বাংলা শব্দ গঠন উপসর্গ ও সমাস hsc 2025 : বাংলা শব্দ গঠন অধ্যায়ের মধ্যে উপসর্গ ও সমাস দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এইচএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় এখান থেকে নিয়মিতভাবে প্রশ্ন আসে। সঠিকভাবে উপসর্গ ও সমাস বোঝা গেলে ব্যাকরণ অংশে ভালো নম্বর পাওয়া সহজ হয়।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহায়তা করতে কোর্সটিকায় আমরা “উপসর্গ ও সমাস” সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরেছি। এগুলোর অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শব্দ গঠনের ধরণ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে এবং পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সাথে অংশ নিতে পারবে। বাংলা ব্যাকরণে দক্ষতা বাড়াতে আজই প্র্যাকটিস শুরু করো—কোর্সটিকায়!
বাংলা শব্দ গঠন উপসর্গ ও সমাস hsc 2025
১. উপসর্গ কাকে বলে? বাংলা ভাষায় উপসর্গের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর : নিজেরা কোনো বিশেষ অর্থ প্রকাশ করেও যেসব অব্যয়সূচক শব্দাংশ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা ক্রিয়ামূল কিংবা নাম শব্দের পূর্বে বসে অর্থের পরিবর্তন ঘটায় বা নানা অর্থ সৃষ্টি করে, সেগুলোকে উপসর্গ বলা হয়।
বাংলা ভাষায় উপসর্গের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা: শব্দ গঠনের জন্য সব ভাষারই কতকগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। পৃথিবীর যে ভাষা যত বেশি শব্দ ধারণ করতে পারে সে ভাষা তত বেশি উন্নত। এদিক বিচারে উপসর্গের ভূমিকা বা গুরুত্ব অপরিসীম। উপসর্গ হলো এক শ্রেণির অব্যয় যা নতুন নতুন শব্দ গঠনে সহায়তা করে। এগুলো শব্দের বা ধাতুর পূর্বে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থ এবং আকৃতির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে।
যেমন- নাম শব্দের পূর্বে অপ, প্র, সু, দু, পরি, উপ ইত্যাদি উপসর্গ যোগ করলে যথাক্রমে অপনাম, প্রণাম, সুনাম, দুর্নাম, পরিণাম, উপনাম ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন অর্থের পৃথক পৃথক শব্দ সৃষ্টি হয়। উপসর্গগুলো এভাবে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে থাকে। তাই বলা যায়, বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা অনেক।
২. শব্দ কাকে বলে? অর্থগতভাবে বাংলা শব্দ কত প্রকার কারণসহ আলোচনা কর।
উত্তর : অর্থের পার্থক্য বিচারে বাংলা শব্দকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. যৌগিক শব্দ, ২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ও ৩. যোগরূঢ় শব্দ।
১. যৌগিক শব্দ: যেসব শব্দের অর্থ তাদের প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থানুযায়ী হয়ে থাকে, তাই যৌগিক শব্দ। যেমন- √দা + তৃচ = দাতা; √পড় + উয়া = পড়ুয়া, ঢাকা + আই = ঢাকাই ইত্যাদি।
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ: যে শব্দ প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে গঠিত হয় কিন্তু মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে তাকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন- ‘সন্দেশ’ (মূল অর্থ) ‘সংবাদ’; (বর্তমান অর্থ) ‘মিষ্টান্নবিশেষ’। ‘দারুণ’ (মূল অর্থ) ‘দারু বা কাষ্ঠ নির্মিত’; (বর্তমান অর্থ) ‘কঠিন’ এরূপ প্রবীণ, বাঁশি ইত্যাদি।
৩. যোগরূঢ় শব্দ: সমাসবদ্ধ অথবা একাধিক শব্দ বা ধাতু দ্বারা নিষ্পন্ন শব্দ যখন প্রত্যাশিত অর্থ না বুঝিয়ে অন্য বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন- ‘সরোজ’ বা ‘পঙ্কজ’ (সরোবরে বা পঙ্কে জন্মে যা) > ‘পদ্ম’; ‘রাজপুত’ (রাজার ছেলে নয়) > ‘জাতিবিশেষ’।
৩. শব্দ কাকে বলে? গঠন অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কী কী। উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা- ১. মৌলিক শব্দ ও ২. সাধিত শব্দ।
১. মৌলিক শব্দ : যেসব শব্দ কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণসাপেক্ষ নয়, অর্থাৎ যেগুলো বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। উদাহরণ: মা, বাপ, হাত, গোলাপ, বই ইত্যাদি।
২. সাধিত শব্দ: যেসব শব্দ উপসর্গ কিংবা প্রত্যয় যোগে গঠিত বা সমাসনিষ্পন্ন, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। উদাহরণ: মিঠা + আই = মিঠাই। ঢাকা + আই = ঢাকাই।
উপসর্গ যোগে – সু + নাম সুনাম। আ + হার = আহার।
সমাস নিষ্পন্ন- তিন ফলের সমাহার ত্রিফলা। যিনি পণ্ডিত তিনিই মূর্খ পণ্ডিতমূর্খ।
সন্ধি নিম্পন্ন – বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়। ইতি + আদি = ইত্যাদি।
৪. শব্দ কাকে বলে? উৎস অনুসারে বা উৎপত্তির বিচারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
উত্তর : ভাষার প্রধান উপাদান শব্দ। ভাষাবিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “বিশেষ বা স্বতন্ত্র পদার্থ বা ভাবকে প্রকাশ করে মানব-মুখ নিঃসৃত এমন একটা ধ্বনিকে বা একাধিক ধ্বনির সমষ্টিকে শব্দ বলে।”
