বাচ্চাদের হঠাৎ করে জ্বর হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে, জ্বর কিংবা কোন ধরনের রোগে অল্প সময়ের মধ্যেই বাচ্চাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই, বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হলে করণীয় কি তা আগে থেকে জেনে রাখতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী বাচ্চার যত্ন নিতে হবে। জ্বর হলে ঘরোয়া উপায়ে যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি বাচ্চাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। যার জন্য তাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রোগ জীবাণু সহজে প্রবেশ করতে পারে। এই ক্ষতিকর রোগ-জীবাণুগুলো যখন শরীরের ক্ষতি করতে শুরু করে তখন শরীরে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় তার মধ্যে জ্বর অন্যতম।
বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হলে করণীয়
বাচ্চাদের জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর নিচে থাকলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরোয়াভাবে সেবা-যত্ন করতে হবে। তার পাশাপাশি প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। জ্বরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বা বাচ্চা বেশী অসুস্থতাবোধ করলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বাচ্চাদের জ্বর হলে ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি ঘরোয়াভাবে কি করতে পারেন চলুন তা জেনে নেওয়া যাক–
১. জ্বরের লক্ষণ দেখে চিকিৎসা নিন
জ্বর বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: টাইফয়েড জ্বর, ডেঙ্গু জ্বর বা জীবাণুর আক্রমণে জ্বর। সকল জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। জ্বরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি জ্বরের কারণভেদে আরও লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন: টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ হচ্ছে ক্ষুধামন্দা, ডায়রিয়া ও বমি হওয়া। আবার ডেঙ্গু জ্বর এর লক্ষণ হচ্ছে– ত্বকের নিচে রক্তপাত, রক্তাক্ত বমি, ও রক্তাক্ত মল।
লক্ষণগুলোর উপর আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন যে, আপনার বাচ্চার জ্বর ঠিক কি কারণে হয়েছে। যদি গুরুতর কোন লক্ষণ পান তাহলে অতিসত্বর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
২. জ্বরের সাথে বাচ্চার সর্দি-কাশি বা মাথাব্যথা হলে যা করবেন
জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা অনেক মানুষের হয়ে থাকে। এমনটি হয়ে থাকলে প্রথমে ঘরোয়া উপায়ে মাথা ব্যথা কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করুন। তারপরও যদি মাথাব্যাথা না কমে তাহলে মাথা ব্যথার ঔষধ খাওয়ান।
জ্বরের সাথে অনেকের সর্দি-কাশিও হয়ে থাকে। সর্দি-কাশি হলেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করুন। প্রথমে ঘরোয়া উপায়ে সর্দি-কাশি কমানোর চেষ্টা করুন। ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করার পরেও যদি সর্দি-কাশি না কমে তাহলে জ্বরের ঔষধের পাশাপাশি সর্দি-কাশির ঔষধ খাওয়ান।
৩. বাচ্চার অস্বস্তি বেড়ে যায় এমন কাজ করবেন না
অধিকাংশ বাবা-মা বাচ্চার যত্ন নিতে গিয়ে তাদের অস্বস্তিতে ফেলে দেন। যেমন: বাচ্চাকে কাঁথা-কম্বল মুড়িয়ে রাখা, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখা ও শিশুর সামনে কান্নাকাটি করা। এমনটা করলে শিশুর অস্বস্তি বেড়ে জ্বর বৃদ্ধি হতে পারে।
বাচ্চার ঘরটি খোলামেলা রাখুন। সেই সাথে রুমে যেন আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করুন। বাচ্চার সামনে কান্নাকাটি কিংবা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হতে বিরত থাকুন। বাচ্চা যে রুমে থাকবে সেই রুমের পরিবেশটি যেন বাচ্চার জন্য আরামদায়ক হয়।
৪. বাচ্চাকে হালকা পোশাক পরিধান করান | বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হলে করণীয়
জ্বর হলে অনেক বাবা-মা’ই বাচ্চাকে মোটা মোটা কাপড় পরিয়ে দেন। মোটা মোটা কাপড়ের পরিবর্তে সুতি ও হালকা রঙের কাপড় পরিধান করান। মোটা মোটা কাপড় পরিধান এর কারণে বাচ্চা অস্বত্বিতে পড়তে পারে।
৫. বাচ্চাকে পুষ্টিকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ান
জ্বরের সময় বাচ্চারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও খাবার খেতে চায় না। যার ফলে তাদের শরীরে দুর্বলতা ও পানিশূন্যতা হতে শুরু করে। জ্বরের সময় শরীরকে আর্দ্র রাখা জরুরী। কিন্তু, বাচ্চারা জ্বরের সময়ে কম পানি পান করার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। বাচ্চার জ্বরের সময়ে পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ান। পানি খেতে না চাইলে ডাবের পানি, স্যালাইন বা ফলের রস খেতে দিন।
বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর
১. জ্বর ১০০ হলে করণীয় কি?
উত্তর: জ্বরের তিনদিন পর্যন্ত তাপমাত্রা ১০০-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর মধ্যে থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়ান। এই তিনদিনের মধ্যে যদি দেখেন যে জ্বর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে সাপোজিটরি ব্যবহার করুন। তারপরও যদি দেখেন যে জ্বর কমছে না বা জ্বরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তারের অনুমতি ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া হতে বিরত থাকুন।
২. শিশুদের জ্বর কত দিন থাকে?
উত্তর: জ্বরের ধরনের উপর নির্ভর করে জ্বর কতদিন থাকবে। জ্বর ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকলে ৩দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে টাইফয়েড, ডেঙ্গু, বাতজ্বর কিংবা অন্য কোন কারণে জ্বর হলে তা সারতে অনেক সময় নেয়। ৩দিনের মধ্যে আপনার বাচ্চার জ্বর না কমলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
৩. শিশুর জ্বর কত হলে সাপোজিটরি দিতে হবে?
উত্তর: জ্বরের তাপমাত্রা ১০০-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে প্যারাসিটামল খাওয়ান। তাপমাত্রা যদি ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পেরিয়ে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট চলে যায় তাহলে সাপোজিটরি দিন। তারপরও জ্বর না কমলে ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ পরিবর্তন করুন।
সবশেষে না জানা দরকার
বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হলে করণীয় কি এই সম্পর্কে আপনাদের আজকে জানালাম। বাচ্চার জ্বরের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত কীভাবে যত্ন করবেন ও কখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন তার সবটাই আপনাদের জানানে হলো। উপরোক্ত উপায়ে যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। এতে বাচ্চা সহজে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না।
Discussion about this post