বিদ্রোহী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবাণী’ (১৯২২) থেকে সংকলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা ‘বিদ্রোহী’ বাংলা সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ কবিতা। রবীন্দ্রযুগে এ কবিতার মধ্য দিয়ে এক প্রাতিম্বিক কবিকণ্ঠের আত্মপ্রকাশ ঘটে- যা বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক বিরল স্মরণীয় ঘটনা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় আত্মজাগরণে উন্মুখ কবির সদয় আত্মপ্রকাশ ঘোষিত হয়েছে। বিদ্রোহী- কাজী নজরুল ইসলাম কবিতায় সগর্বে কবি নিজের বিদ্রোহী কবিসত্তার প্রকাশ ঘটিয়ে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের শাসকদের শাসন ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দেন।
এ কবিতায় সংযুক্ত রয়েছে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কবির ক্ষোভ ও বিদ্রোহ। কবি সকল অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে গিয়ে। বিভিন্ন ধর্ম, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও পুরাণের শক্তি উৎস থেকে উপকরণ উপাদান সমীকৃত করে নিজের বিদ্রোহী সত্তার অবয়ব রচনা করেন। কবিতার শেষে ধ্বনিত হয় অত্যাচারীর অত্যাচারের অবসান কাম্য। বিদ্রোহী কবি উৎকণ্ঠ ঘোষণায় জানিয়ে দেন যে, উৎপীড়িত জনতার ক্রন্দনরোল যতদিন পর্যন্ত প্রশমিত না হবে ততদিন এই বিদ্রোহী কবিসত্তা শান্ত হবে না। এই চির বিদ্রোহী অভ্রভেদী চির উন্নত শিররূপে বিরাজ করবে!
বিদ্রোহী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনীল প্রশ্ন ১.
আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহাবিপ্লব হেতু
স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
সাত-সাতশ নরক-জ্বালা জলে মম ললাটে।
মম ধূম-কুণ্ডলী করেছে শিবের ব্রিনয়ন ঘন ঘোলাটে ।
আমি সুষ্টার বুকে সৃষ্টি পাপের অনুতাপ-তাপ হাহাকার
মর্ত্যে শাহারা- গোবী-ছাপ
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ ।
ক. কবি কী মানেন না?
খ. “যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না’- একথা বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের সাথে “বিদ্রোহী’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি “বিদ্রোহী’ কবিতার সমগ্রভাব ধারন করেনা’’- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কবি কোনো আইন মানেন না।
খ. নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের দুঃখকষ্ট ও আর্তচিৎকার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কবি বিপ্লব-প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন বোঝাতে তিনি প্রশ্নোক্ত কথা বলেছেন।
অসাম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবির বিদ্রোহ নিরন্তর। যেখানেই তিনি অত্যাচার ও অনাচার দেখেছেন, সেখানেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। নিপীড়কের বিরুদ্ধে এবং আর্তমানবতার পক্ষে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন তিনি। তাঁর হুংকারে কেঁপে উঠেছে অত্যাচারীর ক্ষমতার মসনদ। অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও উৎপীড়িত মানুষের পক্ষে বিপ্লব-প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ বিষয়টিকে স্পষ্ট করতেই তিনি প্রশ্নোক্ত চরণটির অবতারণা করেছেন।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হচ্ছে বিদ্রোহী চেতনা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নানা ব্যঞ্জনায় কবির বিদ্রোহের স্বরূপ ফুটে উঠেছে। যেখানেই অন্যায়-অত্যাচার দেখেছেন, সেখানেই তিনি বিদ্রোহের অগ্নিমন্ত্রে ফুঁসে উঠেছেন। বিশেষ করে পরাধীন মাতৃভূমিতে বিজাতীয় শাসকদের আগ্রাসন ও শোষণ-নির্যাতন তাঁকে পীড়িত করেছে। সংগত কারণেই এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দ্রোহ ঘোষণা করেছেন তিনি। বস্তুত, মানুষ হয়ে মানুষের ওপর প্রভুত্ব ফলানো সামন্ত প্রভুদের ধ্বংসের মধ্যেই তিনি মুক্তির নতুন আলো দেখতে পেয়েছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে বিপ্লবী মানসের বারংবার ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে। কালের খেয়ালে ব্যক্তি মানুষের মৃত্যু হলেও বিপ্লবী চেতনার মৃত্যু নেই। সময় পরিক্রমায় তা একজন থেকে অন্যজনে সঞ্চারিত হয়। ফলে বিপ্লবীর বজ্রকেঠার আহ্বানে পরিবেশ ঘোলাটে হয়ে আসে। শিব বা মহাদেবের ত্রিনয়নও তখন অন্ধকারে ঢেকে যায়। প্রভুত্ব ফলানো নরপিশাচদের জীবন অভিশপ্ত হয়ে ওঠে বিপ্লবীদের প্রত্যাঘাতে। তথাকথিত সামন্ত প্রভুদের কাছে তারা যেন মূর্তিমান অভিশাপে পরিণত হয়। বিপ্লব-বিদ্রোহের এই বিধ্বংসী রূপটি আলোচ্য কবিতায়ও একইভাবে ফুটে উঠেছে। সেখানে বীর ধর্মের অনুসারী কবি সামন্ত প্রভুদের তৈরি সকল নিয়ম ও শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে প্রয়াসী হয়েছেন। অর্থাৎ উদ্দীপক ও ‘বিদ্রোহী’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। এটিই উদ্দীপকের সঙ্গে আলোচ্য কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে কেবল বিদ্রোহী চেতনার দিকটি ফুটে ওঠায় তা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সমগ্রভাবকে ধারণ করতে পারেনি।
