ভাঙার গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর : স্বাধীনতা যােদ্ধাদের অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্ধি করে রাখত ইংরেজ সরকার। তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হতাে। ওই অত্যাচারী, শােষক, নিপীড়ক ইংরেজের সঙ্গে আপসে স্বরাজ প্রাপ্তিতে কবি নজরুল বিশ্বাসী ছিলেন না। এক্ষেত্রে সহিংস সংগ্রামের পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। তাই জেলখানার লােহার কপাট ভেঙে ফেলার ডাক দেন তিনি। বন্দি স্বাধীনতাকামীদের মুক্তির জন্য সরাসরি বলপ্রয়ােগ করে লৌহ-কপাট ভেঙে ফেলার কাজে দৃঢ় প্রত্যয় তাঁর
ভাঙার গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
১. ‘ভাঙার গান’ রচনাংশটি মূলগ্রন্থে কী নামে সংকলিত হয়েছিল?
উত্তর: ‘ভাঙার গান’ রচনাংশটি মূলগ্রন্থে ভাঙার গান নামে সংকলিত হয়েছে।
২. “কারার ওই লৌহকপাট”-লৌহকপাট কথার অর্থ কী?
উত্তর: ‘লৌহ-কপাট’ কথার অর্থ লােহার তৈরি দরজা।
৩. “কারার ওই লৌহ-কপাট/ভেঙে ফেল, কররে লােপাট”—কবি কাদের এই আহবান জানিয়েছেন?
উত্তর: পরাধীন ভারতে তরুণ বিপ্লবী বীরদের প্রতি কবি এই আহ্বান জানিয়েছেন।
৪. ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’-কে কবি কেন ভেঙে ফেলতে বলেছেন?
উত্তর: স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর বিপ্লবীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করার জন্য কবি লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে বলেছেন |
৫. ‘শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী’-তে কাদের রক্ত জমাট হয়ে আছে?
উত্তর: ব্রিটিশ সরকার দ্বারা অত্যাচারিত ভারতের বীর সন্তান স্বাধীনতাসংগ্রামীদের রক্ত জমাট হয়ে আছে |
৬. “ওরে ও তরুণ ঈশান!”-“তরুণ ঈশানকে কবি কী করতে বলেছেন?
উত্তর: তরুণ ঈশানকে কবি প্রলয় বিষাণ অর্থাৎ ধবংস ঘােষণাকারী শিঙা বাজাতে বলেছেন।
৭. “ওরে ও তরুণ ঈশান!—’তরুণ ঈশান’ বলতে কবি প্রকৃতপক্ষে কাদের বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘তরুণ ঈশান’ বলতে কবি প্রকৃতপক্ষে ভারতমাতার বীর সন্তান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বুঝিয়েছেন।
৮. “ঈশান’ শব্দের দুটি অর্থ লেখাে।
উত্তর: ঈশান’ শব্দের অর্থ শিব। অন্যদিকে, ‘ঈশান’ হল উত্তর-পূর্ব দিক, যা দশটি দিকের একটি।
9. “ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তাের প্রলয়-বিষাণ’—কবি কেন তরুণ জানকে প্রলয়-বিষাণ বাজাতে বলেছেন?
উত্তর: ইংরেজদের কারাগারে স্বদেশের মুক্তিযােদ্ধারা বন্দি থাকায় সেইসব কারাগার ভেঙে ফেলার জন্যই কবি প্রলয়-বিষাণ বাজাতে বলেছেন।
১০. “ধবংস-নিশান, উড়ুক প্রাচী’র প্রাচীর ভেদি”—কীসের ‘ধধ্বংস- নিশান’?
উত্তর: স্বাধীনতাকামী বহু বীর বিপ্লবীকে ইংরেজ সরকার কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। সেইসব কারাগার ধবংস করে নিশান ওড়াতে হবে।
ভাঙার গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
১১. “গাজনের বাজনা বাজা!”–গাজনের বাজনা’ কী?
