বোশেখ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : গরিব, শ্রমজীবী আর নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষ নিয়েছেন কবি। প্রত্যেকবার কালবৈশাখীর ঝড়ে কেবল অসহায় মানুষদেরই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মাঝি নৌকার মাধ্যমে তার জীবিকা নির্বাহ করে। তার পালের দড়ি ছিঁড়ে কোনো লাভ নেই। বরং যারা অত্যাচারী-শোষক, যারা অন্যকে শোষণ করে ধনী হয়েছে, তাদেরকে বাতাস আঘাত হানবে-কবির এমনই প্রত্যাশা।
বোশেখ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. পবনের কাছে কবি মিনতি করেছেন কেন?
উত্তর: কবি পবনের কাছে মিনতি করেছেন, কারণ তিনি চান যে বৈশাখের বিধ্বংসী শক্তি শুধুমাত্র গরিবের ক্ষতি না করে, বরং ধনীদের নির্মমতাকেও প্রতিহত করুক। কবি লক্ষ্য করেন যে প্রকৃতির এই শক্তি গরিবদের ঘর, ভিটে, এবং জীবিকা ধ্বংস করে, কিন্তু ধনীদের প্রাসাদে কোন ক্ষতি ঘটে না। তাই কবি চান পবন, যার হাতে এমন শক্তি, গরিব ও ধনী সকলের প্রতি সমানভাবে কাজ করুক এবং শোষণকারী ধনীদের অট্টালিকা ধ্বংস করুক, যেন প্রকৃতি সকলের ওপর ন্যায্যভাবে প্রতিশোধ নেয়।
২. টেলিগ্রাফ কী? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: টেলিগ্রাফ দূরে বক্তব্য প্রেরণের এক ধরনের যন্ত্র।
সংকেতের সাহায্যে দূরে বক্তব্য প্রেরণের এক অভিনব যন্ত্রের নাম টেলিগ্রাফ। বর্তমানে এ ধরনের যন্ত্র খুব একটা ব্যবহৃত হয় না। ১৮৩৭খ্রিষ্টাব্দে এ যন্ত্র বিদ্যুতের সাহায্যে পরিচালিত হতো।
৩. মেঘদূত বলতে কী বোঝ?
উত্তর: ‘মেঘদূত’ সংস্কৃত ভাষার একটি কাব্যের নাম।
কালিদাস পণ্ডিত মেঘদূত কাব্যের রচয়িতা। সংস্কৃত ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের অন্যতম কবি কালিদাস সংস্কৃত ভাষায় ‘মেঘদূত’ রচনা করেন। ‘মেঘদূত’ কালিদাসের অমর রচনা। সংস্কৃত মেঘদূতকে বাংলা ভাষায় মেঘদূত বলা হয়। মেঘদূত কাব্যের জন্য কালিদাস বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।
৪. ‘বোশেখ’ কবিতার মূলভাব কী?
উত্তর: ‘বোশেখ’ কবিতার মধ্য দিয়ে কবির সমব্যথী এবং সাম্যবাদী মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। কবিতায় দেখানো হয়েছে বৈশাখ মাসের সংহারক রূপ। এ রূপ কেবল অভাবী শ্রমজীবী মানুষের জন্যে কষ্টের কারণ হয়। সেই বৈশাখের কাছে কবির প্রার্থনা, অত্যাচারী শোষকের বিরুদ্ধে যেন সেই বৈশাখের অবস্থান হয়।
৫. কবির প্রত্যাশিত সমাজের জন্য বাতাসের কী করতে হবে?
