ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর বাংলাদেশের অর্থনীতি : বাংলাদেশকে কৃষিপ্রধান দেশ বলা হয় কারণ এ দেশের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা এবং জনগণের আয়ের প্রধান উৎস কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং তাদের জীবিকা মূলত কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। দেশের জলবায়ু, উর্বর মাটি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত। এই কারণে, বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবনে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম, যা বাংলাদেশকে কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
১. আশরাফ আলী তার কারখানায় পশুর চামড়া দিয়ে ব্যাগ তৈরি করেন। প্রথম বছরে ইংল্যান্ডে তার তৈরি ব্যাগ স্বল্প পরিমাণে বিক্রি হলেও তিন বছর শেষে ইউরোপের কয়েকটি দেশে তার পণ্যের ব্যাপক চাহিদা পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে তার স্ত্রী মিসেস জমিলা প্রতিদিন বাড়ির আঙ্গিনার হাঁস ও মুরগির খামার থেকে প্রায় শতাধিক ডিম বাজারে বিক্রি করেন। দুজনের যৌথ প্রচেষ্টায় তাদের সুখের সংসার।
ক. বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার কত অংশ শহরাঞ্চলে বাস করে?
খ. বাংলাদেশকে কৃষিপ্রধান দেশ বলা হয় কেন?
গ. মিসেস জমিলার কাজটি অর্থনীতির কোন খাতের বৈশিষ্ট্যের সাথে সংগতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আশরাফ আলী ও মিসেস জমিলার কাজের মধ্যে কোনটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে অধিক সহায়ক বলে তুমি মনে কর? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ শহরাঞ্চলে বাস করে।
খ. বাংলাদেশকে কৃষিপ্রধান দেশ বলা হয় কারণ এ দেশের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা এবং জনগণের আয়ের প্রধান উৎস কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং তাদের জীবিকা মূলত কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। দেশের জলবায়ু, উর্বর মাটি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত। এই কারণে, বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবনে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম, যা বাংলাদেশকে কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে।
গ. উদ্দীপককের মিসেস জমিলার কাজটি অর্থনীতির কৃষি খাতের বৈশিষ্ট্যের সাথে সংগতিপূর্ণ।
কৃষি খাত অর্থনীতির প্রাথমিক খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে কৃষি, পশুপালন, এবং মৎস্য চাষের মাধ্যমে কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়। মিসেস জমিলা তাদের বাড়ির আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন করে ডিম উৎপাদন করছেন, যা কৃষি খাতের কার্যক্রমের একটি উদাহরণ।
তিনি এই খাতে কাজের মাধ্যমে পরিবারের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আয় নিশ্চিত করছেন। হাঁস-মুরগি পালন এবং ডিম উৎপাদন সরাসরি কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্ত, কারণ এটি খাদ্য উৎপাদনের প্রাথমিক পর্যায়ে অবদান রাখে।
এ ধরনের কাজ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি অর্থনীতির অন্যান্য খাতের (যেমন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন) জন্য কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
অতএব, মিসেস জমিলার কাজ কৃষি খাতের বৈশিষ্ট্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
ঘ. আশরাফ আলীর খাতটি শিল্প খাতের অন্তর্ভুক্ত। ফলে আশরাফ আলী ও মিসেস জমিলার কাজের মধ্যে আশরাফ আলীর কাজ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অধিক সহায়ক বলে মনে করি।
আমার যুক্তি:
১. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: আশরাফ আলী পশুর চামড়া থেকে ব্যাগ তৈরি করে যা শিল্প খাতের একটি উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম। এটি কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরি করে। ফলে দেশের শিল্প খাত শক্তিশালী হয়।
২. রপ্তানি আয় বৃদ্ধি: আশরাফ আলীর ব্যাগ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক, যা অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
৩. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: শিল্প খাতের ব্যবসা পরিচালনার জন্য কারখানায় কর্মী নিয়োগ করতে হয়। এটি দেশের বেকারত্ব হ্রাসে সাহায্য করে।
৪. অর্থনৈতিক ভ্যালু চেইন বৃদ্ধি: চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত ব্যাগ উচ্চ মূল্যের পণ্য, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি অর্থনীতির ভ্যালু চেইন বৃদ্ধি করে।
৫. টেকসই উন্নয়ন: শিল্প খাতে কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
মিসেস জমিলার কৃষি কার্যক্রম স্থানীয় খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে সীমাবদ্ধ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সরাসরি ভূমিকা রাখে না। তবে কৃষি ও শিল্প উভয়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব।
২. মধ্যবিত্ত লোকমান সাহেবের চার ছেলের সবাই বেকার। বড়ো ছেলে আরমানকে ধার দেনা করে সৌদি আরব পাঠানোর পর সে একটি খেজুর বাগানে কাজ পেল। সেখানে মরুভূমির অনুর্বর জমিতে মেধা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে খেজুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ দেখে সে অনুপ্রাণিত হয়। নিজ দেশের অনুন্নত কৃষির কথা চিন্তা করে পরের বছরই সে দেশে ফিরে এসে তিন ভাইকে নিয়ে খামার করার সিদ্ধান্ত নেয়। বেকার তিন ভাইকে হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কৃষি উৎপাদন সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দিয়ে চার ভাই একত্রে একটি খামার তৈরি করে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
ক. আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান কত শতাংশ?