উত্তর: চৈত্রের শেষে শিবের গাজন উৎসবের সময়ে ঢাক, ঢােল, কাঁসর, বাশি ইত্যাদির মিলিত বাজনা হল গাজনের বাজনা।
১২. “কে দেয় সাজা/মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?”—‘মুক্ত স্বাধীন সত্য’ কী?
উত্তর: ‘মুক্ত স্বাধীন সত্য’ হল স্বাধীনতা ভারতবাসীর জন্মগত অধিকার এবং তারা তা অর্জন করবেই।
১৩. “ভগবান পরবে ফাঁসি?”—‘ভগবান’ বলতে কবি কাকে বা কাদের বুঝিয়েছেন?
উত্তর: এখানে ‘ভগবান’ বলতে কবি মৃত্যুঞ্জয়ী বীর বিপ্লবীদের, যাঁরা স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাঁদের বুঝিয়েছেন।
১৪, “ভগবান পরবে ফাঁসি?”-ভগবান ফাসি পরবে কেন?
উত্তর: সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের অত্যাচারের প্রতিবাদ ও স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের কারণেই ‘ভগবান’ অর্থাৎ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ফাসি হয়।
১৫. “শিখায় এ হীন তথ্য কে রে?”—‘হীন তথ্য বলতে কী বােঝানাে[সুনীতি একাডেমি হয়েছে?
উত্তর: ভগবানের মতাে অমর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ফাঁসি দিয়ে তাদের স্বপ্নকে ধবংস করা যায়—এটাই হল হীন তথ্য।
১৬. “হা হা হা পায় যে হাসি”—কবির হাসি পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: কবির হাসি পাওয়ার কারণ হল অত্যাচারী ইংরেজ শাসক ভগবানতুল্য মৃত্যুঞ্জয়ী বিপ্লবীদের ফাঁসি দিতে চায়।
১৭. “ভগবান পরবে ফাসি?”-কে ভগবানকে ফাসি দিতে চায়?
উত্তর: অত্যাচারী ইংরেজ শাসক ভগবানকে ফাসি দিতে চায়।
১৮. “ওরে ও পাগলা ভােলা, দে রে দে প্রলয়-দোলা”—‘পাগলা ভােলা’ কীভাবে প্রলয় দোলা দেবে?
উত্তর: গারদগুলাে সজোরে ধরে হ্যাচকা টান মেরে ‘পাগলা ভােলা’ প্রলয় দোলা দেবে।
১৯. ‘মার হাঁক হৈদরী হক”—“হৈদী হক’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: হজরত মহম্মদের জামাতা হায়দার যেমন শত্রুর উদ্দেশে হাড় হিম করা হক দিতেন, তেমন হককে বােঝানাে হয়েছে |
২০. “মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে!”—কে ডাকবে?
উত্তর: ‘পাগলা ভােলা’ অর্থাৎ তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মৃত্যুকে তাদের জীবনে ডাকবে অর্থাৎ হাসিমুখে বরণ করে নেবে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. ‘কাটাবি কাল বসে কি?’-অহেতুক কাল হৱণেৱ কারণ কী?
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত . ‘ভাঙার গান কবিতা থেকে গৃহীত। পরাধীনতার বন্ধনমুক্তির সুতীব্র বাসনায় অসংখ্য তরুণ স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা ইংরেজ সরকারের রােষে পড়ে কারারুদ্ধ ও নির্মমভাবে অত্যাচারিত। তাঁদের কারামুক্ত করার জন্য ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় এসেছে। কালবৈশাখীর প্রলয় শক্তি নিয়ে দেশবাসী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুক। বৃথা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার সময় নয়। ওভাবে কাল হরণ হবে অনুচিত কাজ।
২. সবশেষে স্বাধীনতাকামী বন্দি যােদ্ধাদের কাছে কবি কী প্রত্যাশা রেখেছেন?
