বিলাতের প্রকৃতি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : রচনাটি মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের ‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’ গ্রন্থের অংশবিশেষ। এখানে লন্ডনের মনোরম প্রকৃতি চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমে চিমনির ধোঁয়া আর মেঘে ঢাকা লন্ডন লেখকের মন বিষাদে ভরে দিলেও ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডের প্রকৃতির অপরূপ শোভা সেই বিষন্নতা কাটিয়ে তাঁকে মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে। প্রকৃতিতে শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা- এই তিন ঋতুর প্রাধান্য থাকলেও ভিন্ন ধরনের এক বসন্তকাল এখানে চোখে পড়ে। বসন্তকালে ইংল্যান্ডের প্রকৃতি লেখকের ভাষায় ‘সুন্দরের আগুন’।
রিজেন্ট পার্ক সৌন্দর্যের দিক থেকে ইংল্যান্ডের সেরা পার্ক। যেখানে গোলাপের সৌন্দর্য দেখলে যে-কোনো বেরসিকের প্রাণেও রসের সঞ্চার হবে। লাইলাক, টিউলিপ, উইলো, ডেইজি প্রভৃতি বিচিত্র ফুলের সমারোহ ইংল্যান্ডকে করেছে আকর্ষণীয়। মে ও জুন মাসে শস্যখেতের বিচিত্র রূপ যেন সৌন্দর্যের প্লাবন বইয়ে দেয়। আবার শীতের অবসানে গ্রীষ্মের আকাশে যখন সূর্যের উদয় হয়, তখন ইংল্যান্ডের সব-বয়সি মানুষ স্নিগ্ধ রোদ পোহায়। সব মিলিয়ে নানা ঋতুর বিচিত্র রূপ, সাজানো পার্ক আর পার্কের নানা জাতের ফুলের সমারোহ বিলেতের প্রকৃতিকে মনোহর করে তোলে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও মুগ্ধতা সহজাত।
বিলাতের প্রকৃতি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ঢাকা শহরে যত বেশি উঁচু উঁচু দালান-কোঠা এর প্রাকৃতিক পরিবেশের ঠিক ততটাই অবনতি হয়েছে। এখানে নেই মন মাতানো সবুজ, নেই কোনো বন-বনানী। আছে কৃত্রিমতার ছোঁয়া, যানবাহন আর কল-কারখানার ধোঁয়া। এ শহরের আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়। প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার মতো বিশুদ্ধ বায়ু নেই এখানে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে ইট-পাথরের এই শহর।
ক. ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমনকাহিনিটি কোন গ্রন্থের অংশ বিশেষ?
খ. ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মকালের খ্যাতি দুনিয়াজোড়া কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণ-কাহিনি বৈসাদৃশ্য আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনির বিপরীত ভাব ফুটে উঠেছে—মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমনকাহিনিটি ‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’ গ্রন্থের অংশবিশেষ।
খ. প্রকৃতির রূপময়তা ও চমৎকার বিনোদনের ব্যবস্থার কারণে ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মকালের খ্যাতি দুনিয়াজোড়া।
ইংল্যান্ডে বসন্তকালে প্রকৃতি সবুজ-শ্যামলে পরিপূর্ন হয়ে ওঠে। বাহারি রঙের অসংখ্য ফুল, দিগন্ত বিস্তৃত শস্যের সম্ভারে চারদিক যেন সেজে ওঠে। গ্রীষ্মে প্রাকৃতিক এই প্রাচুর্যের সাথে যুক্ত হয় সিগ্ধ সূর্যালোক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন এবং সূর্যালোকে স্নান করার জন্য ইংল্যান্ডে আছে অনেক নজরকাড়া পার্ক ও বিশ্রামকুঞ্জ। এসব কারণেই এ দেশের গ্রীষ্মকালের খ্যাতি বিশ্বজোড়া।
গ. বিষয়গত দিক থেকে ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনীর সাথে উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনিতে লন্ডনের মনোরোম প্রাকৃতিক পরিবশের পরিচয় পাওয়া যায়। সেখানকার মন মাতানো সবুজের সমারোহ, রঙিন ফুলের বৈচিত্র্য, রং জোড়ানো শস্যখেত দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। এমনকি লন্ডনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিদেশিদের মনেও আনন্দ জাগায়।
উদ্দীপকটিতে ঢাকা শহরের পরিবেশের সার্বিক অবনতির অবস্থা দেখানো হয়েছে। এখানে লন্ডনের মতো মন কাড়ানো সবুজ বন-বনানী নেই। যানবাহন আর কল-কারখানার কালো ধোঁয়া ও বর্জ এখানকার বায়ু ও পানি দূষিত হয়ে গেছে। ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনিতেও লেখক লন্ডনের বাড়িগুলোর চিমনিতে ধোঁয় দেখতে পান। তা দেখে ক্ষণিকের জন্য তার মন বিষাদে ভরে গেলেও পরক্ষণেই লন্ডনের অকৃত্রিম প্রাকৃতিক পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করে। এখানকার সবুজ বৃক্ষ, শস্যখেত, ফুল, স্নিগ্ধ রোদ তার মনে এদেশের জন্য ভালোবাসা জাগায়। ঢাকা ও লন্ডন শহরের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যেখানে ঢাকার প্রাকৃতিক পরিবশে বিধ্বস্ত সেখানে লন্ডনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।
ঘ. ঢাকা ও লন্ডনের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিন্নতার কারণে উদ্দীপকটিতে ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনির বিপরীত ভাব ফুটে উঠেছে।
‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনিতে বিলাতের প্রকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের কথা উঠে এসেছে। সুসজ্জিত পার্ক, ফুল বাগান, শস্যখেত ইত্যাদি লন্ডনকে অনন্যতা দান করেছে। ইংল্যান্ডের অকৃত্রিম প্রাকৃতিক পরিবেশ সৌন্দর্যপিপাসুদের মুগ্ধ করে।
উদ্দীপকে ঢাকার বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের চিত্র ফুঠে উঠেছে। এখানে নেই পর্যাপ্ত বন-গাছপালা। আছে কলকারখানার ধোঁয়া আর বর্জ। দুষিত বায়ুতে ভরপুর এ শহর আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনিতে ঢাকার মতো এমন বিরূপ পরিবেশ নয় বরং লন্ডনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।
‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনিতে ইংল্যান্ডের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। লন্ডনের গ্রীষ্মকালে সব বয়সী মানুষ রোদের স্নিগ্ধতা উপভোগ করে। যেখানে ঢাকা শহরের রোদ-বৃষ্টি সবই অস্বাস্থ্যকর। ঢাকায় শ্বাস নেওয়ার মতো বিশুদ্ধ বায়ু নেই। এখানেই লন্ডন আর ঢাকা শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিন্নতা লক্ষণীয়। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটিতে ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনির বিপরীত ভাব ফুটে উঠেছে”—মন্তব্যটি যর্থাথ।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে বিলাতের প্রকৃতি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post