ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু class 7 : গসাগুর সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। গসাগু মানে হল গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক। এখানে দুটো বিষয় আবার মনে করার চেষ্টা করি। গসাগু নির্ণয় করতে হলে অন্তত দুটি সংখ্যার মধ্যকার তুলনা করতে হয়। কিসের তুলনা?
তাদের গুণনীয়ক বা উৎপাদকগুলোর তুলনা। এখন ভেবে দেখো তো গুণনীয়ক বা উৎপাদক কোনগুলো? কিংবা সাধারণ গুণনীয়ক কোনগুলো? ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার জন্য দুটি আলাদা সংখ্যার গুণনীয়ক বা উৎপাদকগুলোর মাঝে এক বা একাধিক গুণনীয়ক পাওয়া যেতে পারে, যারা উভয় সংখ্যারই গুণনীয়ক।
ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু class 7
সেই গুণনীয়কটি কিংবা গুণনীয়কগুলোকে বলা হয় সাধারণ গুণনীয়ক। পরবর্তীতে যে সাধারণ গুণনীয়কটি সবচেয়ে বড়, সেটিই হয় গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক। ভেবে দেখো তো, দুটি সংখ্যার একটিমাত্র সাধারণ গুণনীয়ক থাকলে কী হয়? ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার পাশাপাশি, সাধারণ ভগ্নাংশের ক্ষেত্রেও কি এভাবে গসাগু নির্ণয় করা সম্ভব? চলো এ বিষয়টি নিয়ে ভাবি।
গসাগু মানে হলো গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক এবং লসাগু মানে হলো লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক। ধরি, দুইটি সংখ্যা ৬ এবং ১২; তাহলে ৬ এবং ১২ এর গসাগু হলোঃ ৬। এখন ৬ ও ১২ এর গসাগু ৬ কেন হলো? কারনঃ ৬ এর গুণনীয়কঃ ১, ২, ৩, ৬ এবং ১২ এর গুণনীয়কঃ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ১২ অর্থাৎ, ৬ ও ১২ এর গুণনীয়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাধারণ (কমন) গুণনীয়ক হলো ৬ যার অর্থ ৬ ও ১২ এর গসাগু ৬।
আবার ৬ ও ১২ এর লসাগু হলোঃ ১২ এবং কিন্তু কেন? কারনঃ ৬ এর গুনিতকঃ ৬, ১২, ১৮, ২৪, …… এবং ১২ এর গুণিতক ১২, ২৪, ৪৮,…… যেখানে ৬ ও ১২ এর গুণিতকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট সাধারণ (কমন) গুণিতক হলো ১২ অর্থাৎ এদের লসাগু ১২. এতক্ষন আমরা স্বাভাবিক সংখ্যার গসাগু ও লসাগুর ধারনা বুঝলাম। কিন্তু আমাদের এই অধ্যায়ে আমরা ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু বিষয়ে জানব। আমরা এই অধ্যায়ের কাজ বা সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাব এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন ধারণা নিব।
সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক
প্রথমে একটি ভগ্নাংশের গুণনীয়ক নিয়ে চিন্তা করি। পূর্ণসংখ্যার গুণনীয়কের সাথে তুলনা করে আমরা দেখতে পাই, কোন একটি পূর্ণসংখ্যার গুণনীয়ক সেই পূর্ণসংখ্যাগুলো, যেগুলো দ্বারা পূর্ণসংখ্যাটি নিঃশেষে বিভাজ্য যেমন ১২ সংখ্যাটি ১, ২, ৩, ৪, ৬ এবং ১২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। এখন আমরা ১২ কে ৫ দ্বারা ভাগ করলে কি কোন পূর্ণসংখ্যা পাই? উত্তর হবে না।
কাজ: ১৮ এর গুণনীয়কগুলো কি হবে?
