বৃষ্টি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : দীর্ঘ বর্ষণহীন দিনে রুক্ষমূর্তি ধারণ করা শুকিয়ে যাওয়া অসমান মাঠকে কবি রুগ্ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
রুগ্ণ বৃদ্ধের হাতের চামড়া শুষ্ক, প্রাণহীন, কুঞ্চিত থাকে।
কবি দীর্ঘ বর্ষণহীন দিনে মাঠঘাটের অবস্থাকে সেরকমই মনে করেছেন। বৃষ্টির অভাবে মাঠঘাট শুকিয়ে যে শুষ্ক রুক্ষমূর্তিধারণ করে তা বৃদ্ধের রগ-ওঠা হাতের মতো মনে হয়।
বৃষ্টি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায় কেন?
উত্তর: রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত দীর্ঘদিন ধরে প্রচণ্ড রোদের তাপে শুকিয়ে গেছে, ফলে ফসলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বৃষ্টির পরশ পেলে এই ধানক্ষেত আবার সজীব হয়ে উঠবে, নতুন প্রাণ পাবে। কবিতায় এটি প্রকৃতির এক অনিবার্য আকাক্সক্ষা হিসেবে চিত্রিত হয়েছে, যেখানে বৃষ্টি যেন ধানক্ষেতের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
২. ‘বিদগ্ধ আকাশ’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ‘বিদগ্ধ আকাশ’ বলতে এখানে গ্রীষ্মের প্রচ- তাপে দগ্ধ আকাশকে বোঝানো হয়েছে। গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে যেন আগুন ধরে যায়। সূর্যের প্রচণ্ড শাসনে পৃথিবীর বুক বিদীর্ণ হয়। এ সময় প্রখর তাপে আকাশ তৃষ্ণায় কাঁপে। রোদের সুতীব্র তাপে আকাশটা গলে যেতে চায়। উত্তপ্ত সূর্যটা যেন ওই আকাশটাকে ঝলসাতে থাকে।
৩. বৃষ্টির দিন একাকী জীবনে বিরহ বাড়ায় কেন?
উত্তর: বৃষ্টির দিন মন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে বলে একাকী জীবনে বিরহ বাড়ে।
বৃষ্টির দিনে সংবেদনশীল মানুষ রসসিক্ত হয়ে পড়ে। অতীতের নানা সুখময় স্মৃতি মনের কোণে উঁকি দেয়। একাকী মানুষ তার আনন্দ বা কষ্টের অনুভূতিগুলো সম্পর্কে কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজে পায় না। তাই বৃষ্টির দিনে সঙ্গীহীন মানুষের মনে সঙ্গীর জন্য ব্যাকুলতা তৈরি হয়। মন বিরহী হয়ে ওঠে।
৪. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বৃষ্টিকে বহু প্রতীক্ষিত বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: বৃষ্টির অভাবে মানবমন ও প্রকৃতি থেকে প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে যায় বলে ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বৃষ্টিকে বহু প্রতীক্ষিত বলা হয়েছে।
গ্রীষ্মকালের প্রখর তাপে মাঠ-ঘাট, বৃক্ষ সবকিছু প্রাণহীন হয়ে পড়ে। প্রচ- গরমে মানুষের জীবনও ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে। মানুষ তখন ব্যাকুল হয়ে থাকে এক পশলা বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টি কবিতার কবি ফররুখ আহমদের ভাষায় দগ্ধ প্রকৃতিও যেন উন্মুখ হয়ে থাকে বৃষ্টির শীতলতায় নিজেকে জুড়িয়ে নিতে। এ কারণেই ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বৃষ্টিকে বহু প্রতীক্ষিত বলা হয়েছে।
৫. পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর-পঙ্ক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: বৃষ্টির দিনে মন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে এ বিষয়টি বোঝানো হয়েছে আলোচ্য চরণটিতে।
