মাসিক প্রত্যেক নারীর কাছেই একটি পরিচিত শব্দ। মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে কিছুটা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। রক্তপাত, জ্বালাপোড়া এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে নারীদের এই সময়টাতে দেখা দেয় পুষ্টির ঘাটতি। মাসিকের সময় কি খাবেন এটা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকেন। তাই গুরুত্বপূর্ণ এ সময় একজন নারীর খাদ্যতালিকায় কী থাকা উচিত, তা জানতে আগ্রহী অনেকেই।
মাসিকের সময়টা নারীর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে এটি তাঁদের কাছে একটি চ্যালেঞ্জের সময়। তাই এ সময় পরিপূর্ণ সুস্থ্যতা বজায় রাখতে খাবার নির্বাচনে সতর্ক হওয়া উচিৎ। এর ফলে মাসিককালীন সময়ে আপনার অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা থাকবে না।
মাসিকের সময় কি খাবেন?
আজ কোর্সটিকায় আমরা নারীদের মাসিক চলাকালে ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যতালিকা শেয়ার করবো, যা আপনার সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে এসময় খেতেই হবে। তাই চলুন, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মাসিকের সময় কি খাবেন তার একটি তালিকা দেখে নেই।
১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
যেহেতু মাসিকের সময়টিতে শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যায়, তাই শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরির প্রয়োজন পরে। আর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীর হিমোগ্লোবিন তৈরির এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি প্রাকৃতিকভাবেই করে থাকে। তাই যেসব খাবারে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়; যেমন মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, ডাটা শাক, কচু শাক এবং পুঁই শাক ইত্যাদি খাবেন।
এছাড়াও ফুলকপির পাতা, ছোলা শাক, ধনে পাতা, তরমুজ, পাকা তেঁতুল, কালো জাম, খেজুর, ও আমড়া খাবার চেষ্টা করতে হবে। মাসিক চলাকালীন সময়ে শারীরিক আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে এই খাবারগুলো অবশ্যই খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. মাছ
যদিও মাসিক চলাকালে মেয়েদের মাছ-মাংস জাতীয় খাবারে প্রবল অনীহা জন্মে, কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এগুলো আপনার খাওয়া উচিত। সামুদ্রিক মাছে রয়েছে মিনারেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি। যেহেতু মাসিকের সময় নারীদের শরীরে অধিক পুষ্টির প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাই উল্লেখিত এসব পুষ্টি উপাদান অনেক জটিল রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
সামুদ্রিক মাছের আরেকটি স্বাস্থ্যকর দিক হলো এটি খুবই কম-ক্যালোরি যুক্ত খাবার। সামুদ্রিক মাছের গুনাগুণের শেষ নেই। ইলিশ, কোরাল, রূপচাঁদা, বাইলা, চিংড়ি, ফোঁপা, লইট্টা ও লাইখ্যা সহ প্রভৃতি মাছে আছে প্রচুর মিনারেল ও ভিটামিন। এগুলো পিরিয়ড চলাকালীন শরীরের ক্ষয় পূরণ করে এবং ব্যথা কমাতেও ভূমিকা রাখে।
মাছ শুধু মাসিকের সময়ই উপযোগি না, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছ হার্ট-অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং উচ্চ-রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক গঠনেও মাছ বেশ ভূমিকা পালন করে।
৩. সবুজ শাক-সবজি
সবুজ শাক-সবজিতে আছে প্রচুর আয়রন, যা শরীরের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করবে। শুধু সুস্থ্যতাই নয়, সবুজ শাক-পাতা খেয়ে খুব সহজেই আপনি ধরে রাখতে পারেন আপনার তারুণ্য। এটি শুধুমাত্র আয়রন ও বি ভিটামিনে পরিপূর্ণ নয় বরং উচ্চমাত্রায় আঁশও আছে এতে যা কিনা হজমে সহায়তা করে।
সবুজ শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ই, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট সহ অনেক উপাদান। খাবার ভালোভাবে হজম হওয়া এবং পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকার সবজি একটি অপরিহার্য শর্ত। তাই মাসিকের সময়ে প্রতি বেলার খাবারে রাখুন সবুজ শাক সবজি।
৪. কলা