সমাধানঃ
১৮ এর গুণনীয়কগুলো হলোঃ ১, ২, ৩, ৬, ৯, ১৮
[শিখনঃ যে সকল পূর্ণসংখ্যা দ্বারা কোন পূর্ণসংখ্যাকে ভাগ করলে সংখ্যাটি নিঃশেষে বিভাজ্য হয় অর্থাৎ কোন ভাগশেষ থাকে না সেই সংগুলো হলো সংখ্যাটির গুণনীয়ক।]
কাজঃ প্রথমে একটি কাগজ নাও। এবার কাগজটিকে সমান দুই ভাগ করে কাটো। তাহলে একটি খণ্ডিত অংশ হবে মূল কাগজের ১/২ অংশ। এবার আবার আরও ৩ টি কাগজ নাও এবং সেগুলোকে যথাক্রমে সমান ৩, ৪ ও ৫ খণ্ডে বিভক্ত করো ও নিচের ছকটি পূরণ করো।
এখন ভেবে দেখো তো এভাবে ভাঁজের মাধ্যমে আমরা কী পাচ্ছি? উপরের উদাহরণের ওই খন্ড থেকে চিন্তা করি। ২ খণডটিকে সমান ৩ ভীজ করার মানে আসলে সেটিকে ৩ দিয়ে ভাগ করা। তার মানে আমরা এই কাগজ ভাঁজের খেলা থেকে মূলত আমরা একটি ভগ্মাংশকে একটি পূর্ণ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করছি। অর্থাৎ, যে কয়টি সমান ভীঁজ করছি, সেই পূর্ণসংখ্যা দিয়ে ভগ্নাংশকে ভাগ করা হচ্ছে।
এভাবে আসলে কী পাওয়া যাচ্ছে ভাবো তো? ভগ্নাংশের যে গুণনীয়ক, সেটিই কিন্তু এভাবে নির্ণয় হচ্ছে তাহলে ভগ্নাংশের গুণনীয়ক কোনগুলো? একটি ভগ্নাংশকে একটি পূর্ণসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে আমরা যে আরেকটি ভগ্নাংশ বা পূর্ণসংখ্যা পাই, সেটিই ওই ভগ্নাংশটির একটি গুণনীয়ক। এখন, চিন্তা করো, আমাদের ২ খণ্ডটিকে সমান ১ ভাগে ভাঁজ করার মানে কি হতে পারে? এতে কিন্তু আসলে কোন ভীজ হচ্ছে না।
ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু সপ্তম শ্রেণী
সেই কাগজটিই কোন ভীজ ছাড়া থাকছে। তার মানে কি? ভগ্নাংশটি নিজেও কিন্তু ওই ভগ্নাংশের একটি গুণনীয়ক। কারণ ১ ও তো একটি পূর্ণসংখ্যা। তাই, ১ দিয়ে ভাগ করলেও কিন্তু একটি পূর্ণসংখ্যা বা ভগ্নাংশই পাওয়া যাচ্ছে। এবার তাহলে চলো আমরা নিচের ছকটি পূরণ করে একটি গুণনীয়ক টেবিল তৈরি করি। তোমরা প্রতিটি ভগ্নাংশেরই প্রথম ১০ টি করে গুণনীয়ক নির্ণয় করবে। ছকটি আংশিকভাবে পূর্ণ করা হয়েছে।
তুমি কি সবগুলো গুণনীয়ক নির্ণয় করতে পেরেছো? হিসাব করলে দেখবে তুমি কখনই সবগুলো গুণনীয়ক নির্ণয় করতে পারবে না। কারণ, পূর্ণসংখ্যা আসলে অসীমসংখ্যক আছে। তাই একটি সাধারণ ভগ্নাংশকে অসীমসংখ্যক পূর্ণসংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যাবে।
আর কোন সাধারণ ভগ্নাংশকে পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হলে, সেটিকে অবশ্যই একটি ভগ্নাংশ বা পূর্ণসংখ্যা আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ, সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক কিন্তু পূর্ণসংখ্যার গুণনীয়ককের মত নির্দিষ্ট সংখ্যক নয়। সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক অসীমসংখ্যক হয়।
একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের সাধারণ গুণনীয়ক ও গসাগু
এপর্যন্ত আমরা সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক সম্বন্ধে জেনেছি। আমরা এখন, একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের জন্য সাধারণ গুণনীয়ককের ধারণাটি বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে মূল ধারণাটি কিন্তু আমাদের পূর্ণ সংখ্যার যে সাধারণ গুণনীয়ককের ধারণা, সেটিই। অর্থাৎ, সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করতে হবে, একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়কের তুলনার মাধ্যমে।
অর্থাৎ, ক্রমানুযায়ী গুণনীয়ক নির্ণয় করে প্রাপ্ত প্রথম সাধারণ গুণনীয়কটির সাহায্যে চাইলে অন্য সাধারণ গুণনীয়কগুলো পাওয়া সম্ভব। যেভাবে আমরা ভাগ করে করে ভগ্নাংশের সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করেছি সেভাবেই প্রথম প্রাপ্ত সাধারণ গুণনীয়কটিকে ক্রমানুযায়ী পূর্ণসংখ্যাগুলো দ্বারা ভাগ করে গেলেই সাধারণ গুণনীয়কগুলো নির্ণয় করা যাবে। এখন চিন্তা করো, তুমি যখন কাগজ ভাঁজ করেছিলে, ভাঁজ করে পাওয়া ভাগগুলো বড় ছিল নাকি কাগজটি বড় ছিল?
