মানুষ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর : কবি ভণ্ড দুয়ারিদের ধ্বংস করে উপাসনালয়ে সকলের সাম্য নিশ্চিত করার জন্য ভজনালয়ের সব তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলতে বলেছেন। কবিতায় ভণ্ড দুয়ারিদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে। ভণ্ড দুয়ারিরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মসজিদ-মন্দিরের শাসক সেজে বসেছে।
তাদের দৌরাত্মের কারণে ধর্মক্ষেত্রেও মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। তারা মসজিদ মন্দিরে তালা লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থের জয়গান করে। তাই কবি এসব ভণ্ড দুয়ারিকে হটিয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠা করার মানসে ভজনালয়ের সকল তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলতে বলেছেন।
মানুষ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. পূজারী আকুল হয়ে ভজনালয় খুলল কেন?
উত্তর : পূজারী দেবতার বরে রাজা-টাজা হয়ে যাওয়ার লোভে আকুল হয়ে ভজনালয় খুলল। পূজারী ভজনালয়ে থাকলেও সে স্বার্থলোভী। স্বার্থের লোভে সে সদা ব্যাকুল থাকে। কিন্তু মানবতার কোনো প্রকাশ তার মধ্যে নেই। সে স্বপ্নে দেবতাকে দেখে বর লাভের আশায় আকুল হয়ে ওঠে। তাই বাইরে ভুখারির ডাককে সে দেবতার ডাক মনে করেছে। এ কারণেই সে আকুল হয়ে ভজনালয় খুলল।
২. মোল্লা সাহেব গোশত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দিল কেন?
উত্তর : মোল্লা সাহেব ভুখারিকে না দিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি নিশ্চিতকরণের জন্য গোশত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দিল। মসজিদের গোশত-রুটি বেঁচে গেলে মোল্লা সাহেব নিজে তা নিয়ে নেয়। এজন্য সে চায় যেকোনো কারণে তার নিজের লাভের ভাগটা যেন না কমে। সে কারণে শিরনির গোশত-রুটি অতিরিক্ত থেকে গেলেও মোল্লা সাহেব ভুখারিকে দেন না। ভুখারিকে তেড়ে দিয়ে নিজের লাভ নিশ্চিত করার জন্য মোল্লা সাহেব গোশত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দেয়।
৩. মোল্লা-পুরুত মসজিদ মন্দিরের সকল দুয়ারে চাবি লাগিয়েছে কেন?
উত্তর : নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মোল্লা-পুরুত মসজিদ-মন্দিরের সকল দুয়ারে চাবি লাগিয়েছে। কবিতায় বর্ণিত মোল্লা ও পুরুত লোভী এবং স্বার্থপর মানুষ। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করার চিন্তায় নিমগ্ন। ফলে ধর্মে যে মানবতার কথা বলা হয়েছে তা তাদের কাছে গুরুত্ব পায় না। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা ধর্মকে ব্যবহার করে। এজন্য তারা মসজিদ মন্দিরে তালা-চাবি লাগাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।
৪. ‘মানুষ’ কবিতায় কবি কালাপাহাড়কে আহ্বান জানিয়েছেন কেন?
উত্তর : ‘মানুষ’ কবিতায় কবি উপাসনালয়ের ভণ্ড দুয়ারিদের ধ্বংস করার জন্য কালাপাহাড়কে আহ্বান জানিয়েছেন। কালাপাহাড় হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ার পর অনেক দেবালয় ধ্বংস করেছেন। কবিতায় যেসব ভণ্ড দুয়ারি মসজিদ মন্দিরের শাসক সেজে বসেছে তাদের ধ্বংস করার জন্য কালাপাহাড়ের মতো মানুষ প্রয়োজন। তাই কবি কালাপাহাড়কে এসব ভণ্ড লোককে ধ্বংসের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
৫. কবি ভজনালয়ের সব তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলতে বলেছেন কেন?
উত্তর : কবি ভণ্ড দুয়ারিদের ধ্বংস করে উপাসনালয়ে সকলের সাম্য নিশ্চিত করার জন্য ভজনালয়ের সব তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলতে বলেছেন। কবিতায় ভণ্ড য়ারিদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে। ভণ্ড দুয়ারিরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মসজিদ-মন্দিরের শাসক সেজে বসেছে। তাদের দৌরাত্মের কারণে ধর্মক্ষেত্রেও মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। তারা মসজিদ মন্দিরে তালা লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থের জয়গান করে। তাই কবি এসব ভণ্ড দুয়ারিকে হটিয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠা করার মানসে ভজনালয়ের সকল তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলতে বলেছেন।
৬. মোল্লা সাহেব সামর্থ্য থাকার পরও ভুখারিকে ফিরিয়ে দেয় কেন?
উত্তর : মোল্লা সাহেব অতিরিক্ত গোশত-রুটি নিজে ভোগ করার জন্য সামর্থ্য থাকার পরও ভুখারিকে ফিরিয়ে দেয়। ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা সাহেব একজন স্বার্থপর মানুষ। তিনি ধর্মকে ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন। ফলে একজন ক্ষুধার্ত ভুখারির করুণ মুখের দিকে চেয়েও তার মনে কোনো করুণার উদ্রেক হয়নি। নিজের ভোগবাদী মানসিকতার ফলে তিনি সামর্থ্য থাকার পরও ভুখারিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
৭. ‘নমাজ পড়িস বেটা?’- মোল্লা সাহেব কথাটি কেন বলল?
