ভারতীয় উপমহাদেশে মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণ করা নিয়ে বেশ কিছু নেতিবাচক ও ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তবে সময় এখন বদলেছে। নবজাতকের মায়েরা তার বুকের দুধকে এখন সোনার সাথে তুলনা করতে পারেন। কারণ, এই এ সময়ে আপনার জীবনের এখনকার অনেক কিছুর চেয়ে এটি বেশি মূল্যবান।
সন্তান প্রসবের প্রথম বছরের পরে নারীরা চাইলে বুকের দুধ সংরক্ষণ করতে পারেন। ওই সকল নারীরা, যাদের বুকে প্রচুর দুগ্ধ উৎপন্ন হয়, বাইরে কাজ করেন অথবা কোথাও ঘুরতে বের হতে চান; দুধ পাম্প করে সঞ্চয় করতে পারবেন।
বুকের দুধ সংরক্ষণের উপায়
স্তনের দুধ আপনি কীভাবে সংরক্ষণ করবেন তা সংরক্ষণের তাপমাত্রার সাথে কী হয় এবং দুধ তাজা পাম্প করা হয় বা আগে হিমায়িত হয় এসব জানতে হবে। আমরা এই নির্দেশনাগুলো রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেন্দ্র, মায়ো ক্লিনিক এবং মহিলা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দফতর থেকে সংকলন করেছি।
যা নিশ্চিত করে এই উপায়ে বুকের দুধ সংরক্ষণ করলে তা ব্যাকটেরিয়াটিকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে না এবং আপনার শিশুকে অসুস্থ করবে না। পাশাপাশি এটিও নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার দুধে যে পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে সংরক্ষণের পরে তা আপনি ধরে রাখতে পারছেন কিনা।
ব্রেস্ট পাম্পিং করার পরে তাজা দুধ আসলে ঘরের তাপমাত্রায় কিছুক্ষণ বাইরে থাকতে পারে। যদি আপনি এটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন বা খুব শীঘ্রই এটি সংরক্ষণ করে। এর পরে, আপনাকে দীর্ঘ সময় সঞ্চয় করার জন্য আপনার ফ্রিজে রাখতে পারেন।
আপনি যদি একটি নবজাতক শিশুর জন্য পাম্পিং করেন তবে সবার আগে আপনার জন্য ভালো গবেষণায় দেখায় যে প্রাককালীন শিশুদের জন্য পাম্পিং করার ফলে মায়ের বুকে নতুন দুধ উৎপাদন করতে সহায়তা করে। ফলে এটি আপনার শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে উপকারী হতে পারে।
ব্রেস্ট পাম্পিং করে দুধ সংরক্ষণ
- আপনার পাম্পটি ব্যবহার করার আগে এটি পরীক্ষা করুন। পাম্পিং যন্ত্রটির ক্ষতিগ্রস্থ বা নোংরা অংশ থাকলে খুঁজে বের করুন। কারণ, এগুলো আপনার দুধকে দূষিত করতে পারে।
- আপনার দুই হাত খুব ভালোভাবে সাবান অথবা হ্যান্ড ওয়াশা দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপরে হাত দুটো শুকিয়ে ফেলুন।
- পাম্পটি ভালোভাবে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর পাম্পটি একটু বাতাসে শুকিয়ে নিয়ে পাম্পের কাজের জন্য তৈরি হয়ে যাবে।
- এবার পাম্পটি ভালোভাবে স্তনের সাথে সংযুক্ত করে পাম্প করতে শুরু করুন। তবে পাম্প করার আগে লক্ষ্য রাখবেন ব্রেস্ট ফুল হয়ে আছে কিনা। অর্থাৎ স্তনে পর্যাপ্ত দুধ আছে কিনা।
এভাবে কর্মজীবী নারীরা ঘরে না থেকেও ১২ ঘণ্টা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। মায়ের দুধ হাত দিয়ে চেপে বের করে বোতল বা পাতিলে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই দুধ ফ্রিজে রাখলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। এছাড়া ফ্রিজে না রাখলে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকবে।
দুধ সংরক্ষণের পাত্র কেমন হবে?
কি ধরনের পাত্রে সংগৃহীত দুধ সংরক্ষণ করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। ব্রেস্ট পাম্পিং এর পরে দুধ সংরক্ষণের ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই প্লাস্টিকের কোন বোতলে এই দুধ সংরক্ষণের পক্ষে মত দেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্লাস্টিকের বোতলে ব্রেস্ট মিল্ক না রাখাই উত্তম। তাই চেষ্টা করুন কোন কাঁচের বোতলে এই দুধ সংরক্ষণ করতে। তবে যেই বোতলে এই দুধ সংরক্ষণ করবেন সেটা আগে গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
কোথায় এবং কীভাবে সংরক্ষণ করবেন?
দুধ সংগ্রহ করা হয়েছে, পাত্রেও রাখা হয়েছে; এখন কীভাবে সংরক্ষণ করবেন যাতে দুধের কোন ক্ষতি না হয় আর বাচ্চাকে তা সঠিকভাবে পান করানো যায়? পূর্বেই বলা হয়েছে, সংগ্রহের পর ফ্রিজে দুধ সংরক্ষণ করলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় এবং সাধারণভাবে রাখলে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকবে।
নির্দিষ্ট এ সময়ের মধ্যে আপনি যেকোন সময়ে বাচ্চকে সংরক্ষিত দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে হ্যাঁ; দুধ যেন অবশ্যই ঠিক মত ঢেকে রাখা হয় সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফ্রিজে ব্রেস্ট মিল্ক রাখার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা যেন ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
►► আরো দেখো: জন্মের প্রথম ঘণ্টা থেকেই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো
►► আরো দেখো: সিজারের পরে সহবাস কিভাবে করবেন? ভুল করছেন না তো?
শেষ কথা
পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে, আপনি এই দুধ সংগ্রহের জিনিসটিতে একজন পেশাদার হয়ে উঠতে পারেন। এর ফলে আপনি যদি কর্মজীবি হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে সন্তানকে দুধপান করাতে কোন ঝামেলা পোহাতে হবে না। পাশাপাশি আপনি চাইলে এখন পাবলিক প্লেসে বসেও আপনার সন্তানকে দুধ পান করাতে পারেন।
ছবি: Healthline
Discussion about this post