মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সাংবাদিকদের ভূমিকা : বাংলাদেশের দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ একটা বড় শক্তি ছিল বিদেশিদের সমর্থন-সহযোগিতা। এই সহযোগিতা-সমর্থন এসেছে বিশ্বব্যাপী সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক, সমাজসেবী, শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক—নানা স্তরের মানুষের কাছ থেকে।
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সাংবাদিকদের ভূমিকা
মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত বাঙালীদের পক্ষে বিশ্বজুড়ে জনমত গড়তে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। নিচে এমনই উল্লেখযোগ্য সাংবাদিকদের নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
১. সাইমন ড্রিং
১৯৭১ সালে ইউকে’র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদক সাইমন ড্রিং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রত্যক্ষ করেন। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে একের পর এক রিপোর্ট পাঠান টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর সামরিক জান্তা যখন বিদেশি সাংবাদিকদের দেশে ফেরত পাঠায়, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৭ মার্চ সকালে সাইমন ড্রিং ঘুরে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং লিখে ফেলেন ঢাকায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো প্রথম দফার গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রত্যক্ষ চিত্র ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’।
২. মার্ক টালি
একাত্তরে মার্ক টালি বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সংবাদদাতা ছিলেন। যুদ্ধের দিনগুলোতে রেডিওতে তাঁর কণ্ঠ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা। মার্ক টালি সীমান্তবর্তী বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও জেলাগুলো ঘুরে বাঙালির দুর্দশা ও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির খবর পাঠাতে থাকেন বিবিসির হেড কোয়ার্টারে। ২৫ মার্চের বর্বর হত্যাযজ্ঞও তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন ঢাকায় বসে।
৩. সিডনি শনবার্গ
নিউইয়র্ক টাইমসের দক্ষিণ এশীয় সংবাদদাতা ছিলেন সিডনি শনবার্গ। ২৫ মার্চের গণহত্যার খবর প্রচার করায় পাকিস্তানি সামরিকবাহিনী তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে। শনবার্গ ২৮ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমসে In Dacca, Troops use Artillery to halt revolt শিরোনামে পূর্ব পাকিস্তানে নিরীহ বাঙালির ওপর পাকিস্তানের সামরিকবাহিনীর বর্বরতা তুলে ধরেন।
৪. অ্যান্থনি মাসকারেনহাস
করাচির মর্নিং নিউজ ও ব্রিটেনের সানডে টাইমস পত্রিকার পাকিস্তান সংবাদদাতা ছিলেন অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তান সরকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আটজন সাংবাদিককে পূর্ব বাংলায় নিয়ে আসে। এঁদের সাতজন পাকিস্তান সরকারের চাহিদা অনুসারে প্রতিবেদন করলেও মাসকারেনহাস তাতে অস্বীকৃতি জানান। সানডে টাইমসে পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি লেখেন, ‘বাংলার শ্যামল প্রান্তর জুড়ে আমি শুধু জমাট রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছিলাম। এই নিপীড়নের শিকার কেবল হিন্দুরাই নয়, হাজার হাজার বাঙালি মুসলমানও এ নির্মমতার শিকার।’
শেষ কথা
এমনই অসংখ্য গণমাধ্যমকর্মী মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকস্তানিদের দমন-নিপীড়নের তথ্য বিশ্বব্যপী প্রচার করেছেন। তাদের এই প্রচারণার ফলে বিশ্বজুড়ে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিপক্ষে শক্তিশালী জনমত তৈরি হয়। যা বাংলাদেশকে স্বাধীনতার দিকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা এসব সাংবাদিকদের কখনোই ভুলব না।
আরো দেখো: ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সাংবাদিকদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post