মাঝি কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ : মাঝি কবিতায় মা ও মাতৃভূমির প্রতি কবির গভীর মমতা ও ভালোবাসার চিত্র ফুটে উঠেছে। কবিমন নদীর ওপারে যেতে ব্যাকুল। যেখানে নদীর তীরে বাঁধা রয়েছে সারিবদ্ধ নৌকাগুলো।
কৃষকেরা লাঙল কাঁধে ফেলে নৌকা পার হয়, রাখাল তার গরু সাঁতরে নিয়ে নদী পার হয়। সন্ধ্যাবেলায় কবিমনে ভেসে ওঠে ওপারের ঝাউডাঙায় শিয়ালের হাকডাক। প্রকৃতির এমন অপরূপ দৃশ্য দেখে কবির মনে তীব্র ইচ্ছে জাগে সে খেয়াঘাটের মাঝি হবে। মাঝি হলে সে সকাল-বিকাল নদীতে খেয়া পারাপার করতে পারবে।
মাঝি কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
দুপুর বেলা সে বাড়ি ফিরে মায়ের কোলে পরম আদরে খাবার খাবে। সন্ধ্যায় আবার সে নৌকা পারাপারে চলে যাবে। কবির ইচ্ছে, সে তার বাবার মত বিদেশে কাজে যাবে না। বরং তার মায়ের কাছে, মায়ের আচলেই থাকবে।
কবি পরিচিতি
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (উপাধি: কবিগুরু)
জন্ম—মৃত্যু: ৭ মে, ১৮৬১ (জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি) — ৭ আগস্ট, ১৯৪১ (জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি)
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম: বলাকা, পুনশ্চ, গোরা, অচলায়তন, কালান্তর, চিত্রা, সোনার তরী, নৈবেদ্য, খেয়া।
পুরস্কার/সম্মাননা: গীতাঞ্জলী কাব্য রচনার জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
কবিতা বুঝি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। এই কবিতায় কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১২০ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘মাঝি’ কবিতার লেখক কে?
উত্তর: ‘মাঝি’ কবিতার লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২. ‘মাঝি’ কবিতায় কবির কোথায় যেতে ইচ্ছে করে?
উত্তর: ‘মাঝি’ কবিতায় কবির নদীর ওপারে যেতে ইচ্ছে করে।
৩. নদীর ওপারে কী আছে?
উত্তর: নদীর ওপারে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ডিঙি নৌকা সারিবদ্ধভাবে বাঁধা রয়েছে। কিষাণেরা লাঙল কাধে করে নদী পার হয়, জেলে নদীতে জাল টেনে মাছ ধরে। গরু-মহিষ সাঁতরে নিয়ে নদী পার হয় রাখাল। নদীর ওপারে দিনের বেলা মানুষের কোলাহল থাকলেও রাতের বেলা শেয়াল ডাকে ঝাউঘেরা ডাঙায়। কবি শুনেছেন সেই ঝাউডাঙার ভিতরে জলাভূমি আছে, যেখানে চখাচখী পাখির আসর বসে। সেখানকার শরবনে মানিকজোড় পাখির বাসা রয়েছে। আর কাদায় লেপ্টে রয়েছে, কাদাখোঁচা পাখির বিচরণের চিহ্ন। সন্ধেবেলা ঘরের ছাদের উপর দাঁড়িয়ে কবি খেয়াল করেছেন নদীর ওপারের শাদা কাশের বন, যেখানে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়ে।
৪. কিষাণের কীভাবে নদী পার হয়ে যায়?
উত্তর: কিষাণের লাঙল কাঁধে ফেলে নদী পার হয়ে যায়।
৫. রাখালের ছেলে কীভাবে নদী পার হয়ে যায়?
উত্তর: রাখালের ছেলে গরু-মহিষ সাঁতরে নিয়ে নদী পার হয়ে যায়।
৬. কখন নদী থেকে সবাই ঘরে ফেরে?
উত্তর: যখন সন্ধ্যা হয়, তখন সবাই নদী থেকে ঘরে ফেরে।
৭. শেয়ালগুলো কখন এবং কোথায় ডেকে ওঠে?
