১. ব্যাকরণিক শব্দ শ্রেণি বলতে কী বােঝ? উদাহরণসহ প্রকারভেদ আলোচনা করাে।
উত্তর : ব্যাকরণগত অবস্থানের ভিত্তিতে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে যে কয় ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে তাদের ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে। অথবা
ব্যাকরণগত চরিত্র ও ভূমিকা অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে যে কয়ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, তাকেই ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে। ব্যাকরণিক শব্দ মােট আট প্রকার। যেমন —
১. বিশেষ্য: যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনাে ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু,স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বােঝায় তাকে বিশেষ্য বলে। যেমন- থালা, বাটি, ঢাকা ইত্যাদি।
২. সর্বনাম: বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম বলে। সর্বনাম সাধারণত ইতােপূর্বে ব্যবহৃত বিশেষ্যের প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দ হিসেবে কাজ করে। যেমন- অবনি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে নিয়মিত স্কুলে যায়।
৩. বিশেষণ: যে শব্দশ্রেণি দ্বারা বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়ার দোষ,গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ পায় তাকে বিশেষণ
বলে। যেমন— নীল পরী ।
৪. ক্রিয়া: যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনাে কিছু করা, থাকা, হওয়া, ঘটা ইত্যাদি বােঝায় তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন- নিজাম কাঁদছে।
৫. ক্রিয়া বিশেষণ: যে শব্দ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বলে। যেমন- বাসটি দ্রুত চলতে শুরু করল।
৬. যােজক: যে শব্দ একটি বাক্যাংশের সাথে অন্য একটি বাক্যাংশ অথবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের সংযােজন, বিয়ােজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে যােক বলে। যেমন- তুমি খাবে আর আবির পড়বে।
৭. অনুসর্গ: যে শব্দ কখনাে স্বাধীনরূপে আবার কখনাে শব্দ বিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে তাকে অনুসর্গ বলে। যেমন- ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না।
৮. আবেগ শব্দ: যে শব্দ মনের বিশেষ ভাব বা আবেগ প্রকাশে সহায়তা করে তাকে আবেগ শব্দ বলে। যেমন- বাহ! সে তাে আজ ভালােই খেলছে।
২. ক্রিয়াপদ কাকে বলে?উহা কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা কর
উত্তর: ধাতুর সঙ্গে বিভক্তির যুক্ত হয়ে যে পদ গঠিত হয়,তাকে ক্রিয়াপদ বলে। ক্রিয়াপদ প্রথমত দুই প্রকার। যথা:
১. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। সমাপিকা ক্রিয়াকে ইংরেজিতে Finite Verb বলে। যেমন: করিম স্কুলে যায়।
২. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অসমাপিকা ক্রিয়াকে ইংরেজিতে Non-Finite Verb বলে। যেমন: করিম স্কুলে গিয়ে… এখানে গিয়ে হলো অসমাপিকা ক্রিয়া।
৩. সমাপিকা ক্রিয়া কী? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর: যে ক্রিয়া সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। সমাপিকা ক্রিয়াকে ইংরেজিতে Finite Verb বলে। যেমন: করিম স্কুলে যায়।
সমাপিকা ক্রিয়া পাঁচ প্রকার। যথা:
১. সকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।কর্ম আছে কি নাকি নেই? সেটা বুঝব ক্রিয়াকে ‘কি’ বা ‘কাকে’- দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে বুঝব কর্ম আছে। যেমন: রহিম বই পড়ে।
২. অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম নেই,তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে হাঁসে।
৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে আমাকে একটি গোলাপ দিল। এখানে আমাকে ও গোলাপ দুটো কর্ম।
৪. প্রযোজক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দ্বারা অন্যকে দিয়ে কাজ করানো বুঝায়, তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।যেমন: মা শিশুকে চাঁদ দেখায়।
৫. যৌগিক ক্রিয়া: কোন বাক্যে যদি সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া একসঙ্গে থাকে, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন: আমাকে ট্রেন ধরতে হবে। এখানে ধরতে অসমাপিকা ক্রিয়া ও হবে সমাপিকা ক্রিয়া। একসঙ্গে হয়ে হলো যৌগিক ক্রিয়া।
৪. খণ্ডবাক্য কাকে বলে? আশ্রিত খণ্ডবাক্য কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলােচনা করাে।
জটিল বা মিশ্র বাক্যে ছােট ছােট একাধিক বাক্য থাকে একে খণ্ডবাক্য বলে। খণ্ডবাক্য প্রধানত দুই প্রকার-
১. প্রধান খণ্ডবাক্য: যে খণ্ডবাক্য অর্থ প্রকাশের জন্য অন্য কোনাে খণ্ডবাক্যের উপর নির্ভরশীল নয়, তাকে প্রধান খণ্ডবাক্য বলে।
২.আশ্রিত খণ্ড বাক্য: যে খণ্ডবাক্য অর্থ প্রকাশের জন্য প্রধান খণ্ডবাক্যের উপর নির্ভরশীল, তাকে আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে।
আশ্রিত খণ্ডবাক্য আবার তিন প্রকার। যথা-
ক. বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য: যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য বিশেষ্য পদের কাজ করে, তাকে বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। যেমন— “আমি জানি সে কেমন লােক।” এখানে আমি “জানি” প্রধান খণ্ডবাক্য এবং “সে কেমন লােক” বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য।
খ. বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য: যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের অন্তর্গত কোনাে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের দোষ, গুণ এবং অবস্থা প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। যেমন— “যে এ সভায় অনুপস্থিত, সে বড় দুর্ভাগা।” যেখানে, যখন,যেভাবে বা যেন দিয়ে বাক্য থাকলে বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য পাওয়া যায়।
গ. ক্রিয়া-বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য: যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য ক্রিয়াপদের স্থান, কাল ও কারণ নির্দেশক অর্থে ব্যবহূত হয়, তাকে ক্রিয়া-বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। যেমন— “যেখানে পদ্মা আর মেঘনা একাকার হয়ে গেছে, সেখানেই মোহনা।” ক্রিয়াকে কখন, কোথায়, কিভাবে, কেন, কতটুকু দ্বারা প্রশ্ন করে ক্রিয়া-বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য পাওয়া যায়।
উপরে ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে এই প্রশ্নের উত্তরগুলো PDF ডাউনলোড করে নাও। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post