বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর : সুবোধ ঘোষ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ বিহারের হাজারিবাগে জন্মগ্রহণ করেন। আদিনিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর মহকুমার বহর গ্রামে ।
বিচিত্র কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ এই লেখকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো- পরশুরামের কুঠার”,’শুক্লাভিসার’, “ফসিল” “তিলাপ্তুলি”, “গঙ্গোত্রী”, “একটি নমস্কারে, ছাড়াও তিনি বহু উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও গবেষণামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের “জগত্তারিণী” স্বর্ণপদক লাভ করেন।
বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
১. হরিদার জীবনে সত্যিই একটা —– আছে। (শূন্যস্থান পূরণ করো)
ক. করুণ আবেদন
খ. বিচিত্র ছদ্মবেশ
গ. নাটকীয় বৈচিত্র্য
ঘ. ভয়ানক আপত্তি
২. হরিদা পেশায় ছিলেন একজন
ক. কনেস্টেবল
খ. বহুরূপী
গ. সন্ন্যাসী
ঘ. পূজারি ব্রাক্ষ্মণ
৩. “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস’ – ‘ভয়ানক দুর্লভ জিনিসটি হল-
ক. সন্ন্যাসীর দেখা পাওয়া
খ. সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ পাওয়া।
গ. সন্ন্যাসীর কমঙুল পাওয়া
ঘ. সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পাওয়া
৪. বহুরূপী’ গল্পের লেখক হলেন-
ক. সুবোধ ঘোষ
খ. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
গ. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ঘ. বিমল মিত্র
৫. ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল
ক. চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে
খ. শ্যামবাজার মোড়ের কাছে।
গ. সন্ন্যাসীর কমঙুলু পাওয়া
ঘ. সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পাওয়া
৬. “বাসের যাত্রীরা কেউ হাসে, কেউ বা বেশ বিরক্ত হয় কেউ আবার বেশ বিস্মিত।’ – বাসযাত্রীদের এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ—
ক. বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ বহুরূপী হরিদাকে ধমক দিয়েছে
খ. বহুরূপী হরিদার পাগলের সাজটা চমৎকার
গ. হরিদা আজ বাউল সেজে এসেছেন
ঘ. কাপালিক সেজে এলেও হরিদা কোন পয়সা নেন না
৭. “কিছুই শুনিনি’ – কথাটা বলেছেন-
ক. অনাদিবাবু
খ. জগদীশবাবু
গ. হরিদা
ঘ. হরেন দা
৮. জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসী ছিলেন।
ক. তিনদিন
খ. চারদিন
গ. পাঁচদিন
ঘ. সাতদিন
৯. জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসী সারা বছর যা খেতেন সেটা হল—
ক. একটি হরিতকী
খ. একটি বহেরা
গ. একটি আমলকী
ঘ. এক মুঠো তিল
১০. সন্ন্যাসীকে খড়ম দিয়েছিলেন ।
ক. হরিদা
খ. জগদীশবাবু
গ. অনাদি
ঘ. ভবতোষ
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
১. লেখক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদার কাছে কোন্ ঘটনা শোনাতে এসেছিলেন ?
উত্তর : জগদীশবাবুর বাড়িতে খুব উঁচুদরের এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন এবং তিনি সেখানে সাতদিন ধরে অবস্থান করেছিলেন। এই খবরটাই লেখক ও তার বন্ধুরা হরিদাকে শোনাতে এসেছিলেন।
২. “মাঝে মাঝে সত্যিই উপোস করেন হরিদা।’ – হরিদা মাঝে মাঝে উপোস। করেন কেন?
উত্তর : হরিদার জীবনের একমাত্র পেশা বহুরূপী সেজে রোজগার করা। যৎসামান্য রোজগারে এক সপ্তাহের ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ করা সম্ভব হয় না। তাই হরিদাকে মাঝে মাঝেই সত্যিই উপোস করে দিন অতিবাহিত করতে হয়।
৩. “কী অদ্ভুত কথা বলেন হরিদা!’ – হরিদার কোন্ কথাকে অদ্ভুত মনে হয়েছিল?
