মহিলা ও পুরুষ শারীরিক গঠনগত দিক দিয়ে ভিন্ন হওয়ার কারণে তাদের বিভিন্ন শারীরিক ইবাদতে অল্প-বিস্তর ভিন্নতা পাওয়া যায়। স্বভাবতই পুরুষ ও মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম এর মধ্যে পার্থক্য থেকে যায়। মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়মের মধ্যে ভিন্নতাগুলো জানা থাকলে বাকি নামাজগুলো পড়ার মধ্যেও যে ভিন্নতা তা সহজে জানতে পারা যায়।
প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির জন্য ইমান আনার পরে ইসলামের যে বিষয়টির প্রতি সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে নামাজ। কেননা, পরকালে সর্বপ্রথম নামাজের হিসেব নেওয়া হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসেব সহজভাবে দিতে পারবে তার বাকি হিসেব সহজ হয়ে যাবে। ইসলামের অন্যান্য ইবাদতে বিভিন্ন শারীরিক/আর্থিক সমস্যার কারণে ছাড় দেওয়ার অনুমতি থাকলেও নামাজে ছাড় দেওয়ার অনুমতি নেই।
মহিলারা কীভাবে ফজরের নামাজ আদায় করবেন তা জানতে চাচ্ছেন বা যারা নামাজ আদায় করেন কিন্তু আপনার নামাজ নিয়ে আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে তাহলে আপনার জন্য আমাদের এই আর্টিকেলটি। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে নামাজ পড়ার বিভিন্ন দোয়া ও সূরাগুলোর বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থগুলোও দেয়া হয়েছে।
মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম
ফজরের নামাজ চার রাকাত। দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ। মহিলা ও পুরুষদের ফজরের নামাজ আদায় করার নিয়মের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে তা হচ্ছে- হচ্ছে নামাজ পড়ার নিয়ম, নামাজ পড়ার স্থান ও নামাজ পড়ার সময় পরিহিত পোশাক।
মহিলাদের নামাজের স্থান
মহিলারা নামাজ আদায় করবে নিজ কক্ষে। নামাজের সময় পোশাক হতে হবে এমন যেন মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পা ব্যতীত শরীরের আর কোন অংশ দেখা না যায়। কোন টাইট কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়া যাবে না। ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করে নামাজ আদায় করতে হবে।
নামাজ আদায় করা একটি ফরজ বিধান। ঠিক তেমনই, মহিলাদের জন্য পর্দা করাও ফরজ বিধানের অন্তর্ভুক্ত। এমন জায়গায় নামাজ আদায় করা কখোনই উচিত হবে না যে জায়গায় পর্দা করা সম্ভব না। মানুষ চলাচল করবে এমন স্থানে নামাজ আদায় করা উচিত না। নিজ কক্ষে নামাজ আদায় করা উত্তম। এমন কোন স্থানে যেখানে পর্দা নিশ্চিত করে নামাজ আদায় করা সম্ভব সেখানে আদায় করুন।
এমন কোন স্থান যদি থেকে থাকে যে স্থানে নারী তার পর্দা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এবং মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম গুলো যথাযথ অনুসরণ করে জামাআত এর মাধ্যমে নামাজ আদায় করতে পারবে তাহলে সেখানেও নামাজ আদায় করার অনুমতি আছে। তবে, তা ওতোটা জরুরী নয় যে আপনাকে সে স্থানে গিয়ে সবসময় নামাজ পড়তেই হবে। একমাত্র তখনই এমন জায়গায় নামাজ পড়ুন যখন পর্দা নিশ্চিত হয় এমন জায়গা পাওয়া সম্ভব না।
মহিলাদের নামাজের পোশাক
নামাজের সময় মহিলাদের এমন পোশাক পড়তে হবে যা গলা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢেকে রাখবে। এমন ওড়না বা হিজাব পরিধান করতে হবে যা দিয়ে মাথার কোন অংশ এমনকি একটি মাথার চুলগুলোও যেনো দেখা না যায়। সাথে খেয়াল রাখতে হবে যেন বুকের যেকোন অংশ, ঘাড় ও কান হিজাব বা ওড়নার তলে থাকে।
নামাজ পড়ার সময় মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ব্যতীত অন্য কোন অংশ বেরিয়ে না যায় এই দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখবে হবে। নামাজের মধ্যেও পর্দা মেনে চলতে হবে। এটাও নিয়মের মধ্যে পড়ে।
মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম
পুরুষ ও মহিলাদের ফজরের নামাজে পড়ার সূরা ও দোয়া সমূহের মধ্যে কোন ভিন্নতা পাওয়া যায় না। তবে, ফজরের নামাজ পড়ার নিয়মের মধ্যে অল্প বিস্তর ভিন্নতা দেখা যায়। এখন আমরা সেগুলো স্টেপ বাই স্টেপ আলোচনা করবো।
