অনেকে মনে করেন, ভিটামিন সি এর মূল উৎস হচ্ছে টক জাতীয় খাবার। শুধু টক জাতীয় খাবারের মধ্যেই ভিটামিন সি রয়েছে এমনটি নয়। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এর তালিকায় রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের ফল-মূল ও শাক-সবজি।
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, শরীরকে সতেজ ও স্বাস্থ্যকর রাখতে ভিটামিন সি খুবই জরুরী একটি উপাদান। ভিটামিন সি শরীরে ফ্যাট জমতে দেয় না। ফলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল জমতে পারে না।
অনেকে মনে করেন, বেশী হারে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে শরীরে সমস্যা হবে। এমনটি নয়। ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় হওয়ার কারণে তা শরীরে সঞ্চিত আকারে থাকে না। অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে তা প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
শিশুদের প্রতিদিন ৩০/৩৫ মিলিগ্রাম, প্রাপ্তবয়স্কদের ৪৫ মিলিগ্রাম এবং গর্ভবতী মহিলাদের ৫৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া উচিত। দৈনন্দিন খাবারের মধ্যে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার না থাকলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত যেসব খাবার রাখবেন।
১. লেবু
লেবু হতে পারে ভিটামিন সি এর উত্তম উৎস। একটি ১০০ গ্রাম লেবুতে প্রায় ৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। লেবু সরাসরি কিংবা শরবত তৈরি করে খেলেও লেবুতে থাকা ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি এর অভাব দূর করতে একটি লেবু দিয়ে শরবত করে খেয়ে নিতে পারেন।
২. ভিটামিন সি জাতীয় খাবার পেয়ারা
লেবু টক জাতীয় ফল হওয়ার কারণে অনেকে লেবু খেতে চান না। তারা পেয়ারা খেতে পারেন। ১ কাপ পেয়ারাতে প্রায় ৩৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি এর পাশাপাশি পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীরে ভিটামিন সি বাড়াতে মাঝে মধ্যে পেয়ারা খান।
৩. টমেটো জুস
টমেটোর জুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১ কাপ টমেটোর জুসে প্রায় ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। টমেটোতে ভিটামিন সি ছাড়াও বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়। শরীরে প্রবেশের পরে বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ তে পরিমাণ হয়।
৪. ভিটামিন সি জাতীয় খাবার পাকা পেঁপে
বাসাবাড়িতেই পাওয়া যায় এমন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে একটি খাবার হচ্ছে পাকা পেঁপে। পাকা পেঁপেকে ভিটামিন সি এর খনি বলা হয়। একটি ছোট আকারের পাকা পেঁপের মধ্যে ৯৫.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। পেঁপেতে থাকা এই ভিটামিন পেতে হলে রান্না করে নয় বরং পাকা অবস্থায় সরাসরি খেতে হবে।
৫. আম
আম সাধারণত স্বাদের জন্য বিখ্যাত। স্বাদের পাশাপাশি এই ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। ১ কাপ আমে ভিটামিন সি রয়েছে প্রায় ৬০.১ মিলিগ্রাম। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে ও শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব দূর করতে চাইলে আম খান।
৬. ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কমলা
কমলাকে আমরা অনেকে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার বলেই চিনে থাকি। তবে, কমলাতে ভিটামিন ডি এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে কমলা খেলে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়।
৭. বিভিন্ন ধরনের ফল
উক্ত ফলগুলো ব্যতীত আরও বিভিন্ন ধরনের ফলে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ফলের ১০০ গ্রামে কত মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়-
- জাম্বুরা ১০৫ মিলিগ্রাম
- আমলকি ৪৬৩ মিলিগ্রাম
- আমড়া ৯২ মিলিগ্রাম
- কাগজি লেবু ৬৩ মিলিগ্রাম
- কালোজাম ৬০ মিলিগ্রাম
- মাল্টা ৫৪ মিলিগ্রাম
- বরই ৫১ মিলিগ্রাম
- কমলা ৪০ মিলিগ্রাম
- জলপাই ৩৯ মিলিগ্রাম
- আনারস ৩৪ মিলিগ্রাম
৮. বিভিন্ন ধরনের শাক
বিভিন্ন ধরনের শাক হতে পারে ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন শাকের ১০০ গ্রামে কত মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়-
- শজনেপাতা ২২০ মিলিগ্রাম
- ধনেপাতা ১৩৫ মিলিগ্রাম
- গাজরপাতা ৭৯ মিলিগ্রাম
- মুলাশাক ৬৯ মিলিগ্রাম
- কালো কচুশাক ৬৩ মিলিগ্রাম
- পাটশাক ৫৪ মিলিগ্রাম
- মেথিশাক ৫২ মিলিগ্রাম
- সবুজ কচুশাক ৪৮ মিলিগ্রাম
- লাউশাক ৪৮ মিলিগ্রাম
- লালশাক ৪৩ মিলিগ্রাম
৯. বিভিন্ন ধরনের সবজি
রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় এমন অনেক সবজি রয়েছে যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। উক্ত সবজিগুলো প্রতি ১০০ গ্রামে ভিটামিন সি এর পরিমাণ হচ্ছে-
- কাঁচামরিচ ১২৫ মিলিগ্রাম
- করলা ৯১ মিলিগ্রাম
- ফুলকপি ৭৩ মিলিগ্রাম
- শজনে ৭০ মিলিগ্রাম
- ওলকপি ৫৩ মিলিগ্রাম
- ডাঁটা ৩৬ মিলিগ্রাম
- মিষ্টি আলু ৩৫ মিলিগ্রাম
- মুলা ৩৪ মিলিগ্রাম
- মিষ্টিকুমড়া ২৬ মিলিগ্রাম
- আলু ১৯ মিলিগ্রাম
শেষ কথা
আজকাল মানুষ বেশী অসুস্থ হয়ে থাকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারণে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার না খাওয়া। নিয়মিত ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে অনেক রোগ হতে মুক্তি পাবেন।
Discussion about this post