বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা নিয়ে অনেকেই অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। কারণ এই চাকরিতে আসার আগে আপনি এই চাকরির যোগ্য কি না তা খুব ভালোভাবেই বিবেচনা করা হবে। যদিও সিভিল সার্ভিস বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ চাকরি। তবে যোগ্যতার মানদণ্ডে এখানে আহামরি কোন শর্ত নেই।
অনেকেই চোখে সমস্যা থাকার কারণে বিসিএস নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকেন। আবার কেউ কেউ উচ্চতা বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার কারণে পিছিয়ে যেতে চান। কিন্তু আপনি জানেন কি, বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা হিসেবে এগুলোকে কখনোই ধরা হয় না। বরং এসব অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ভেবে আপনি বিসিএস এর মূল গতি থেকে ছিটকে পড়ছেন।
স্মাতক পাশের পরে অল্প CGPA নিয়ে অনেকেই হতাশার মধ্যে থাকেন। ভাবেন এত কম CGPA নিয়ে কি ক্যাডার হওয়া সম্ভব? কিন্তু প্রতি বছরই এমন অনেক ক্যাডার বের হয়, যাদের সিজিপিএ অন্যদের থেকে তুলনামূলক কম ছিল।
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা
শিক্ষা জীবন শেষ করে সব থেকে সম্মানিত ও আকর্ষণীয় কর্মজীবনের নাম বিসিএস। সত্যিকার অর্থে বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা মোটামুটি প্রায় সকল শিক্ষার্থীরই থাকে। খুব বড় ধরনের কোন সমস্যা না থাকলে যে কেউই বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন বাংলাদেশ সরকারের একজন উচ্চ পদস্থ্য কর্মকর্তা।
বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বা গ্র্যাজুয়েট যেকোন শিক্ষার্থী নিজ ক্যারিয়ার তৈরিতে বিসিএস নিয়ে ভাবতে পারে। আজ কোর্সটিকায় আমরা বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করবো। আমরা জানবো, কোন কোন শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে আপনি বিসিএসএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
বিসিএস পরীক্ষার শিক্ষাগত যোগ্যতা
উচ্চ মাধ্যমিকের পরে স্নাতক (অনার্স) পাশ করলেই আপনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত আপনি যতগুলো পাবলিক পরীক্ষা দিয়েছেন, তার সবগুলো পরীক্ষার যেকোন ২ টিতে দ্বিতীয় শ্রেণী বা সমমান এবং ১ টি তৃতীয় শ্রেণী বা সমমানের নিচে পেলে আপনি বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবেন না।
এক্ষেত্রে আপনি যদি চার বছর মেয়াদী অনার্স না করে ডিগ্রী বা ৩ বছর মেয়াদী সমমান কোর্সে পড়াশুনা করেন, তাহলে আপনি সরাসরি বিসিএসে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু ডিগ্রী পাসের পরে স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স পাশ করলে আপনার জন্য আবেদনের সুযোগ খুলে যাবে।
যেভাবে শ্রেণী নির্ধারণ করবেন
বর্তমানে বহুল প্রচলিত জিপিএ পদ্ধতি থাকায় অনেকেই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী নির্ধারণ করতে সমস্যায় ভোগেন। তাই কীভাবে খু সজজেই এটি নির্ণয় করবেন, তার সহজ হিসেব নিচে দেয়া হলো।
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে:
- জিপিএ ৩ বা তার বেশি = প্রথম শ্রেণী
- জিপিএ ২ থেকে ৩ এর কম = দ্বিতীয় শ্রেণী
- জিপিএ ১ থেকে ২ এর কম = তৃতীয় শ্রেণী
অনার্স (স্নাতক) এর ক্ষেত্রে:
- ৩ বা তার বেশি = প্রথম শ্রেণী
- ২.২৫ থেকে ৩ এর কম = দ্বিতীয় শ্রেণী
- ১.৬৫ থেকে ২.২৫ এর কম = তৃতীয় শ্রেণী
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা বয়স
সাধারণত সর্বনিম্ন ২১ বছর থেকে শুরু করে ৩০ বছর পর্যন্ত আপনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার বয়স যদি ২১ বছরের কম হয় অথবা ৩০ বছরের বেশি হয় আপনার জন্য পরীক্ষায় আবেদনের সুযোগ থাকছে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স সীমা শিথিল যোগ্য হয়ে থাকে।
যেমন: মুক্তিযোদ্ধার পুত্র বা কন্যা, প্রতিবন্ধী এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য সবোচ্চ ৩২ বছর নির্ধারণ করা থাকে। আবার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারে উপজাতিরাও সর্বোচ্চ ৩২ বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
বিসিএস পরীক্ষার শারীরিক যোগ্যতা
আপনি যদি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মেডিকেল টেস্ট করানো হবে। মেডিকেল টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। কারণ এখানে অকৃতকার্য হলে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যায় না।
প্রার্থীর মেডিকেল টেস্টে সাধারণত উচ্চতা, ওজন ও বক্ষ পরিমাপ করা হয়। এছাড়াও দৃষ্টিশক্তি যাচাই করা হয় এবং মূত্র পরীক্ষা করা হয়। একজন পুরুষ প্রার্থীর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫ ফুট উচ্চতা এবং ৪৯.৯৯ কেজি ওজন গ্রহণযোগ্য। অপরদিকে মহিলা প্রার্থীদের জন্য সর্বনিম্ন উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি এবং ওজন ৪৩.৫৪ কেজি।
তবে পুলিশ ও আনসার ক্যাডারের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন উচ্চতা ও ওজন যথাক্রমে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও ৫৪.৫৪ কেজি হওয়া বাধ্যতামূলক। একই ক্ষেত্রে মহিলা প্রার্থীর সর্বনিম্ন উচ্চতা ৫ ফুট হতে হবে। সর্বনিম্ন ওজন ৪৫.৪৫ কেজি হতে হবে। উল্লেখ্য যে, ওজন কম হলেও বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়।
চোখে কোন সমস্যা থাকলেও আপনি নির্দিধায় চশমা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে চশমা ব্যবহারের পরেও যদি সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে এটি আপনার বিসিএসে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। অনেকেই কালার ব্লাইন্ড হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রেও আপনি বিসিএসের যোগ্য হবেন। তবে সেক্ষেত্রে এই তথ্য আপনার রিপোর্টে লেখা থাকতে হবে।
সবশেষে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোন প্রার্থী অযোগ্য বিবেচিত হলে তা প্রার্থীকে এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকে জানানো হয়।
বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
ডাউনলোড করে নিন: বিসিএস প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো।
শেষ কথা
দেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত চাকরিগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছেই বিসিএস একটি স্বপ্নের নাম। তাই প্রতি বছর এই পরীক্ষাকে ঘিরে স্বপ্ন বোনে দেশের লাখ তরুণ। যদিও অল্পকিছু পদের বিপরীতে কয়েক লাখ আবেদন জমা হয়, কিন্তু পরীক্ষা শেষে খুব অল্প কিছু প্রার্থীই সফল হয়।
তাই আপনার যদি দৃষ্টি থাকে স্বপ্নের এই ক্যারিয়ারের দিকে, তাহলে আজ থেকেই প্রস্তুতিতে নেমে পড়ুন। হয়তো আপনিও হতে পারেন বাংলাদেশ সরকারের একজন যোগ্যতম রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা। আপনার জন্য শুভ কামনা।
শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post