মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগ : রিতার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখা। একদিন মামা তাকে ও রবিনকে সেখানে নিয়ে গেলেন। জাদুঘরে ঢুকেই তারা বই কিনল ও পাঠাগার দেখল।
নিচে নামতেই পুলিশের পুরোনো অস্ত্র, পোশাক ও নানা সরঞ্জাম দেখল। মামা তাদের বেতার যন্ত্র ও পাগলা ঘণ্টার গল্প শোনালেন, যা ১৯৭১ সালে পুলিশদের সতর্ক করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের সাহসী ভূমিকা শুনে রিতা ও রবিন গর্ব অনুভব করল।
মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগ
ঢাকার রাজারবাগে আছে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রিতার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল সেখানে যাওয়ার। ছোটো মামার কাছে সে এই জাদুঘরের কথা শুনেছিল। ১৯৭১ সালে রাজারবাগে বাংলাদেশের পুলিশেরা বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিল। সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে সেখানে এখন জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে।
এক ছুটির দিনে মামা এসে বললেন, আজ তোমাদের পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নিয়ে যাব। রিতা আর রিতার ছোটো ভাই রবিন আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সেদিন বিকালবেলা ওরা রাজারবাগে গেল।
পুলিশ জাদুঘর খুব পরিপাটি করে সাজানো। ভেতরে ঢুকতেই একটি বিক্রয়কেন্দ্র। সেখানে বিক্রির জন্য বই রাখা আছে। মামা দুজনকে দুটি বই কিনে দিলেন। দোকানের পাশে পাঠাগার। সেখানে বসে বই পড়া যায়।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলেই মূল জাদুঘর। মামার সাথে ওরা দুজন নিচে নেমে গেল। সেখানে আছে পুলিশের বিভিন্ন সময়ের হাতিয়ার। আছে পুলিশের ব্যবহৃত পোশাক ও বিভিন্ন জিনিসপত্র। রবিন অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আগের দিনের বন্দুক দেখল।
মামা ওদের বিশেষভাবে দুটি জিনিস দেখালেন। একটি হলো বেতার যন্ত্র, আরেকটি হলো পাগলা ঘণ্টা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান মিলিটারি রাজারবাগে আক্রমণ চালিয়েছিল। তখন এই বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে পুলিশরা সারাদেশের পুলিশকে বার্তা পাঠিয়েছিল। আর পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে রাজারবাগের সব পুলিশকে সতর্ক করেছিল।
মামা বললেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে ছিল কামানসহ ভারী অস্ত্র। আর আমাদের পুলিশ সদস্যদের কাছে ছিল সাধারণ অস্ত্র। কিন্তু অসীম সাহস নিয়ে পুলিশ সদস্যরা দেশের জন্য লড়াইয়ে নামে। তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঢাকার বাইরের পুলিশরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সেই রাতে অনেক পুলিশ সদস্য শহিদ হন।
মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের পাশাপাশি নানা পেশার মানুষ অংশ নেয়। দেশের জন্য প্রাণ দিতে মানুষ একটুও ভয় করেনি। তাদের কথা ভেবে রিতা ও রবিনের গর্ব হয়। এই বীর যোদ্ধাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।
শব্দ শিখি
বীরত্ব – সাহসিকতা
পরিপাটি – সুন্দর করে সাজানো
গ্যালারি – প্রদর্শন স্থান
বেতারযন্ত্র – বিনা তারে খবর পাঠানোর যন্ত্র
পাগলা ঘণ্টা – সতর্ক করার ঘণ্টা
কামান – গোলা নিক্ষেপ করার অস্ত্র
প্রতিরোধ – বাধা
অসীম – সীমাহীন
গর্ব – গৌরব
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১। বাক্য লিখি।
মুক্তিযুদ্ধ, জাদুঘর, অবদান, অস্ত্র, লড়াই
২। খালি জায়গা পূরণ করি।
(ক) ঢাকার রাজারবাগে আছে পুলিশ _______ জাদুঘর।
(খ) পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি খুব _______ করে সাজানো।
(গ) জাদুঘরে আছে পুলিশের ব্যবহৃত _______ ও বিভিন্ন জিনিসপত্র।
(ঘ) পুলিশ সদস্যদের কাছে ছিল _______ অস্ত্র।
৩। বুঝে নিই।
স্মৃতিময় – মনে রাখার মতো বিষয়।
পাঠাগার – যেখানে পড়ার জন্য বই রাখা হয়।
আত্মত্যাগ – নিজের সবকিছু ত্যাগ।
৪। উত্তর বলি ও লিখি।
(ক) রাজারবাগ পুলিশ লাইন কীসের স্মৃতি বহন করে?
(খ) কবে কখন পাকিস্তানি সেনারা রাজারবাগে আক্রমণ করে?
(গ) রাজারবাগের পুলিশরা কীভাবে সারা দেশের পুলিশকে বার্তা পাঠিয়েছিল?
৫। বাম পাশের শব্দের সাথে ডান পাশের শব্দ জোড়া দিয়ে নতুন শব্দ বানাই।
বাম পাশ | ডান পাশ | নতুন শব্দ |
মুক্তি | আগার | |
রাজার | যুদ্ধ | |
পাঠ | বাগ | |
সেনা | ত্যাগ | |
আত্ম | বাহিনী |
৬। পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রবিন কী কী দেখল তা বলি।
◉ আরও দেখুন: তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগ কবিতাটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post