বাংলা বানান গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর hsc 2025 : বাংলা বানান শুদ্ধভাবে জানাটা বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ভালো করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। পরীক্ষায় প্রায়শই বানান সংশোধন বা বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন আসে, যা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়। তাই আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য কোর্সটিকায় আমরা বাংলা বানান বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর তুলে ধরেছি।
এই প্রশ্নগুলো অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাধারণ ভুলগুলো সহজে এড়িয়ে যেতে পারবে এবং শুদ্ধ বানানের অনুশীলন করতে পারবে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য নিয়মিত চর্চার বিকল্প নেই। তাই এখনই শুরু করো প্রস্তুতি—শুদ্ধ বানান চর্চা করো কোর্সটিকায়!
বাংলা বানান গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর hsc 2025
১. বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে অ-তৎসম শব্দের বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারেব অ-তৎসম শব্দের বানানের পাঁচটি নিয়ম-
১. বাংলায় শব্দের শেষের অ-ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমন- কালো, তেরো, দেখানো, বলো ইত্যাদি।
২. বিদেশি শব্দে ক্ষেত্র অনুযায়ী অ্যা-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন- অ্যাসিড, অ্যাকাউন্ট, ক্যাসেট ইত্যাদি।
৩. সকল অ-তৎসম শব্দ অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এগুলোর কারচিহ্ন ব্যবহৃত হবে। যেমন- আসামি, মাসি, কাহিনি, হিজরি, দাদি ইত্যাদি।
৪. অ-তৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য-ণ ব্যবহৃত হবে না। যেমন- ইরান, কান, ঝরনা, রানি ইত্যাদি।
৫. ‘ক্ষ’-এর পরিবর্তে অ-তৎসম শব্দের বানানে ‘খ’ ব্যবহৃত হবে। যেমন- খিদে, খুদ, খেত, খ্যাপা ইত্যাদি।
২. বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত বাংলা বানানের দু’টি/পাঁচটি/ছয়টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম:
১. ক খ গ ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার লেখা যাবে। যেমন- অহংকার, হৃদয়ংগম, সংঘটন। বিকল্পে লেখা যাবে। ক্ষ-এর পূর্বে সর্বত্র ভূ হবে। যেমন- আকাক্সক্ষা।
২. রেফ-এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন- অর্চনা, অর্জন, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য।
৩. যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ, উ, ঊ উভয়ই শুদ্ধ সেসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার কারচিহ্ন ব্যবহৃত হবে। যেমন- কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, ধমনি, ধূলি, পঞ্জি, পদবি, ভঙ্গি।
৪. ক্ষ-ক্ষীর, ক্ষুর শব্দ থির, খুর না লিখে সংস্কৃত মূল অনুসরণে ক্ষীর ও ক্ষুরই লেখা হবে। তবে অ-তৎসম শব্দ খুদ, খুদে, খুর, খেত, খেপা, খিদে ইত্যাদি লেখা হবে।
৫. ই, ঈ, উ, উ: সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে শুধু ‘ই’ ও ‘উ’ এবং এগুলোর কার-চিহ্ন ব্যবহৃত হবে। এমনকি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক শব্দের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য। যেমন- গাড়ি, পাগলি, ফরাসি, ফারসি ইত্যাদি।
৩. বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের যে কোনো পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের বানানের পাঁচটি নিয়ম-
১. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: অর্জ্জন, ঊর্ধ্ব, মূর্ছা, সূর্য্য ইত্যাদির পরিবর্তে যথাক্রমে অর্জন, ঊর্ধ্ব, মূর্ছা, সূর্য ইত্যাদি হবে।