উত্তর: কবির প্রত্যাশিত সমাজের জন্য বাতাসের কিংবা তুফানের উচিত বিভেদকারী, পরগাছাদের ধ্বংস করা। যারা পরের শ্রমে মস্ত দালান গড়ে, যেখানে শোষণের চিহ্ন, তাদের বাহাদুরি ধ্বংস করতে হবে।
৬. ‘গরিব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কী লাভ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: গরিব, শ্রমজীবী আর নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষ নিয়েছেন কবি। প্রত্যেকবার কালবৈশাখীর ঝড়ে কেবল অসহায় মানুষদেরই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মাঝি নৌকার মাধ্যমে তার জীবিকা নির্বাহ করে। তার পালের দড়ি ছিঁড়ে কোনো লাভ নেই। বরং যারা অত্যাচারী-শোষক, যারা অন্যকে শোষণ করে ধনী হয়েছে, তাদেরকে বাতাস আঘাত হানবে-কবির এমনই প্রত্যাশা।
৭. ‘বোশেখ’ কবিতায় কবি যেন শ্রমজীবী শ্রেণির প্রতিনিধি—কীভাবে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘বোশেখ’ কবিতায় কবি শ্রমজীবী অসহায় মানুষদের পক্ষে কথা বলে শ্রমজীবী শ্রেণির প্রতিনিধি হয়েছেন। তাদের দুঃখ অসাধারণ মমতায় উপস্থাপন করেছেন। বাতাসকে যে কারণে কবি নিঠুর বলে উল্লেখ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত শ্রমজীবী অত্যাচারীদের ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন।
৮. রবীন্দ্রনাথ করজোড়ে বৈশাখের কেমন রূপ চেয়েছেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ বৈশাখ মাসের বিধ্বংসী রূপের মধ্য দিয়ে সমাজের যেসব অদরকারি, অপ্রয়োজনীয় বস্তু রয়েছে, সেগুলোর সমাপ্তি কামনা। করেছেন। জীর্ণ, শুষ্ক, পুরনো থেকে বৈশাখ আমাদের মুক্তি দিবে। বৈশাখের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতি এবং মানবজীবনে সুন্দর এবং নতুনকে বরণ করব।
৯. ‘হায়রে কত সুবিচারের গল্প শুনি’—কোন সুবিচারের কথা বলা হয়েছে? বর্ণনা করো।
উত্তর: ‘হায়রে কত সুবিচারের গল্প শুনি’ বলতে কবি রাজা সোলেমানের ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন।
কালবোশেখির প্রবল ঝড় প্রতিবছরই ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং লন্ডভন্ড করে দেয় গরিব-দুঃখী মানুষের বস্তিভিটা। কিন্তু সমাজের উঁচু স্তরে যারা বসবাস করে, গরিব-দুঃখীদের শোষণ করে বৃহৎ অট্টালিকা তৈরি করে, বৈশাখী ঝড় তাদের কোনো ক্ষতি করছে না। এখানে কবি সুবিচারের অভাব প্রত্যক্ষ করে রাজা সোলেমানের সুবিচারের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন। রাজা সোলেমান বায়ুবাহিত সিংহাসনে আরোহণ করেই সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন এবং ন্যায়বিচার কায়েম করেছেন। কিন্তু কবির আক্ষেপ-বৈশাখী ঝোড়ো হাওয়ার সেই গৌরব পরিলক্ষিত হয় না।
১০. ‘তবে এমন নিঠুর কেন হলে বাতাস’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘বোশেখ’ কবিতায় কবি বাংলাদেশের একটি পরাক্রমশালী মাস বৈশাখের নিষ্ঠুরতার বিবরণ দিয়েছেন।
বাংলা মাস পরিক্রমায় বৈশাখ আসে বছরের প্রথম মাস হিসেবে। এ মাসটি আমাদের মাঝে আসে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু এ মাসে কালবৈশাখীর নৃশংস কালো থাবায় ধ্বংস হয় বাংলার প্রাচীন জনপদের দরিদ্র কৃষকদের আবাসভূমি, ধ্বংস হয় কৃষকদের ফসলের মাঠ। বৈশাখের নিষ্ঠুর করাল গ্রাসে এবং এর আগ্রাসী থাবায় কখনোবা লন্ডভন্ড হয়ে যায় একেকটা জনপদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর শিকার হয় দুঃখী-দরিদ্র মানুষ বা অসহায় কোনো প্রাণী। ছিঁড়ে যায় গরিব মাঝির পাল, উড়ে যায় গৃহস্থালির স্থাপনা। বাতাসে বুনোহাঁসের দলেরা হয়ে যায় ছিন্নভিন্ন, জেটের পাখা দুমড়েমুচড়ে যায়। নুয়ে পড়ে টেলিগ্রাফের থামগুলো। এভাবে বৈশাখের বাতাস নিষ্ঠুরতা দেখায়। তার হৃদয়ে কোনোরূপ মায়া থাকে না বলেই কবি নিষ্ঠুরতার কথা বলেছেন।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে বোশেখ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post