জগুর অত্যাচারে আহ্লাদি বাবার বাড়ি চলে যায়। সেখানে তার একমাত্র অভিভাবক মাসিপিসি। তারা আহ্লাদিকে সন্তানের মতো কাছে টেনে নেয়। আহ্লাদিও স্বামীর বাড়ি যেতে চায় না। কিন্তু জগু স্ত্রীকে ঘরে নিতে চায়। কারণ, স্ত্রীর সম্পদের প্রতি তার লোভ আছে । সে আহ্লাদিকে অপহরণ করার হীন মতলবে জোতদার ও দারোগা বাবু কানাই চৌকিদারকে মাসিপিসির বাড়িতে পাঠায় ।
তারা কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। কিন্তু মাসিপিসি তা বুঝতে পেরে চিৎকার করে লোক জড়ো করে এবং অস্ত্র হাতে দোষীদের ধাওয়া করে। আসন্ন বিপদের কথা কল্পনা করে মাসিপিসি শত্রুর আগুনের হাত থেকে বাঁচার জন্য বড় গামলাতে জল ভরে রাখে, কাথা আর কন্বল ভিজিয়ে রাখে, হাতের কাছে রাখে বটি আরদা। জীবন-সংগ্রামী এই দুই নারী অত্যাচারী স্বামী, জোতদার, দারোগা ও খারাপ মানুষদের হাত থেকে অহ্লাদিকে রক্ষার জন্য যে ভূমিকা পালন করেছে সেই অসাধারণ কাহিনীই ফুটে উঠেছে “মাসি-পিসি” গল্পে।
মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১: ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফাতেমা বেগম। নিঃসন্তান এ বৃদ্ধার আপন বলতে কেউ নেই। একদিন সকালে হাঁটতে বেরিয়ে হঠাৎ তিনি একটি মেয়েকে রাস্তায় কাঁদতে দেখেন। বৃত্তান্ত শুনে তিনি মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মেয়েটিকে মাতৃস্নেহে আশ্রয় দেন। স্বামীপক্ষ খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যেতে চান। মেয়েটি কোনোভাবেই যেতে ইচ্ছুক নন। বৃদ্ধাও মেয়েটিকে যেতে দেননি। এতে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মৃত্যুর পূর্বে বৃদ্ধা মেয়েটিকে সমুদয় সম্পত্তি দান করে যান।
ক. ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়’- উক্তিটি কার?
খ. ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মেয়েটি “মাসি-পিসি” গল্পের আহ্লাদির সাথে কীভাবে সঙ্গতিপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মাসি-পিসি” গল্পের মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বৃদ্ধা একসূত্রে গাঁথা- মন্তব্যটি যাচাই কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রশ্নোক্ত উক্তিটি পিসির।
খ. ষড়যন্ত্র করে আহ্লাদিকে গোকুল তুলে নিতে আসলে মাসি-পিসি তাদের কৌশলে প্রতিহত করে পরবর্তী আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত থাকার বিষয়টিকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের লেখক প্রদত্ত উক্তি দ্বারা বুঝিয়েছেন।
গোকুল আহ্লাদিকে অনৈতিকভাবে পেতে চায়। মাসি-পিসিকে সে ছলে-বলে-কৌশলে বশীভূত করতে না পেরে কানাই চৌকিদারের মাধ্যমে মাসি-পিসিকে কাছারি বাড়ি পাঠিয়ে তার গু-া-বাহিনী দিয়ে তুলে নেওয়ার ফাঁদ পাতলে সংসার-অভিজ্ঞ মাসি-পিসি তা বুঝতে পারে এবং বঁটি ও রামদার ভয় দেখিয়ে এবং প্রতিবেশীদের ডেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়। গু-া বাহিনী তাদের ঘরে আগুন দিতে পারে ভেবে জল ও ভেজা কাঁথার ব্যবস্থা করে রাখে, হাতের কাছে রাখে বঁটি আর দা। এভাবেই মাসি গু-াবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
গ. অত্যাচারী স্বামীর সংসার না করার ব্যাপারে অটল সিদ্ধান্তে থাকার বিষয়ে উদ্দীপকের মেয়েটির সাথে মাসি-পিসি গল্পের আহ্লাদির সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রদত্ত উদ্দীপকের মেয়েটি স্বামীর অত্যাচারের শিকার নিঃসন্তান বৃদ্ধার আশ্রয়ে মাতৃøেহে থাকতে পেয়ে শত ঝামেলা সত্ত্বেও স্বামীর বাড়িতে যায়নি।, তেমনি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদিকে তার স্বামী খেতে দিত না, ঝাঁটা দিয়ে পেটাতো, কলকে পোড়া দিয়ে ছ্যাঁকা দিত, সোজা কথায় অত্যাচারীর মত ব্যবহার করত। সে মাসি-পিসির আশ্রয়ে আসতে পেরে তাদের পরম স্নেহে থেকে স্বামীর মামলার এবং গোকুল বাহিনীর ভয়ে ভীত হয়ে স্বামীর ঘরে যায়নি।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ আর পিছু সরতে পারে না, মানুষ সবসময় শন্তিতে বাস করতে চায়। উদ্দীপকের মেয়েটি ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদিও অত্যাচারীর নির্মম হাত থেকে বাঁচার জন্য স্বামীর ঘরে না গিয়ে ভয়শূন্য স্থান বেছে নিয়েছে। তাই বলা যায়, উভয় চরিত্র এই ক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. ‘মাসি-পিসি’ গল্পের বিধবা মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বিধবা বৃদ্ধা একই সূত্রে গাঁথা।’-মন্তব্যটি যথার্থ।
আহ্লাদির বাবার অভাবের সংসারে মাসি-পিসি বোঝাস্বরূপ। আহ্লাদি স্বামীর ঘরে অত্যাচারিত হয়ে কোনোরকমে ফিরে এলে মাসি-পিসির সেবা-যতেœই আহ্লাদি বেঁচে যায়। লোভী স্বামী জগু মামলার ভয় দেখায়। এতে মাসি-পিসি না দমে কৈলেশকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেন। বদচরিত্রের গোকুল আহ্লাদির সভ্রম কৌশলে ছিনিয়ে নিতে চাইলে মাসি-পিসি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার সাথে প্রতিহত করেন এবং আহ্লাদির নির্ঝঞ্ঝাট জীবন নিশ্চিত করেন।
মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। অত্যাচারিত, অবহেলিত মানুষকে বাঁচানো মানুষের সাধারণ ধর্ম। উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম এবং আমার পঠিত ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি নারীজাতির ত্রাণকর্তারূপে কাজ করে অত্যাচারিত নারীদের চোখ খুলে দিয়েছেন। মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতে গেলে অনেক কষ্ট সইতে হয়। তারপরেও মানুষ এগিয়ে আসে। মাসি-পিসির সঙ্গে মাসি-পিসি এবং উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম জনকল্যাণের দিক থেকে একই সূত্রে গাঁথা-একথা সুনিশ্চিত করে বলা যায়।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২: হাসু ও মায়মুনকে নিয়ে ভেসেই চলছিল জয়গুন। কিন্তু নিজের চেষ্টায় অকূল পাথারে সে কূল পায়। লজ্জাশরম বিসর্জন দিয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজে। তাকে বাঁচতে হবে। ছেলেমেয়েকে বাঁচাতে হবে। এই সংকল্প নিয়ে আকালের পাঁচ বছর সে লড়াই করে আসছে।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
খ. আহ্লাদিকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের জয়গুনের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে?
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও জয়গুন গল্পের মাসি-পিসির সমগ্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারেনি। মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩: মা তাকে জেরা করলেন। দেখলাম সে ভারি চাপা। মার প্রশ্নের ছাঁকা জবাব দিল, নিজে থেকে একটি কথা বেশি কইল না। সে বলল, তার নাম মমতা। আমাদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে জীবনময়ের গলি, গলির ভেতরে সাতাশ নম্বর বাড়ির একতলায় সে থাকে। তার স্বামী আছে আর একটি ছেলে। স্বামীর চাকরি নেই চারমাস, সংসার আর চলে না, সে তাই পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছে। এই তার প্রথম চাকরি। মাইনে? সে তা জানে না। দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাবে কিন্তু খাবে না।
ক. মাসি-পিসি কীভাবে শহরে যেতেন?
খ. মাসি-পিসির জমানো টাকা কেন খরচ হয়ে গিয়েছিল?
গ. উদ্দীপকের মমতা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির কোন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪: পিসি বলে, ‘এত রাতে মেয়েনোককে কাছারিবাড়ি ডাকতে কত্তার নজ্জা করে না কানাই?
কানই ফুঁসে ওঠে, ‘না যদি যাও ঠাকরুনারা ভালোয় ভালোয়, ধরে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবার হুকুম আছে কিন্তু বলে রাখলাম।
মাসি বঁটিটা বাগিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে, বটে? ধরে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবে? এসো। কে এগিয়ে আসবে এসো। বঁটির এক কোপে গলা ফাঁক করে দেব। পিসি বলে, আয় না বজ্জাত হারামজাদারা, এগিয়ে আয় না? কাটারির কোপে গলা কাটি দু-একটার।
মাসি বলে, শোনো কানাই, এ কিন্তু এর্টি নয় মোটে। তোমাদের সাথে মেরা মেয়েনোক পারব না জানি কিন্তু দুটো-একটাকে মারব জখম করব ঠিক।
পিসি বলে, মোরা নয় মরব। ’
ক. মাসি পিসিকে ডাকতে কে আসে?
খ. মাসি-পিসি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘মাসি-পিসি’ চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমগ্র ভাবটি ধারণ করেছে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫: আহারে। এরে মাইয়াডারে মাইরা ফালইস না। ওরে ও পাষাইণ্যা, দরজা খোল, মারিস না আর মারিস না, জাহান্নামে যাইবি, মারিস না। বাইরে থেকে দু’হাতে ঝাঁপিটাকে ঠেলছে ফকিরের মা। আবুল একবার তাকাল সেদিকে, কিন্তু ঝাঁপি খুলল না। বউ মারায় একটা পৈশাচিক আনন্দ পায় আবুল। মেরে মেরে এর আগে দু’-দুটো বউকে প্রাণে শেষ করে দিয়েছে সে। প্রথম বউটা ছিল এ গাঁয়েরই মেয়ে। আয়েশা। একটু বেঁটে, একটু মোটা আর রঙের দিক থেকে শ্যামলা। অপূর্ব সংযম ছিল মেয়িটির। আশ্চর্য শান্ত স্বভাব। কত মেরেছে ওকে আবুল। কোনোদিন একটু শব্দও করেনি। একটা সামান্য প্রতিবাদ নেই।
[তথ্যসূত্র: হাজার বছর ধরে -জহির রায়হান]
ক. মস্ত কাটারিটা দেখতে কীসের মতো ছিল?
খ. আহ্লাদিকে জগু কেন মারধর করে?
গ. উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? – ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের আয়েশা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পরিস্থিতির শিকার।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা মূল বই থেকে মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। একই সাথে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য আরও অতিরিক্ত ৪টি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post