বন্দনা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : মানবশিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন সে অসহায় অবস্থায় থাকে। পিতামাতা কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় তাকে আস্তে আস্তে বড়ো করে তোলেন। এরপর শিক্ষক ঐ শিশুকে বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞানে বড়ো করে তোলেন। সে কারণেই শিক্ষক হচ্ছেন দ্বিতীয় জন্মদাতা। শিক্ষকের এই মহান অবদানের বিষয়টিকে বোঝাতে কবি আলোচ্য বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ আলোচ্য উক্তিটিতে শিক্ষকের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছে।
বন্দনা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘দোসর জন্ম’—বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: দোসর অর্থ দ্বিতীয়। দোসর জন্ম অর্থ দ্বিতীয় জন্ম।
কবি জন্মদাতা পিতামাতার ও জ্ঞানদাতা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। পিতামাতা অশেষ দুঃখকষ্ট স্বীকার করে পরম যতেœ সন্তানকে বড় করে তোলেন। শিক্ষক জ্ঞানদান করে তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। তাই তাঁদের প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। তাই শিক্ষক দোসর জন্ম দিয়ে থাকে।
২. ‘কত দুক্ষে একে একে বছর গোঞাএ’—কেন এ কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অনেক দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে সন্তান লালন-পালনে পিতামাতার অবদানের কথা উদ্ধৃত কাব্যাংশে স্মরণ করা হয়েছে।
মানব সন্তান পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখার পূর্বেই মা তাকে অনেক কষ্টে গর্ভে লালন করেন। জন্মের পর মা-বাবা তাকে খাইয়ে-পরিয়ে বড়ো করে তোলেন। সন্তানের অসুখ হলে মা-বাবা নির্ঘুম রাত কাটান। ঘরে কোনো খাবার না থাকলেও সন্তানের জন্য খাবার জোগাড় করে নিজেরা না খেয়ে কাটিয়ে দেন। বাঙালি মায়ের সন্তান-বাৎসল্যের এমন উদাহরণ বিরল। সন্তান জন্মের পর থেকে যতদিন বাবা-মা জীবিত থাকেন ততদিন তাদের এই স্নেহ-মমতার কমতি হয় না। সন্তানের জন্য বছরের পর বছর বাবা-মায়ের উৎকণ্ঠাকে কবি এভাবেই প্রশ্নোদ্ধৃত পঙ্িক্তটিতে তুলে ধরেছেন।
৩. ‘ওস্তাদে প্রণাম করোঁ পিতা হস্তে বাড়’—কেন?
উত্তর: মানবশিশু প্রকৃত মানব হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে থাকে শিক্ষকের উসিলায়। তাই কবি ‘বন্দনা’ কবিতায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
মানবশিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন সে অসহায় অবস্থায় থাকে। পিতামাতা কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় তাকে আস্তে আস্তে বড়ো করে তোলেন। এরপর শিক্ষক ঐ শিশুকে বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞানে বড়ো করে তোলেন। সে কারণেই শিক্ষক হচ্ছেন দ্বিতীয় জন্মদাতা। শিক্ষকের এই মহান অবদানের বিষয়টিকে বোঝাতে কবি আলোচ্য বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ আলোচ্য উক্তিটিতে শিক্ষকের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছে।
৪. দ্বিতীয়ে প্রণাম করোঁ মাও বাপ পাত্র—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘দ্বিতীয়ে প্রণাম করো মাও বাপ পাত্র’—কথাটি দ্বারা কবি পৃথিবীতে সন্তানের লালন-পালনে পিতামাতার অবদানের কথা উল্লেখ করে হাদ প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বলেছেন।
‘বন্দনা’ কবিতায় কবি সন্তানদের তার বাবা-মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বলেছেন। আল্লাহ সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু পিতা-মাতা হচ্ছেন সন্তানের জন্য উসিলা। তাদের মাধ্যমেই একজন সন্তান এ পৃথিবীতে আসে। তারা অনেক দুঃখ-কষ্ট করে সন্তান লালন-পালন করে থাকেন। তাই কবি আল্লাহর পরেই পিতামাতাকে বন্দনা করার কথা বলেছেন।
৫. ‘কনে বা সুধিব তান ধারক কাহন’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পিতামাতার ঋণ কখনো পরিশোধ করা যায় না।
পিতামাতার দয়াতে আমরা এ পৃথিবীর আলো চোখে দেখেছি, পৃথিবীতে এসেছি। আমরা যখন পৃথিবীতে আসি তখন ছিলাম খুবই দুর্বল। নিজের কাজটুকু নিজে করার মতো ক্ষমতা আমাদের ছিল না। এমনকি আমাদের খাবার ও পরার দায়িত্ব পালন করেছেন আমাদের পিতামাতা। কঠোর সাধনায় ও পরিশ্রমের বিনিময়ে তারা আমাদের দিনে দিনে বড়ো করে তুলেছেন। তাদের সে ঋণ আমরা কখনো পরিশোধ করতে পারব না। সে কারণেই ‘বন্দনা’ কবিতায় কবি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
৬. ‘বন্দনা’ কবিতায় শিক্ষককে দ্বিতীয় জন্মদাতা বলার কারণ কী?