উত্তর : সবশেষে স্বাধীনতাকামী বন্দি যােদ্ধাদের কাছে কবি এই প্রত্যাশা রেখেছেন। তারা কারওর সাহায্যের আশায় না থাকুক তারা নিজের বিক্ষুদ্ধ শক্তি প্রয়ােগ করুক। লাথি মেরে ভেঙে ফেলুক কারাগারের তালা। যত বন্দিশালা আছে সবগুলিতে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিক। পুড়ে ধ্বংস হােক সব। বেঁধে রেখে মৃত্যু যন্ত্রণা দেওয়ার মতাে অত্যাচারের অবসান হােক।
৩. ‘কাৱাৱ ওই লৌহ-কপাট/ ভেঙে ফেল, কাৱাৱ লােপাট’-কবি নজরুলের এই ডাকের কারণ কী আলােচনা করাে।
উত্তর : স্বাধীনতা যােদ্ধাদের অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্ধি করে রাখত ইংরেজ সরকার। তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হতাে। ওই অত্যাচারী, শােষক, নিপীড়ক ইংরেজের সঙ্গে আপসে স্বরাজ প্রাপ্তিতে কবি নজরুল বিশ্বাসী ছিলেন না। এক্ষেত্রে সহিংস সংগ্রামের পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। তাই জেলখানার লােহার কপাট ভেঙে ফেলার ডাক দেন তিনি। বন্দি স্বাধীনতাকামীদের মুক্তির জন্য সরাসরি বলপ্রয়ােগ করে লৌহ-কপাট ভেঙে ফেলার কাজে দৃঢ় প্রত্যয় তাঁর।
৪. ‘ওরে ও তরুণ ঈশান!/ বাজা তােৱ প্রলয়- বিষাণ’-কবি নজরুল তরুণ ঈশানকে প্রলয়- -বিষাণ বাজতে বলেছেন কেন—আলােচনা করাে।
উত্তর: প্রলয় ও ধ্বংসের দেবতা হলেন ঈশান তথা শিব। দেশকে স্বাধীন করার মন্ত্রে যারা দীক্ষিত তারা স্বাধীনতাযােদ্ধা। ইংরেজ সরকার তাদের কারারুদ্ধ করে তাদের স্বাধীনতাস্পৃহাকে দমন করতে চায়। কবি নজরুল সেই সব কারারুদ্ধ তরুণ বিপ্লবীদের ‘ঈশান’ আখ্যা দিয়ে প্রলয় ও ধ্বংসের কাজে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। তাদের আহ্বান করেছেন প্রলয়- বিষাণ বাজাতে। তাদের ধ্বংসকারী ও প্রলয়রূপী তারুণ্য শক্তিতে জেলখানার পাষাণ-প্রাচীর ধ্বংস হােক। বন্দির বন্ধনমুক্তি হােক।
ভাঙার গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
৫. ‘ধ্বংস নিশান,/ উড়ুক প্রাচী’ৱ প্ৰচীৱ ভেদি।-কবি নজরুল ধ্বংস নিশান ওড়ানাের আহ্বান জানিয়েছেন কেন?
