বালুচরে একদিন : গল্পটি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রাম্যজীবনের চিত্র তুলে ধরে। তিথি শহর থেকে গ্রীষ্মের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে এবং গ্রামের প্রকৃতি, নদী, পাখি, জেলে, মাঝি, কুমার ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন মানুষের জীবনযাত্রা দেখে মুগ্ধ হয়।
গল্পে নদীর সৌন্দর্য, পাখিদের বিচরণ, ঝড় আসার পূর্বাভাস, এবং গ্রাম্য জীবনের শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশের এক অনন্য রূপ ফুটে উঠেছে। এটি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, গ্রামের সংস্কৃতি, এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের সৌন্দর্য বোঝায়।
বালুচরে একদিন
ঢাকা থেকে অনেক দূরে ছোট্ট একটা গ্রাম। নাম তার অচিনপুর। সেই গ্রামে তিথিদের বাড়ি। গ্রীষ্মের ছুটিতে ওরা বাড়িতে বেড়াতে আসে। এবারও ওরা বেড়াতে এসেছে।
গ্রামে এলে তিথি মন ভরে প্রকৃতি দেখে। সবুজ সুন্দর এই গ্রামে আছে কত গাছ! কত পাখি উড়ে যায় আকাশের পথে। সুপারি গাছের সারির মধ্য দিয়ে উঁকি দেয় সকালের সূর্য।
গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। নাদের চাচা বলেছেন, নদীর চরে পাখিদের মেলা বসে। তিনি একজন জেলে। মাছ ধরতে চলে যান একেবারে মাঝনদীতে। ওখানেই তিনি দেখেছেন শত শত পাখি।
নৌকার মাঝি গণেশ কাকা বলেছেন, পাখিরা মাছ ধরে। সাদা বকগুলো চুপ করে বসে থাকে। মাছ দেখলেই খপ করে ধরে। তিথি এসব গল্প শোনে। মনে মনে ভাবে, আহা, যদি আমিও যেতে পারতাম! গণেশ কাকা বলেছেন, একদিন আমাকে নিয়ে যাবেন।
এক সকালে গণেশ কাকা সত্যিই নৌকা নিয়ে হাজির। বাবা বললেন, চলো, ঘুরে আসি।
নদীর তীর ধরে নৌকা চলছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে মসজিদের মিনার। দেখা যাচ্ছে গ্রামের বাজার, বটতলা, মাঠ, মন্দির।
একটু পেরুতেই চোখে পড়ল কুমারপাড়া। নৌকায় উঠলেন বাবার বন্ধু মধু পাল। তিনি মাটি দিয়ে শখের হাঁড়ি বানান। রঙিন হাঁড়িগুলো দেখতে খুব সুন্দর। মধু কাকা তিথিকে দুটি রঙিন হাঁড়ি দিলেন। বললেন, বাসায় সাজিয়ে রেখো।
আরেকটু এগুতেই তীর থেকে ডাক দিলেন হামিদ চাচা। বালুচরে একদিন তিনি গ্রামের স্কুলের শিক্ষক। গণেশ কাকা নৌকা থামালেন। বাবা হামিদ চাচাকে বললেন, চলো, বেড়িয়ে আসি। হামিদ চাচা নৌকায় উঠতে উঠতে বললেন, চলো যাই। ঝড়-বাদলের দিন, তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
নৌকা আবার চলতে শুরু করল। তিথি দেখল, টলটল করছে নদীর জল। ভয়ে ভয়ে সে নদীর জলে হাত দিলো। কী শীতল!
অল্প সময়ের মধ্যেই ওরা পৌঁছে গেল নদীর চরে। সুন্দর এক দ্বীপের মতো বালুচর। চরের চারদিকে কাঁটাঝোপ, ঘাস আর কাশবন। খুঁটে খুঁটে পোকা খাচ্ছে শালিক।
ঘাড় বাঁকা করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদা বক। নলখাগড়ার ঝোপে চুপচাপ বসে আছে মাছরাঙা। হঠাৎ পুবদিক থেকে উড়ে এলো এক ঝাঁক পাখি। গণেশ কাকা বললেন, ওই দেখো গাঙচিল। তিথি চিৎকার করে উঠল, বাবা, কী সুন্দর!