বর্ষণমুখর দিনে অনুভূতিপ্রবণ মানুষের মন রসসিক্ত হয়। স্মৃতির জানালা খুলে মানুষ চলে যায় বহুদূর। মনে পড়ে যায় সুখময় অতীত, পুরোনো স্মৃতি। সেই ভালোলাগা দিয়ে মানুষ আপন মনে আলপনা এঁকে চলে।
৬. রুক্ষ মাঠকে রুগ্ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতো বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: রুক্ষ মাঠ অসমান বলেই একে রুগ্ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
বর্ষণহীন দিনে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে নি®প্রাণ রুক্ষমূর্তি ধারণ করে। তাকে দেখতে তখন একজন বৃদ্ধ রুগ্ণ ভিখারির মতোই লাগে। বৃদ্ধ, রুগ্ণ একজন মানুষের হাতের রগগুলো স্পষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে। জলের অভাবে রুক্ষ মাঠও তেমনি অসমতল বলে ‘বৃষ্টি’ কবিতার কবি আলোচ্য তুলনাটি ব্যবহার করেছেন।
৭. ‘ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: দীর্ঘ বর্ষণহীন দিনে রুক্ষমূর্তি ধারণ করা শুকিয়ে যাওয়া অসমান মাঠকে কবি রুগ্ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
রুগ্ণ বৃদ্ধের হাতের চামড়া শুষ্ক, প্রাণহীন, কুঞ্চিত থাকে। কবি দীর্ঘ বর্ষণহীন দিনে মাঠঘাটের অবস্থাকে সেরকমই মনে করেছেন। বৃষ্টির অভাবে মাঠঘাট শুকিয়ে যে শুষ্ক রুক্ষমূর্তিধারণ করে তা বৃদ্ধের রগ-ওঠা হাতের মতো মনে হয়।
৮. বিষণ্ন মেদুর বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: বিষণ্ন মেদুর বলতে কবি বৃষ্টিহীন প্রকৃতির রুক্ষতা বৃষ্টির আগমনে দূরীভূত হওয়ার অবস্থাকে বুঝিয়েছেন।
বছরের শুরুতে বাংলার প্রকৃতিতে আবির্ভাব হয় গ্রীষ্ম ঋতুর। প্রচন্ড তাপদাহে প্রকৃতি হারিয়ে ফেলে সবুজ অপরূপ শ্যামল শোভা। চারদিকের বাতাস যেন আগুনের তাপ বহন করে নিচ্ছে। তখন একটুখানি বৃষ্টির আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই এই রুক্ষ অবস্থা বিলীন হয়ে যায়।
৯. ‘রূপসি পরি মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার’—পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বর্ষার মেঘে মেঘে বিদ্যুৎ চমকানোর মধ্য দিয়ে সৌন্দর্যানুভূতির প্রকাশক আলোচ্য পঙ্ক্তিটি।
বর্ষণমুখর দিনে কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যায়। ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুতের চমকে গোটা আকাশ আলোকিত হয়ে পড়ে। লোকজনের ধারণা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ চমকের এ ঘটনাকে আকাশ জুড়ে চোখ ঝলসানো সুন্দরী কোনো এক পরির আবির্ভাবের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সেই পরি মেঘে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায় বলেই আকাশের নানা স্থানে অদ্ভুত সুন্দর বিদ্যুতের চমক দেখা যায়।
১০. আবাদি গ্রাম বলতে কী বোঝ?
উত্তর: পদ্মা মেঘনার দুই পাশের গ্রামকে আবাদি গ্রাম বলে।
সেচ ব্যবস্থা হলো ভালো আবাদের অন্যতম উৎস। সেচব্যবস্থা ভালো না হলে ফসল ভালো হয় না। পদ্মা-মেঘনা তীরবর্তী গ্রামগুলোতেই চাষাবাদের প্রয়োজনীয় সেচ প্রদান সহজ হয়। গ্রামগুলোর কৃষকেরা ফসল আবাদের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করে না। নদীর পানির সেচ দিয়েই ভালো ফসল ফলে বিধায় পদ্মা-মেঘনার দুই পাশের গ্রামকে আবাদি গ্রাম বলে।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে বৃষ্টি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post