবদান অপরিসীম। সেই জন্য আপনার খুব অল্প পরিমাণ চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কারণ মাত্রাতিরিক্ত চর্বি শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ কিছু বয়ে আনতে পারে। চর্বি জাতীয় খাদ্যের মধ্যে রয়েছে তেল, ঘি, মাখন ইত্যাদি।
ভিটামিন
ভিটামিন জাতীয় খাদ্য একজন মুষ্টিযোদ্ধার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ ভিটামিন আমাদের শরীর এর ইমিউন সিস্টেম সচল রাখতে সাহায্য করে আমাদের শরীরে কোষ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। যা একজন মুষ্টিযোদ্ধার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।
এদের সাথে কিছু আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। কারণ আঁশ জাতীয় খাবার আপনার পেট ফুঁলিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। যার থেকে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পেট ভরে গিয়েছে। এর ফলে আপনার পেট এর ভিতরে খুব অল্প পরিমাণ খাবার পৌঁছে যাবে এবং আপনার পেট ভরে যাবে। একজন মুষ্টিযোদ্ধার উচিত উপরোক্ত খাদ্যের তালিকা থেকে নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করা।
মুষ্টিযোদ্ধাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম Mike Tydon এবং Floyd Mayweather। এরা নিজেরা প্রতিদিন সঠিক পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করেই আজকের এ অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। তাদের খাদ্যে তালিকা আমি ছোট করে আপনাদের সামনে তুলে ধরি।
- কার্বোহাইড্রেট: ৪৫-৬৫%
- প্রোটিন: ১০-৩৫%
- চর্বি: ২০-৩৫%
তাদের শরীর প্রতিদিন গ্রহণ করা বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের ওপরে নির্ভর করে থাকত। শুধু তাই নয়, তারা মুষ্টিযুদ্ধ অনুশীলনের আগে বিভিন্ন ধরনের জলখাবার গ্রহণ করত। আপনাদের সুবিধার্থে আমি সেই তালিকা তুলে ধরছি।
- কলা
- এক গ্লাস সর পরা দুধ
- দুটি রুটি ও জ্যাম
- দই
শুধু তাই নয়, তারা অনুশীলনের ২ ঘণ্টা আগে ১০০ গ্রাম পাস্তা, ১ টি সিদ্ধ ডিম, ৩৩ CL পানি এবং ১ টি পরিস্কার ফল কলা বা আপেল খেত।
এভাবে তারা খাদ্যগ্রহণ করত এবং নিজের শরীরকে সুস্থ-সবল রেখে আজকে এত জনপ্রিয় একজন মুষ্টিযোদ্ধা হতে সক্ষম হয়েছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে একমাত্র সঠিক খাদ্যই পারে আপনাকে একজন সুস্থ-সবল মুষ্টিযোদ্ধা হতে সাহায্য করতে।
একজন সুস্থ মুষ্টিযোদ্ধা হওয়ার জন্য সঠিক খাবারের কোন বিকল্প নেই। আপনি শুধু অনুশীলন করে মুষ্টিযোদ্ধা হতে পারবেন না। আপনাকে মুষ্টিযোদ্ধা হতে হলে এমনকি অনুশীলন করার জন্যও আপনার প্রয়োজন শক্তি। যা একমাত্র সঠিক খাবারে মাধ্যমেই পাবেন।
তাই বলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করবেন না। মাত্রাতিরিক্ত খাবার যেমন আপনার মুষ্টিযোদ্ধা হওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, তেমনি আপনাকে সুস্থ মানুষ হতে দেবে না। এমনকি প্রতিটা খাবার একসাথে খাওয়া যাবে না। যখনি খাবার খাবেন, খুব অল্প পরিমাণে খেতে হবে। এই যেমন একসাথে মাছ এবং মাংস উভয় খাওয়া যাবে না।
আপনি যদি দুপুরে মাছ খান তাহলে রাতে মাংস খেতে পারেন। একই বেলা দুটি খাবার কখনোই গ্রহণ করা উচিত না। অন্যথ্যায় একজন মুষ্টিযোদ্ধার যে ডায়েট অনুসরণ করা উচিত, তাতে ব্যাঘাত ঘটবে।
আপনি চাইলে দুটি বা একটি রুটি দিয়ে সকালে ডিম ভাঁজি খেতে পারেন বা শুধু ডিম সিদ্ধ খেতে পারেন। আবার কোন কোন দিন আপনি ডিমে পরিবর্তে ফল খেতে পারেন। এতে করে আপনার মুখের রুচির ব্যাঘাত ঘটবে না আর না আপনি শরীরে কোন ক্ষতি হবে।
শেষ কথা
একটা কথা মনে রাখবেন “সঠিক সময় এ সঠিক খাদ্যগ্রহণ আপনাকে সফল মুষ্টিযোদ্ধা পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।” আশা করি আমার লেখা পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন এবং সঠিক ভাবে মুষ্টিযোদ্ধা হতে অগ্রসর হবেন। ধন্যবাদ।
Discussion about this post