চরের পশ্চিম দিক থেকে কে যেন এগিয়ে আসছে। আরে আরে! এতো দেখি নাদের চাচা। তাঁর ঝুড়ি ভরতি মাছ। পাবদা, পুঁটি আর একটা মাঝারি আকারের বোয়াল। তাজা মাছগুলো এখনো নড়ছে। তিথি অবাক হয়ে মাছ দেখল। নাদের চাচা সবাইকে দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন।
গণেশ কাকা বললেন, ফিরতে হবে। হামিদ চাচা আকাশের দিকে তাকালেন। তিথি দেখল উত্তর-পূর্ব আকাশে মেঘ জমেছে। নদীর বুকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। সবাই নৌকায় উঠে পড়ল।
গণেশ কাকা দ্রুত বৈঠা চালালেন। নাদের চাচা তুলে নিলেন আরেকটি বৈঠা। দুজনে নৌকা বেয়ে ছুটে চললেন গ্রামের দিকে। তীরে পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই শুরু হলো ঝড়। তিথি ভাবতে লাগল, পাখিগুলো এখন কী করছে।
শব্দ শিখি
উঁকি দেওয়া – আড়াল থেকে দেখা
মিনার – দালানের উঁচু চূড়া
বাদল – বৃষ্টি
চর – নদীতে তৈরি হওয়া বালুময় ভূমি
নলখাগড়া – নলের মতো লম্বা ঘাস
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১। শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি ও শব্দের অর্থ বলি।
উঁকি দেওয়া, মিনার, বাদল, চর, নলখাগড়া
২। শব্দ দিয়ে বাক্য লিখি।
মিনার, ঝাঁক, চর, টলটল
(ক) নদীর জল _______ করছে।
(খ) মসজিদের _______ থেকে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি।
(গ) পানি কমে যাওয়ায় নদীতে _______ পড়েছে।
(ঘ) গাছের ডালে এক _______ পাখি বসে আছে।
৩। ডান পাশ থেকে শব্দ নিয়ে খালি জায়গা পূরণ করি।
নদীর পানি, সাদা বক, সকালের সূর্য, পাখিদের
(ক) সুপারি গাছের সারির মধ্য দিয়ে উঁকি দেয় _______ ।
(খ) নদীর চরে _______ মেলা বসে।
(গ) টলটল করছে _______ ।
(ঘ) ঘাড় বাঁকা করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে _______ ।
৪। বিপরীত শব্দ জেনে নিই।
শব্দ – বিপরীত শব্দ
গ্রাম – শহর
পরিষ্কার – নোংরা
সাদা – কালো
দূর – নিকট
শীতল – উষ্ণ
অল্প – বেশি
৫। সঠিক উত্তরটি বলি ও লিখি।
তিথির গ্রামের নাম-
ক) মধুপুর
খ) অচিনপুর
গ) শফিপুর
ঘ) নাজিরপুর
নদীর চরে পাখিদের মেলা বসার কথা বললেন।
ক) গণেশ কাকা
খ) হামিদ চাচা
গ) নাদের চাচা
ঘ) মধু কাকা
মাটি দিয়ে শখের হাঁড়ি বানান-
ক) নাদের চাচা
খ) হামিদ চাচা
গ) মধু কাকা
ঘ) গণেশ কাকা
নলখাগড়ার ঝোপে চুপচাপ বসে আছে-
ক) মাছরাঙা
খ) গাঙচিল
গ) শালিক
ঘ) সাদা বক
যে ঘটনাটি আগের-
ক) পাখিরা আকাশে উড়ছে।
খ) তোমাকে গল্প শোনাব।
গ) কে যেন এগিয়ে আসছে।
ঘ) তিনি দাওয়াত দিয়েছিলেন।
৬। বুঝে নিই।
কুমারপাড়া – কুমারেরা যেখানে একসাথে বাস করে।
শখের হাঁড়ি – ছবি আঁকা রঙিন হাঁড়ি।
দ্বীপ – চারিদিকে পানি দিয়ে ঘেরা ভূখণ্ড।
৭। মুখে মুখে উত্তর বলি ও লিখি।
(ক) গ্রামের প্রকৃতি তিথির কেমন লাগে?
(খ) নৌকায় করে তিথিরা কোথায় গেল?
(গ) নাদের চাচার ঝুড়িতে কী কী মাছ ছিল?
(ঘ) তিথি কেন পাখিদের জন্য ভাবছিল?
(ঙ) বঝড়ের সময় পাখিরা কী করে?
৮। বিরামচিহ্ন বসাই।
(ক) তিথি গ্রামে বেড়াতে এসেছে
(খ) কী ঠান্ডা হাওয়া
(গ) তিথি কোথায় থাকে
(ঘ) গণেশ কাকা বললেন ফিরতে হবে
◉ আরও দেখুন: তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে বালুচরে একদিন গল্পটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post