মংডুর পথে প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : লেখক মংডুতে গিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের যেসব ক্ষুদ্র জাতিসত্তা আছে তাদের সম্পর্কে লেখক কিছুই জানেন না। তাদের খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণ, ভাষা-সংস্কৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এসব সংস্কৃতি তৈরি করে একটি দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিম-ল। আর এগুলো সম্পর্কে না জানলে যে নিজের দেশের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না, লেখক এখানে তাই বোঝাতে চেয়েছেন।
মংডুর পথে প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘ব্যান্ডেল রোড তাদের স্মৃতি বহন করছে’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘ব্যান্ডেল রোড তাদের স্মৃতি বহন করেছে’—বলতে বোঝানো হয়েছে, ব্যান্ডেল রোড পর্তুগিজদের স্মৃতি বহন করছে।
ব্রিটিশ যুগ শুরু হওয়ারও প্রায় একশ বছর আগে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে এসে বসতি স্থাপন করে। তারা নিজেদের বসতির জায়গাকে ব্যান্ডেল বলত। সেই সূত্র ধরে চট্টগ্রামে এখনো ব্যান্ডেল রোড তাদের স্মৃতি বহন করছে। এতে প্রমাণিত হয় যে সেখানে পর্তুগিজরা ছিল।
২. ‘মংডুর মহিলারা চির স্বাধীন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: মংডুর মহিলারা চির স্বাধীন বলতে তাদের ইচ্ছেমতো পেশা বেছে নেওয়া এবং চলাফেরার স্বাধীনতাকে বেঝানো হয়েছে।
মংডুর পুরুষদের মতো নারীরাও সব কাজ করছে, ব্যবসায় করছে অর্থাৎ তারা চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ নয়। মংডুর নারীরা ঘরে বন্দি হয়ে থাকে না। দোকানও করে নারীরা। তাদের চলাফেরায় কোনো বাধা নেই। সমাজে এ নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নারীদের অবাধ স্বাধীনতা বোঝাতে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
৩. ‘ব্যান্ডেল’ বলতে কী বুঝ?
উত্তর: ‘ব্যান্ডেল’ বলতে পর্তুগিজদের বসতির স্থানকে বোঝায়।
পর্তুগিজরা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে চট্টগ্রামে এসেছিল। তারা চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেছিল। এ বসতি স্থানকে তারা ব্যান্ডেল বলত। চট্টগ্রামের ব্যান্ডেল রোড এখন তাদের স্মৃতিই বহন করে।
৪. মিয়ানমারের মেয়েরা রাস্তার পাশে দোকান নিয়ে বসে কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মিয়ানমারের মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য রাস্তার পাশে দোকান নিয়ে বসে।
মিয়ানমারের মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি স্বাধীন। মিয়ানমারের খাবারের দোকানগুলোর মালিক মহিলারা। একেবারেই ঝুপড়ি দোকানে বসে মহিলারা বেচাকেনা করে। সেখানে যেসব রেস্তরাঁ রয়েছে সেগুলোর মালিকও মহিলা। সেখানে মহিলারা নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতেই অর্থোপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
৫. ‘তাহলে কী করে দেশের সব মানুষের সঙ্গে আমার সখ্য নিবিড় হবে’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: চট্টগ্রামের রাখাইনদের সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভেবে লেখক বলেছেন, ‘তাহলে কী করে দেশের সব মানুষের সঙ্গে আমার সখ্য নিবিড় হবে।’
লেখক মংডুতে গিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের যেসব ক্ষুদ্র জাতিসত্তা আছে তাদের সম্পর্কে লেখক কিছুই জানেন না। তাদের খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণ, ভাষা-সংস্কৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এসব সংস্কৃতি তৈরি করে একটি দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিম-ল। আর এগুলো সম্পর্কে না জানলে যে নিজের দেশের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না, লেখক এখানে তাই বোঝাতে চেয়েছেন।
৬. লেখক মংডুতে বোরকা পরা মহিলার ছবি তুলতে গেলে ছাতা দিয়ে সে আড়াল তুলে দিল কেন?