উত্তর : হরিদা জানিয়েছিলেন যে, শত হোক একজন বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে টাকা-ফাকা করলে তার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। তার এই কথাকে গল্প লেখকের অদ্ভুত মনে হয়েছিল।
৪. নইলে আমি শান্তি পাব না’ – কী পেলে বা শান্তি পাবেন?
উত্তর : বক্তা জগদীশবাবুর একান্ত ইচ্ছা যে বিরাগী তাকে কিছু উপদেশ দিয়ে প্রস্থান করলে তিনি শান্তি পাবেন।
৫. “এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা।’ – “বহুরূপী’ গল্পে হরিদার বহুরূপী সাজার কয়েকটি উল্লেখ করো।
উত্তর : কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদার বহুরূপী সাজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলি হল – উন্মাদ পাগল, রুপসি বাইজি, বাউল, কাপালিক, পুলিশ, বুড়ো কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব, সন্ন্যাসী বিরাগী প্রভৃতি।
৬. “জটাজুটধারী কোন সন্ন্যাসী নয়”।-উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে সন্ন্যাসী বলার কারণ কী?
উত্তর : আগন্তুককে সন্ন্যাসী না বলার কারণ হল, তার হাতে সন্ন্যাসীদের ব্যবহৃত কমলু ও চিমটে ছিল না। তার সঙ্গে বসার জন্যে মৃগচর্মের আসনও ছিল না। তিনি। গৈরিক সাজে সজ্জিত ছিলেন না, তাছাড়া জটাজুটের পরিবর্তে তার মাথায় ছিল স্বাভাবিক শুভ্র চুল।
৭. “জগদীশবাবুর দুই বিস্মিত চোখ অপলক হয়ে গেল’ – কী দেখে জগদীশবাবুর এমন অবস্থা হয়েছিল?
উত্তর : জগদীশবাবু সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখেছিলেন আদুড় গায়ে সাদা উত্তরীয় পরে এক বিরাগী সামনে দাঁড়িয়ে তখন তিনি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইলেন।
৮. “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।’ – হরিদার কোন্ ভুল অদৃষ্ট কখনো ক্ষমা করবে না?
উত্তর : শিল্প মর্যাদার স্বার্থে বহুরূপী হরিদা জগদীশবাবুর দিতে চাওয়া অর্থ প্রত্যাখান করে ভুল করেছিলেন বলে লেখক মনে করেছেন। সেই ভুলই অদৃষ্ট কখনো ক্ষমা করবে না বলে লেখকের মনে হয়েছিল।
৯. “পরম সুখ কাকে বলে জানেন?’ – বক্তা স্বয়ং ‘পরম সুখ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে বা বিরাগী স্বয়ং সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়াকেই ‘পরম সুখ’ বলে বোঝাতে চেয়েছেন।
১০. “বাঃ এ তো বেশ মজার ব্যাপার!’ – কোন্ ঘটনাকে মজার ব্যাপার বলা হয়েছে?
উত্তর : একদিকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণকারী আগন্তুক সন্ন্যাসী হিমালয়বাসী সর্বত্যাগী। অন্যদিকে কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি পা বাড়িয়ে দিলেন জগদীশবাবুর দিকে এমন পরস্পর বিরোধী ঘটনাকে উদ্ধৃতাংশের বক্তা হরিদা একে মজার ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
১. হরিদা কোনোদিন চাকরি করেননি কেন?
উত্তর : চাকরি না করার কারণ : এক ঘেয়ে সময় বেঁধে কাজ হরিদার কোনদিন ভালো। লাগত না। ইচ্ছে করলেই হরিদা যে কোন আপিসের কাজ বা কোনো দোকানের কাজ পেয়ে যেত। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা বেঁধে নিয়ম করে রোজ এক চাকরি করতে যাওয়া হরিদার পক্ষে সম্ভব ছিল না। হরিদার অভাব ছিল না। এই অভাবটা সহ্য করতে হরিদার আপত্তি না থাকলে এক ঘেয়ে কাজ করতে ভীষণ আপত্তি ছিল। তাই হরিদা কোনোদিন চাকরি করেননি।
২. ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠল আতঙ্কের হল্লাটির পরিচয় দাও?
