মা কাজী নজরুল ইসলাম : এই কবিতায় মায়ের প্রতি সন্তানের গভীর ভালোবাসা, মায়ের স্নেহ-মমতা ও ত্যাগের কথা চিত্রিত হয়েছে। মা যে সন্তানের জীবনের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়, স্নেহ-ভালোবাসার আধার—এটি কবিতার মূল ভাব। কবিতার প্রতিটি স্তবকে মা-সন্তানের সম্পর্কের গভীরতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
শিশুকাল থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত মায়ের ভালোবাসা, যত্ন, গর্ব এবং আশীর্বাদ কীভাবে সন্তানকে গড়ে তোলে, তারই অনুভূতি তুলে ধরা হয়েছে। কবিতার সুরধর্মিতা ও সহজ-সরল ভাষা এটিকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে, যা পাঠকের মনে মা’র প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জন্ম দেয়।
মা কাজী নজরুল ইসলাম
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে মে কাজী নজরুল ইসলাম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও সংগীতশিল্পী। তিনি ‘নবযুগ’ ও ‘ধূমকেতু’ সহ আরও অনেক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ‘মা’ কবিতাটি তাঁর ‘ঝিঙেফুল’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মা কবিতার শুরু এখানে
যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই।
হেরিলে মায়ের মুখ,
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
যখন জনম নি
কত অসহায় ছিনু,
কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোনো কিছু,
ওঠা বসা দূরে থাক—
মুখে নাহি ছিল বাক,
চাহনি ফিরিত শুধু মা’র পিছু পিছু!
পাঠশালা হতে যবে
ঘরে ফিরি যাব সবে,
কত না আদরে কোলে তুলি নেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে
শুধাবেন কত সুখে
‘কত আজ লেখা হলো, পড়া কত পাতা? ‘
পড়া লেখা ভালো হলে
দেখেছ সে কত ছলে
ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে!
বলে, ‘মোর খোকামণি।
হীরা-মানিকের খনি,
এমনটি নাই কারো!’ শুনে বুক ভরে!
দিবানিশি ভাবনা
কিসে ক্লেশ পাব না,
কিসে সে মানুষ হব, বড়ো হব কিসে;
বুক ভরে ওঠে মা’র
ছেলেরি গরবে তাঁর
সব দুখ সুখ হয় মায়ের আশিসে।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. জেনে নিই।
আমাদের সবার জীবনে ‘মা’ কথাটি একটি মধুমাখা নাম। মায়ের মমতা আমাদের চলার পথের পাথেয়। শৈশবে মা আমাদের গভীর মমতায় লালন করেন। ভালোভাবে লেখাপড়া করলে, জীবনে সফল হলে মা খুশি হন। অন্যদিকে মায়ের আশিস পেলে সন্তানের দুঃখ ঘুচে যায়।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি, অর্থ বলি এবং নতুন বাক্য লিখি।
মতন, সুধা, হেরিলে, পরান, যাতনা, নিনু, ছিনু, বাক, শুধাবেন, সোহাগ
৩. কবিতার চরণ দেওয়া আছে, পরবর্তী চরণ লিখি।
হেরিলে মায়ের মুখ,
_______ _______ _______ _______
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
_______ _______ _______ _______
সকল যাতনা ভোলে
_______ _______ _______ _______
৪. কবিতাটি আবৃত্তি করি।
৫. কবিতার প্রথম বারোটি চরণ মুখস্থ লিখি।
৬. কবিতাটিতে কবি কী বলেছেন তা সংক্ষেপে বলি ও লিখি।
৭. আমার ‘মা’ সম্পর্কে একটি অনুচ্ছেদ লিখি।
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে মা কাজী নজরুল ইসলাম কবিতাটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post