বাওয়ালিদের গল্প সুন্দরবনের জীবন ও জীবিকার ওপর লেখা একটি বর্ণনামূলক রচনা। এতে সুন্দরবনের প্রকৃতি, পরিবেশ, গাছপালা ও প্রাণীদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। বাওয়ালিরা গোলপাতা সংগ্রহ করেন, আর মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করেন।
তাদের জীবন কষ্টকর ও বিপজ্জনক, কারণ বনে বাঘ, সাপ, কুমির ও হাঙরের ভয় রয়েছে। তারা নৌকায় রাত কাটান এবং পানির অপচয় রোধ করেন। সরকার বন সংরক্ষণের জন্য কাঠ কাটা নিষিদ্ধ করেছে, তবে অনুমতি সাপেক্ষে গোলপাতা সংগ্রহ করা যায়। এই রচনা বনজীবীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে শিক্ষামূলক ধারণা দেয়।
বাওয়ালিদের গল্প
আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। এর প্রায় পুরোটাই সমতলভূমি। আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, বঙ্গোপসাগরের তীরে সুন্দরবন। এই বনের সব গাছই বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে বেঁচে আছে। এই বন হাজার রকমের পশু ও পাখিতে পূর্ণ। সুন্দরবনের কোনো কোনো জায়গায় গাছপালা এত ঘন যে, সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছায় না।
সুন্দরবনের তিনপাশে ছড়িয়ে আছে অনেক গ্রাম। গ্রামের মানুষ কৃষিকাজ করে। গ্রামের অনেক মানুষ বন থেকে গোলপাতা ও মধু সংগ্রহ করে। মৌমাছিরা গাছে গাছে তাদের মৌচাক বানায়। যারা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন, তাদের বলে মৌয়াল।
সুন্দরবনে বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার গাছ আছে। এই সব গাছ উপকূলীয় এলাকার জন্য প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে। এইজন্য ১৯৮৯ সাল থেকে সরকার সুন্দরবন থেকে কাঠ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করা যায়।
যারা এ কাজ করেন তাদেরকে বলা হয় বাওয়ালি। বাওয়ালিদের কাজ খুবই কষ্টের। সুন্দরবনে বাঘ ও বিষধর সাপের মতো অনেক প্রাণী আছে। বাঘ মাংসাশী প্রাণী। সে অন্য প্রাণী খেয়ে বাঁচে। বাঘ মানুষকেও আক্রমণ করে। শুধু আক্রমণই করে না, খেয়েও ফেলে।
তাই সুন্দরবনে বাঘই মানুষের সবচেয়ে ভয়ের বিষয়। আর পানিতে আছে মাছ, কুমির ও হাঙর। তাই মৌয়ালি ও বাওয়ালিদের বিপদ পদে পদে।
বাওয়ালি আর মৌয়ালরা সুন্দরবন থেকে অনেক দূরের গ্রামে থাকেন। রোজ রোজ বাড়ি ফিরে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কোথাও না কোথাও তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। রাতের বেলায় হিংস্র জন্তুরা তাদের আক্রমণ করতে পারে। তাই তারা নদীর মাঝখানে নৌকার মধ্যে রাত কাটান।
বাওয়ালিদের অন্য বিপদও আছে। সুন্দরবনের মধ্যে লবণাক্ত পানির নদী আর ছোট ছোট অনেক খাল রয়েছে। মানুষ লবণাক্ত পানি খেতে পারে না।
সেজন্য বাওয়ালিরা তাদের সাথে পানির ছোটো ছোটো পাত্র রাখেন। তারা এই পানি খুবই সাবধানে ব্যবহার করেন। একটুও অপচয় করেন না। পানি শেষ হয়ে গেলে সহজে খাওয়ার পানি পাওয়া যায় না সুন্দরবনে। সেজন্য সুন্দরবন থেকে নানাকিছু সংগ্রহ করার জন্য যারা বনে যায়, তাদেরকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি, অর্থ বলি এবং বাক্য তৈরি করে লিখি।
জন্মভূমি, সমতলভূমি, কৃষিকাজ, চাষাবাদ, সংগ্রহ করা, পরিশ্রম, হিংস্র, মাংসাশী, সতর্ক, লবণাক্ত
২. প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রথমে বলি ও পরে লিখি।
ক. সুন্দরবন বাংলাদেশের কোথায় অবস্থিত?
খ. সুন্দরবনের গাছপালা কোথা থেকে পানি পায়?
গ. বাওয়ালি কারা?
ঘ. বাওয়ালিদের কাজ এত বিপজ্জনক কেন?
ঙ. কীভাবে মানুষ এই বন থেকে অর্থ আয় করে, দুটো উপায় বলি।
চ. সুন্দরবনে কাজ করার সময় কোনটি বাওয়ালিদের কাছে বেশি মূল্যবান, খাবার না খাবার পানি? কেন?
ছ. বাওয়ালিরা কোথায় রাত কাটান?
জ. সরকার সুন্দরবন থেকে কাঠ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে কেন?
ঝ. মৌয়াল ও বাওয়ালিদের কাজ বর্ণনা করি।
৩. খাতায় লিখে ছকটি পূরণ করি।
(একটি ছক বা টেবিল তৈরি করে শিক্ষার্থীরা পূরণ করবে।)
পেশার নাম, কাজ, কাজের স্থান, এই কাজের কতটা বিপদ, এই বিপদে চলার জন্য কী কী সমাধান আছে
বাওয়ালি, মৌয়াল
৪. নিজের জানা যেকোনো কাজ নিয়ে ছকটি পূরণ করি।
(একটি ছক বা টেবিল তৈরি করে শিক্ষার্থীরা পূরণ করবে।)
পেশার নাম, কাজ, কাজের স্থান, এই কাজের কতটা বিপদ, এই বিপদে চলার জন্য কী কী সমাধান আছে
৫. উপরের ছকের তথ্য ব্যবহার করে কাজটি সম্বন্ধে একটি অনুচ্ছেদ লিখি।
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে বাওয়ালিদের গল্প আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post