মমতাদি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর : মমতাদির আত্মসম্মানে আঘাত লাগলে মমতাদি পরদিন থেকে আর আসত না। মমতাদির আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রবল। তিনি অভাবের তাড়নায় কাজ করতে এসেছেন সত্য কিন্তু তিনি অপমানিত হলে কাজ ছেড়ে দেয়ার ক্ষমতাও তার ছিল। ফলে গৃহকর্ত্রী কোনো কারণে তাকে সন্দেহের চোখে দেখলে বা অসম্মান করলে পরদিন থেকে মমতাদি আর আসত না।
মমতাদি গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. মমতাদির চোখ সজল হয়ে উঠেছিল কেন?
উত্তর: গল্পে মমতাদির চোখ সজল হয়ে উঠেছিল কারণ, তিনি যখন জানতে পারলেন যে তার মাসিক বেতন পনেরো টাকা ঠিক করা হয়েছে, তখন তিনি কৃতজ্ঞতায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি হয়তো বারো টাকার আশায় ছিলেন, কিন্তু তার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পাওয়া এবং মার সহানুভূতিশীল আচরণে তিনি অভিভূত হয়ে যান। তবে, মমতাদি স্বভাবতই আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ছিলেন, তাই তিনি তার কৃতজ্ঞতাকে শব্দে প্রকাশ না করে নীরবে চোখের জলে প্রকাশ করেছিলেন।
২. ‘দু ফোঁটা দুর্বোধ্য রহস্য’ বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দু-ফোঁটা দুর্বোধ্য রহস্য বলতে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন গৃহকর্ত্রীর কাছে ভালো ব্যবহার পাওয়ার কৃতজ্ঞতায় ফেলা মমতাদির চোখের জলকে।
গৃহকর্ত্রী যখন মমতাদিকে খোকাকে আদর করার পূর্ণ অধিকার দিয়ে গেলেন তখন মমতাদির মনে গভীর ভাবাবেগের উদয় হলো। ভালো লাগা, মর্যাদা আর আত্মগৌরবে তার চোখের জল টপটপ করে ঝরে পড়ল। খোকাকে আদর করার কারণে সে অপমানিত হলে হয়তো তার চোখ শুকনোই থাকত। এজন্যই তার চোখের জলকে ‘দু’ফোটা দুর্বোধ্য রহস্য’ বলা হয়েছে।
৩. মমতাদি লেখকের বাড়িতে কাজ নিয়েছিল কেন বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: সংসারে দারিদ্র্যের কারণে মমতাদি লেখকের বাড়িতে কাজ নিয়েছিলো।
মমতাদি একজন মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী। কিন্তু সংসারে প্রচ- অভাবের কারণে তাকে পর্দা ঠেলে বাইরে আসতে হয়েছে। তার স্বামীর চার মাস ধরে চাকরি নেই। ঘরে খাবার নেই। তীব্র অভাবে বাধ্য হয়ে মমতাদি বাইরে এসেছে এবং কাজ খুঁজতে বেরিয়েছে। আর এই প্রেক্ষাপটেই তিনি লেখকের বাড়িতে কাজ নিয়েছেন।
৪. “বেশী আস্কারা দিও না। জ্বালিয়ে মারবে”—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: স্কুলপড়ুয়া ছেলেটির চঞ্চলতা বোঝানোর জন্য গৃহকর্ত্রী প্রশ্নোক্ত মন্তব্য করেছেন।
‘মমতাদি’ গল্পে স্কুলপড়ুয়া ছেলেটি শিশুসুলভ আচরণ করে। সে মমতাদির কাছে ছোট ভাইয়ের মর্যাদা লাভ করে। মমতাদিও ছেলেটির কাছে বড় বোনের মর্যাদা পায়। ছেলেটিকে কাছে নিয়ে আদর করতে গেলে গৃহকর্ত্রী ছেলেটির শিশুসুলভ চঞ্চলতার কথা মমতাদিকে জানিয়েছেন।
৫. রাঁধুনী বলায় চমকে মমতাদির মুখ লাল হলো কেন?
উত্তর: মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী হয়েও মমতাদি বাধ্য হয়ে রাঁধুনীর কাজ করতে এসে এই প্রথম রাঁধুনী নামে সম্বোধিত হওয়ায় চমকে তাঁর মুখ লাল হলো।
মমতাদি অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে রাঁধুনীর কাজ করতে এসেছেন। স্বামীর বেকারত্ব এবং সংসারের অভাব তাঁকে উপার্জনের জন্য পর্দা ঠেলে বাইরে আসতে বাধ্য করেছে। তিনি কখনো রাঁধুনীর কাজ করেননি। তিনি কখনোই রাঁধুনী নামে সম্বোধিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই জীবনে প্রথম তাঁকে কেউ রাঁধুনী বলে সম্বোধন করায় চমকে তার মুখ লাল হলো।
মমতাদি গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
৬. মমতাদি প্রথা ভঙ্গ করে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছেন কেন?