উত্তর : আতঙ্কের হল্লা : সুবোধ ঘোষের বহুরূপী গল্পে হরিদা মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজতেন। এক দুপুরবেলা বাসস্ট্যান্ডের কাছের এক পাগলকে দেখা গিয়েছিল কটকটে লাল চোখে সেই পাগলের মুখ থেকে লালা ঝরছিল। তার কোমরে ছেড়া কম্বল। আর গলায় টিনের কৌটোর মালা জরানো। পাগলটি থান ইট নিয়ে বাসে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল।
তাকে দেখে যাত্রীরা চেচিয়ে উঠেছিল। কেউ কেউ দু-একটা পয়সা তার সামনে ফেলে দিচ্ছিল। কেউ চিনতে না পারলেও কাশীনাথ চিনতে পেরেছিল। পাগলটি আসলে হরিদা। হরিদা পাগল সেজে সবাইকে ভয় দেখাচ্ছিল। আসলে বহুরূপী ছদ্মবেশ সেজে।
৩. জগদীশবাবুর যে সন্ন্যাসী এসেছিলেন- তার বর্ণনা দাও।
উত্তর : সন্ন্যাসীর বর্ণনা : জগদীশবাবুর বাড়িতে সাতদিন ধরে এক সন্ন্যাসী ছিলেন। খুব উঁচু দলের এই সন্ন্যাসী থাকতেন হিমালয়ের গুহাতে। তিনি সারা বছরে শুধুমাত্র একটি হরিতকি খান। এছাড়া তিনি আর কিছু খেতেন না। অনেকে মনে করত সন্ন্যাসীর বয়স ছিল হাজার বছরের বেশি তার পায়ের ধুলো ছিল অত্যন্ত দুর্লভ জিনিস। একমাত্র জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পেয়েছিলেন।
৪. হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র আছে- নাটকীয় বৈচিত্র কী?
উত্তর : নাটকীয় বৈচিত্র : গরীব হরিদা নিজের ছোট করে দিন কাটাত। কোনোদিন খাবার জুটত। কোনোদিন জুটত না। প্রতিদিনের এই একঘেয়ে জীবনে হরিদার একট নাটকীয় বৈচিত্র ছিল। হরিদা মাঝে মাঝে বহুরুপী সেজে রোজগার করত। সকাল অথবা সন্ধ্যায় বিচিত্র ছদ্মবেশে রাস্তায় বেরিয়ে পরত। যারা চিনতে পারত তাদের মধ্যে কেউ দুই-একটা পয়সা দিত- কেউ বা বিরক্ত হত। বহুরুপী সেজে রাস্তায় বের হওয়া ছিল হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র।
৫. আপনি কী ভগবানের চেয়েও বড়ো-কে কেন কাকে এ উক্তি করেছিলেন?
উত্তর : বক্তা/শ্রোতা : সুবোধ ঘোষের বহুরূপী গল্পের ছদ্মবেশে হরিদা জগদীশবাবুকে এ উক্তি করেন। উক্তির কারণ : হঠাৎ আগন্তুককে দেখে জগদীশবাবু খুব অবাক হন। আর চোখে ধরা পরে অদ্ভুত এক শান্তি মৌমো দীপ্তিময় চেহারা। তিনি সন্ন্যাসীর কাছে এগিয়ে। আসেনি। তখন তার বিস্ময় কাটেনি। তখন বিরক্ত সন্ন্যাসী জগদীশবাবুকে একথা বলেছিলেন।
৬. কিন্তু মাস্টারমশাই একটুকুও রাগ করেননি- কোন ঘটনার জন্য মাস্টারমশাই রাগ করেননি?
