ব্রণ উঠলে মুখের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে। একবার ব্রণ উঠলে তা সহজে ছাড়তে চায় না। অনেকে বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস ও ক্যামিকেল ব্যবহার করে ব্রণ কমাতে দিয়ে মুখে ব্রণের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে। আজকে ব্রণ দূর করার উপায় গুলো জানবো যেগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়।
আমাকের মুখমণ্ডলে ত্বকের অভ্যন্তরে কিছু তেল ও ঘাম গ্রন্থি রয়েছে। যেগুলো হতে প্রয়োজন মোতাবেক তেল ও ঘাম বের হতে থাকে। কোন কারণে এসব তেল গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে গ্রন্থি হতে এসব তেল বাইরে বের হতে পারে না। যার ফলে তেল বের হয়ে ত্বকের ভীতরেই জমা হতে শুরু করে। এভাবে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ মুখ ব্রণে ভর্তি হয়ে যায়।
যদি ব্রণ কমাতে চান তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ ও কসমেটিকস ব্যবহার করুন। কিংবা ব্রণ কমানোর ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়সমূহ চেষ্টা করুন। নিজে নিজেই ব্রণ কমানোর জন্য কসমেটিকস বা অন্য কোন কিছু ব্যবহার করলে তা ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
ব্রণ দূর করার উপায়
প্রাকৃতিক ফল-মূলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ। তার জন্য একেক ধরনের ফল-মূল একেক ধরনের শারীরিক কার্যক্রমে কাজে আসে। তেমনই আমাদের ঘরেই এমন কিছু উপাদান রয়েছে যে উপাদান গুলো ত্বকের সৌন্দর্য্য বাড়াতে কাজ করে সেই সাথে ব্রণের দাগ কমাতেও সাহায্য করে।
চলুন তেমনই কিছু প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উপাদান সম্পর্কে জেনে আসি। যে উপাদানগুলো ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
১. শসার রস
শীতে ত্বকের যত্ন ও ব্রণ দূর করার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে শসা। তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে শসা দারুণ কাজ করে। আমাদের মুখের অভ্যন্তরে তেল গ্রন্থি হতে তেল বের হতে না পারায় তেল সেখানেই জমে পুঁজের তৈরি হয়। যেটা ব্রণ নামে পরিচিত। এই তেল গ্রন্থি হতে তেল যাতে কম নির্গত হয় শসা সেই কাজটি করে থাকে।
শসা মুখের অভ্যন্তরে তেল গ্রন্থি হতে তেল বের হওয়া কমিয়ে দেয়, মুখমণ্ডল শীতল রাখে ও মুখের বাইরে থাকা তৈলাক্ত ত্বক হতে তেলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সরাসরি শসা কেটে কিংবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পেস্ট আকারে ব্যবহার করা যায়। সপ্তাহে দু’দিন ব্যবহারই যথেষ্ট।
২. তুলসি পাতার রস
বিভিন্ন কারণে তুলসি পাতার রস এর সুনাম রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে এটি ব্রণ দূর করতেও সাহায্য করে। তুলসী পাতায় রয়েছে আয়ুর্বেদিক গুণ, যা বিভিন্ন রোগ সারাতে সক্ষম।
প্রথমে কিছু তুলসি পাতা সংগ্রহ করে সেগুলোর রস বের করে নিতে হবে। রস বের করা হয়ে গেলে ব্রণযুক্ত স্থানে তুলসি পাতার রস আলতোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। লাগানোর পরে শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩. নিম ও তুলসি পাতার পেস্ট
নিমের রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য এবং তুলসি পাতার রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। উক্ত দুই উপাদান মিলিয়ে পেস্ট তৈরি করলে মুখমণ্ডলে থাকা জীবাণুসমূহ মারা যাবে ও ব্রণ কমতে শুরু করবে।
৪. অ্যালোভেরার, নিম ও তুলসি পাতার পেস্ট
রূপচর্চায় অ্যালোভেরা এর ব্যবহার বহু আগে থেকে হয়ে আসছে। অ্যালোভেরা, নিম ও তুলসি পাতার পেস্ট তৈরি করার জন্য প্রথমে ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল সংগ্রহ করতে হবে। তারপর যেখানে নিম পাতা ও তুলসি পাতার রস বের করে জেল এর ভীতরে দিতে হবে।
তারপর সবগুলো উপাদান মিক্সড করে নিতে হবে। তৈরি করা হয়ে গেলে মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে, সপ্তাহে দু’দিন করে ব্যবহার করতে হবে।
৫. ব্রণ দূর করার উপায় পুদিনা পাতা ব্যবহার করুন
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন না নেওয়ার কারণে অনেক সময় মুখে ফুসকুড়ি ও ব্রণ তৈরি হয়। ত্বকের অতিরিক্ত তেলের কারণে যদি ব্রণ হয়ে থাকে তাহলে এই ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা ভালো কাজ করে।
এর জন্য প্রথমে কয়েকটি পুদিনা পাতা নিয়ে সেগুলো বেটে আলতোভাবে ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলতে হবে।
৬. আপেল এবং মধুর পেস্ট তৈরি
ব্রণ দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে জনপ্রিয় একটি উপায় হচ্ছে আপেল এবং মধুর পেস্ট তৈরি করে তা ব্যবহার করা। এর জন্য প্রথমে একটি আপেল নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে হবে। পেস্ট করা হয়ে গেলে তাতে ৪/৫ ফোঁটা মধু দিতে হবে।
পেস্ট’টি তৈরি হয়ে গেলে ব্রণ হওয়া জায়গায় আধা ঘণ্টা লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর
ব্রণ দূর করা নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে। চলুন তেমনই কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর জেনে আসি।
১. ব্রণের দাগ কিভাবে দূর করা যায়?
ব্রণের দাগ দূর করার জন্য সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নারকেলের পানি কিংবা লেবুর খোসার ব্যবহার। মুখের যে কোন দাগ দূর করতে এই দুটি উপাদানই দারুণ কাজ করে। নারকেলের পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন, তারপর অন্তত ৩ ঘন্টার জন্য মুখে কোনকিছু ব্যবহার করবেন না। এবং লেবুর খোসা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
২. ব্রণ দূর করার জন্য কি খাওয়া উচিত?
ব্রণ দূর করার জন্য নির্দিষ্ট কোন খাবার নেই। তবে, এমনকিছু খাবার রয়েছে যে খাবারগুলো খেলে শরীর হতে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায় এবং ত্বককে ভালো রাখে। প্রথমত বেশী পরিমাণ পানি পান করুন এবং লেবু, দই, আপেল, আখরোট ও দুগ্ধজাত পণ্য সমূহ খান।
৩. শরীরে ব্রণ হওয়ার কারণ?
আমাদের ত্বকের অভ্যন্তরে কিছু তেল গ্রন্থি ও ঘাম গ্রন্থি রয়েছে। ধুলোবালি, ময়লা, ব্যাকটেরিয়া ও মৃত কোষের কারণে তেল ও ঘাম বেরোনোর মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেগুলো ভেতরেই জমা হয়ে থাকে। যার ফলে তা পুঁজ হয়ে ফুসকুড়ি হয়। যাকে আমরা ব্রণ বলি।
সবশেষে যা জানা দরকার
ব্রণ কোন জটিল সমস্যা না। ব্রণকে ঠেকানোর জন্য আমাদের মুখমণ্ডল পরিষ্কার করাই যথেষ্ট। যদি ব্রণ হয়ে থাকে তাহলে ব্রণ দূর করার উপায় গুলো অনুযায়ী কাজ করুন, যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করুন।
Discussion about this post