নামাজের সময় হয়ে গেলে পাক পবিত্র হয়ে কেবলার দিক করে দাঁড়ানো। মহিলাদের নামাজের ক্ষেত্রে ইকামত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
১. নিয়ত: প্রথমত নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে। অর্থ্যাৎ, নামাজ পড়বো এটা সংকল্প করে নামাজে দাড়ানো এটাই নিয়ত। নামাজের জন্য আলাদাভাবে মুখে মুখে বা মনে মনে নিয়ত বলা বাধ্যতামূলক না।
২. তাকবীরে তাহরিমা: আল্লাহু আকবার বলে হাতদুটো কাঁধ বরাবর বরাবর উঠানো। হাত উঠানোর সময় খেয়াল রাখবেন হাত যেন কাঁধের উপর না উঠে। এমনভাবে হাত উঠাবেন যেন হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কাঁধের উপরে না উঠে। তাকবীরে তাহরিমার সময় দুহাত ওড়নার ভীতরে রাখতে হবে।
হাতদুটি কাঁধ পর্যন্ত তুলে বুকের উপর বাম হাত রেখে তার উপর ডান হাত রাখতে হবে। হাত বাঁধার সময় পুরুষদের মতো ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরতে হবে না। বরং, ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর রেখে চেপে ধরতে হবে।
৩. কিয়াম করা: কিয়াম অর্থ সোজা হয়ে দাঁড়ানো। যদি শারীরিক অসুস্থতা না থেকে থাকে তাহলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। শারীরিক অসুস্থতা থাকলে বসে নামাজ আদায় করা, বসে সম্ভব না হলে শুয়ে, শুয়েও সম্ভব না হলে চোখের ইশারায় নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তত হওয়া।
মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম এর মধ্যে কিয়ামে যে ভিন্নতা বিদ্যমান তা হচ্ছে- কিয়ামে দাঁড়ানোরত অবস্থায় উভয় পা মিলিয়ে দাড়াবে। দুই পায়ের মধ্যেখানে কোন ফাঁকা থাকবে না। বিভিন্ন ফতওয়া অনুযায়ী দু-পায়ের মাখখানে ৪ আঙ্গুল সমপরিমান পর্যন্ত ফাঁক রাখা যাবে। এসময় চোখ সিজদার স্থানে থাকবে।
৪. কিরাত পাঠ করা: সম্পুর্ণরুপে দাঁড়ানো হয়ে গেলে কিরাত পাঠ করতে হবে। প্রথমে ছানা, তারপর আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম বলে সূরা ফাতিহা পড়া এবং সবশেষে সূরা ফাতিহার সাথে আরোও একটি সূরা পাঠ করা।
৫. ছানা পাঠ: উচ্চারণ : সুবাহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালাজাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতপূর্ণ, তোমার মহিমা সুউচ্চ, তুমি ব্যতীত কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়।
সানার পর পড়তে হয় : “আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম”।
অর্থ : বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা চাচ্ছি।
৬. এরপর সূরা ফাতিহা পড়তে হয়: বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম। আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন। আররহমা-নির রাহি-ম। মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন। ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন। ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম। সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন।
অর্থ : শুরু করছি পরম দয়াময় ও করুণাময় আল্লাহ তায়ালার নামে। সমস্ত প্রশংসা সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা আল্লাহ তায়ালার। যিনি অনন্ত মেহেরবান ও অতিশয় দয়ালু। যিনি বিচার দিবসের একমাত্র মালিক। আমরা শুধুমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং সাহায্যর জন্য তোমারই নিকট প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সহজ-সরল ও সঠিক পথ দেখাও। সেসব লোকের পথ, যাদের তুমি পুরস্কৃত করেছো। তাদের পথ নয়, যারা তোমার ক্রোধের শিকার ও যারা পথভ্রষ্ট।
সূরা ফাতিহা পাঠ হয়ে গেলে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে হয়। সেই সূরাটি সর্বনিম্ন তিন আয়াত পরিমান হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নামাজের ছোট সূরা সমূহ জেনে নিতে পারেন। তিন আয়াতের সীমা হচ্ছে সেই সূরায় কমপক্ষে ৩০ টি হরফ হতে হবে। যেমন- সূরা কাওসার, সূরা কাফিরুন, সূরা নাসর, সূরা লাহাব।