উত্তর: শেয়ালগুলো রাত-দুপুরে (গভীর রাতে) ঝাউডাঙার মধ্যে ডেকে ওঠে।
৮. বড় হয়ে কবি কী হতে চান? এবং কেন?
উত্তর: বড়ো হয়ে কবি মাঝি হতে চান। আর তা হতে পারলে কবি সারাবেলা এপার-ওপার নৌকা পারাপার করবেন। তার নৌকা পারাপারের দৃশ্য দেখবে স্নানরত ছেলেমেয়েরা। মাছ বিক্রি করে কবি দুপুরবেলা ঘরে ফিরে মায়ের কাছে খাবার চাইবেন। সন্ধেবেলাও কবি ঠিকঠাকমতো ঘরে ফিরবেন। কবি সব সময়ে মায়ের আশে পাশেই থাকতে চান; বাবার মতো কখনো বিদেশ-বিভুইয়ে পড়ে থাকতে চান না। তাই মা যদি রাজি থাকেন তাহলে কবি বড়ো হয়ে খেয়াঘাটের মাঝি হতে চান।
৯. চখাচখী পাখি কখন আসে?
উত্তর: বর্ষাকাল শেষ হলে চখাচখী পাখি আসে।
১০. নদীর ওপার ঘন হয়ে কী জন্মেছে?
উত্তর: নদীর ওপারে জলার মধ্যে ঘন হয়ে শর বা নলখাগড়া জন্মেছে।
১১. মানিকজোড় পাঁকের মধ্যে কী আঁকে?
উত্তর: মানিকজোড় পাঁকের মধ্যে পায়ের চিহ্ন আঁকে।
১২. কবি কোথায় দাঁড়িয়ে নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখেন?
উত্তর: কবি ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখেন।
১৩. ‘মাঝি’ কবিতায় চাঁদের আলো কোথায় লুটিয়ে পড়ে?
উত্তর: ‘মাঝি’ কবিতায় চাঁদের আলো সাদা কাশের বনে লুটিয়ে পড়ে।
১৪. কবি নৌকা বেয়ে কখন বাড়ি ফিরবেন?
উত্তর: যখন সূর্য মাথার ওপর থাকবে, অর্থাৎ দুপুর হবে, তখন কবি নৌকা বেয়ে বাড়ি ফিরবেন।
১৫. এ কবিতায় কোন বিষয়টি প্রধান হয়ে ফুটে উঠেছে?
উত্তর: এ কবিতায় গ্রাম-বাংলার মনোমুগ্ধকর ছবি এবং কবির অন্তরের ইচ্ছে ফুটে উঠেছে।
১৬. এ কবিতায় কবির সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা কার প্রতি প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর: এ কবিতায় কবির সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা মা ও মাতৃভূমির প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
বুঝে লিখি
‘মাঝি’ কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১২০ নম্বর পৃষ্ঠা)
মাঝি কবিতায় মা ও মাতৃভূমির প্রতি কবির গভীর মমতা ও ভালোবাসার চিত্র ফুটে উঠেছে। কবিমন নদীর ওপারে যেতে ব্যাকুল। যেখানে নদীর তীরে বাঁধা রয়েছে সারিবদ্ধ নৌকাগুলো। কৃষকেরা লাঙল কাঁধে ফেলে নৌকা পার হয়, রাখাল তার গরু সাঁতরে নিয়ে নদী পার হয়। সন্ধ্যাবেলায় কবিমনে ভেসে ওঠে ওপারের ঝাউডাঙায় শিয়ালের হাকডাক। প্রকৃতির এমন অপরূপ দৃশ্য দেখে কবির মনে তীব্র ইচ্ছে জাগে সে খেয়াঘাটের মাঝি হবে। মাঝি হলে সে সকাল-বিকাল নদীতে খেয়া পারাপার করতে পারবে। দুপুর বেলা সে বাড়ি ফিরে মায়ের কোলে পরম আদরে খাবার খাবে। সন্ধ্যায় আবার সে নৌকা পারাপারে চলে যাবে। কবির ইচ্ছে, সে তার বাবার মত বিদেশে কাজে যাবে না। বরং তার মায়ের কাছে, মায়ের আচলেই থাকবে।
জীবনের সম্পর্ক খুঁজি