উত্তর : মাস্টারমশাই-এর রাগ না করার কারণ : সুবোধ ঘোষের রচিত বহুরুপী গল্প থেকে আলোচ্য অংশ নেওয়া হয়েছে। একবার তিনি পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানের ভিতরে দাঁড়িয়েছিল। ইস্কুলের চারটি ছেলেকে তিনি ধরে ছিলেন। স্কুলের মাস্টারমশাই এসে সেই নকল পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। তখন ছদ্মবেশি পুলিশ হরিদা আটআনা ঘুষ নিয়ে ছেলেগুলিকে ছেড়েছিলেন। তারপরে জানতে পারলেও রাগ করেননি।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
১. বহুরূপী গল্প অবলম্বনে হরিদার চরিত্রের বর্ণনা দাও?
উত্তর : ভূমিকা : সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের নামাঙ্কিত ছোট গল্পের প্রধান তথা কেন্দ্রিয় চরিত্র বহুরূপী হরি তাকে ও তার শিল্পী সত্তার সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যগুলিকে অবলম্বন করে সমগ্র কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। চরিত্রটি একটি একমুখী কাহিনি। বিশ্বের উত্থানপতন যা ঘটলেও চরিত্রটির মধ্যে বৈচিত্র অবশ্যই আছে।
সাধারণ পরিচয় : খুবই দরিদ্র ছিলেন হরিদা। শহরের সবথেকে সরু একটা ছোট ঘরে তিনি থাকতেন। দারিদ্র দূর করার জন্য মাঝে মাঝে তাকে বহুরূপী সাজাতে হত।
স্বাধীনতা বোধ : হরিদা অন্যের অধীনে কাজ করতে চান না। কারণ তার মধ্যে অদ্ভুত এক স্বাতন্ত্রবোধ ছিল। আর এই স্বাধীনচেতা স্বভাবের জন্য ঘড়ি মিলিয়ে কাজ তিনি করেননি।
মিসুকে স্বভাবের মানুষ : তিনি লোকজনের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন। তাই তার ঘরে পাড়ার ছেলেরা আড্ডায় বসত।
আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ : হরিদার মনের মধ্যে এক আধ্যাত্মিক জগৎ ছিল। তাই সন্ন্যাসীর বার্তা জানতে পেরে তিনি বলেন- “থাকলে একবার গিয়ে পায়ের ধুলো নিতে পারতাম”।
কৌতুক প্রিয়তা : হরিদার মধ্যে এক সাধারণ কৌতুকময়তা ছিল। তাই বহুরূপীর ছদ্মবেশে তিনি মানুষকে এমনভাবে তৃপ্তি দিতেন যা সাধারণভাবে স্বাধিকার পরিচয় বহন করত।
নিপুণ শিল্পী : নিজের বহুরূপী পেশায় তিনি নিপুণ শিল্পী। তাই অনেকে চিনতে পারত না। তার বহুরুপী পেশাকে অনেকে আসল ভেবেছে।
মূল্যায়ন : বহুরূপীর জীবনের মূল চাহিদা হল মনরঞ্জনের চাহিদা। প্রতারণার দ্বারা অর্থ উপার্জন নয়। মানুষকে আনন্দ দান করা আর একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয়। তাই যে হাসি মূলত বলতে পারে- মানুষ তো নয় এই বহুরূপী জীবন এর বেশি কী কী আশা করতে পারে।
২. ‘এবার মারিত হাতি লুঠিত ভাণ্ডার’—জগদীশবাবুর বাড়িতে কী ঘটনা ঘটেছিল তা লেখাে।
উত্তর : বহুরূপী খেলা : হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বহুরূপী ছদ্মবেশে অভিনব খেলা দেখিয়েছিলেন। হরিদা ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। মাঝে মাঝে বহুরুপীর বেশ ধারণ করে সামান্য কিছু অর্থ উপার্জন করতেন। হিমালয়বাসী এক সন্ন্যাসী কীভাবে পাড়ার ধর্মবিশ্বাসী জগদীশবাবুকে ঠকিয়ে নিজের প্রাপ্তির ভাণ্ডার পূর্ণ করেছিলেন তা পাড়ার ছেলেদের কাছ থেকে শুনে হরিদার মাথাতেও জগদীশবাবুকে ঠকিয়ে অর্থ উপার্জনের দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায়।