উত্তর : ইংরেজ শাসকের অত্যাচার-অবিচারে, শাসন-শােষণে ভারতবাসীর ওষ্ঠাগত প্রাণ। তারা চায় পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি। সেই উদ্দেশ্যে স্বাধীনতাকামী তরুণ যােদ্ধারা শাসক ইংরেজের রোষানলে পড়ে কারারুদ্ধ। সেখানে তারা মিতু, অত্যাচারিত। তাদের কারামুক্তির জন্য কবি নজরুল করিস তরুণদের প্রলয়-দেবতা ‘ঈশান’ আখ্যা দিয়ে কারাপ্রাচীর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চেয়েছেন কারারুদ্ধ বীর স্বাধীন যােদ্ধারা পূর্বদিকের কারাপ্রাচীর ভেঙে ধ্বংসের পতাকা উড়াক।
৬. ‘গাজনের বাজনা বাজা/কে মালিক? সে রাজা?’—উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি কাজি নজরুল ইসলামের ভাঃ। গান কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। দেশের স্বাধীনতাকামী যােদ্ধারা শাসক ইংরেজদের রােষানলে পড়ে কারারুদ্ধ। কবি চন তাদের কারামুক্তি। সেই উদ্দেশ্যে তিনি প্রলয় দেবতা শিয়ে ধ্বংসাত্মক শক্তির প্রসঙ্গে এসেছেন। গাজন শিবের উৎসব। গাজনে, বাজনা ঢাকঢােল। তার আওয়াজ রণদুন্দুভির সঙ্গে কবি চান সেই রণদুন্দুভি বাদ্য বাজুক।
৭. কে দেয় সাজা/মুক্ত স্বাধীন সত্যকে ৱে?এই উদ্ধৃতিৱ অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : দেশের স্বাধীনতাকামী যােদ্ধারা সত্য-আদর্শে দীক্ষিত। তারা পরাধীন নিপীড়িত মানবাত্মার মুক্তির উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রাণ। তাদের অনুসৃত ধর্ম সত্যধর্ম। মানবতার সপক্ষে যা কিছু হলাে তা সত্য। সত্য স্বাধীন ও মুক্ত। তাকে কারারুদ্ধ করা যায় না। সাজা দেওয়া যায় না। অথচ অজ্ঞ অবিবেচক ইংরেজ সরকার সত্যকে কারারুদ্ধ করে সাজা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তা ছাড়া সত্যের পূজারী যারা তাদের সাজা দেওয়ার । অধিকার ইংরেজ সরকারের নেই। প্রকৃতপক্ষে তারা এদেশের । মালিকও নয়, রাজাও নয়।
৮. ‘ডাক ওৱে ডাক/ মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে!’—উদ্ধৃতির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কাজি নজরুল ইসলামের রচিত ‘ভাঙার গান কবিতা থেকে গৃহীত। দেশের স্বাধীনতাকামী যােদ্ধারা ছিলেন নির্ভীক। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও দেশমাতার । বন্ধনমুক্তির জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। ফাঁসির মঞ্চে জীবনের পায়ের ভৃত্য। তাঁরা জানতেন মৃত্যুবরণ করে জীবনের । জয়গান গেয়ে যাবেন। দেশের কোটি কোটি মানুষের মুক্ত স্বাধীন জীবনের জন্য তাঁদের আত্মদান হবে এক মহান আদর্শের প্রতিষ্ঠা। অমন মৃত্যু তাে সাধারণ মৃত্যু নয়। পরাধীনতার অভিশাপমুর স্বাধীন জীবনের গৌরবময় মৃত্যুবরণ। এই মৃত্যু হলাে জীবনের জন্য। কবি এরই ডাক দিয়েছেন। ।
৯. ‘ভাঙার গান’ কী ধরনের গান? গান ও কবিতাৱ তফাত কী সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘ভাঙার গান’ একটি বিখ্যাত দেশাত্মবােধক গান।