২. যেসব তৎসম শব্দে ইঈবাউউ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং তার কারচিহ্ন হবে।
যেমন: কিংবদন্তি, খঞ্জনি, পদবি, পল্লি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, লহরি, শ্রেণি, সরণি, সূচিপত্র।
৩. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার হবে।
যেমন: অহম্ + কার অহংকার। এভাবে ভয়ংকর, সংগীত।
৪. সংস্কৃত ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী সেগুলিতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন: গুণী- গুণিজন, প্রাণী- প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী – মন্ত্রিপরিষদ।
৫. শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন: ইতস্তত, কার্যত, ফলত, বস্তুত, মূলত।
৪. দপ্রমিত বাংলা বানানে ‘ই’-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : বাংলা বানানে ‘ই’-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম-
১. বাংলা ক্রিয়াবাচক শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন- করি, লিখি, ধরি, শিখি ইত্যাদি।
২. স্ত্রীবাচক অ-তৎসম শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন- পিসি, মাসি, চাচি, বিবি ইত্যাদি।
৩. যেসব শব্দের বানানে ই-কার ও ঈ-কার দুটিই শুদ্ধ ও প্রচলিত, বানানের সমতা বিধানের লক্ষ্যে যেসব ক্ষেত্রে কেবল ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন- বাড়ী > বাড়ি, শাড়ী > শাড়ি ইত্যাদি।
৪. বস্তুবাচক, ভাববাচক, কর্মবাচক এবং প্রাণিবাচক অ-তৎসম শব্দের শেষে ই-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন- আলমারি, চালাকি, ডাক্তারি ইত্যাদি।
৫. আধুনিক বাংলা বানানের নিয়মানুযায়ী জাতি ও ভাষার নামের শেষে ই-কার ব্যবহার করা হয়। যেমন- বাঙালি, জাপানি, আরবি, ইংরেজি ইত্যাদি।
৫. বাংলা বানানে কোথায় কোথায় ই-কার হয় না, উদাহরণসহ তার পাঁচটি নিয়ম দেখ।
উত্তর : বাংলা বানানে ই-কার হয় না এমন ৫টি নিয়ম:
১. ব্যক্তি বা পুরুষ বোঝাতে তৎসম শব্দের শেষে ই-কার হয় না। যেমন: শিল্পী, গুণী, জ্ঞানী ইত্যাদি।
২. স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দের বানানে ই-কার হবে না। যেমন: নারী, দাসী, পাত্রী ইত্যাদি।
৩. সংখ্যাবাচক শব্দের শেষে ই-কার হয় না। যেমন: চতুর্থী, একাদশী, অষ্টমী, পঞ্চমী ইত্যাদি।
৪. সাধু ও চলিত উভয় রীতিতে সম্বোধন পদে ই-কার হয় না। যেমন: সুন্দরী, জননী, দেবী ইত্যাদি।
৫. প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দের মধ্যবর্তী অংশে ই-কার হবে না। যেমন: করণীয়, পূজনীয়, নমনীয় ইত্যাদি।
৬. বাংলা বানানে য-ফলা ব্যবহারের নিয়ম লেখ।
উত্তর : বাংলা বানানে য-ফলা ব্যবহারের নিয়ম নিম্নরূপ:
১. শব্দের প্রথমে অ-কারান্ত বা আ-কারান্ত বর্ণে য-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণ অ্যা হয়। যেমন- ব্যয় (ব্যায়), ব্যাকরণ, ব্যাধি।
২. য-ফলা যুক্ত বর্ণের পর ই-কার থাকলে এ উচ্চারিত হয়। যেমন- ব্যক্তি (বেক্তি)।
৩. শব্দের অন্ত্যে বা মধ্যে য-ফলা থাকলে দ্বিত্ব হবে। যেমন- উদ্যান, বিদ্যা, সত্য, কথ্য।
৪. হ এবং য-ফলাযুক্ত হলে হ লোপ পায়। মহাপ্রাণ হলে প্রথমটি অল্পপ্রাণ দ্বিতীয়টি মহাপ্রাণ। যেমন- সহ্য (শোঝো), দাহ্য, উহ্য, ঐতিহ্য।
৫. যুক্তব্যঞ্জনে য-ফলা যুক্ত হলে তার উচ্চারণ থাকে না, ‘অ’ রক্ষিত। যেমন- হর্ম্য, মর্ত্য, স্বাস্থ্য।
৭. বাংলা বানানে ব-ফলা ব্যবহারের নিয়ম লেখ।
উত্তর : ব-ফলা ব্যবহারের নিয়ম-
১. শব্দের শেষে বা মধ্যে ব-ফলা থাকলে সেই ব-ফলা অনুচ্চারিত এবং যে বর্ণে যুক্ত সেই বর্ণ দ্বিত্ব হয়। যেমন- বিশ্বাস (বিশ্বাস), ভূস্বামী (ভুশশামি), বিদ্বান, পক্ক, বিশ্ব।
২. শব্দের আদিতে ‘ব’ ফলা যুক্ত হলে ‘ব’ অনুচ্চারিত হয়, তবে যে বর্ণ সংযুক্ত হয় সেই বর্ণ উচ্চারণে একটু শ্বাসাঘাত লাগে। যেমন- স্বামী, স্বাধিকার, জ্বলছে, দ্বিতীয়।