অনেক নারীই ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে কলা খেতে চান না। কিন্তু মাসিকের সময় ম্যাগনেশিয়ামের অভাব পূরণ করতে কলার প্রয়োজন রয়েছে। তাই আপনি আপনার ক্যালোরি ব্যালেন্স করে নিয়ে কলা খেতে পারেন। এতে করে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমে যাবে।
কলা হচ্ছে ম্যাগনেশিয়ামের একটি চমৎকার উৎস হচ্ছে। এছাড়াও কলা পটাশিয়ামের ও ভিটামিনের খুব ভালো উৎস, যা পিরিয়ডের সময় আপনার গ্রহণ করা একান্ত জন্য জরুরি। কলা পিরিয়ডের সময় বিষণ্ণতা কমাতেও সহায়ক। তাই এই সময় প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় একটি কলা রাখুন।
৫. আমিষ
একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর দেহের সঠিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪৬ গ্রাম আমিষ প্রয়োজন। আমিষ বিভিন্ন উপায়ে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মাংস পেশী, চামড়া, হরমোন এবং প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছু গঠনেই আমিষের ভূমিকা অপরিসীম।
তাই মাসিকের সময়ে পরিপূর্ণ ফিট থাকতে ডাল, ডিম, মাছ, মাংস এই সময়ের খাদ্যতালিকায় রাখুন। এটি আপনার ওজন কমাতে এবং পেটের চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে শরীরের পেশী ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাছাড়া উচ্চমাত্রার আমিষযুক্ত খাবার রক্তচাপ কমাতে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৬. পানি
শুধু মাসিকের সময়ই না, সর্বদাই পানি মানুষের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি কি জানেন, মাসিক চলাকালে প্রচুর পানি পান আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি দূরে রাখতে পারে? সাধারণত মাসিকের সময় মেয়েদের রক্তপাত হয়ে থাকে। আর এর ফলে শরীর থেকে রক্ত ঝড়ার পাশাপাশি অনেক পানি বেরিয়ে যায়।
তাই এই অভাব পূরণ করতে প্রচুর পান করতে হবে। তবে কোনো কোমল পানীয় নয়, শুধু সাধারণ পানি। চা, কফি, কোলা অথবা অন্যান্য যেকোন কোমল পানীয় এ সময়ে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
৭. ফলমূল
শরীরে আয়রনের ঠিকমত শোষণ ও যথাযথ কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি অতীব জরুরি। আর মাসিকের সময় এর গুরুত্ব আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, এবং পাকা টমেটো এমনই কিছু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যা আমাদের হাতের কাছেই পাওয় যায়।
এছাড়াও পিরিয়ডের সময় ভিটামিন সি এর অভাব পূরণের জন্য কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদি ফলগুলো খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সতর্কতা
স্বাস্থ্যঝুঁকির এ সময় অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার বা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সোডিয়ামযুক্ত, অতিরিক্ত লবণ বা চিনিযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পাশাপাশি শারীরিক সুস্থ্যতা ধরে রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
►► আরো দেখো: মাসিক হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম
►► আরো দেখো: দ্রুত মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়
►► আরো দেখো: মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ কি? জানলে অবাক হবেন
►► আরো দেখো: নারীদের রূপচর্চার বই Free Download PDF
শেষ কথা
মাসিকের সময় বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ হতে পারে, যেগুলো সাধারণত মাসিকের পূর্ববর্তী লক্ষণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। তথাপি মাসিকের পূর্ববর্তী সময়েও বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। তাই মাসিকজনিত বা মাসিকের পূর্ববর্তী সময়ে যে সমস্যাগুলো হয়, তা থেকে প্রতিরোধ পেতে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন।
গুরুত্বপূর্ণ এ সময় খাদ্যাভ্যাসে ছোট-খাটো ভুলও পরবর্তী সময়ে অনেক বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সর্বদা স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন, সুস্থ্য থাকুন।
Discussion about this post