গান আর কবিতার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলাে গানে সুরারােপ করে লয়-তালে তাকে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। কবিতায় সুরারােপের প্রয়ােজন হয় না। তাকে ছন্দ অনুযায়ী পড়তে পারলেই পরিবেশিত হয়। গান ও কবিতা উভয়ই কিন্তু ছন্দোবদ্ধ। এখানে তাদের বড়াে মিল। যেজন্য গানকে কবিতার মতাে করে পড়া যায়। অনেক কবিতাকে আবার গান করে গাওয়াও যায়। সেজন্য ‘ভাঙার গান গান হিসেবে লেখা হলেও কবিতা হিসেবে পাঠ্য বিষয় হয়েছে।
১০. ‘ভাঙার গান কবিতায় কবি প্রথম স্তবকে চাৱটি কাজের আবেদন রেখেছেন।—চাৱটি কাজ কী কী আলােচনা করাে।
উত্তর : ‘ভাঙার গান’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। প্রথম স্তবকে যে চারটি কাজের আবেদন রেখেছেন তা হলাে : এক কারাগারের লৌহ-কপাট ভেঙে ফেলার, দুই রক্তজমাট শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী লােপাট বা নিশ্চিহ্ন করতে, তিন তরুণ ঈশান যেন তার প্রলয়-বিষাণ বাজায়, চার প্রাচী’র প্রাচীর ভেদ করে বন্দিশালায় যেন ধ্বংস-নিশান ওড়ানাে হয়।
ভাঙার গান কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর
১. ‘ভাঙার গান’ রচনাটির পটভূমি উল্লেখ করে মমার্থ লেখাে।
উত্তর: ‘ভাঙার গান’ গানটি কাজী নজরুল ইসলাম অসহযােগ আন্দোলনের পটভূমিতে রচনা করেছিলেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে। এই গানটিতে পরাধীন দেশমাতার শৃঙ্খলমােচনের কথা বিদ্রোহের ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারারুদ্ধ করেছে। কবি সেই কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে লােপাট করার ডাক দিয়েছেন। ইংরেজের অত্যাচারে দেশমাতার পূজার বেদি রক্তে লাল হয়ে গেছে। বিদেশি শাসকরা স্বদেশপ্রেমীদের গলায় ফাসির দড়ি পরাতে চায়।
কিন্তু তারা জানে বিপ্লবী বীরদের মৃত্যু নেই, তাঁরা মৃত্যুঞ্জয়ী রুদ্র মহেশ্বর বা খ্যাপা ভােলানাথের মতাে প্রলয়নৃত্যে সমস্ত বাঁধ ভেঙে তরুণ দেশপ্রেমীরা স্বদেশকে মুক্ত করবেই। অর্থাৎ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন হবে। তীব্র ঘৃণার পদাঘাতে ভেঙে পড়বে ভীমকারার তালা৷ গােটা দেশটাই আজ যেন এক কারাগার। সেই কারাগার থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন কবি। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভারতবাসী এভাবেই দেশমাতাকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত করবে।
২. ভাঙার গান’ কবিতাটিতে কবি নজরুলের কবি মানসিকতার যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ মানুষের প্রতিবাদ এবং প্রতিরােধের আকাঙ্ক্ষাকেই যেন প্রকাশ করে। এই কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শাসক শ্রেণির প্রতি কবির বিদ্রোহী মনােভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কারাগারের লৌহকপাটকে ভেঙে ফেলে সেখানে থাকা ‘রক্ত-জমাট/ শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী’-কে কবি ধ্বংস করতে বলেছেন। জেলখানার গারদগুলােয় ‘হেঁচকা টান দিতে বলেছেন | আত্মদানের মধ্যে দিয়েই কবি চেয়েছেন জীবনকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে, বলেছেন- “ডাক ওরে ডাক/মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে। কখনওবা বলেছেন বন্দিশালায় আগুন জালিয়ে তাকে উপড়ে ফেলার জন্য।
