মুক্তি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : গল্পটি আলেক্স হ্যালির ‘Roots’ উপন্যাসের অংশবিশেষের অনুবাদ। গল্পাংশে আফ্রিকার গাম্বিয়া নামক দেশের একটি গ্রাম জুফরে। কুন্টা সেই গ্রামের অধিবাসী। কালো এই মানুষটিকে ধরে নিয়ে এসেছে সাদা আমেরিকানরা। দাস হিসেবে তাকে বিক্রি করা হবে। পোশাক পরিয়ে পরিপাটি করে দাস বাজারে তাকে বিক্রি করা হলো সাড়ে আটশ ডলারে। কুন্টা তরুণ, যুবক। বাজারে তার মূল্য বেশি।
কেননা তাকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয়া যাবে। ভালো দাম দিয়ে কিনে নিয়ে গেল এক সাদা লোক। কুন্টার সঙ্গে তারা খুব দুর্ব্যবহার করল, অপমান করল। সে দেখতে পেল তার মতোই অনেক কালো আছে দাসবাজারে কিংবা সাদা মানুষদের বাড়িতে। সাদাদের জন্য কাজ করছে। কুন্টার মনের ভেতর শুধু পালাবার ইচ্ছা। সুযোগের অপেক্ষায় থাকল সে। তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সাদা লোকদের কোনো এক বাড়িতে। রাত্রিবেলা পৌঁছল সেই বাড়ি। সাদা লোকটি যখন গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল তখন সে ঝাঁপিয়ে পড়ল গাড়িচালকের ওপর। প্রচণ্ড আক্রোশে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত করল তাকে।
লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। পালিয়ে গেলো কুন্টা। তার শরীর ও মনে তখন মুক্তির প্রবল আনন্দ। আফ্রিকার ইতিহাসে এমন এক সময় ছিল যখন সাদারা কালোদের বন্দি করে বিভিন্ন দেশের দাস-বাজারে বিক্রি করত। ‘মুক্তি’ গল্পটিতে দাসব্যবসার একটি প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে। এ গল্পে তরুণ কুন্টা তার বুদ্ধি, সাহস ও শক্তি দিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে।
মুক্তি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—১: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও:
ক. কুন্টার প্রতি সাদা লোকের আচরণ এবং তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল?
খ. কুন্টা তার শারীরিক যন্ত্রণা সত্ত্বেও কীভাবে মানসিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করেছিল?
১ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. কুন্টার প্রতি সাদা লোকের আচরণ ছিল একেবারে অমানবিক ও নৃশংস। কুন্টাকে তারা শুধু একটি বস্তু হিসেবে দেখছিল, যেটি তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজে লাগানোর জন্য তৈরি। কুন্টার শারীরিক অবস্থার অবনতির মধ্যেও তারা তাকে কিছুতেই ছাড় দেয়নি। তারা তার শরীরে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিল, যেন কোনো মূল্যবান সম্পত্তি কিনছে।
এর মাধ্যমে তারা কুন্টাকে শিকল দিয়ে বেঁধে এবং পরিক্ষার মাধ্যমে দেখছিল, কতটা শক্তিশালী বা সক্ষম সে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কুন্টাকে একটি পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা এবং তার শ্রমের মাধ্যমে লাভবান হওয়া। সাদা লোকেরা কুন্টার মানবিক দিকটি মোটেও মূল্যায়ন করেনি, বরং তারা তাকে শুধু তাদের দাস হিসাবে বিবেচনা করছিল, যার কাজ হলো তাদের নির্দেশ অনুসরণ করা এবং তাদের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা। এতে দাসব্যবস্থার নির্মমতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কুন্টার প্রতি তাদের আচরণ ছিল এক প্রকার শোষণ ও অমানবিকতা, যা তাকে শোষিত, নিঃস্ব এবং অপমানিত অনুভব করানোর উদ্দেশ্য ছিল।
খ. কুন্টা শারীরিক যন্ত্রণা ও কঠোর শিকলবদ্ধ জীবনের মধ্যে মানসিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করেছিল তার অবিচলিত মনোবল এবং নিজের স্বাধীনতা লাভের আকাক্সক্ষার মাধ্যমে।
যতই তার শরীর ক্লান্ত হয়ে যাক, যতই সে শারীরিকভাবে নিঃশেষ হয়ে পড়–ক, কুন্টার মনে ছিল একমাত্র লক্ষ্য—তার মুক্তি। তার শরীর যদি তাকে বাধা দেয়, তবে মন তার শক্তি বাড়িয়ে তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেত। কুন্টা জানত যে, তার শারীরিক দাসত্ব আর দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে না যদি তার মনোবল ঠিক থাকে। তার মনে ছিল এমন এক শক্তি যা তাকে এই দাসত্বের জীবনে অক্ষত রাখে।
সে বিশ্বাস করেছিল যে, একদিন সে মুক্ত হবে, আর তখন তার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা সার্থক হবে। কুন্টার কাছে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তার আত্মমর্যাদা এবং স্বাধীনতা। তার মানসিক শক্তি তাকে শারীরিক যন্ত্রণা থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলেছিল, এবং সেজন্য সে বারবার চেষ্টা করেছিল পালানোর, তার দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার। তার এই মানসিক শক্তিই তাকে বেঁচে থাকার উৎসাহ জুগিয়েছে, এমনকি তার শরীরের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—২: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও:
ক. কুন্টার শিকল ছিঁড়ে পালানোর চিন্তা কেন করেছিল? সে কীভাবে সফল হয়েছিল?