উত্তর: বোরকা পরা মহিলা পর্দা রক্ষা করার জন্য ছাতা দিয়ে আড়াল তুলে দিল।
লেখক হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পান বোরকা পরা মহিলা। মহিলাটি পাইক্যায় যাচ্ছে। তার মাথায় ছাতা। লেখক তার ছবি তুলতে চাচ্ছেন বুঝতে পেরে সে ছাতা দিয়ে মুখ আড়াল করে ফেলে। কারণ ইসলাম ধর্মের বিধান লঙ্ঘন করতে সে চায়নি। চায়নি বলেই সে সাধারণ পোশাকের বদলে বোরকা পরেছে।
৭. পাইক্যা যানবাহনটি কেমন?
উত্তর: পাইক্যা হলো এক ধরনের তিন চাকার রিকশা, যা মিয়ানমারসহ মংডুর সর্বত্র দেখা যায়।
পাইক্যা তিন চাকার রিকশা হলেও এটি অনেকটা মোটরবাইকের মতো। মোটরবাইকের পাশে আরেকটি চাকা লাগিয়ে ক্যারিয়ারে বউ বাচ্চা নেয়ার মতো যেমন জায়গা থাকে, পাইক্যাও তেমনি এক ধরনের যানবাহন।
৮. ‘লুঙ্গি, ফুঙ্গি ও প্যাগােড়া এই তিন নিয়ে মিয়ানমার।’—বাক্যটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: মিয়ানমারের সংস্কৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক আলােচ্য উক্তিটি করেছেন।
মংডুর অনেক জায়গা ঘুরেও লেখক কারও পরনে প্যান্ট দেখেননি। বর্মিরা সবাই লুঙ্গি পরেছেন। অফিস কাচারিতেও মানুষ লুঙ্গি পরেছে। আবার মিয়ানমারে ফুঙ্গি তথা বৌদ্ধ ভিক্ষুর সংখ্যাও বেশি। বৌদ্ধদের ধর্ম-উপাসনালয় প্যাগোডার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তাই লেখক বার্মাতে এসবের আধিক্য দেখে বলেছেন ‘লুঙ্গি, ফুঙ্গি ও প্যাগোডা এ তিন নিয়ে মিয়ানমার।
৯. মংডুতে মহিলারা চির স্বাধীন কেন?
উত্তর: মংডুর মেয়েদের পছন্দমতো পেশা বেছে নেওয়া এবং চলাফেরার স্বাধীনতা থাকায় তাদেরকে চিরস্বাধীন বলা হয়েছে।
মংডু শহরের মেয়েরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার মধ্য দিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। তারা শহরের রাস্তাঘাটে অবাধে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। রাস্তার মোড়ের পানের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্তোরার মালকিন হওয়ার সুযোগও তারা লাভ করে। আর এজন্যই তাদেরকে চিরস্বাধীন বলা হয়েছে।
১০. চীবর কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গৈরিক পোশাককে চীবর বলে।
বিপ্রদাশ বড়ুয়া তাঁর ‘মংডুর পথে’ রচনায় এ সম্পর্কে লিখেছেন—ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো। গায়ে আলাদা অন্য এক টুকরা চীবর থাকে।
হাতকাটা ও এক কাঁধ কাটা একটা গেঞ্জি থাকে, আর কোমরে বেল্টজাতীয় অর্থাৎ সেলাই করা কাপড়ের কোমর বন্ধনী থাকে। এসব মিলে ত্রিচীবর। ভিক্ষুদের চীবর বিশেষ মাপে এবং অনেক জোড়া দিয়ে সেলাই করা হয়। এটি নিয়ম। সাধারণত লাল ও লালের কাছাকাছি রঙে চীবরে রং করা হয়।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা বই থেকে মংডুর পথে প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, বর্ণনামূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post