বড়ো রাজা ছোটো রাজা : একদিন দুই রাজা দিগ্বিজয়ের পথে রওনা হলেন। বড়ো রাজা বিশাল বাহিনী, হাতি-ঘোড়া, কামান-বন্দুক নিয়ে বড়ো বড়ো রাজ্য জয় করতে লাগলেন। আর ছোটো রাজা সাধারণ বেশে, সামান্য সৈন্য নিয়ে ছোটো রাজ্য দখলে ব্যস্ত হলেন।
কিছুদিন পর বড়ো রাজা জানতে পারলেন, ছোটো রাজা তাঁর ছোট্ট রাজ্যে সুখে আছেন। রাগে বড়ো রাজা দূত পাঠালেন, রাজ্য ছেড়ে যেতে বললেন। কিন্তু দূত সেই রাজ্য খুঁজেই পেল না! ক্ষিপ্ত হয়ে বড়ো রাজা স্বয়ং যুদ্ধ করতে গেলেন, কিন্তু ছোটো রাজ্য এত ছোটো যে সেখানে বিশাল বাহিনী প্রবেশই করতে পারল না।
বড়ো রাজা ছোটো রাজা
দুই রাজা, বড়ো রাজা আর ছোটো রাজা। দুজনে একদিন দিগ্বিজয় করতে চললেন। বড়ো রাজা চললেন বড়ো বড়ো হাতি-ঘোড়া, কামান-বন্দুক সাজিয়ে। মস্ত জয়ঢাক পিটিয়ে বড়ো বড়ো সেনাপতির সঙ্গে, বড়ো বড়ো রাজ্য জয় করতে করতে।
এদিকে ছোটো রাজা চললেন সাধারণ মানুষের সাজে। ছোটো ছোটো কামান-কন্দুক, হাতি-ঘোড়া নিয়ে ছোটো একটি পুঁটলি বেঁধে। ছোটো রাজ্য জয় করতে।
মস্ত বড়ো এই পৃথিবী – বড়ো রাজা ক্রমে ক্রমে তা জয় করে ফেললেন। এমন সময় চর এলো, খবর দিল-মহারাজ, শুনে এলাম, ছোটো রাজা ছোটো রাজ্য নিয়ে সুখে রয়েছেন। বড়ো রাজা বললেন, “তাকে গিয়ে বলো, আমি এই পৃথিবীটা জয় করে নিয়েছি। সে রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র যাক।”
দূত গেল ছোটো রাজার কাছে। কিন্তু ছোটো রাজার সে রাজ্য এত ছোটো যে দূত দেখতেই পেল না।
কোথায় রাজা! কোথায় রাজত্ব! সে ফিরে এসে বড়ো রাজাকে খবর দিল- চক্ষুর অগোচর সে রাজত্ব। সেখানে প্রবেশ করা ভারি কঠিন।
বড়ো রাজা বড়োই খাপ্পা হয়ে বললেন, “চলো আমি নিজে যাব।”
বড়ো রাজা মস্ত মস্ত হাতি-ঘোড়া, রথ-রথী নিয়ে চললেন পৃথিবী কাঁপিয়ে। কিন্তু ছোটো রাজ্য এতটাই ছোটো যে, সেখানে হাতি ঘোড়া কিছুই চলে না। মন্ত্রীরা মন্ত্রণা দিল “সবার চোখে অণুবীক্ষণ লাগিয়ে যুদ্ধে চলো!”
সেনাপতি বললেন, “এতে করে চোখ চলবে, গোলাগুলি চলার উপায় হবে না।”
রাজা বললেন, “দেখাই যাক না।”
যুদ্ধ বাঁধল- সেনাপতির পায়ের তলা দিয়ে গলে ছোটো রাজার ফৌজ পালাল। তীর-কামান শত্রু আন্দাজ করতে না পেরে বাতাসে হানা দিতে থাকল। আকাশ থেকে সেগুলো ঝুপঝাপ বড়ো রাজার ছাউনির উপর পড়তে লাগল। বড়ো বড়ো অস্ত্র-সেসব অস্ত্র বড়ো জিনিসকেই লক্ষ করে।
ছোটোকে দেখতে পায় না। বড়ো রাজা, বড়ো বড়ো মন্ত্রী, বড়ো বড়ো সেনাপতি ফাঁপরে পড়ে গেলেন। ছোটো রাজার সঙ্গে সন্ধি করতে চাইলেন। ছোটো রাজা হেসে বললেন, “আপনি আপনার মস্ত রাজত্ব নিয়ে সুখে থাকুন। ছোটোতে-বড়োতে সন্ধি হলে কী হয় তা জানেন না কি?”
বড়ো রাজা বললেন, “তা কি আর জানিনে?”