এই আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে কবি নজরুলের শুধু দুঃসাহস নয়, বরং বিদ্রোহ, সত্য ও স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্যও প্রকাশ পেয়েছে| আপসহীন প্রতিবাদী মানসিকতায় কবি শুধু বিদ্রোহের কথা বলেননি, স্বাধীনতার জয় ঘােষণা করেছেন। গাজনের বাজনা বাজিয়ে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির আগমনকে ঘােষণা করেছেন কবি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেখানে জীবনের নতুন অভিষেক ঘটবে | শাসক আর শাসিতের মধ্যেকার দূরত্ব মিটে যাবে। এভাবেই ‘ভাঙার গান’ কবিতাটিতে নজরুলের স্বাধীনতাপ্রিয় বিদ্রোহী মনােভাবের প্রকাশ ঘটেছে।
৩. ‘ভাঙাৱ গান’ গানটিতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কারাগাৱেৱ অবলােপের জন্য কী কী আবেদন ৱেখেছেন আলােচনা করাে।
উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানটির নাম ‘ভাঙার গান। ভাঙার গান’-এর আগাগােড়া কারাগার ভাঙার আবেদন ও নির্দেশ রয়েছে। ভাঙার উদ্দেশ্য হলাে কারাগার ধ্বংস করে ভিত উপড়ে ফেলে বন্দিদের মুক্ত স্বাধীন জীবনে ফিরিয়ে। আনা। অর্থাৎ দেশকে বিদেশি শাসকের শােষণ-শাসন, পরাধীনতার বন্ধন ও অত্যাচার থেকে মুক্ত করা। স্বাধীনতাকামী কবির স্বপ্নই হলাে তাই। ভাঙার মন্ত্রে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করার জন্য কবি লেখেন দেশাত্মবােধক ‘ভাঙার গান।
অবলােপের জন্য আবেদন ও নির্দেশ : গানটিতে কবি বন্দিশালা অবলােপের জন্য প্রলয় তথা ধ্বংসের দেবতা তরুণ ঈশান তথা পাগলা ভােলানাথের কাছে আবেদন রেখেছেন। কারার লৌহ-কপাট ভেঙে ফেলা হােক। শিকল-পুজোর রক্ত-জমাট পাষাণবেদীটা ভেঙে লােপাট করা হােক। তরুণ ঈশান প্রলয়ের বিষাণখানা বাজাক। কারাপ্রাচীর ভেঙে ধ্বংস-নিশান উড়িয়ে দেওয়া হােক। গাজনের রণদুন্দুভি বেজে উঠুক। পাগলা ভােলা যেন হ্যাচকা টানে ও প্রলয়-দোলায় যেন গারদগুলি ধ্বংস করে। প্রাকৃতিক শক্তি কালবৈশাখীর কাছেও কবি আবেদন রেখেছেন।
কালবৈশাখী নিষ্কর্মা ও নিষ্ক্রিয় হয়ে আর কত কালক্ষেপ করবে ? সে ভয়ংকর ঝড়ঝঞা নিয়ে ভয়ানক কারার ভিত নাড়িয়ে দিক। দৈব ও প্রাকৃতিক শক্তি ছাড়াও কবির আবেদন ও নির্দেশ মানবিক যৌথ শক্তির প্রতি। বন্দিশালার কয়েদিরা সমবেতভাবে বলপ্রয়ােগ করুক। তারা লাথি মেরে ভেঙে ফেলুক কারার লৌহ-কপাটের তালা। বন্দিশালায় আগুন লাগিয়ে দিক। কারার ভিত উপড়ে ফেলুক। বন্দিশালাগুলির অবলােপ ঘটুক।
৪. ‘কে দেয় সাজা/মুক্ত স্বাধীন সত্যকে ৱে? —মুক্ত স্বাধীন সত্য বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? ‘মুক্ত স্বাধীন সত্যকে কী সাজা দেওয়া যায়?
