বর্তমানে বাংলাদেশের দশটি অধিক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে। বাংলাদেশের সকল মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো একই স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা আদান প্রদান করার জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
ব্যবহারকারীরা এসব সেবার মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই টাকা আদান প্রদান করতে পারেন। পাশাপাশি এটা খরচ অত্যন্ত কম হয়। খরচ কম এবং ব্যবহার অত্যন্ত সুবিধাজনক হওয়ায় বাংলাদেশ মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা দুটোই বাড়ছে।
আজ আমরা কথা বলবো বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় এবং অধিক ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো সম্পর্কে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানগুলো কি কি ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে।
একই স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা আদান প্রদান করার জন্য বাংলাদেশের যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। বর্তমানে বাংলাদেশের দশটি অধিক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে।
ব্যবহারকারীরা এসব সেবার মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই টাকা আদান প্রদান করতে পারেন। পাশাপাশি এটা খরচ অত্যন্ত কম হয়। খরচ কম এবং ব্যবহার অত্যন্ত সুবিধাজনক হওয়ায় বাংলাদেশ মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা দুটোই বাড়ছে।
আজ আমরা কথা বলবো বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় এবং অধিক ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো সম্পর্কে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানগুলো কি কি ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে।
১. বিকাশ
মোবাইলের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা আদান প্রদান করার জন্য যে মাধ্যমটি সবচেয়ে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে সেটি হচ্ছে বিকাশ। বিকাশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্রাক এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ ব্যবহারকারীর নিয়ে এটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।
বিকাশ ২০২১ সালে তাদের যাত্রা শুরু করে। সেই থেকে লেনদেনের স্বচ্ছতা এবং ব্যবহারে অধিক সুবিধার জন্য এটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিকাশ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় চার মিলিয়ন।
প্রথম অবস্থায় সেন্ড মানি ক্যাশ আউট এবং ক্যাশ ইন সেবা শুরু করলেও বর্তমানে বিকাশের রয়েছে আরও একাধিক সব সেবা। বিকাশের মাধ্যমে এখন কেবল টাকাই পাঠানো যায় না, আরো অনেক কাজ সহজ করে দিয়েছে বিকাশ। যেমন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, অনলাইন কেনাকাটা, বাস বা ট্রেনে ভ্রমণের জন্য টিকেট কেনা, ইন্টারনেট বিল পরিশোধ ইত্যাদি ছাড়াও আরো অনেক কাজেই বিকাশের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
তাই বলাই যায় বিকাশ আমাদের দৈনন্দিন জীবন অত্যন্ত সহজ করে তুলেছে। স্মার্ট এবং উদ্ভাবনী সব সেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে বিকাশ এখন অন্যান্যদের থেকে অনেক এগিয়ে। তাদের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সেন্ড মানি ক্যাশ ইন ক্যাশ আউট বিদেশ থেকে টাকা প্রেরণ অনলাইন কেনাকাটা বিদ্যুৎ বিল এবং ইন্টারনেট বিল পরিশোধ ভ্রমণের জন্য টিকেট ক্রয় রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার ক্রয় ইত্যাদি ছাড়াও আরো অনেক কিছু ।
২. নগদ
নগদকে বলা হয় বাংলাদেশের ডাক বিভাগের একটি লেনদেন সেবা। বিকাশ এর আদলে তৈরি হয় যা পরবর্তীতে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। নগদ অনেক আকর্ষণীয় অফার এবং মজার মজার সব বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের মানুষের আলোচনায় আসে। বর্তমানে নগদ সবচেয়ে কম খরচে টাকা লেনদেনের সুযোগ করে দিয়ে থাকে।
মূলত বাংলাদেশের নতুন গড়ে ওঠা উদ্যোক্তাদের আরো ভালো মানের সেবা প্রদান করার জন্য তৈরি হয় নগদ সেবা। নগদ খুব গুরুত্বের সাথে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করে, যা তাদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তারা এই সুবিধাগুলোর মাধ্যমে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
নগদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি করা। বিশ্ব ব্যাংক গ্লোবাল ফিন্ডেক্স ২০১৭ অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মাত্র ৫০% বাংলাদেশের মানুষের মোবাইল ব্যাংকিং বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট ছিলো, যার মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট ছিলো মাত্র ২১.২%। এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, দেশের অনেক মানুষ এখনো আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে রয়েছে এবং তাদের আর্থিক লেনদেনের জন্য নির্ভরযোগ্য সেবার প্রয়োজন।
টাকা উত্তোলন ও প্রেরণ, স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, অনলাইন ও সরাসরি কেনাকাটার পেমেন্ট এবং মোবাইল রির্চাজের মতো প্রয়োজনীয় সার্ভিসগুলো নগদে সম্ভব। তাই বলা চলে, নগদের ব্যবহার মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা তৈরি করে মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলতে সাহায্য করছে।
৩. mCash
এমক্যাশ (mCash) হল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি বহুল প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। এর মাধ্যমে যেখানে যেকোনো মোবাইল কোম্পানির গ্রাহকরা ব্যাংকের কোনো শাখায় না গিয়েই দেশের যেকোনো স্থান থেকে ২৪ ঘণ্টা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন।
মোবাইল ব্যাঙ্কিং-এর প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে, এটি একটি দক্ষ এবং স্বল্প খরচে দেশের বৃহত্তর জনগণের কাছে আর্থিক পরিষেবাগুলি নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে mCash।
mCash এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
- একটি কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা করা এবং সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ন্যায় ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
- অগ্রাধিকার খাত এবং দেশের স্বল্পোন্নত এলাকায় বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে সুষম প্রবৃদ্ধি ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন অর্জন করা। .