সেই প্রসঙ্গে তিনি বলে ওেঠন এবার। মারিত হাতি লুঠিত ভাণ্ডার। একবারেই যা আদায় করে নেবে ভেবেছিল তাতে তার সারা বছর চলে যাবে। পাড়ার ছেলেদের তিনি বলেন তারা যদি এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে চায় তবে তারা যেন সকলে জগদীশবাবুর বাড়িতে চলে আসে। ছেলেরা চাঁদা নেওয়ার জন্য জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হয়। জগদীশবাবুর। বাড়িতে যে বিচিত্র বিন্যাসে হরিদা হাজির হন তাতে চিনতে খুব অসুবিধা হয়। ছেলেদের।
তার খোলা গা, তার ওপর একটি ধবধবে সাদা উত্তরীও, পরনে সাদা থান। জগদীশবাবুর ভক্তি উজার হয়ে ওেঠন। তিনি বিরাগীটিকে তার ওখানে। থাকতে বলেন। তিনি তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো টাকা দিতে চান, সবকিছু ফিরিয়ে দেন হরিদা। জগদীশবাবুর কথাতে তিনি উপদেশ শোনান ‘পরমসুখ কাকে বলে দেন হরিদা।
জগদীশবাবুর কথাতে তিনি উপদেশ শোনান-‘পরমসুখ কাকে বলে জানেন?’ সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া। এরপর হরিদা সেই জায়গা পরিত্যাগ করেন। তিনি জগদীশবাবুর কাছ থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করেননি। গল্পকার এই ঘটনার মাধ্যমে হরিদা নির্লভ স্বভাবকে তুলে ধরেছেন।
৩. “পরম সুখ কাকে বলে জানেন সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া”। এ বক্তব্য হরিদার জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে বলো।
উত্তর : হরিদার জীবনের প্রভাব : গল্পকার সুবোধ ঘোষের বহুরূপী গল্পটি এক অদ্ভুত মানুষের জীবনকে কেন্দ্রকরে রচিত। তার বহিঃজীবন ছিল দরিদ্র অভাবে বিষাদে দগ্ধ। কিন্তু অন্তঃজীবন ছিল মহা ঐশ্বর্য। এই ঐশ্বর্য আসলে সম্পদ নয়। এই ঐশ্বর্য ছিল তার চিন্তাশীলতা এবং বিবেগবোধ। যে পেশায় বহুরূপী তাই মানুষের মুখাপেক্ষী তাকে থাকতে হয় কিন্তু তাই বলে যে নিজের পেশার ওপর কোনো অন্যায় করে। না।
দশটা পাঁচটা সাধারণ কাজে যে আনন্দ খুঁজে পায় না। বহুরূপীর মধ্যে যে একজন দার্শনিক কম করে তা যেন হরিদা নতুনভাবে আবিষ্কার করে। বিরাগী সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর প্রণামীর টাকা নিতে সে অস্বীকার করে। জগদীশবাবুকে সে শেখায় পরমসুখ মানে সর্বসুখ নয় সুখ দুঃখের সহ বন্ধন থেকে মুক্তি হল পরমসুখ।
আসলে ব্যক্তিগত জীবনে হরিদা এই পরমসুখ অর্জন করেছিল। তা না হলে সামান্য রোজগারে অর্ধেক দিন উপোশ থাকা হরিদা কীভাবে একশো টাকার থলি পায়ে ঢেলে দেয়। প্রকৃত সত্যিটি হল সুখের সন্ধান বড় বড় সন্ন্যাসী, মধ্যবৃত্তরা, শহরের ক্ষুদ্র গলির মধ্যেও বাস করলেও বহুরূপীর জীবনে সার্থক মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
আরো দেখো: মাধ্যমিক বাংলা সম্পূর্ণ সাজেশন উত্তরসহ
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। এছাড়াও মাধ্যমিক অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post