৭. রুকু করা: কিরাত পড়া হয়ে গেলে “আল্লাহু আকবার” বলে রুকুতে যাওয়া। রুকুতে বেশী ঝুকতে হবে না। সামান্য নত হলেই হবে। এতটুকু ঝুকতে হবে যেন দুই হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌছায়। পুরুষেদের মতো মাথা ও পিঠকে সমান্তরাল করতে হবে না। পিঠ এবং হাঁটু সামান্য বাঁকা থাকবে।
মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে রুকু করবেন। রুকুর সময় বগল ও বাহু যথাসম্ভব মিলিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। রুকুতে হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলোকে মিলিত রাখা। হাত ও পায়ের আঙ্গুলের মাঝে ফাক রাখা যাবে না। হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিত করে হাত দিয়ে হাঁটু আকড়ে ধরা।
রুকুতে যাওয়া হয়ে গেলে রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ বলতে হয়। এই দোয়া রুকুতে গিয়ে সর্বনিম্ন তিনবার বলতে হবে। সবোর্চ্চ ৫ বার কিংবা ৭ বারও পড়া যায়। রুকুর তাসবিহ পাঠ করে দাড়াতে হবে।
রকুর তাসবীহ : সুবহা-না রব্বিয়াল আ`যিম।
অর্থ : আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা ও মহানুভবতা ঘোষণা করছি।
রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় বলতে হয়।
উচ্চারণ : সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা।
অর্থ : মহান রব সেই ব্যাক্তির প্রশংসা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে।
রুকু থেকে দাঁড়ানো হয়ে গেলে বলতে হয়।
উচ্চারণ : রব্বানা লাকাল হামদ।
অর্থ : হে আল্লাহ তায়ালা, সমস্ত প্রশংসা কেবল তোমারই।
৮. সিজদা করা: রুকু থেকে সম্পুর্ণ দাড়ানোর পরে সিজদা করতে হবে। “আল্লাহু আকবার” বলে প্রথম সিজদা দিতে হবে। সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাত, তারপর নাক ও সবশেষে কপাল মাটিতে রাখতে হবে। সিজদায় হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখতে হবে। হাত মাটিতে বিছিয়ে রাখতে হবে। সাধ্যনুযায়ী বাহু ও বগল এবং বাহু ও পাঁজর মিলিত রাখা।
কোমড় উঁচু রাখা যাবে না। পেট ও উরু যথাসম্ভব একসাথে লাগিয়ে রাখতে হবে। যতটা সম্ভব হাঁটুর কাছাকাছি সিজদা করা। দুই পা ডানদিকে বাহির করে দিয়ে জমিনে বিছিয়ে রাখতে হবে।
সিজদায় যাওয়া হয়ে গেলে সিজদা থাকাকালীন অবস্থায় এই দোয়া বলতে হয়। ৩ বার, ৫ বার অথবা ৭ বার।
উচ্চারণ : সুবহানা রাব্বিয়াল আলা।
অর্থ : আমার মহান রব যিনি সুমহান। তার’ই পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
দোয়া পড়া হয়ে গেলে “আল্লাহু আকবার” বলে বসা। হাদিসে মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম এর মধ্যে যেভাবে বসার কথা এসেছে তা হচ্ছে- বসার সময় দুই পা ডানদিকে বের করে দিয়ে মাটিতে বিছিয়ে দিতে হবে। ডান পায়ের সামান্যতম অংশ বাম পায়ের উপরে রাখতে হবে। তারপর বাম নিতম্বের উপরে বসতে হবে। হাতের ও পায়ের আঙ্গুলদ্বয়ের মাঝে ফাক না রাখা। হাতদুটো রানের উপর রাখা।
প্রথম সিজদা দিয়ে বসার পরে এই দোয়া পড়াটা সুন্নত।
উচ্চারণ: আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে রহম কর ও আমাকে রিজিক দান কর।
দোয়া পাঠ করা হয়ে গেলে “আল্লাহু আকবার” বলে আবার সিজদা করা। সিজদা করে আবার সিজদায় গিয়ে যে দোয়া পড়তে হয় সেটি পড়তে হবে। সর্বনিম্ন ৩ বার। ৫ বার কিংবা ৭ বারও পড়া যায়।
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা।
অর্থ: আমার মহান রব যিনি সুমহান। তার’ই পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
দ্বিতীয় সিজদা দেওয়া হয়ে গেলে “আল্লাহু” আকবার বলে দাড়ানো। এভাবে এক রাকাত নামাজ পুর্ন হলো।
মহিলাদের ফজরের দ্বিতীয় রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রথম রাকাত নামাজ পড়া শেষ করে দাড়ানোর পরে দ্বিতীয় রাকাত নামাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় রাকাত নামাজে ছানা ও “আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম” পড়া লাগবে না। শুধু “বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম” বলে সূরা ফাতিহা পড়ে তার সাথে আরও একটা সূরা পড়তে হবে। তারপর প্রথম রাকাতের মতো রুকু ও সিজদা শেষ করতে হবে।