- গ্রামীণ এলাকায় স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং আর্থিক সেবাকে উৎসাহিত করা।
অর্থনীতির সুষম বৃদ্ধির জন্য মোট আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। - দেশের প্রতিটি পয়েন্টে ইসলামী ব্যাংকিং এর সুবিধা ছড়িয়ে দেয়া।
৪. SureCash
শিওরক্যাশ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ফিনটেক ব্র্যান্ড। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রূপালী ব্যাংক লিমিটেডসহ চারটি স্থানীয় ব্যাংকের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ২ কোটিরও বেশি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে এবং ১,৫০০ এরও বেশি পেমেন্ট পার্টনারদের সাথে সংযুক্ত আছে।
SureCash মূলত P2P (Person to Person) টাকা পাঠানো, সরকারী প্রণোদনা, এডুকেশন পেমেন্ট, ইউটিলিটি বিলসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এবং পেমেন্ট সেবা দিচ্ছে। এছাড়াও গ্রাহকরা দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১৮০,০০০ এরও বেশি এজেন্ট পয়েন্ট থেকে ক্যাশ-ইন/আউট করতে পারেন।
SureCash তাদের নিজস্ব লোকবল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি শিক্ষা কার্যক্রম, ইউটিলিটি সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেবা বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়াও End to End পেমেন্ট ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করার জন্য শিক্ষা এবং কৃষি খাতে কাস্টম ভিত্তিক সফটওয়্যার সমাধানও দিয়ে আসছে তারা।
৫. Rocket
ডাচ-বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এর পথপ্রদর্শক। এটিই প্রথম ব্যাঙ্ক যা মোবাইল ফোনের বিস্তৃত পরিসরের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং সুবিধা প্রদান করে। Rocket হল ব্যাঙ্ক শাখা ছাড়াই একটি ব্যাঙ্কিং প্রক্রিয়া যা ব্যাংকে যাওয়া ছাড়াই ব্যবহারকারীদের দক্ষতার সাথে ও সাশ্রয়ী মূল্যে আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে।
ক্যাশ-ইন, ক্যাশ-আউট, মার্চেন্ট পেমেন্ট, ইউটিলিটি পেমেন্ট, বেতন বিতরণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, সরকারি ভাতা বিতরণ, মোবাইল প্রযুক্তি ডিভাইসের মাধ্যমে এটিএম অর্থ উত্তোলন, অর্থাৎ মোবাইল ফোনের মতো ব্যাংকিং এবং আর্থিক অন্যান্য পরিষেবাগুলো ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেটের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে করা সম্ভব।
রকেটের সুবিধাগুলো হচ্ছে:
- রিয়েল টাইম অনলাইন ব্যাংকিং।
- সাশ্রয়ী মূল্যে ব্যাঙ্কিং এবং উন্নত পেমেন্ট লেনদেনে অ্যাক্সেস।
- টাকা পাঠানোর সুবিধাজনক এবং নিরাপদ উপায়।
- সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর।
৬. upay
upay হলো ইউসিবি ফিনটেক লিমিটেড-এর একটি ডিজিটাল অর্থনৈতিক ব্র্যান্ড (আর্থিক সেবা দানে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান), যা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পরে, ২০২১ সালের শুরুর দিকে সর্বস্তরের মানুষকে এক বিস্তৃত মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে উপায় তার যাত্রা শুরু করে।
upay এর প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে মোবাইল ট্রান্সজেকশন, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, ইন-স্টোর এবং ই-কমার্স অর্থ প্রদান, রেমিট্যান্স, বেতন বিতরণ, মোবাইল রিচার্জ এবং অন্যান্য মূল্য সংযোজিত আর্থিক পরিষেবাগুলো। গ্রাহকরা সাশ্রয়ী মূল্যে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এজেন্ট এবং মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে upay এর মাধ্যমে লেনদেন করতে পারেন।
শেষ কথা
আজকের এই আলোচনায় আমরা বাংলাদেশের সকল মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে জানলাম। আমরা এখানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি। ভবিষ্যতে অন্য কোন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ভালো সেবা প্রদানের মাধ্যমে জনপ্রিয়তায় আসলে আমরা অবশ্যই সেটিকে এই তালিকায় যুক্ত করব।
Discussion about this post