উত্তর: শিক্ষক জ্ঞান দান করে শিশুকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। তাই তিনি মানব শিশুর দ্বিতীয় জন্মদাতা।
মানব শিশু যখন ভূমিষ্ঠ হয়, পৃথিবীতে আগমন করে তখন তার কোনো সহায় থাকে না। তার কোনো ক্ষমতা থাকে না। সে থাকে একাকী, অসহায়। পিতামাতা তাকে আদর দিয়ে, স্নেহ দিয়ে বড়ো করে তোলেন। কিন্তু জ্ঞানে-বিদ্যা-বুদ্ধিতে তাকে সত্যিকার মানুষ করে তোলেন শিক্ষক। শিক্ষক মানব শিশুকে সত্যিকার পথের সন্ধান দেখিয়ে প্রকৃত স্থানে পৌঁছে দেন। সে কারণেই শিক্ষককে দ্বিতীয় জন্মদাতা বলা হয়েছে।
৭. ‘বন্দনা’ কবিতায় দ্বিতীয়ে পিতামাতাকে প্রণাম করতে বলার কারণ কী?
উত্তর: ‘বন্দনা’ কবিতায় কবি পৃথিবীতে সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার জন্য পিতামাতার ঋণের কথা উল্লেখ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বলেছেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা। পিতামাতার মাধ্যমে একজন শিশু এ পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়। তাই জন্মদাতা পিতামাতার ঋণ কখনই পরিশোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের উচিত তাদের সেই মহৎকর্মের স্মরণ করা এবং তাদের প্রণাম তথা শ্রদ্ধা দেখানো। কবির মতে, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর পর পিতামাতাকে সম্মান করা উচিত। শ্রদ্ধা দ্বারা তাদের মনের তুষ্টি গ্রহণ করা।
৮. ‘দুর্বল ছাবাল’ কথাটি ‘বন্দনা’ কবিতায় কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সে থাকে খুবই অসহায়। তার শক্তি ও ক্ষমতা কিছুই থাকে না। তখন সে থাকে দুর্বল অসহায়।
‘বন্দনা’ কবিতায় কবি মানব শিশুর শৈশবকালীন অসহায় অবস্থার বর্ণনা করে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। মানব শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন সে থাকে অসহায়। তাকে সাহায্য করার কেউ থাকে না। খাওয়ানোর-পরানোর এবং আদর-যতœ করার কেউ থাকে না। সেই অসহায় অবস্থাকে বর্ণনা করেছেন শাহ মুহম্মদ সগীর তাঁর ‘বন্দনা’ কবিতায়।
৯. ‘যান দয়া হস্তে জন্ম হৈল বসুধায়’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পিতামাতার মাধ্যমে মানব শিশু এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়।
‘বন্দনা’ কবিতায় কবি শাহ মুহম্মদ সগীর সন্তানদের তার বাবা-মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বলেছেন। আল্লাহ সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, কিন্তু পিতামাতা হচ্ছেন সন্তানের জন্য উছিলা। তাদের মাধ্যমেই একজন শিশু এই পৃথিবীতে আসে। তারা অনেক, দুঃখ-কষ্ট করে সন্তানের লালন-পালন করে থাকেন। তারা সন্তানের জন্য এতটাই ব্যাকুল থাকেন যে, পিঁপড়া কামড় দেবে ভেবে তারা তাদের সন্তানকে মাটিতে পর্যন্ত নামান না। তাদের এই অফুরন্ত ভালোবাসার ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারব না। তাই আলোচ্য অংশে পিতামাতার স্তুতি করেছেন কবি।
১০. ‘পিঁপড়ার ভয়ে মাও না থুইলা মাটিত’—এই চরণ দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: মা তার সন্তানকে লালনপালন করা সম্পর্কে আলোচ্য চরণে আলোকপাত করা হয়েছে।
মা-বাবা আমাদের জন্মদাতা। তাদের দ্বারাই আমরা পৃথিবীতে আসতে পেরেছি। পিতামাতা কেবল সন্তানের জন্মদানই করেন না; তারা তাদের অক্লান্ত শ্রমে সন্তানদের বড়ো করে তোলেন। সন্তানের কল্যাণ চিন্তায় তারা এতটাই ব্যতিব্যস্ত থাকেন যে সামান্য একটি পিঁপড়া যাতে তাকে কামড় দিতে না পারে সেজন্য তাকে মাটিতে পর্যন্ত রাখেন না। মায়ের আদর যত্ন ও পরিচর্যা লাভ করে শিশু ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে ওঠে। সন্তানের অমঙ্গল হোক এমন চিন্তা থেকে তার পিতামাতা সর্বদা বিরত থাকেন এবং তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করেন।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে বন্দনা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post