খ. সেবাখাত বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. জনাব আরমান সৌদি আরব থেকে ফিরে কোন অর্থনীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ ‘জনাব লোকমানের বেকার চার পুত্রই এখন মানবসম্পদ’—মূল্যায়ন কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান ২০ শতাংশ।
খ. সেবাখাত হলো অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেখানে পণ্য উৎপাদনের পরিবর্তে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। যেমন— শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং, পরিবহন, যোগাযোগ, পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি। এটি এমন কার্যক্রমের সমষ্টি, যা মানুষের প্রয়োজন মেটায় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। এই খাতে সরাসরি ভোগ্যপণ্য উৎপাদন না হলেও বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখা হয়। এই খাতের মাধ্যমে মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা পায় এবং এটি অন্যান্য খাতের কাজকর্ম পরিচালনায় সহায়তা করে।
গ. উদ্দীপকের জনাব আরমান সৌদি আরব থেকে ফিরে কৃষি অর্থনীতি (Agricultural Economy) এর সাথে যুক্ত হয়েছেন। সৌদি আরবে খেজুর বাগানে কাজ করার সময় তিনি মরুভূমির অনুর্বর জমিতে মেধা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে খেজুর ও অন্যান্য ফলের চাষ দেখতে পান। এটি তাকে তার দেশের কৃষি খাতের উন্নতি করার অনুপ্রেরণা দেয়। তিনি উপলব্ধি করেন যে, দেশে কৃষির আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার কম হওয়ার কারণে উৎপাদন ও ফলনের হার সন্তোষজনক নয়। এরপর, তিনি দেশে ফিরে এসে তিন ভাইকে নিয়ে কৃষি খামার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন।
আরমান তাদের হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কৃষি উৎপাদন সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের খামারের জন্য আধুনিক কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি সফল ব্যবসায়ী গ্রুপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে, তারা শুধু নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করেছে, বরং তারা কৃষি খাতে নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের প্রয়োগ ঘটিয়ে দেশের কৃষি অর্থনীতির উন্নতিতে অবদান রেখেছে।
এভাবে, আরমানের উদ্যোগ কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উন্নয়নকে উৎসাহিত করেছে, যা দেশের কৃষি অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং কৃষি উন্নয়নকে একটি অর্থনৈতিক কার্যকলাপে পরিণত করেছে। এটি কৃষির আধুনিকীকরণের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ঘ. ‘জনাব লোকমানের বেকার চার পুত্রই এখন মানবসম্পদ’—এই বক্তব্যটি একটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক। মানবসম্পদ বলতে আমরা সেইসব মানুষের সমষ্টিকে বুঝি যারা তাদের দক্ষতা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও শ্রম দিয়ে একটি দেশের বা সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কাজ করে।
এখানে, প্রথমে লোকমান সাহেবের চার পুত্রই বেকার ছিল, কিন্তু আরমানের সৌদি আরবে গিয়ে মেধা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন দেখার পর সে দেশে ফিরে এসে তিন ভাইকে নিয়ে খামার স্থাপন করে। এ থেকে স্পষ্ট যে, তাদের বেকারত্ব শুধুমাত্র একটি সময়কাল ছিল, যা পরবর্তীতে তাদের কষ্ট ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে সফলতার দিকে পরিবর্তিত হয়েছে। তারা শুধুমাত্র নিজেদের জীবনযাত্রার উন্নতি করেনি, বরং কৃষি খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নতুন উদ্ভাবন এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের কৃষি খাতেও অবদান রেখেছে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মানবসম্পদে পরিণত হয়েছে।
যেহেতু তারা খামার গড়ে তুলেছে এবং একটি সফল ব্যবসা তৈরি করেছে, তাদের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সহায়ক হয়েছে। তারা প্রমাণ করেছে যে, বেকারত্ব কখনোই একটি স্থায়ী অবস্থা নয়, যদি মানুষ তার দক্ষতা ও শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারে। তাই, তারা এখন শুধু তাদের পরিবারকে নয়, বরং দেশের কৃষি খাতের উন্নতি এবং অর্থনীতির শক্তিশালীকরণে মানবসম্পদ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
এছাড়া, তারা যেভাবে নিজেদের দক্ষতা অর্জন করেছে এবং হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ নিয়ে খামারের মাধ্যমে সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছে, তা প্রমাণ করে যে মানবসম্পদ উন্নয়ন কেবল শ্রমের উপর নির্ভর করে না, বরং সঠিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার সুযোগ এবং মেধার ব্যবহারও এর মূল উপাদান।
৩. নাসির উদ্দিনের চার ছেলে। বড় ছেলে চার বছর ধরে বাস করে লন্ডনে। বাকি ছেলেদের মধ্যে একজন গ্রামে জমিজমা চাষাবাদ করে, অপর একজন পুলিশ বিভাগে চাকরি করে। সবচেয়ে ছোট ছেলেটি নির্মাণ বা ঠিকাদারি পেশায় নিয়োজিত। তার ছোট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আছে।
ক. বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান খাত কয়টি?
খ. শহুরে অর্থনীতি বলতে কী বোঝ?
গ. নাসির উদ্দিনের সবচেয়ে ছোট ছেলে কোন ধরনের অর্থনীতিতে অবদান রাখে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে উক্ত অর্থনীতির গুরুত্ব—আলোচনা কর।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post