বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম (ফরম সহ)

বয়স্ক ভাতা প্রদানের মাধ্যমে সরকার দেশের বৃদ্ধ নগরিকদের সেবা করে থাকেন। বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম জানা থাকলে উপযুক্ত যে কেউ এই নাগরিক সেবা ভোগ করতে পারেন। অনেকেই আছেন, যার কীভাবে এ ভাতার সুবিধা ভোগ করবেনসেই সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন। আবার অনেকেই সঠিক ধারণার অভাবে আবেদন করতে পারেন না।

বাংলাদেশ সরকারের অধিকাংশ সেবা ডিজিটাল হওয়ায় বয়স্ক ভাতা আবেদনের প্রক্রিয়া অনেকটা সহজ হয়েছে। ফলে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে ডিজিটাল সেবা। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো সরকারের বয়স্ক ভাতা প্রকল্প কি, কারা পাবেন এ ভাতা এবং এ ভাতা পাওয়ার সকল নিয়ম।

বয়স্ক ভাতা কি?

আমাদের দেশে অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন। এরা আর্থিকভাবে যেমন অনগ্রসর, বৃদ্ধ হওয়ায় শারীরিকভাবেও দুর্বল। দেশের এই বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে সরকার আর্থিক সাহায্য (ভাতা) প্রদান করে থাকে। এটিই মূলত বয়স্ক ভাতা। বয়স্ক ভাতা শুধু সামাজিক নিরাপত্তা বিধানেই কাজ করে না, পরিবার ও সমাজে বয়স্ক ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দেশের পিছিয়ে পড়া অসচ্ছল এ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে সকল ইউনিয়ন পরিষদে এ সেবা চালু করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতর এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে।

বয়স্ক ভাতা ভোগ করার শর্ত

বাংলাদেশের নাগরিক যাদের বয়স ন্যূনতম ৬৫ বছর (পুরুষ) ৬২ বছর (নারী) এবং বার্ষিক গড় আয় সর্বোচ্চ ১০,০০০ (দশ হাজার টাকা); তারা বয়স্ক ভাতা ভোগ পাওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। শারীরিকভাবে কর্মক্ষমতাহীন বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অপরদিকে ভূমিহীন বয়স্ক ব্যক্তিও চাইলে আবেদন করতে পারেন।

তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা, নিঃসন্তান অথবা বিপত্মীক, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবীণ নারী-পুরুষ উভয়ই বয়স্ক ভাতা ভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও যে সকল বৃদ্ধ ব্যক্তির আয়কৃত অর্থের সম্পূর্ণ অর্থ খাদ্য বাবদ ব্যয় হয়, কিন্তু চিকিৎসা, বাসস্থান, ইত্যাদি খরচ বহনের জন্য কোনো অর্থ অবশিষ্ট থাকে না তারাও সরকারের এ সেবার আওতাভূক্ত।

বয়স্ক ভাতা প্রদানের প্রক্রিয়া

উপরে উল্লিখিত শর্ত পূরণ হলে আপনি নির্ধারিত ফরমে উপজেলা বা শহর সমাজসেবা অফিসার বরাবরে আবেদন করবেন। বয়স্ক ভাতা প্রদানের নীতিমালা অনুযায়ি ইউনিয়ন কমিটি আবেদনসমূহ যাচাই-বাছাই করেন। এরপরে তারা প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে সুপারিশসহ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপজেলা কমিটিতে প্রেরণ করেন।

উপজেলা, পৌরসভা বা মহানগর কমিটি প্রাপ্ত তালিকা যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত করে স্থানীয় সাংসদের সম্মতি বা অনুমোদনক্রমে ভাতাভোগীদের নামে উপজেলা বা শহর সমাজসেবা অফিসার কর্তৃক ভাতা বই ইস্যু করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে জানানো হবে। এরপর আপনি ১০ টাকার বিনিময়ে নিজ নামে একটি ব্যাংক হিসাব খুলবেন।

সবশেষে উপ-পরিচালক জেলা সমাজসেবা কার্যালয়/উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অফিসারের যৌথ ব্যাংক হিসাব হতে আপনার ব্যাংক হিসাবে ভাতার টাকা পাঠানো হবে। যা আপনি যেকোন সময় উত্তোলন করতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

• নির্ধারিত ফরমে আবেদন
• ইউপি চেয়ারম্যান/সদস্য কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র
• পাসপোর্ট সাইজের ছবি
• জাতীয় পরিচয়পত্র/নাগরিকত্ব সনদ (ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/মেম্বার কর্তৃক সত্যায়িত)

বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম

অনলাইন আবেদনের সময় সতর্কতার সঙ্গে ফরম পূরণের প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করতে হবে এবং প্রেরণ বাটনে ক্লিক করার পূর্বে ভালো করে তথ্যগুলো যাচাই করে নিতে হবে। অসতর্কতার জন্য কোন ভুল অথবা অসম্পূর্ণ আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। একটি ধাপে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করুন। পরবর্তী ধাপে প্রবেশের সাথে সাথে পূর্ববর্তী ধাপের পূরণকৃত তথ্যসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেমে সংরক্ষিত হয়ে যাবে।

• আবেদন ফরমের লাল তারকা চিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করুন। অন্যান্য ঘরগুলো পুরণ ঐচ্ছিক।
• আবেদনের সময় যদি পেমেন্ট বা অর্থ পরিশোধের বিষয় থাকে তাহলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ই-চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করুন।
• আবেদন ফরমে ছবি (প্রযোজ্য হলে) ও স্বাক্ষর আপলোড করুন এবং যে সব কাগজপত্র আবেদনের সাথে দাখিল করা প্রয়োজন (সাইজ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে ) সেগুলো “সংযুক্ত” অপশনে ক্লিক করে আপলোড করুন।
• “অফিস বাছাই করুন” অপশন হতে আবেদনটি যে অফিসে পাঠাতে চান সেই অফিস নির্বাচন করুন।
• এরপর ‘প্রেরণ’ বাটনে ক্লিক করুন। “আপনার আবেদনটি সফলভাবে প্রেরণ করা হয়েছে” মর্মে একটি বার্তা আসবে।
• আবেদন প্রেরণের পর আপনি একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাবেন। এটি সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে “আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা” বাটনে ক্লিক করে এই নম্বরটি দিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে পারবেন।
• আপনি আবেদন প্রেরণ না করা পর্যন্ত আপনার সিস্টেমে তা খসড়া হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। পরবর্তীতে তা আপনি প্রেরণ করতে পারবেন।