বাংলাদেশের ফসল বিবরণমূলক রচনা : বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর ফসল উৎপাদন হলেও বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা ফসল উৎপাদনের গতিকে ব্যহত করে। আমাদের দেশ বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব দুর্যোগ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণে পরিবর্তন ঘটছে।
অতিবৃষ্টি বা খরা ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এছাড়াও, সমুদ্রপৃষ্ঠার উচ্চতা বৃদ্ধি উপকূলীয় এলাকার ফসলের জমিকে হুমকির মুখে ফেলে। এছাড়াও অত্যধিক সার ব্যবহার, আবাদ নাশের ফসল চাষ এবং বন উজাড়ের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। ফলে ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় সেচ সুবিধাও অপ্রতুল। ফলে খরা মৌসুমে ফসলের আবাদ বাধাগ্রস্ত হয়। সবশেষে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান না। ফলে কৃষি পেশায় আগ্রহ হ্রাস পাচ্ছে এবং অনেকে শহরে চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ফসল বিবরণমূলক রচনা
বাংলাদেশের ফসল রচনা
ভূমিকা: বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। ফসল উৎপাদন বাংলাদেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। প্রায় ৭০% জনগোষ্ঠী কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং কৃষি খাত দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১৬% অবদান রাখে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে ধান, পাট, গম, আখ, ডাল, তেলবীজ, মসলা, ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব ফসল দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত ফসল
মাটি উর্বর ও আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের ফসলই উৎপাদন করা হয়। এদের মধ্যে ধান, পাট, গম, আখ এবং ডাল অন্যতম। নিচে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
১. ধান: বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য হল ধান। দেশের মোট চাষাবাদের প্রায় ৭০% জমিতে ধান উৎপাদিত হয়। বছরে তিনবার ধান চাষ করা হয়; এই মৌসুমগুলো হচ্ছে- আমন, আউশ এবং বোরো। আমন ধান বর্ষাকালে, আউশ ধান গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বোরো ধান শীতকালে চাষ করা হয়। এক সময়ে এদেশে এত ধান উৎপন্ন হত যে একে বঙ্গ-ভারতের শস্যভাণ্ডার বলা হয়। বরিশাল, পটুয়াখালী, রাজশাহী, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ঢাকা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর অঞ্চলে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয়। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উচ্চফলনশীল বীজ বিতরণ, সেচ ব্যবস্থা উন্নত করা, কৃষি ঋণ প্রদান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
২. পাট: পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল। পাশপাশি বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ৬০ ভাগই পাট রপ্তানি করে অর্জিত হয়। বাংলাদেশে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়। পাট তন্তু বা সুতা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়, যা পোশাক, বস্ত্র, টুপি, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরিতে কাজে লাগে। দিনদিন পাটের চাহিদা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি লাভজনক সুযোগ। পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উন্নত বীজ বিতরণ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৩. গম: গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্যশস্য। গম সাধারণত উঁচু জমিতে এর চাষ হয়। বাংলাদেশে প্রায় সব অঞ্চলেই এটি উৎপাদিত হয়। গম ভাঙিয়ে আটা, ময়দা, সুজি ও ভূষি পাওয়া যায়। আটা, ময়দা ও সুজি আমাদের একটি বিশেষ খাদ্য। ভূষি গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪. ইক্ষু : ইক্ষু বা আখ এক প্রকার তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। এর রস সুমিষ্ট, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এটি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, রংপুর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পরিমাণে জন্মে। আখ থেকে গুড় ও চিনি তৈরি হয়।
৫. তুলা : বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কিছু কিছু তুলা জন্মে। একে রূপালী আঁশ বলে। তুলা দুপ্রকার হয়ে থাকে—কার্পাস ও শিমুল। তুলা দিয়ে বালিশ হয়। কার্পাস তুলা দিয়ে কাপড়, লেপ ও তোষক তৈরি হয়।
৬. তিল সরিষা : তিল ও সরিষা বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে। তিল দিয়ে মূলত তেল তৈরি করা হয়। এদের খৈল গরুর অতি উপাদেয় ও বলকারক খাদ্য। খৈল কৃষি জমিতে সার রূপেও ব্যবহৃত হয়।
৭. আলু : এদেশে প্রচুর আলু জন্মে। দেশের সর্বত্রই আলুর চাষ হয়। বাংলাদেশে আলু একটি প্রাত্যাহিক খাবার হওয়ায় এর চাহিদা অনেক। এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল বলে কৃষকেরা আলু চাষে খুব উৎসাহী। এটি তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া চপসহ নানা প্রকার উন্নত খাদ্য প্রস্তুত করতে এটি প্রয়োজন।
ফসল উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর ফসল উৎপাদন হলেও বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা ফসল উৎপাদনের গতিকে ব্যহত করে। আমাদের দেশ বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব দুর্যোগ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণে পরিবর্তন ঘটছে। অতিবৃষ্টি বা খরা ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এছাড়াও, সমুদ্রপৃষ্ঠার উচ্চতা বৃদ্ধি উপকূলীয় এলাকার ফসলের জমিকে হুমকির মুখে ফেলে।
এছাড়াও অত্যধিক সার ব্যবহার, আবাদ নাশের ফসল চাষ এবং বন উজাড়ের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। ফলে ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় সেচ সুবিধাও অপ্রতুল। ফলে খরা মৌসুমে ফসলের আবাদ বাধাগ্রস্ত হয়। সবশেষে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান না। ফলে কৃষি পেশায় আগ্রহ হ্রাস পাচ্ছে এবং অনেকে শহরে চলে যাচ্ছে।
উপসংহার
বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের ফলে উন্নত দেশসমূহে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এর দোলা এখনও আমাদের দেশের কৃষিতে পুরোপুরি লাগেনি। আমাদের দেশেও যদি আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে চাষাবাদ করা হয়, নব আবিষ্কৃত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় এবং উন্নত জাতের বীজ প্রয়োগ করা হয়, তবে আমাদের কৃষিজাত ফসলের উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে এবং আমাদের দেশের কৃষকগণকে অনুন্নত ও অসহায় জীবনযাপন করতে হবে না।
আরও দেখো: নবম শ্রেণির সকল বাংলা রচনা PDF
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, বাংলাদেশের ফসল বিবরণমূলক রচনা pdf উপরের ‘রচনা PDF’ অপশন থেকে সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের ওপর রচনার লিংক উপরে দেওয়া আছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় রচনাটি সংগ্রহ করতে পারো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post