উত্তর : স্বার্থ উদ্ধারের অন্ধ নেশায় মোল্লা সাহেব ভুখারিকে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলল। কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা সাহেব একজন স্বার্থপর মানুষ। মসজিদের বেঁচে যাওয়া শিরনির সম্পূর্ণটা সে নিজের করে নেয়। ভীষণ ক্ষুধার্ত ভুখারি একটু খাবার প্রার্থনা করলে তার কঠিন চিত্তে সামান্য আঁচড়ও পড়ে না। উল্টো ভুখারিকে জিজ্ঞেস করে সে নামাজ পড়ে কিনা। এভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে সে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়।
৮. ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’ – কেন?
উত্তর : মানবতার কল্যাণ করাই হচ্ছে মনুষ্যত্বের ধর্ম। এ কারণেই কথাটি বলা হয়েছে। মানুষকে অবহেলা, অবজ্ঞা করে কোনো সামাজিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কেননা মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষকে ভালোবাসলে সমাজে শান্তি-সম্প্রীতি বিরাজ করে। পৃথিবীর অধিবাসীদের প্রতি সদয় হলেই ঊর্ধ্বলোকের প্রভু সদয় হবেন। তাই বলা হয়েছে ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’।
৯. ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়।’- ভিখারি কেন এ কথা বলে?
উত্তর : ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়- চরণটিতে ধর্মের নামে স্বার্থপূজারিদের প্রকৃত রূপ উন্মোচিত করা হয়েছে। মন্দির হচ্ছে হিন্দু ধর্মের উপাসনার স্থান। সকলেই সেখানে ধর্ম-চর্চা করার অধিকার রাখে। কিন্তু ধর্মের নামে স্বার্থপূজারিদের দৌরাত্ম্যে মন্দিরগুলো কেবল পুরোহিতদের জন্য হয়ে উঠেছে। সেখানে মনুষ্যত্বের কোনো মূল্য নেই। তাই পুরোহিত কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে অভুক্ত ভুখারি বলেছে- ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়।’
১০. ‘মানুষ’ কবিতায় ‘স্বার্থের জয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘মানুষ’ কবিতায় ‘স্বার্থের জয়’ বলতে ধর্মের নামে ভণ্ড কপটচারীদের স্বার্থ চরিতার্থ করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
মানবতার কল্যাণ সাধনই সকল ধর্মের শিক্ষা ও আদর্শ। আর সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। মসজিদের মোল্লা সাহেব কিংবা মন্দিরের পুরোহিতরা কখনও কখনও এই নিগূঢ় সত্যটি ভুলে যায়। তাই কবি বলেছেন, ভণ্ড ধার্মিকরা তাই খোদার মিনারে চড়ে কল্যাণের আহ্বান না জাানিয়ে বরং স্বার্থের জয়গান যেন উচ্চারণ করে।
১১. “সহসা বন্ধ হলো মন্দির” কেন?
উত্তর : পূজারীর মাঝে কোনো মানবতাবোধ না থাকায় সে ভুখারিকে দেখে দ্রুত মন্দির বন্ধ করে দেয়। পূজারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকলেও তার মাঝে কোনো মানবতাবোধ নেই। সে শুধু নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখে। তাই বাইরে দেবতা দাঁড়িয়ে আছে ভেবে দরজা খুলে যখন দেখে ভুখারি দাঁড়িয়ে রয়েছে তখন সে হতাশ হয়। আর একারণেই পূজারী মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেয়।
১২. মোল্লা সাহেব হেসে কুটি কুটি হয় কেন?
উত্তর : মসজিদের শিরনি বেঁচে যাওয়ায় স্বার্থলোভী মোল্লা সাহেব হেসে কুটি কুটি হয়। কবিতায় বর্ণিত মোল্লা সাহেব একজন স্বার্থলোভী, ভণ্ড। সে মসজিদের শিরনি বেঁচে গেলে সব নিজে নিয়ে নেয়। তাই নিজের স্বার্থ লাভের আশায় অধীর আগ্রহে থাকা মোল্লা যখন দেখে সত্যিই শিরনি বেঁচে গিয়েছে তখন সে খুশি হয়ে হেসে কুটি কুটি হয়।
১৩. মানুষের চেয়ে কিছু মহীয়ান নেই কেন?
উত্তর : মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হওয়ায় পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে মহীয়ান কিছু নেই। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। পৃথিবীতে সকল জীবের ওপরে তার স্থান। মানুষ জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের বুদ্ধির দ্বারা। আর এই মানুষের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না সেকথা ধর্মও বলে। তাই মানুষের চেয়ে মহীয়ান কিছু নেই।
১৪. “পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে” বলতে ভুখারির জঠরজ্বালা বোঝানো হয়েছে। ‘মানুষ’ কবিতায় ক্ষুধার্ত ভুখারি না খেয়ে শীর্ণ হয়ে গেছে। তীব্র ক্ষুধায় সে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছে একটু খাবারের আশায়। মন্দিরের পুরোহিতের কাছে গেলে পুরোহিত তাকে ফিরিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় ক্ষুধার্তের ক্ষুধার তীব্রতা বোঝাতে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।
►► আরো দেখো: বাংলা সকল গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া বাটনে ক্লিক করে তোমরা মানুষ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। আর অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post