উৎস অনুসারে শব্দের প্রকারভেদ: উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. তৎসম শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে অবিকৃত অবস্থায় বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলে।
যেমন- অদ্য, কর্ম, চন্দ্র, সূর্য, কুন্তল, ধৃত ইত্যাদি।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ: যেসব তৎসম শব্দের উচ্চারণ লোকমুখে বিকৃত হয়ে তাদের মূল রূপ ঠিক রাখতে পারেনি সেগুলোকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে। যেমন- ‘কৃষ্ণ’ শব্দটি তৎসম। এ থেকে প্রাকৃত ও অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে রূপ রূপ পরিবর্তনের পরিবর্তনের ফলে তদ্ভব শব্দ পাওয়া যায় ‘কানু’ বা ‘কানাই’।
৩. তদ্ভব শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় এসেছে সেগুলোকে তদ্ভব শব্দ বলে। যেমন- চন্দ্র > চন্দ > চাঁদ; হস্ত > হথ > হাত।
৪. দেশি শব্দ: যেসব শব্দ এদেশের অনার্য জাতি তথা সাঁওতাল, কোল, দ্রাবিড় ইত্যাদি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেগুলোকে দেশি শব্দ বলে। যেমন- ছাই, মই, ঝিঙা, ঝাঁটা, ডিঙি, ঢেউ, ঢেঁকি, ঢোল, ধিঙি, নেড়া ইত্যাদি।
৫. বিদেশি শব্দ: যেসব শব্দ বিভিন্ন বিদেশি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে সেগুলোকে বিদেশি শব্দ বলে। যেমন- স্কুল, কলেজ, চা, চিনি, আঙ্গুর, আচার, আন্দাজ, আফসোস, আসমান, আসান, কারচুপি ইত্যাদি।
৫. শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? কী কী উপায়ে বাংলা ভাষার শব্দ গঠিত হয় উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য শব্দ তৈরি করার প্রক্রিয়াকে এক কথায় শব্দ গঠন বলা হয়। ‘শব্দ গঠন’ বা ‘সাধিত শব্দ’ নিম্নবর্ণিত প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।
১. উপসর্গযোগে শব্দ গঠন: মূল শব্দের পূর্বে উপসর্গ যোগ করেও নতুন শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- প্র + হার প্রহার; পরা + জয় = পরাজয়; অপ + কার = অপকার ইত্যাদি।
২. প্রত্যয়ের সাহায্যে শব্দ গঠন: ‘নাম শব্দ’ বা ‘ধাতু’র শেষে প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠিত হয়। যেমন- দোকান + দার = দোকানদার; চল্ + অন্ত = চলন্ত ইত্যাদি।
৩. সমাসের সাহায্যে শব্দ গঠন: সমাসের সাহায্যেও নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমন- শোকের দ্বারা আকুল – শোকাকুল; বিদ্যার নিমিত্তে আলয় – বিদ্যালয় ইত্যাদি।
৪. সন্ধির সাহায্যে শব্দ গঠন: সন্ধির সাহায্যেও নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- মহা + আশয় = মহাশয়; বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় ইত্যাদি।
৫. পদ পরিবর্তনের সাহায্যে শব্দ গঠন: পদ পরিবর্তনের সাহায্যেও নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- মানব (বি.) > মানবিক (বিণ); অণু (বি.) > আণবিক (বিণ) ইত্যাদি।
৬. শব্দের দ্বিরাবৃত্তিতে, পদের দ্বিরাবৃত্তিতে এবং সংখ্যাবাচক শব্দযোগেও নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- শব্দ দ্বিরাবৃত্তি – রাশি রাশি, টিপটিপ্ ইত্যাদি। পদ দ্বিরাবৃত্তি – রাজায় রাজায়, ভাইয়ে ভাইয়ে ইত্যাদি।
৬. উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, অর্থদ্যোতকতা আছে- বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : বাংলা ভাষায় যেসব অব্যয়বাচক শব্দাংশ শব্দ বা ধাতুর পূর্বে বসে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে, শব্দার্থের পরিপূর্ণতা সাধন করে, শব্দের অর্থের সংকোচন করে, শব্দের অর্থের পরিবর্ধন করে এবং শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় সেগুলোকে উপসর্গ বলে। উপসর্গ অন্য নাম বা কৃদন্ত শব্দের সাথে যুক্ত না হয়ে যখন স্বাধীন থাকে, তখন তা কোনো অর্থ প্রকাশ করে না। কিন্তু অন্য নাম বা কৃদন্ত শব্দের সাথে যুক্ত হওয়ামাত্রই আশ্রিত শব্দকে অবলম্বন করে বিশেষ বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। তাই বলা হয়- “উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে।”
উদাহরণ: প্র, আ, অনা- এসব উপসর্গের কোনো অর্থ নেই। কিন্তু এরা যথাক্রমে হার, হার ও আবাদ প্রভৃতি ধাতু ও শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থবাচক শব্দ গঠন করে। যেমন-
প্র + হার = প্রহার (অর্থ- মারা)
আ + হার = আহার (অর্থ- খাওয়া বা ভোজন)
সুতরাং দেখা যায় উপসর্গগুলোর নিজস্ব কোনো অর্থ না থাকলেও অর্থদ্যোতকতা বিদ্যমান অর্থাৎ নতুন অর্থ সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েছে।
আরও দেখো—এইচএসসি বাংলা ২য় পত্রের উত্তরসহ সাজেশন
এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের জন্য চূড়ান্ত সাজেশন হিসেবে বাংলা শব্দ গঠন উপসর্গ ও সমাস hsc 2025 আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য বেশকিছু প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। শতভাগ কমন পাওয়ার জন্য এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post