‘মাঝি’ কবিতাটির সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১২২ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘মাঝি’ কবিতায় উল্লেখিত নদীর এপার-ওপারে নানা দৃশ্যের সাথে আমি বেশ পরিচিত। আমার বাড়িও ছোট একটি নদীর পারে। নদীটা খুব একটা বড় না হলেও এর ওপর দিয়ে কোন সেতু নেই। ফলে গ্রামের মানুষজন খেয়ার মাধ্যমেই নদী পারাপার হয়ে থাকেন। গ্রামের ছেলেমেয়ের স্কুলে যাওয়া, বড়দের বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজে এই খেয়াঘাট ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আমি যখন অবসর সময় পাই, নদীর তীরে এসে অনেকক্ষণ বসে থাকি। এ পারে বসে আমি ওপারের মনমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন করি। সময়ের পরিবর্তনে ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো এখন আর দেখা যায় না। তবে বেশ কিছু নৌকা ওপারে বাঁশের খুটির সাথে বাঁধাবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। জেলেরা সকাল বিকাল মাছ ধরে, রাখাল তার গরু নিয়ে নদী পার হয়, এসব দৃশ্য এখনো দেখা যায়। যা আমি নদীর তীর থেকে দেখতে পাই। সন্ধ্যায় নদীর ওপারে মেলে বড় বাজার। যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন বাজার করতে আসেন।
এসব মানুষের পদচারণায় সম্পূণ বাজারটি কোলাহলপূর্ণ হয়ে ওঠে। ‘মাঝি’ কবিতায় দেখা যায় যে, কবি তার মাকে অনেক ভালোবাসেন। আর এ জন্য তিনি সবসময় মায়ের কাছেই থাকতে চান। আমিও আমার মাকে অনেক ভালোবাসি। তিনি আমাকে তার পরম স্নেহে আগলে রাখেন। তাই আমি তার থেকে কখনো দূরে থাকতে চাই না। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মাঝি’ কবিতার মাধ্যমে মা ও মাতৃভূমির প্রতি কার অগাধ ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন। আমিও আমার গ্রাম তথা দেশকে অনেক ভালোবাসি।
মিল-শব্দ খুঁজি
ছড়া-কবিতায় এক লাইনের শেষ শব্দের সাথে পরের লাইনের শেষ শব্দের মিল থাকে। যেমন: পারে-ধারে- সারে, রাজি-মাঝি ইত্যাদি। তোমরাও এভাবে মিল-শব্দ তৈরি করতে পারো। নিচে কিছু শব্দ দেওয়া হলো। এগুলোর এক বা একাধিক মিল-শব্দ লেখো। (মূল বইয়ের ১২৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ছেলে জেলে, মেলে, গেলে, বেলে, এলে, ঠেলে, তেলে, পেলে, খেলে।
২. মেয়ে খেয়ে, গেয়ে, চেয়ে, ছেয়ে, নেয়ে, ধেয়ে, পেয়ে, বেয়ে, যেয়ে।
৩. ঘর বর, পর, মর, কর, জ্বর, চর, চড়, নর, ধর, সর, ডর, দর।
৪. যত তত, মত, হত, ক্ষত, নত, শত।
৫. তখন যখন, কখন।
৬. পার ঘার, যার, মার, তার, আর, খার, চার, ভার, সার।
৭. আঁধার বাধার, সাধার, দাদার, কাদার, চাঁদার।
৮. জাল তাল, হাল, খাল, গাল, চাল, ছাল, ডাল, পাল।
৯. বাঁশ কাশ, আঁশ, ঘাস, চাষ, চাস, হাঁস, খাস, লাশ, তাস, দাস, ফাঁস, মাস, শাঁস।
১০. জলা ফলা, গলা, জ্বলা, কলা, চলা, ডলা, তলা, ফলা, বলা, মলা, শলা।
১১. দিন চীন, জ্বীন, তিন, দ্বীন, ঋণ, বিণম নিন, হীন।
১২. আসে পাশে, মাসে, ঘাসে, কাশে, ফাঁসে, চাষে।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের মাঝি ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post