আলোচ্য কবিতাটি কবির বিদ্রোহী চেতনার এক অনন্য প্রকাশ। বিদ্রোহের স্বরূপ উদ্ঘাটনে কবিতাটি অনন্য মাইলফলকও বটে। তবে এ কবিতায় শুধু দ্রোহ চেতনাই নয়, সেখানে বিদ্রোহী হিসেবে কবির আত্মপরিচয়, প্রেম ও দ্রোহের স্বরূপসহ বিচিত্র বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও কবিতাটিতে আর্তমানবতার মুক্তির লক্ষ্যে কবি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অন্যায় ও অসাম্য ঘুচাতে সেখানে বিপ্লবী সত্তার পুনরুত্থানের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এই বিদ্রোহী সভা অকুতোভয় ও মানবকল্যাণে নিবেদিত। শত প্রতিবন্ধকতাও তার পথ রুদ্ধ করতে পারে না। অন্যায়ের প্রতিভূদের জন্য সাক্ষাৎ অভিশাপ হিসেবে আবির্ভূত হয় সে। আলোচ্য “বিদ্রোহী’ কবিতায়ও কবি তাঁর বিদ্রোহী সত্তার এমন বৈশিষ্ট্যের কথাই তুলে ধরেছেন। যেখানে পরাধীন জন্মভূমিতে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি দ্রোহ করেছেন সমাজে বিরাজমান অপশাসন ও অচলায়তনের বিরুদ্ধে। তাঁর বিশ্বাস, এই অচলায়তন ভেঙেই একদিন দেখা মিলবে মুক্তির পথ। একইভাবে, উদ্দীপকের কবিতাংশেও কবি মহাবিপ্লবের কথা বলেছেন। অর্থাৎ উভয়স্থানে ববজ্রনির্ঘোষ বিপ্লবের কথা প্রকাশিত হলেও কবিতাটির ব্যাপ্তি উদ্দীপকের কবিতাংশের তুলনায় ব্যাপক। তাছাড়া এ কবিতায় মানবতাবোধে উদ্ভাসিত কবির সদম্ভ উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। মুহূর্তের জন্যও তিনি অপশক্তির কাছে মাথা নিচ করতে রাজি নন। সর্বোপরি কবির বিপ্লব প্রতিবাদের পেছনে রয়েছে মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা। আলোচ্য কবিতার এ সকল বিষয় উদ্দীপকের কবিতাংশে উঠে এসেছে আসেনি। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনীল প্রশ্ন ২.
দুর্বাসা হে! রুদ্র তড়িৎ হান্ছিলে বৈশাখে,
হঠাৎ সে কার শুনলে বেণু কদম্বের ঐ শাখে।
বজ্রে তোমার বাজলে বাঁশি, বহ্নি হলো কান্না, হাসি
সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী-
মন সরে না কাজে।
তোমার নয়ন-ঝুরা অগ্নি-সুরেও রক্ত-শিখা বাজে!’
ক. কবি নিজেকে কার শিষ্য বলে ঘোষণা করেছেন?
খ. ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তূর্য’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের দুর্বাসা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ক্ষ্যাপা দুর্বাসার স্বরূপ উন্মোচনে সহায়ক কি? যৌক্তিক বিশ্লেষণ করো।
সৃজনীল প্রশ্ন ৩. যাহারা পদে পদে আনিয়া দিল লাঞ্ছনা, অপমান, অত্যাচার, নির্যাতন, প্রত্যেক সুযোগে যাহারা হানিল বৈরিতার বিষাক্ত বাণ, হযরত তাঁহাদের সহিত কী ব্যবহার করিলেন? জয়ীর আসনে বসিয়া ন্যায়ের তুলাদ- হাতে লইয়া বলিলেন: ভাইসব, তোমাদের সম্বন্ধে আমার আর কোনো অভিযোগ নাই, আজ তোমরা সবাই স্বাধীন, সবাই মুক্ত। মানুষের প্রতি প্রেমপুণ্যে উদ্ভাসিত এই সুমহান প্রতিশোধ সম্ভব করিয়াছিল হযরতের বিরাট মনুষ্যত্ব।
ক. কবি নিজেকে কাদের মরম বেদনা বলেছেন?
খ. ‘আমি দুর্বার/ আমি ভেঙে করি সব চুরমার’ – ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের হযরত মুহম্মদ (স.) ও “বিদ্রোহী’ কবিতার কবির মধ্যে পার্থক্য থাকলেও তাঁদের মূলচেতনা একই” – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
সৃজনীল প্রশ্ন ৪.
“মুক্তি আলোকে ঝলমল করে আঁধারের যবনিকা
দু’শ বছরের নিঠুর শাসনে গড়া যে পাষাণবেদি
নতুন প্রাণের অঙ্কুর জাগে তারই অন্তর ভেদী।
নব ইতিহাস রচিব আমরা মুছি কলঙ্ক লেখা।”
ক. ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
খ. কবি নিজেকে ‘অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল’ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মূলভাবকে কতটুকু প্রতিফলিত করতে পেরেছে? যৌক্তিক বিশ্লেষণ করো।
সৃজনীল প্রশ্ন ৫.
তুমিই আমার মাঝে আসি
অসিতে মোর বাজাও বাঁশি,
আমার পূজার যা আয়োজন
তোমার প্রাণের হবি।’
ক. অর্ফিয়াসের পিতা এ্যাপোলো ছাড়া অন্য কে হতে পারে বলে মত পাওয়া যায়?
খ. ‘আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাতৃর’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা বিদ্রোহের বীজ ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘প্রেম ও দ্রোহের সমন্বয় উদ্দীপক ও ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় সমান্তরালরূপে প্রকাশিত হয়েছে’ – বিশ্লেষণ করো।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা মূল বই থেকে বিদ্রোহী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। একই সাথে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য আরও অতিরিক্ত ৪টি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post