বিবরণমূলক রচনা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা class 9 : একটি সুন্দর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লাভের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভ্রমণের স্থান নির্ভর করে ভ্রমণকারীর মানসিক অবস্থা, শারীরিক সক্ষমতা, পারিবারিক পরিস্থিতি, আর্থিক স্বচ্ছলতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। আমি সাধারণতঃ চিরাচরিত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে প্রকৃতির বুকে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ছুটে যেতেই ভালোবাসি।
পাহাড়, নদী, সমুদ্র ও জঙ্গল এই সবই আমার অত্যন্ত পছন্দের বিষয়। তবে সপরিবারে যাওয়ার হলে বিশেষ চিন্তাভাবনা করে ভ্রমণের স্থান নির্বাচন করতে হয়। এইবার আমার বাড়ির অত্যন্ত কাছে অবস্থিত সুন্দরবনকে ভ্রমণের স্থান হিসেবে আমি বেছে নিয়েছিলাম। এই সুন্দরবন একই সাথে নদী, মোহনা এবং জঙ্গলের এক অপূর্ব সমাহার। তাই কাছাকাছির মধ্যে প্রকৃতির কোলে কয়েকটি দিন কাটানোর জন্য সুন্দরবনের থেকে বেশি উপযুক্ত জায়গা আর কিইবা হতে পারে।
বিবরণমূলক রচনা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা class 9
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা: বিবরণমূলক রচনা
ভূমিকা: বর্তমান সময়ের ব্যস্ততায় আমাদের শরীর ও মন যখন রোজকার একই পরিবেশের ক্লান্তি এবং একঘেয়েমিতে ভরে ওঠে। ফলে নিত্যদিনের সেই চেনা চারপাশ থেকে আমাদের মন একটুখানি মুক্তির আনন্দের জন্য ছটফট করে। সেই সময় মনকে কিছুদিনের জন্য বিশ্রাম দিতে এবং নিজের ক্লান্তি ও একঘেয়েমি দূর করে জীবনের পরবর্তী ব্যস্ততার জন্য তৈরি হতে প্রয়োজন ভ্রমণের। ভ্রমণ আমাদের বর্তমান জীবনের এমন একটি অংশ যাকে অস্বীকার করে কোনোভাবেই ভালো থাকা যায় না। ভ্রমণ আমাদের ক্লান্তি ও গ্লানিতে ভরে ওঠা মনকে পুনরায় কোন এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সতেজ করে তোলে।
ভ্রমণের স্থান নির্বাচন
একটি সুন্দর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লাভের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভ্রমণের স্থান নির্ভর করে ভ্রমণকারীর মানসিক অবস্থা, শারীরিক সক্ষমতা, পারিবারিক পরিস্থিতি, আর্থিক স্বচ্ছলতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। আমি সাধারণতঃ চিরাচরিত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে প্রকৃতির বুকে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ছুটে যেতেই ভালোবাসি। পাহাড়, নদী, সমুদ্র ও জঙ্গল এই সবই আমার অত্যন্ত পছন্দের বিষয়। তবে সপরিবারে যাওয়ার হলে বিশেষ চিন্তাভাবনা করে ভ্রমণের স্থান নির্বাচন করতে হয়। এইবার আমার বাড়ির অত্যন্ত কাছে অবস্থিত সুন্দরবনকে ভ্রমণের স্থান হিসেবে আমি বেছে নিয়েছিলাম। এই সুন্দরবন একই সাথে নদী, মোহনা এবং জঙ্গলের এক অপূর্ব সমাহার। তাই কাছাকাছির মধ্যে প্রকৃতির কোলে কয়েকটি দিন কাটানোর জন্য সুন্দরবনের থেকে বেশি উপযুক্ত জায়গা আর কিইবা হতে পারে।
গন্তব্য ও যাত্রাপথ
আমাদের গন্তব্য সুন্দরবনের যাত্রা শুরু হয় কুমিল্লা জেলা শহর থেকে। এইখান থেকে বাসে করে আমরা পৌছে গেছিলাম খুলনার সাতক্ষিরা জেলায়। সেখান থেকে পুনরায় অটোরিক্সায় করে সুন্দরবনের কাছাকাছি এসে নামলাম। এরপর একটু একটু করে আমাদের প্রবেশ শুরু। বেশ খানিকটা যাওয়ার পর দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের নাম-না-জানা গাছ, পাখিদের মিষ্টি আওয়াজ নদীর দুপাশ থেকে কানে ভেসে আসে। লঞ্চ থেকে জলের দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম বিখ্যাত গাঙ্গেয় ডলফিন বা চলতি ভাষায় যাকে বলা হয় শুশুক।