উত্তর: মমতাদি অভাবের তাড়নায় প্রথা ভঙ্গ করে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছেন।
মমতাদি একজন মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী। তার স্বামী চার মাস যাবৎ বেকার। এ অবস্থায় সংসার চালানোর জন্য মমতাদিকে প্রথাভঙ্গ করতে হয়। সামাজিক প্রথামতো নারীদের অন্তঃপুরে থাকার কথা। কিন্তু অভাব মমতাদির জীবনে এর ব্যত্যয় ঘটায়। তিনি বাধ্য হন বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ খুঁজতে।
৭. মমতাদি ভাঁড়ার ঘরে ছোট ছেলেটিকে রসগোল্লা ও সন্দেশ খেতে বাধা দিলেন কেন?
উত্তর: অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অসুখ হবে ভেবে মমতাদি ভাঁড়ার ঘরে ছোট ছেলেটিকে রসগোল্লা ও সন্দেশ খেতে বাধা দিলেন।
‘মমতাদি’ গল্পে বাড়িতে অনেক সন্দেশ ও রসগোল্লা নিয়ে বাড়িতে কুটুম আসে। ভাঁড়ার ঘরে গিয়ে বাড়ির ছোট ছেলেটি সেই রসগোল্লা ও সন্দেশ অনবরত মুখে পুরে চলে। মমতাদি এটি দরজার পাশ থেকে দেখে বাধা দেন। কেননা মাত্রাতিরিক্ত মিষ্টি খেলে ছেলেটির পেট খারাপ করতে পারে। এজন্য মমতাদি বাদ সাধেন।
৮. ‘বেশি আস্কারা দিও না, জালিয়ে মারবে।’ মা কাকে, কেন একথা বলেছিলো?
উত্তর: শৈশবে লেখক খুব দুষ্টু প্রকৃতির থাকায় লেখকের মা মমতাদিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিলো। মমতাদি অভাবের তাড়নায় লেখকের বাসাতে কাজ করতে এসেছিল। রান্নাঘরে কাজ করবার সময় লেখক মমতাদির সঙ্গে খোশ গল্প করত। মমতাদি স্নেহ কাঙ্গাল লেখককে পুত্র স্নেহে আদর করে কাছে টেনে নিল। মমতাদির স্নেহকুড়ানোর প্রবল ভাব লেখকের কিশোর মনে জেগে উঠল। মমতাদির ও লেখকের মায়া-মমতা আর স্নেহের এমনভাব দেখে লেখকের মা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিলেন।
৯. কাজগুলিকে সে আপন করে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকালো না’ কেন?
উত্তর: কাজের শৃঙ্খলা ও ক্ষিপ্রতার জন্য মমতাদি কাজগুলিকে আপন করে নিল, মানুষগুলোর দিকে ফিরেও তাকালো না। ‘মমতাদি’ গল্পে মমতাদি ভালো ঘরের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও লেখকের বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ নেন। কারণ তার স্বামীর কোনো চাকরি ছিলো না।
চাকরি না থাকার কারণে তার সংসার চলত না। তাই বাধ্য হয়ে লেখকের বাড়ি কাজ করতে এসেছিল। কাজে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তাই সে কোনো দিকে না তাকিয়ে নিঃশব্দে একমনে যত্নসহকারে নিজের বলে কাজগুলিকে আপন করে নেয়।
১০. বেশি আস্কারা দিওনা, জ্বালিয়ে মারবে।’—মা কাকে, কেন একথা বললেন?
উত্তর: ছোটবেলায় লেখক খুব দুষ্টু থাকায় লেখকের মা মমতাদিকে লক্ষ্য করে আলোচ্য কথাটি বলেছে। মমতাদি লেখকের বাসায় কাজ করতে এসেছিল। রান্নাঘরে কাজ করার সময় মমতাদির সঙ্গে লেখক গল্প করতো।
মমতাদি লেখককে আদর করে কাছে টেনে নিল। মমতাদির, স্নেহ কুড়ানোর প্রবল ভাব লেখকের বালক মনে জেগে উঠল। মমতাদির ও লেখকের মায়া-মমতা আর স্নেহের এমন ভাব দেখে লেখকের মা আলোচ্য কথাটি বললেন।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে মমতাদি গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post