খ. গল্পে কুন্টার দৃঢ় মানসিকতা এবং দৃঢ় ইচ্ছার যে দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে, ব্যাখ্যা করো।
২ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. কুন্টা তার শিকল ছিঁড়ে পালানোর চিন্তা করেছিল কারণ সে জানত যে, তার দাসত্বের জীবন কোনোদিনই শেষ হবে না যদি সে নিজের আত্মমর্যাদা এবং স্বাধীনতা রক্ষা না করে। দাস হিসেবে সে মানবিক মর্যাদাহীন, অপমানিত এবং নিঃস্ব ছিল। তার জন্য জীবন ছিল এক অনিত্য দাসত্বের জীবন, যেখানে কোনো স্বাধীনতা ছিল না। কুন্টা তার শিকল ছিঁড়ে পালানোর মাধ্যমে কেবল নিজের শারীরিক অঙ্গ থেকে মুক্তি চায়নি, বরং তার মন থেকে দাসত্বের শৃঙ্খলও ভাঙতে চেয়েছিল। তার মনে ছিল শক্তিশালী ইচ্ছাশক্তি এবং স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা, যা তাকে শিকল ছিঁড়ে পালানোর জন্য প্রেরণা দিয়েছিল।
সে পালানোর জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। শিকল বাঁধা অবস্থায় এবং দাসদের চোখে চোখ রেখে কুন্টা ধীরে ধীরে নিজের শক্তি সঞ্চয় করে। একসময়, যখন তাকে শারীরিকভাবে নিঃশেষ এবং মর্মান্তিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, সে অনুভব করেছিল যে তার জীবনটিই শুধু দাসত্বের গ্লানি। তখন সে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং কঠোর প্রচেষ্টায়, নিজের শক্তি এবং সাহসের মাধ্যমে শিকল ছিঁড়ে পালানোর সুযোগ পায়।
খ. ‘মুক্তি’ গল্পে কুন্টার দৃঢ় মানসিকতা এবং ইচ্ছাশক্তির অসীম দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে। কুন্টা তার শারীরিক দাসত্বের মধ্যে একদিনও নিজের আত্মমর্যাদা হারায়নি। সে জানত, যতই তাকে নির্যাতন করা হোক না কেন, তার মনের শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস অটুট থাকতে হবে। তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল তার দৃঢ় মনোবল। সাদা মানুষের অমানবিক নির্যাতন এবং শারীরিক আঘাতেও কুন্টা কখনো নিজের সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তি হারায়নি।
কুন্টার দৃঢ় মানসিকতা তার শিকল ছিঁড়ে পালানোর সময় সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। একাধিকবার তাকে শিকলে বেঁধে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে কোনো পরাজয়ের অনুভূতি ছিল না। বরং, সে তার যন্ত্রণা, অভাব, শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও মনে দৃঢ় বিশ্বাস রেখেছিল যে, সে একদিন স্বাধীন হবে। তার এই বিশ্বাস এবং দৃঢ় মানসিকতা তাকে নিঃশেষ প্রতিকূলতার মধ্যেও সাহস ও শক্তি জোগাতো।
গল্পে এক পর্যায়ে যখন কুন্টা পালানোর সুযোগ পায়, তখন তার ইচ্ছাশক্তি এমন একটি জোরালো প্রমাণ হিসেবে সামনে আসে, যা তাকে শুধু শিকল ভেঙে পালানোর সাহস দেয় না, বরং নিজের স্বাধীনতা অর্জন করার দৃঢ় সংকল্পও পূর্ণ করে। কুন্টা তার দাসত্বের শৃঙ্খল ছিঁড়ে নিজেকে মুক্ত করার জন্য প্রস্তুত ছিল। সে জানত, তার শারীরিক শক্তি হয়তো তখন দুর্বল, তবে তার মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি তাকে তার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
এভাবে, কুন্টা তার ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে শারীরিকভাবে একেবারে পরাজিত হওয়ার পরেও মানসিকভাবে কখনো পরাজিত হয়নি। তার দৃঢ় মনোবল এবং ইচ্ছাশক্তিই তাকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ দেখায়, এবং কুন্টার এই দৃঢ় মানসিকতা তার সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে মুক্তি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post