অবশ্যই কাগজটি বড় ছিল, কারণ সেই একটি কাগজের মাঝেই বারবার ভাগ করা হচ্ছিল। এখান থেকে কিন্তু সহজেই ধারণা করা যায়, একটি ভগ্নাংশকে আরেকটি পূর্ণসংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হলে নতুন পাওয়া ভাগফল বা ভগ্নাংশটি অবশ্যই মূল ভশ্নাংশের তুলনায় ছোট হবে। এখন তাহলে এখান থেকে কি বুঝলে বলো তো? ক্রমানুযায়ী যদি সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করা হয়, তাহলে একদম প্রথমে যে সাধারণ গুণনীয়কটি পাওয়া যাবে, সেটিই হবে সবচেয়ে বড় সাধারণ গুণনীয়ক বা গসাগু।
এখন বলো তো এই ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ গুণনীয়ক কত? ছক থেকে কিন্তু কোন সাধারণ গুণনীয়ক পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ভগ্নাংশ দুটির অবশ্যই একটি সাধারণ গুণনীয়ক রয়েছে। এবার তাহলে চলো আমরা মোট ১৫ টি করে সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করার চেষ্টা করি।
এখন চিন্তা করে দেখো, আমাদের দুটি ভগ্নাংশের জন্য হর কিন্তু একই। তাহলে আমাদের কিন্তু হর নিয়ে আর কিছু ভাবতে হচ্ছে না। এখন ভাবো আমরা যদি দুটি ভগ্নাংশকেই 8৪৪8 দিয়ে গুণ করতাম, তাহলে দুটি পূর্ণ সংখ্যা পেতাম, সেগুলো হল, ১১ ও ১২। এখন বলো তো ১১ ও ১২ এর গসাগু কত? তোমরা কিন্তু ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গসাগু কীভাবে নির্ণয় করতে হয় তা জানো। আমরা বলতে পারি ১১ ও ১২ এর গসাগু কিন্তু ১ হবে।
এখান থেকে তাহলে কি বোঝা যায়? একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের যদি হর একই হয়, অর্থাৎ ভগ্নাংশগুলো সমহরবিশিষ্ট হয়, তাহলে, ভগ্নাংশগুলোর গসাগুও একটি ভগ্নাংশ হবে, যে ভগ্নাংশের হরটি সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশগুলোর হর হবে এবং লবটি সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশের লবগুলোর গসাগু হবে। সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশ দুটির লবের মধ্যে কোনটি বড়? অবশ্যই ১১ ও ১২ এর মাঝে কিন্তু ১২ বড়। এখন চিন্তা করো তো এই দুটি ভগ্নাংশের জন্য আমাদের গসাগু পাওয়ার জন্য ন্যুনতম কতটি করে গুণনীয়ক নির্ণয় করতে হয়েছিল?
এখন একটি বিষয় ভাবো। আমরা কিন্তু পুরো প্রক্রিয়ায় উদাহরণ হিসেবে ২ টি করে ভগ্নাংশ নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু তুমি চাইলে পূর্বে দেখানো সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই এর অধিক ভগ্নাংশেরও গসাগু নির্ণয় করতে পারবে।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির গণিত সকল অধ্যায়ের সমাধান
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু class 7 সমাধান ২০২৪ সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post