সেনাপতি বললেন, “এত বড়ো পৃথিবীটা জয় করে এলেন বড়ো রাজা। ওইটুকু আর জানেন না?”
ছোটো রাজা বললেন, “তাহলে এবারকার মতো এতটুকু জেনেই ঘরে চলে যান সকলে। আরও কী জানতে চান?”
বড়ো রাজা রেগে বললেন, “ছোটোকে টুটি চেপে ধরলে কী করে তাই জানাতে চাই।” বলেই বড়ো রাজা নিজের মস্ত মুঠোয় রাজ্যসহ ছোটো রাজাকে কষে চেপে ধরলেন। বড়ো রাজার মোটা মোটা আঙুলের ফাঁক দিয়ে জলের মতোই সব গলে পালাল।
ছোটো রাজা, তার রাজসিংহাসন রাজপুরী সমস্তই বেরিয়ে গেল। বড়ো রাজা হাত খুলে দেখলেন মুঠো খালি। বুড়ো আঙুলের গোড়ায় মৌমাছির হুলের মতো একটা কী বিঁধে রয়েছে। যন্ত্রণায় বড়ো রাজার আঙুলটা দেখতে দেখতে ফুলে ঢোল হয়ে উঠল।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
দিগ্বিজয়, সেনাপতি, রাজত্ব, জয়ঢাক, চর, দূত, অগোচর, খাপ্পা, মন্ত্রণা, অনুবীক্ষণ, ফৌজ, অস্ত্র, সন্ধি, রথ-রথী, ঝুপঝাপ, রাজ্য, মুঠো
২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
ফাঁপরে, অন্যত্র, আন্দাজ, জয়ঢাক, দিগ্বিজয়, রাজসিংহাসনে
ক. সমস্ত ছোটো রাজ্য জয় করে রাজা _______ বসলেন।
খ. রাজার খামখেয়ালিতে মন্ত্রী _______ পড়লেন।
গ. রাজা _______ করে এসেছেন।
ঘ. শিকারের খোঁজে রাজা _______ যাচ্ছেন।
ঙ. রাজ্য জয়ের আনন্দে চারিদিকে _______ বাজছে।
চ. রাজা _______ করলেন, ছোটো রাজা পালিয়ে যেতে পারেন।
৩. যুক্তবর্ণগুলো দেখি ও যুক্তবর্ণ দিয়ে গঠিত শব্দগুলো পড়ি ও লিখি।
মস্ত = স্ত = স+ত = আস্ত, গোস্ত
বন্দুক = ন্দ = ন+দ = নিন্দুক, বিন্দু
রাজ্য = জ্য = জ + ্র (য+প-ফলা) = ত্যাজ্য, ভাজ্য
ক্রমে = ক্র = ক + ্র = (র-ফলা) = চক্র, বক্র
খাম্পা = প্প = প+প = ধাম্পা, বেখাম্পা
৪. বাক্য রচনা করি।
রাজ্য, চর, রথ, মুঠো, রাজসিংহাসন
৫. বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের ঠিক বাক্যাংশ মিলিয়ে পড়ি ও লিখি।
বাম | ডান |
বড়ো রাজা আর ছোটো রাজা | সেখানে হাতি চলে না, ঘোড়া চলে না। |
ক্রমে ক্রমে মস্ত বড়ো এই পৃথিবী | ঢোল হয়ে উঠল। |
ছোটো শহর এতটাই ছোটো যে | বড়ো জিনিসকেই লক্ষ করে। |
বড়ো রাজার আঙুল ফুলে | বড়ো রাজা জয় করে ফেললেন। |
বড়ো বড়ো অস্ত্র | দিগ্বিজয় করতে চললেন। |
৬. একই শব্দের ভিন্ন অর্থ শিখি ও বাক্য তৈরি করি।
চর — দূত
চর — নদীর চর
চলা — পায়ে হাঁটা
চলা — চালিত হওয়া
৭. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. বড়ো রাজা কীভাবে রাজ্য জয় করতে বের হলেন?
খ. বড়ো রাজা ছোটো রাজার উপর রেগে গেলেন কেন?
গ. বড়ো রাজা কেন ছোটো রাজ্যকে জয় করতে পারলেন না?
ঘ. বড়ো রাজা কেন সন্ধি করতে চাইলেন?
ঙ. বড়ো রাজা আর ছোটো রাজার মধ্যে তোমার কাকে বেশি পছন্দ? কেন?
৮. অল্প কথায় গল্পটা বলি।
৯. কর্ম-অনুশীলন।
ক. শক্তির চেয়ে বুদ্ধির জোর বেশি-বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকের সহায়তায় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।
খ. বড়ো রাজা এবং ছোটো রাজার ভূমিকায় অভিনয় করে দেখাই।
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে বড়ো রাজা ছোটো রাজা গল্পটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post