উত্তর: : মুক্ত স্বাধীন সত্য স্বাধীনতাকামী বীর যােদ্ধারা হলেন সত্যের পূজারি। তাঁরা সত্যের উপাসক। তাঁরা সত্য পথের পথিক। দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা হলাে তাঁদের কাছে একমাত্র সত্য। পরাধীনতার শিকল থেকে দেশকে মুক্ত করার চিন্তা ও সংগ্রাম হলাে তাঁদের সত্য পথে এগিয়ে চলার আদর্শ। তাঁরা মুক্তি ও স্বাধীনতাস্বরূপ সত্যের বার্তাবহ। এই অর্থে ‘মুক্ত স্বাধীন সত্যকে বােঝানাে হয়েছে।
মুক্ত স্বাধীন সত্যকে শাস্তি দিতে অক্ষম : ‘মুক্ত স্বাধীন সত্য একটি ভাবাদর্শ। তার অনুসারী ও অনুগামী যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তির আদেশ জারির অধিকারী অত্যাচারী ইংরেজ সরকার নয়। সত্য ও সত্য পথের অগ্রপথিকদের আটকাবে কে? তাদের কি কারাগার বেঁধে রাখতে পারে ? কারাপ্রাচীরের বাঁধন তাঁদের কাছে তুচ্ছ। ফাঁসির দড়ি তাঁদের কাছে জয়মাল্য। মুক্ত স্বাধীন সত্যের বার্তাবহ যাঁরা, তাঁদের ক-জনকেই বা ফাঁসিতে ঝােলাবে। ব্যক্তিকে মেরে ভাবাদর্শকে কি হত্যা করা যায় ? সত্য ভাবাদর্শ অক্ষয় অমর। অবিনশ্বর ।
৫. ‘নাচে ওই কাল-বােশেখি/কাটাবি কাল বসে কি?’-কাদেৱ আলসেমিকে কবি ধিক্কার জানিয়েছেন ও কেন? এই উদ্ধৃতিৱ পৱেৱ চরণে করি কী কৱাৱ ডাক দিয়েছেন?
উত্তর : ধিক্কার জানানাের কারণ : ‘কাল-বােশেখি’ হলাে কালবৈশাখী। চৈত্রের শেষ ভাগ থেকে জ্যৈষ্ঠের প্রথম ভাগের মধ্যে কালবৈশাখীর প্রবল ঝড়-ঝঞ্জা হয়ে থাকে। এই ঝড়-ঝঞ্জা নটরাজ রুদ্রের প্রলয়-নাচের মতাে ভয়ংকর। এ এক দুর্বার প্রাকৃতিক শক্তি। ইংরেজ শাসকের কারাগারে বন্দি স্বাধীনতা যােদ্ধাদের কাছে কবি আশা করেন অনুরূপ শক্তির প্রকাশ। কিন্তু তার পরিচয় না পেয়ে বন্দি স্বাধীনতা যােদ্ধাদের কবি তাদের কুঁড়েমি বা আলসেমিকে দায়ী করে তিনি জানতে চেয়েছেন তারা কি আলসেমি বা কুঁড়েমিতে সময়ের অপচয় করবেন ? তাঁর প্রশ্নের মধ্যে ধিক্কারের সুর ধ্বনিত। কারণ কারাবন্দি স্বাধীনতাকামী যােদ্ধার কাছে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। বৃথা কালক্ষেপের প্রশ্নই ওঠে না।
কবিৱ আহ্বান : এই উক্তির পরের চরণে কবি বলেছেন‘দেরে দেখি/ভীম কারার ওই ভিত্তি নাড়ি!—অর্থাৎ তারা যদি অযথা কালক্ষেপের মানসিকতায় না থাকেন, তাহলে তাঁরা দেখিয়ে দেন কালবােশেখির দুরন্ত শক্তিতে তাঁরা শক্তিমান। তাঁদের শক্তির প্রকাশের নজির হয়ে থাকছে—তাঁদের ধ্বংসকারী প্রচণ্ড শক্তির ঐক্যবদ্ধ আঘাতে কারাগারের ভয়ংকর কঠিন ভিত নাড়া খেয়ে অনিবার্য ধ্বংসের অভিমুখী হবে। তা ধুলায় পরিণত হয়ে কারামুক্তির পথ প্রশস্ত করবে ।
আরো দেখো: নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন উত্তর ও সাজেশন
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে ভাঙার গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। এছাড়াও মাধ্যমিক অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post