৩. উৎ উপসর্গের সাথে ব যুক্ত হলে ব উচ্চারিত হয়। যেমন- উদ্বেগ (উদ্বেগ), উদ্বেলিত, উদ্বাস্তু, উদ্বোধন, উদ্বৃত্ত ইত্যাদি।
৪. শব্দের মধ্যে বা শেষে বা এর সঙ্গে ব, ম এর সঙ্গে ব যুক্ত হলে ঐ ‘ব’ উচ্চারিত হয়। যেমন- সাব্বাস (শাবাশ)।
৫. সন্ধির সূত্রে আগত ‘ক’ স্থলে ‘গ’ হলে সেই ‘গ’-এর সাথে ‘ব’ যুক্ত হলে সেই ‘ব’ উচ্চারিত। যেমন- দিগ¦ালিকা (দিগ্বালিকা) সন্ধিতে দিক্ বালিকা দিম্বালিকা।
৬. যুক্তব্যঞ্জনে ব-ফলা যুক্ত হলে ব উচ্চারিত হয় না। যেমন- দ্বন্দ্ব (দন্দো)।
৮. ণ-ত্ব বিধান বলতে কী বোঝ? নিয়ম বা সূত্রগুলো আলোচনা কর।
উত্তর : যে নিয়ম অনুসারে সংস্কৃত ভাষায় দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ-তে পরিবর্তিত হয় সেই পরিবর্তনের নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলে।
ণ-ত্ব বিধানের নিয়ম-
১. ঋ, র, ষ বর্ণের পরে যদি প্রত্যয়ের দন্ত্য-ন আসে তাহলে তা মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়।
যথা- ঋণ, কৃষ্ণ, পূর্ণ, তৃণ, ভূষণ ইত্যাদি।
২. ট-বর্গের পূর্বস্থিত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ-তে পরিবর্তিত হয়। যেমন- কণ্টক, অবগুণ্ঠন, চ-, খ-, ভা-, বণ্টন, দ-, লুণ্ঠন, কণ্ঠ, প্রচ-। কিন্তু ত-বর্গের পূর্বস্থিত হলে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- বৃত্ত, গ্রন্থ, বৃন্দাবন ইত্যাদি।
৩. ঋ, র, ষ-এর পরে যদি স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ ও ং- এর ব্যবধান থাকে এবং পরে দন্ত্য-ন থাকে তাহলে তা মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়। যেমন- করণ, দর্পণ, শ্রবণ, হরিণ, গ্রহণ, অর্পণ, রুণ, ব্রাহ্মণ, পাষাণ ইত্যাদি।
৪. প্র, পরা, পরি, নীর- এ চার উপসর্গের এবং অন্তর শব্দের পরে স্থিত, নদ, নম, নশ, নহ, নীর, অন, হন এ কয়টি ধাতুর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- প্রণাম, পরিণতি, প্রণিধান, পরায়ণ ইত্যাদি।
৫. কতকগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য ‘ণ’ হয়। যেমন- অণু, আপণ, কণা, কর্ষণ, কল্যাণ, কোণ, গণ, গণিকা, গণিত, তৃণ, নিপুণ, পণ, পুণ্য, বাণিজ্য, বাণী, বিপণি, বীণা, মাণিক্য, লবণ, লাবণ্য, শোণিত, শোষণ ইত্যদি।
৯. ষ-ত্ব বিধান বলতে কী বোঝ? নিয়ম বা সূত্রগুলো আলোচনা কর।
উত্তর : সংস্কৃতের যে বিধান অনুসারে দন্ত্য-স মূর্ধন্য-ষ- তে পরিণত হয় তাকে ষ-ত্ব বিধান বলে।
ষ-ত্ব বিধানের নিয়ম-
১. ঋ-কার এর পর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- ঋষি, তৃষা, তৃষ্ণা ইত্যাদি।
২. ট এবং ঠ-এর পূর্বস্থিত দন্ত্য-স মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- কষ্ট, তুষ্ট, বলিষ্ঠ ইত্যাদি।
৩. অ-আ ভিন্ন স্বরবর্ণ, ক ও র-এর পরস্থিত প্রত্যায়াদির দন্ত্য-স মূর্ধন্য-ষ-তে পরিণত হয়। যেমন- মুমূর্ষু, কল্যাণীয়েষু, শ্রীচরণেষু ইত্যাদি।
৪. ই-কারান্ত (অতি, অধি, অপি, অভি, নি, পরি, প্রতি, বি) এবং উ-কারান্ত (অনু, সু) উপসর্গের পরে কতকগুলো ধাতুর দন্ত্য-স মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- অভিষেক, অধিষ্ঠান, নিষেধ, সুষ্ঠু, বিষাদ, অনুষঙ্গ, পরিষদ ইত্যাদি।
৫. দুটি পদ সমাসযুক্ত হয়ে এক পদে পরিণত হলে এবং পূর্বপদের শেষে ই, উ, ঋ এবং ও-কার থাকলে পরবর্তী পদের আদ্য দন্ত্য- – স মূর্ধন্য-খ-তে পরিণত হয়। যেমন- যুধিষ্ঠির (যুধি + স্থির)।
আরও দেখো—এইচএসসি বাংলা ২য় পত্রের উত্তরসহ সাজেশন
এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের জন্য চূড়ান্ত সাজেশন হিসেবে hsc 2025 বাংলা বানান গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য বেশকিছু প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। শতভাগ কমন পাওয়ার জন্য এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post