১০. শেষ বৈঠকে বসা: মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম এর মধ্যে হাদিসে শেষ বৈঠকে যেভাবে বসার কথা এসেছে তা হচ্ছে- দ্বিতীয় সিজদা দেওয়ার পরে না দাঁড়িয়ে সোজা বসে যেতে হবে। বসার সময় দুই পা ডানদিকে বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপরে বসতে হবে। শেষ বৈঠকের সময় হাতের আঙুলগুলো মিলিয়ে রানের উপর রাখা। এভাবে বসে প্রথমে তাশাহহুদ, পরে দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পড়তে হবে।
১১. আত্তাহিয়্যাতু: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত-ত্বায়্যিবাতু; আস-সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ; আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন; আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ: আমার সকল জান, মাল, নামাজ ও সকল পবিত্রতা শুধু এবং শুধুই আল্লাহর জন্য। হে নবী, আপনার উপর আল্লাহর কৃপা, রহমত, বরকত, শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। আমাদের এবং আল্লাহর সকল পূন্যবান বান্দাদের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও সর্বশেষ রাসুল।
১২. দরুদ শরীফ: : আল্লা-হুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি মহান। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত মহামহিম।
১৩. দোয়া মাসূরা: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা । ওয়ালা ইয়াগফিরুজ জূনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লি, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা; ওয়ার হামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক অত্যাচার ও জুলুম করেছি। নিঃসন্দেহে গুনাহ ক্ষমাকারী শুধু তুমি। তুমি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার প্রতি রহমত বর্ষিত কর। নিশ্চয়ই তুমিই করুণাময় ও ক্ষমাদানকারী।
আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পড়া হয়ে গেলে সালাম ফিরাতে হবে।
প্রথমে ডানদিকে মুখ ফিরিয়ে তারপর বামদিকে মুখ ফিরাতে হবে। ডানদিকে, ডান কাঁধের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে হবে “আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” আবার, বামদিকে বাম কাঁধের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে হবে “আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ”।
এভাবে আপনার দুরাকাত ফরজ নামাজ শেষ হলো।
ফজরের সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম
ফজরের সুন্নত নামাজ দু’রাকাতের হয়ে থাকে। ফজরের দু’রাকাত ফরজ নামাজ যেভাবে আদায় করবেন সুন্নত নামাজও ঠিক সেভাবেই আদায় করবেন। আপনি যদি দুই এর অধিক তিন বা চার রাকাত নামাজ আদায় করতে চান সেক্ষেত্রে নামাজ পড়ার দোয়া ও নিয়মের মধ্যে একটু ভিন্নতা আছে। আপনারা যদি তিন বা চার রাকাত নামাজ আদায় করার নিয়ম জানতে চান তাহলে পড়তে পারেন নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া।
শেষ কথা
মহিলাদের ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম গুলো অনুসরণ করে একজন মহিলা শুদ্ধভাবে ফজরের নামাজ আদায় করতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ আপনি যদি এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করে ফজরের নামাজ আদায় করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য বাকি ওয়াক্তের নামাজগুলো আদায় করা সহজ হয়ে যাবে।
নামাজ পড়ার সময় এমন অনেকে আছে যারা নামাজ পড়ার সময় রীতিমতো প্রতিযোগীতার প্রস্তুতি নেয়। এভাবে নামাজ আদায় করা যাবে না। নামাজ আদায় করতে হবে ধীরে-সুস্থে। নামাজের প্রতিটি দোয়া ও সূরা স্থিরতার সাথে সাথে পড়তে হবে।
আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের কোর্সটিকা ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করতে পারেন এই লিংক থেকে।
Discussion about this post