সুন্দরবন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর। আমাদের যে গাইড তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম বাংলাদেশ-ভারত এই দুই দেশ জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অধিকাংশই ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ। পৌঁছনোর পরেরদিন জঙ্গল সাফারিতে বেরিয়ে দেখতে পেলাম ঘন বনের ফাঁক দিয়ে সূর্য্যের আলো এসে পড়েছে মাটিতে। বিভিন্ন নাম না জানা গাছ, পাখিদের আওয়াজ আর অদ্ভূত এক মায়াবী নিস্তব্ধতা সমগ্র প্রকৃতিকে যেন ঘিরে রেখেছে।
এরইমধ্যে শ্বাসমূল আর ঠেস মূল যুক্ত গাছগুলি পরিবেশকে আরো মায়াবী করে তুলেছে। পথে চলতে চলতে চোখে পড়ল বিভিন্ন ধরনের অত্যন্ত সুন্দর সুন্দর সব ফুল আর লতা গুল্ম। গাইডের থেকে শুনলাম এই জঙ্গলে বহু ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ পাওয়া যায়। সবচেয়ে মনমুগ্ধকর গাছ গুলির মধ্যে চোখে পড়ল বিখ্যাত সুন্দরী, গরান ও গেওয়া গাছ।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য
সুন্দরবনের আরেকটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এখানকার জীববৈচিত্র্য। সুন্দরবনের স্থলভাগ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীদের স্বর্গরাজ্য। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যদিও বর্তমানে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার দরুণ সহজে বাঘ চোখে পড়ে না। জঙ্গল সাফারির প্রথম দিনে আমরাও বাঘ দেখতে পাইনি। তবে চোখে যা পড়েছিল তা কোনো অংশে কম নয়।
দূর থেকে আমরা দেখেছিলাম সুন্দরবনের বিখ্যাত চিত্রা হরিণের পাল পানি খেতে এসেছে নদীর ধারে; গাছের ডাল থেকে উড়ে যাচ্ছে অদ্ভূত সুন্দর রঙের পাখিরা। আমাদের গাইডের সাহায্যে গাছের উপরে দেখতে পেলাম অদ্ভুত সুন্দর গিরগিটি। এছাড়া চোখে পড়ল গোসাপ, বন বিড়াল আরও কত কী! চলতে চলতে লোকমুখে জানতে পারলাম সুন্দরবনের জঙ্গলে অত্যন্ত সুদর্শন কিন্তু ভয়ংকর বিষাক্ত বহু সাপ রয়েছে। তাদের থেকে সাবধান থাকার জন্য ভ্রমণের সময় সঙ্গে গাইড এবং কার্বলিক অ্যাসিড রাখা বাধ্যতামূলক।
জলপথে ভ্রমণ
জঙ্গল সাফারির পরের দিন শুরু হলো সুন্দরবনের জলপথে আমাদের রোমাঞ্চকর ভ্রমণ। সুন্দরবনের জলপথ অন্যান্য জায়গা থেকে একেবারে অন্যরকম। কাছাকাছি মোহনা থাকার কারণে এখানকার জলভাগের প্রাণীবৈচিত্র্যও অন্যান্য জায়গা থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক আলাদা। বড় একটি লঞ্চে চেপে আমরা সেইদিন রওনা হলাম সুন্দরবনের আরো ভেতরে। সাথে সাথে নদীর দু’পাশের অরণ্যও ঘন হয়ে উঠতে থাকলো।
লঞ্চ থেকে নদীর দিকে তাকাতে আবারও চোখে পড়লে শুশুক, তাছাড়া দেখা গেল বিভিন্ন ধরনের মাছ, বক, মাছরাঙ্গা পাখি ইত্যাদি। ইতিমধ্যে কয়েকবার কয়েকটি কচ্ছপও চোখে পড়ল। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর নদীর একপাশে কাদার উপর দেখতে পেলাম দুটি কুমির রোদ পোহাচ্ছে। সেই দিন লঞ্চেই আমাদের রাতের খাওয়া দাওয়া এবং ঘুমের ব্যাবস্থা হয়েছিল। খাওয়া-দাওয়ার পর লঞ্চের ডেকে এসে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম জ্যোৎস্না ভরা জঙ্গলের অদ্ভুত এক মায়াবী পরিবেশ। সমগ্র মন প্রসন্নতায় ভরে উঠলো।
উপসংহার
এইভাবে কয়েকটি দিন সুন্দরবনে প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে আমরা পুনরায় নিজেদের জীবনে ফিরে এলাম। প্রকৃতির এই পরম আশ্রয়ে ওই কয়েকটি দিন আমার পরবর্তী সারা বছরের জন্য বাঁচার রসদ জুগিয়ে দিল। সেজন্যই হয়তো আজও রাতে শহরের ঘরের নরম বিছানায় ঘুমাতে গেলে সুন্দরবনে ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি মনে ভেসে আসে। আর এখানেই ভ্রমণের প্রকৃত সার্থকতা।
আরও দেখো: নবম শ্রেণির সকল বাংলা রচনা PDF
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, বিবরণমূলক রচনা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা pdf উপরের ‘রচনা PDF’ অপশন থেকে সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের ওপর রচনার লিংক উপরে দেওয়া আছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় রচনাটি সংগ্রহ করতে পারো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post